স্টাফ রিপোর্টার, ঝিনাইদহঃ
ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুরে তিন বছরের শিশু জান্নাতুল হত্যা মামলায় বলি হওয়া শিশুটির ভাবী সালমা খাতুন (২৫)কে পুলিশ ২৪ ঘণ্টার রিমান্ড শেষে সোমবার দুপুরের পর আদালতে সোপর্দ করেছে। তবে পুলিশ এ হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত থাকার আলামত পাইনি। শিশুটির প্রকৃতহত্যাকারী কেসমত ফকির ওরফে দুলাল ফকির শিশু হত্যার সাথে শিশুটির ভাবী সালমা খাতুনের সমপৃক্ততার কথা স্বীকার করলে গত ৩০ জুলাই রাতে নিহত শিশুর ভাবী সালমা খাতুনকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠায়। খুন হওয়া শিশুটির পরিবার এ হত্যাকান্ডের সাথে তার পরিবারের সদস্যদের জড়িত করার পরিবারটি নিয়ে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করে একাধিক সদস্য বলেছেন একজন একধিক খুনের আসামি নিজে বাঁচতে আমাদের পরিবারের সদস্যকে জড়িয়েছে। বিষয়টি পুলিশ তদন্ত না করে পরিবারের সদস্য সালমা খাতুনকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠিছে। পরবর্তিতে তাকে রিমা-ে নেয়া হয়েছে। তার উপর অমানবিক নির্যাতনও করা হয়েছে। নিহত শিশুটির পিতা তোফাজে¦ল হোসেন টুকু বলেন আমার বৌমার গ্রেপ্তারকৃত সালমা’র ৫বছরের একটি শিশু কন্যা রয়েছে। শিশুটি তার মাকে না পেয়ে সারা দিন কান্না করছে। তার কান্না থামাতে কেউ পারছিনা।
উল্লেখ্য গত ১৭ মার্চ বিকালে কোটচাঁদপুর রেলষ্টেশন পাড়ার তোফাজ্জেল হোসেন টুকুর বাড়ীর ভাড়াটিয়া পুরানো কাপড় ব্যবসায়ী কেসমত আলী ওরফে দুলাল ফকির (৬০) নিজের ঘরে বাড়ী মালিক তোফাজে¦ল হোসেন টুকুর তিন বছর বয়সি শিশু কন্যা জান্নাতুলকে আদর করে ডেকে কুপিয়ে হত্যা করে। পরে ঘরের মধ্যে প্রায় মৃত ক্ষত বিক্ষত শিশুটিকে রেখে কেসমত আলী ওরফে দুলাল ফকির পালিয়ে যায়। পরে বাসার লোকজন জান্নাতুলের ক্ষত বিক্ষত দেহ পড়ে আছে দেখে স্থানীয় হাসপাতালে নেয়ার পথে তার মৃত্যু হয়। পুলিশ ও এলাকাবাসী চেষ্টা চালিয়ে কেসমত আলী ওরফে দুলাল ফকিরকে ধরতে পারিনী। এ ঘটনার ৭ দিনের মাথায় ওই খুনি যশোহর অভয়নগর থানার ধোপাদী গ্রামে সাবেক মহিলা মেম্বার সোহাসিনী’র বাড়ীতে যায় এবং পানি খেতে চাই। এ সময় সোহাসিনী পরিচয় জিজ্ঞাসা করলে তার উপর ক্ষিপ্ত হয়ে কেসমত আলী ওরফে দুলাল ফকির দা দিয়ে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে পালিয়ে যেতে গেলে গ্রাম বাসি তাকে ধরে গণ ধোলায় দিয়ে পুলিশে দেয়। পরে সাবেক মহিলা মেম্বর সোহাসিনী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। এ ঘটনা জানতে পেরে কোটচাঁদপুর থানা পুলিশ সাত দিন আগে নিহত জান্নাতুলের চাচা গাফফার আলীকে নিয়ে অভয়নগর থানায় যান। পরে খুন হওয়া শিশুর চাচা হাসপাতালে ভর্তি কেসমত আলীকে তাদের মেয়ের হত্যাকারী বলে সনাক্ত করেন। বিষয়টি নিয়ে যশোহর অভয় নগর থানা কর্মকর্তা ইনচার্জ (ওসি) তাজুল ইসলাম এ প্রতিবেদককে বলেন, এ থানার সোহাসিনীকে কুপিয়ে হত্যাসহ কোটচাঁদপুরে শিশু হত্যার কথা স্বীকার করেছিল। কেসমত আলী ওরফে দুলাল ফকির। কি কারণে