শিরোনাম :
Logo আশিকাটি ইউনিয়নে বিভিন্ন ওয়ার্ড বিএনপির প্রাথমিক সদস্য সংগ্রহ ও নবায় কর্মসূচীর উদ্বোধন Logo মেধাভিত্তিক নিয়োগ হলে নিয়োগপ্রাপ্ত সকলেই দেশের সম্পদ হবে : আসিফ মাহমুদ Logo অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে হাঙরের আক্রমণে নিহত ১ Logo দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে টি২০ সিরিজে ডাকেটকে বিশ্রাম দিয়েছে ইংল্যান্ড Logo সাইবার নিরাপত্তা আইন এখন অনেক সক্রিয় : ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব Logo পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) আজ Logo সাতক্ষীরায় ধর্মীয় ভাবগম্ভীর পরিবেশে ঈদে মিলাদুন্নবী পালিত Logo ইবিতে ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উপলক্ষে র‍্যালি ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত Logo সুন্দরগঞ্জে স্কুলছাত্রী সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার Logo চাঁদপুর টেলিভিশনের সাংবাদিকদের সাথে জেলা বিএনপির সভাপতির মতবিনিময়

ঝিনাইদহ কালীগঞ্জের কয়েদীর সঙ্গে কবুতরের এ কেমন প্রেম

  • amzad khan
  • আপডেট সময় : ০১:৪৯:৫০ পূর্বাহ্ণ, শনিবার, ২ জুলাই ২০২২
  • ৭৯৩ বার পড়া হয়েছে

স্টাফ রিপোর্টার, ঝিনাইদহ-

যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারে থাকতে থাকতে রাজা আর যাদব দুটি কবুতরের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে ওঠে যাবজ্জীবন দন্ডপ্রাপ্ত আসামি মিজানুর রহমানের (৪৭)। সেই সখ্যতা থেকে সঙ্গী হিসেবে ওই কয়েদির মুক্তির পর তার সঙ্গে বাড়ি চলে আসে। কবুতরের এই ভালোবাসা লাইলি মজনু ও শিরি-ফরহাদের ভালোবাসাকেও হার মানায়। তথ্য নিয়ে জানা গেছে, কারাবন্দী জীবনে মিজানুরের সঙ্গী ছিল যশোর কারাগারের এক ঝাঁক কবুতর। তবে এর মধ্যে রাজা আর যাদবের সঙ্গে মিজানুরের বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে।

মিজানুর মুক্তি পেয়ে বাড়ি ফিরেছেন। তার সঙ্গে রাজা আর যাদবও এসেছে কারাগার থেকে তার বাড়িতে। ঝিনাইদহ সদর উপজেলার হরিশংকরপুর ইউনিয়নের বাকড়ি গ্রামের মৃত আনোয়ার হোসেনের বড় ছেলে মিজানুর রহমান। মিজানুর রহমান একটি হত্যা মামলায় আসামি ছিলেন। ১৯৯৭ সালে মামলাটির রায়ে তার যাবজ্জীবন কারাদন্ড দেওয়া হয়। ১৯৯৯ সালে ২৮ জুলাই তিনি আত্মসমর্পণ করলে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। ওই সময় তার বয়স ছিল ২৫ বছর। এরপর দীর্ঘ ২২ বছর ১০ মাস পর গত ২ জুন তিনি মুক্তি পান। কারাজীবনে, তিনি খুলনা, ঝিনাইদহ, যশোর ও ঢাকা কারাগারে থেকেছেন। সর্বশেষ তিনি মুক্তি পান যশোর কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে। এরপর থেকে দুই কবুতর নিয়ে মিজানুর নতুন জীবন শুরু করেন।

মিজানুর রহমান যে ঘরে ঘুমান, সেই ঘরেই কবুতরগুলো থাকত। তবে অপরিচিত জায়গা হওয়ার কারণে ৭ জুন যাদব উড়তে গিয়ে ঘরের ফ্যানের সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে মারা যায়। এ মৃত্যু মিজানুরসহ তার পরিবারের লোকজন খুব কষ্ট পেয়েছেন। সঙ্গীর মৃত্যুতে রাজাও দুই দিন কিছুই খায়নি। রাজাবাবু এখন একাই মিজানুরের বাড়িতেই রয়েছে। গম ছাড়া সে কিছু খায় না। প্রতিদিন তাকে গোসল করাতে হয়। একদিন পরপর শ্যাম্পু দিয়ে গোসল করাতে হয়। অন্য কবুতর তাদের জন্য বানানো ঘরে থাকলেও রাজাবাবু থাকে মিজুনুরের শোয়ার ঘরে। ফ্যানের বাতাস সে খুবই পছন্দ করে।

