নিউজ ডেস্ক: জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মবার্ষিকী এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন উপলক্ষে ১০ দিনব্যাপী বিশেষ অনুষ্ঠান আয়োজন করেছে সরকার। বুধবার (১৭ মার্চ) থেকে শুরু হতে যাওয়া এসব অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন দক্ষিণ এশিয়ার পাঁচ দেশের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধান। এরই মধ্যে তাদের স্বাগত জানাতে সব প্রস্তুতি শেষ করেছে ঢাকা।
এসব রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানদের মধ্যে প্রথম ঢাকা আসছেন মালদ্বীপের রাষ্ট্রপতি ইব্রাহিম মোহাম্মেদ সোলিহ। আগামীকাল বুধবার (১৭ মার্চ) সকালে সস্ত্রীক ঢাকায় অবতরণ করবেন তিনি। মালদ্বীপের রাষ্ট্রপতির দুই দিনের সফরে দুই দেশের মধ্যে চারটি সমাঝোতা স্মারক সই হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন জানান, মালদ্বীপের রাষ্ট্রপতির সফরসঙ্গী হিসাবে তার সহধর্মিনী ফার্স্টলেডি ফাজনা আহমেদ, পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল্লাহ শহিদ ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন বিষয়ক মন্ত্রীসহ মোট ২৭ জন অতিথি আসবেন।
মালদ্বীপের রাষ্ট্রপতির ২ দিনের সফর সূচি:
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, আগামীকাল বুধবার সকাল ৮টা ৩০ মিনিটে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সফরসঙ্গীদের নিয়ে অবতরণ করবেন মালদ্বীপের রাষ্ট্রপতি ইব্রাহিম মোহাম্মেদ সোলিহ। বিমানবন্দরে রাষ্ট্রপ্রতি মো. আব্দুল হামিদ তাকে স্বাগত জানাবেন। এরপর মালদ্বীপের রাষ্ট্রপতি সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধ ও ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানাবেন।
পরে বুধবার বিকেলে জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন এবং সেখানে বক্তব্য দেবেন।
পরদিন, বৃহস্পতিবার (১৮ মার্চ) সকালে মালদ্বীপের রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করবেন। এরপর রাষ্ট্রপ্রতির আতিথেয়তায় সন্ধ্যায় বঙ্গভবনে একটি রাষ্ট্রীয় ভোজ ও মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন। বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতেই (১৯ মার্চ রাত ১টায়) বাংলাদেশ ছেড়ে যাওয়ার কথা রয়েছে মালদ্বীপের রাষ্ট্রপতির।
দুই দেশের সম্পর্কের কোন কোন খাতে অগ্রগতি হতে পারে:
মালদ্বীপের রাষ্ট্রপতির এই সফরে দুই দেশের মধ্যে চারটি সমাঝোতা স্মারক সই হওয়ার কথা রয়েছে বলে জানিয়েছে কূটনৈতিক সূত্রগুলো।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন বলেন, মালদ্বীপ বাংলাদেশের ঘনিষ্ঠ প্রতিবেশী এবং বন্ধুরাষ্ট্র। ১৯৭৮ সালে বাংলাদেশ ও মালদ্বীপের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপিত হওয়ার পর থেকে দুই দেশ বিভিন্ন দ্বিপাক্ষিক ও আন্তর্জাতিক ইস্যুতে একসঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে। দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় শ্রমবাজার মালদ্বীপে প্রবাসী বাংলাদেশীর সংখ্যা মোট জনসংখ্যার শতকরা ২০ ভাগ। তাছাড়া ব্যাবসা-বাণিজ্য, মৎস্য, স্বাস্থ্য, পর্যটনসহ ক্ষেত্রভিত্তিক আঞ্চলিক সহযোগিতায় মালদ্বীপের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক উন্নয়নে যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, মালদ্বীপের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল্লাহ শহিদ গত ৮ থেকে ১১ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ সফর করেন। ওই সফরে দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ে আনুষ্ঠানিক বৈঠকে দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের সার্বিক উন্নয়নের জন্য ফলপ্রসূ আলোচনা হয় এবং দু’টি সমঝোতা স্মারক সই হয়। এরই ধারবাহিকতায় মালদ্বীপের রাষ্ট্রপতি তার ঢাকা সফরে ১৮ মার্চ বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আনুষ্ঠানিক বৈঠক করবেন এবং ওই সময় দুই দেশের সরকারপ্রধানের উপস্থিতিতে বিভিন্ন ক্ষেত্রভিত্তিক পারস্পরিক সহযোগিতার লক্ষ্যে কয়েকটি সমঝোতা স্মারক সই হবে বলে আশা করছি।
মালদ্বীপের রাষ্ট্রপতির সফর প্রসঙ্গে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন বলেন, মালদ্বীপের রাষ্ট্রপতির এই সফরে দুই দেশের মধ্যে চারটি সমাঝোতা স্মারক সই হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আশা করা যায়, মালদ্বীপের রাষ্ট্রপতি বাংলাদেশ সফরের সময় দুই রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায়ে আলোচনার মাধ্যমে দুই দেশের বিরাজমান সুসম্পর্ক আরও জোরদার হবে এবং দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের আরও নতুন ক্ষেত্র উন্মোচিত হবে।
কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, সাম্প্রতিক সময়ে মালদ্বীপে বেশকিছু প্রবাসী বাংলাদেশি অনিয়মিত (আনডক্যুমেন্টেড) হয়ে পড়েছিলেন। তাদের অনেকেই ২০১৯ সালে মালদ্বীপ সরকারের নেওয়া নিয়মিতকরণ কার্যক্রমের মাধ্যমে বৈধ হওয়ার সুযোগ নিয়েছেন। এছাড়া মহামারি কোভিড পরবর্তী পরিস্থিতিতে ২০২০ সালে মালদ্বীপ সরকারের অর্থায়নে স্বেচ্ছায় দেশে ফেরা কর্মসূচির আওতায় ১০ হাজারের বেশি আনডক্যুমেন্টেড প্রবাসী বাংলাদেশিকে বিনা খরচে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়েছে।