শিশুটিকে হত্যা করা হয়েছে এমন প্রশ্ন করা হলে হত্যাকারী কেসমত আলী ওরফে দুলাল ফকির বলে শিশুটির মা খায়রুন নাহার আমাকে গালাগালি করে ছিলো। এই ক্ষোভে প্রতিশোধ নিতে আমি তার শিশুকে কুপিয়ে হত্যা করে পালিয়ে এসেছি। ওসি বলেন, সে এ দুটি হত্যা নিয়ে একক সময় একাক রকম কথা বলে। পেশাদার খুনি সে। তাছাড়া তার মাথারও সমস্যা কিছুটা আছে বলে আমার মনে হয়েছে। পরে কেসমত আলীকে আদালতের মাধ্যমে যশোহর সেণ্টার জেলে প্রেরণ করে অভয়নগর থানা। এদিকে কোটচাঁদপুরের শিশু হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কোটচাঁদপুর থানার কর্মকর্তা ইনচার্জ (ওসি) মাহবুবুল আলমের আবেদনের প্রেক্ষিতে ঝিনাইদহ আদালত একাধিক হত্যাকারী কেসমত আলীকে যশোহর সেণ্টার জেল থেকে এনে ২৯ ও ৩০ জুলাই দুই দিনের রিমান্ডে দেন কোটচাঁদপুর থানাকে। প্রথম দিন জিজ্ঞাসাবাদে সে এলোমেলো কথা বলে। দ্বিতীয় দিনে কেসমত আলী বলে এ হত্যার জন্য শিশুটির ভাবী সালমা খাতুন (সৎ ভাবী) ২০ হাজার টাকা দিবে বলে ছিলো। সে জন্য তাকে খুন করে টাকা না নিয়েই পালিয়েছি। এই কথার ভিত্তিতে শিশুটি ভাবী সালমা খাতুনকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে। প্রেপ্তারকৃত সালমা খাতুন তার স্বামীর কাছে অভিযোগ করে জেল গেটে বলেছেন, ৩০ তারিখে গভীর রাতে তাকে থানা এনে অমানবিক অত্যাচারসহ নাকে মুখে পানি ঢালা হয়েছে। অথচ এ হত্যার বিষয় আমি কিছুই জানি না। ইউসুফ আলী এ প্রতিবেদকের কাছে বলেন গত ৯ আগস্ট ২৪ ঘণ্টার জন্য রিমান্ডে আনে আমার স্ত্রী সালমা খাতুনকে। আদালতের নির্দেশনা ছিলো আসামীর উপর কোন রকম নির্যাতন করা যাবে না। অথচ স্বীকার উক্তি আদায়ে থানাতে তাকে মারধর করাসহ বেটারী চালিত মেশিন দিয়ে সক দেয়া হয়েছে। তবুও এ হত্যার সাথে তার কোন সম্পৃক্ততা পাইনি পুলিশ। ইউসুফ আলী বলেন, আমার ৫ বছরের একটি মেয়ে রয়েছে সারা দিন রাত মায়ের জন্য কান্না কাটি করছে। কোন কিছুতেই থামাতে পারছিনা। ইউসুফ আলীর সৎ মা খায়রুন নাহার (৪৫) তিনি বলেন আমার মেয়ে জান্নাতুল ক্ষুনের সাথে আমার বৌমা সালমা কোন ভাবেই জড়িত নয়। কেসমত আলি নিজের ঘরে একাই খুন করে পালিয়েছে। ওই বাড়ীর আরেক ভাড়াটিয় খুন হওয়া ঘরটির পাশের ঘরে থাকেন ভিক্ষুক রাশিদা বেগম (৫৫) এবং খুন হওয়া শিশুর চাচা গাফফার আলী অভিন্ন বক্তব্যে বলেন-কেসমত আলী আমাদের এই ছোট্ট মেয়েটিকে একাই খুন করে পালিয়ে গেছে। এই খুনের সাথে বৌমা সালমাকে জড়ানো ঠিক হয়নি। পুলিশের আগে তদন্ত করে দেখা উচিত ছিলো। একদিকে মেয়েটা হত্যা হলো এ নিয়ে যন্ত্রনায় আছি অপর দিকে বৌমার ৫ বছরের শিশু সন্তান রেখে জেলে রয়েছে। বিপদের উপর বিপদে পড়েছি। প্রতিবেশীদেরও এই একই কথা সালমা কোন ভাবেই এ খুনের সাথে জড়িত থাকতে পারেনা। তাদের ধারণা সুবিধা আদায়ে সালমাকে জড়ানো হয়েছে। এমামলার তদন্ত কর্মকর্তা কর্মকর্তা ইনচার্জ (ওসি) মাহবুবুল আলম বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে সালমা খাতুন কোন তথ্য দেয়নি। তাকে আবারো আদালতের মাধ্যমে সোমবার জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।