মিজানুরের ছোট ভাই রেজাউল করিম বলেন, দেশীয় প্রজাতির কবুতর রাজা। তাকে মগে করে পানি খাওয়াতে হয়। এমনকি সে নিজে নিজে খায় না। তাকে মুখে তুলে খাওয়াতে হয়। সারাদিনই সে কারো না কারো ঘাড়ে, কোলে, হাতের ওপর এমনকি মাথায় চড়ে দিন পার করে। তাকে পেয়ে আমরা সবাই খুশি। মানুষের সঙ্গে কবুতরের এমন সম্পর্ক এটাই প্রথম। প্রতিবেশী রফিকুল ইসলাম বলেন, কবুতরের এই প্রেমে আমরা খুবই অবাক হয়েছি। এমন ঘটনা আসলেই বিরল। কবুতর মিজানুরের কথা শোনে। ডাকলে কাছে চলে আসে। কবুতর রাজাবাবু কখনো তার পিঠে, কখনো মাথায়, কখনো মোটরসাইকেলের ওপর বসে থাকে। এমন সম্পর্ক বিস্ময়কর।

Image
মিজানুর রহমান ও তার পোশা কবুতর রাজাবাবু

মিজানুরের ভাইয়ের মেয়ে সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী তানিয়া সুলতানা বলে, আমি যখন বাড়িতে থাকি তখন রাজাবাবু সবসময় আমার কাছেই থাকে। ওকে কোলে করে পাড়ায় পাড়ায় ঘুরে বেড়াই। আমাদের বাড়িতে আরও অনেক কবুতর আছে, কিন্তু সেগুলো আমার কাছে আসেও না আবার ডাকলেও শোনে না। রাজাবাবু আমার কাছে যখন থাকে, তখন আমার খুব ভালো লাগে।

মিজানুর রহমান বলেন, দীর্ঘ সময় যখন যশোর কারাগারে ছিলাম, তখন ভীষণ একাকীত্ব জীবন কাটাতাম। তখন কারাগারের কবুতরগুলোর সঙ্গে সময় কাটাতে শুরু করি। নিজে কম খেয়ে কবুতরগুলোকে খাওয়াই। কারাগারেই নতুন করে একটি দেশি কবুতরের একজোড়া ডিম থেকে বাচ্চা ফোটে। তাদের নাম রাখি রাজা আর যাদব। সেই ছোট থেকেই আমি ওদের খাওয়াতাম।

কবুতরগুলোও সারাক্ষণ আমার আশপাশে ঘুরে বেড়াত। একপর্যায়ে কবুতর দুটি কাঁধে উঠতে শুরু করে। আমি যেখানে ঘুমাতাম সেই বালিসের কোলে গিয়ে ওরা ঘুমাত। নামাজ পড়তে গেলেও আমার সঙ্গে নামাজের পাটিতে বসে থাকত। এভাবেই ওদের সঙ্গে আমার ভালোবাসা তৈরি হয়ে যায়। তিনি বলেন, কারাগারের সব কবুতরের প্রতি মায়া থাকলেও, রাজা আর যাদবের প্রতি আলাদা মায়া জন্ম হয়। মুক্তির দুই দিন আগে রাজা আর যাদবের জন্য চিন্ত শুরু হয়। অবশেষে সন্ধ্যায় যখন আমি কারাগার থেকে বের হলাম, তখন আশ্চর্য্যজনক ভাবে রাজা আর যাদবও আমার সঙ্গে চলে এলো।

ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ

আশিকাটি ইউনিয়নে বিভিন্ন ওয়ার্ড বিএনপির প্রাথমিক সদস্য সংগ্রহ ও নবায় কর্মসূচীর উদ্বোধন

ঝিনাইদহ কালীগঞ্জের কয়েদীর সঙ্গে কবুতরের এ কেমন প্রেম

আপডেট সময় : ০১:৪৯:৫০ পূর্বাহ্ণ, শনিবার, ২ জুলাই ২০২২

স্টাফ রিপোর্টার, ঝিনাইদহ-

যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারে থাকতে থাকতে রাজা আর যাদব দুটি কবুতরের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে ওঠে যাবজ্জীবন দন্ডপ্রাপ্ত আসামি মিজানুর রহমানের (৪৭)। সেই সখ্যতা থেকে সঙ্গী হিসেবে ওই কয়েদির মুক্তির পর তার সঙ্গে বাড়ি চলে আসে। কবুতরের এই ভালোবাসা লাইলি মজনু ও শিরি-ফরহাদের ভালোবাসাকেও হার মানায়। তথ্য নিয়ে জানা গেছে, কারাবন্দী জীবনে মিজানুরের সঙ্গী ছিল যশোর কারাগারের এক ঝাঁক কবুতর। তবে এর মধ্যে রাজা আর যাদবের সঙ্গে মিজানুরের বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে।

মিজানুর মুক্তি পেয়ে বাড়ি ফিরেছেন। তার সঙ্গে রাজা আর যাদবও এসেছে কারাগার থেকে তার বাড়িতে। ঝিনাইদহ সদর উপজেলার হরিশংকরপুর ইউনিয়নের বাকড়ি গ্রামের মৃত আনোয়ার হোসেনের বড় ছেলে মিজানুর রহমান। মিজানুর রহমান একটি হত্যা মামলায় আসামি ছিলেন। ১৯৯৭ সালে মামলাটির রায়ে তার যাবজ্জীবন কারাদন্ড দেওয়া হয়। ১৯৯৯ সালে ২৮ জুলাই তিনি আত্মসমর্পণ করলে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। ওই সময় তার বয়স ছিল ২৫ বছর। এরপর দীর্ঘ ২২ বছর ১০ মাস পর গত ২ জুন তিনি মুক্তি পান। কারাজীবনে, তিনি খুলনা, ঝিনাইদহ, যশোর ও ঢাকা কারাগারে থেকেছেন। সর্বশেষ তিনি মুক্তি পান যশোর কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে। এরপর থেকে দুই কবুতর নিয়ে মিজানুর নতুন জীবন শুরু করেন।

মিজানুর রহমান যে ঘরে ঘুমান, সেই ঘরেই কবুতরগুলো থাকত। তবে অপরিচিত জায়গা হওয়ার কারণে ৭ জুন যাদব উড়তে গিয়ে ঘরের ফ্যানের সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে মারা যায়। এ মৃত্যু মিজানুরসহ তার পরিবারের লোকজন খুব কষ্ট পেয়েছেন। সঙ্গীর মৃত্যুতে রাজাও দুই দিন কিছুই খায়নি। রাজাবাবু এখন একাই মিজানুরের বাড়িতেই রয়েছে। গম ছাড়া সে কিছু খায় না। প্রতিদিন তাকে গোসল করাতে হয়। একদিন পরপর শ্যাম্পু দিয়ে গোসল করাতে হয়। অন্য কবুতর তাদের জন্য বানানো ঘরে থাকলেও রাজাবাবু থাকে মিজুনুরের শোয়ার ঘরে। ফ্যানের বাতাস সে খুবই পছন্দ করে।

মিজানুরের ছোট ভাই রেজাউল করিম বলেন, দেশীয় প্রজাতির কবুতর রাজা। তাকে মগে করে পানি খাওয়াতে হয়। এমনকি সে নিজে নিজে খায় না। তাকে মুখে তুলে খাওয়াতে হয়। সারাদিনই সে কারো না কারো ঘাড়ে, কোলে, হাতের ওপর এমনকি মাথায় চড়ে দিন পার করে। তাকে পেয়ে আমরা সবাই খুশি। মানুষের সঙ্গে কবুতরের এমন সম্পর্ক এটাই প্রথম। প্রতিবেশী রফিকুল ইসলাম বলেন, কবুতরের এই প্রেমে আমরা খুবই অবাক হয়েছি। এমন ঘটনা আসলেই বিরল। কবুতর মিজানুরের কথা শোনে। ডাকলে কাছে চলে আসে। কবুতর রাজাবাবু কখনো তার পিঠে, কখনো মাথায়, কখনো মোটরসাইকেলের ওপর বসে থাকে। এমন সম্পর্ক বিস্ময়কর।

Image
মিজানুর রহমান ও তার পোশা কবুতর রাজাবাবু

মিজানুরের ভাইয়ের মেয়ে সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী তানিয়া সুলতানা বলে, আমি যখন বাড়িতে থাকি তখন রাজাবাবু সবসময় আমার কাছেই থাকে। ওকে কোলে করে পাড়ায় পাড়ায় ঘুরে বেড়াই। আমাদের বাড়িতে আরও অনেক কবুতর আছে, কিন্তু সেগুলো আমার কাছে আসেও না আবার ডাকলেও শোনে না। রাজাবাবু আমার কাছে যখন থাকে, তখন আমার খুব ভালো লাগে।

মিজানুর রহমান বলেন, দীর্ঘ সময় যখন যশোর কারাগারে ছিলাম, তখন ভীষণ একাকীত্ব জীবন কাটাতাম। তখন কারাগারের কবুতরগুলোর সঙ্গে সময় কাটাতে শুরু করি। নিজে কম খেয়ে কবুতরগুলোকে খাওয়াই। কারাগারেই নতুন করে একটি দেশি কবুতরের একজোড়া ডিম থেকে বাচ্চা ফোটে। তাদের নাম রাখি রাজা আর যাদব। সেই ছোট থেকেই আমি ওদের খাওয়াতাম।

কবুতরগুলোও সারাক্ষণ আমার আশপাশে ঘুরে বেড়াত। একপর্যায়ে কবুতর দুটি কাঁধে উঠতে শুরু করে। আমি যেখানে ঘুমাতাম সেই বালিসের কোলে গিয়ে ওরা ঘুমাত। নামাজ পড়তে গেলেও আমার সঙ্গে নামাজের পাটিতে বসে থাকত। এভাবেই ওদের সঙ্গে আমার ভালোবাসা তৈরি হয়ে যায়। তিনি বলেন, কারাগারের সব কবুতরের প্রতি মায়া থাকলেও, রাজা আর যাদবের প্রতি আলাদা মায়া জন্ম হয়। মুক্তির দুই দিন আগে রাজা আর যাদবের জন্য চিন্ত শুরু হয়। অবশেষে সন্ধ্যায় যখন আমি কারাগার থেকে বের হলাম, তখন আশ্চর্য্যজনক ভাবে রাজা আর যাদবও আমার সঙ্গে চলে এলো।