লামা প্রতিনিধি: লামা-আলীকদম চকরিয়া সড়কে চলাচলকারী বেশীরভাগ যানবাহনে যাত্রী হয়রানীর অভিযোগ উঠেছে। বাসের হেলপার বা কন্টাক্টর
কর্তৃক যাত্রীদেরকে নাজেহাল করে, মামলার ভয় দেখিয়ে জোরপূর্বক মুচলেখা আদায় করার গুরুতর অপরাধের তথ্য পাওয়াগেছে।
সম্প্রতি লামা-আলীকদম বাসে এক স্কুলছাত্রীকে শ্লীলতা হানীর ঘটনায়, যানবাহনে নিরাপত্তার প্রশ্নে চরম উৎকন্টায় আছেন অভিভাবক
ও শিক্ষক মহল। পরিবহন শ্রমিক সংগঠন ঐক্যবদ্ধ হয়ে ঠুনকো কারণে, এক্যবদ্ধ আন্দোলনের ভয়ে তাদের অন্যায় আচরণের বিরুদ্ধে
টু-শব্দ করার সাহস হচ্ছে না কারোর। লামা-আলীকদমের যাত্রী সাধারণের পক্ষে এমন অভিযোগ উঠেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আলীকদম উপজেলার এক মহিলা যাত্রী জানান, গত কয়েকদিন আগে তিনি তার এক বোনসহ বাসে ছড়ে চকরিয়া যায়। গাড়িতে কথা কাটাকাটির জের ধরে বাস হেলপার মহিলা যাত্রীর বেগ নিয়ে টানা হেচড়া করে চকরিয়া ষ্টেশনে কাউন্টারে অবরুদ্ধ করে ওই দু;মহিলা যাত্রীকে মারধর করে। খবর পেয়ে তাদের এক ভাই সেখানে ছুটে গেলে তাকে কিলঘুসি মেরে আটকে রাখে!। এর পর তাদের কাছে নেশাদ্রব্য রয়েছে মর্মে চকরিয়া থানায় নিয়ে তল্লাশি করে কোন কিছু না পেয়ে, দু’ মহিলা যাত্রী ও তাদের ভাই থেকে মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেয়। সামাজিক মর্যাদা ক্ষন্ন হওয়ার আশংকায় সাংবাদিকদের কাছে এসব বর্বর ঘটনার বর্ণনাা দিতে রাজি হননি ওই দু’ মহিলা যাত্রী। তবে সাংবাদিকরা তাদের অজান্তে কথাগুলো রেকর্ড করে নেয়। এ বিষয়ে কোথাও কোন অভিযোগ হয়নি।
লামা-আলীকদমের যাত্রীদের অভিযোগ, বাসের হেলাপাররা তাদের সাথে অসৌজন্য আচরণ করে থাকে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে অনেকে বলেন, বাসে যাত্রী উঠার সময় হেলপার কর্তৃক মহিলা যাত্রীরা শারিরীক নির্যাতনের শিকার হয়। বিশেষ করে উপজাতি তরুণী এবং স্কুল কলেজগামী ছাত্রীদের সাথে এমন আচরণ করা হয়। গাড়ীর শ্রমিকরা যাত্রীদেরকে ভিক্ষুকের চেয়ে বেশী করুণারপাত্র মনে করেন। গাড়িতে উঠার পর যেকোন যাত্রী বাস হেলপারদের জিম্মিদশার শিকার হয়। নানান ধরণের ঝামেলার আশংকায় প্রতিবাদের কোন সুযোগ থাকে না কারোর। কয়েকজন অটোবাইক ও মোটর বাইক চালক জানান, রাস্তায় চলাচলকারী কিছু বাস অন্যদেরকে সাইট দেয়না। এর ফলে দুর্ঘটনা ও বিভিন্ন হয়রানীর চরম আশংকা নিয়ে রাস্তায় চলতে হয় তাদের।
লামা উপজেলার কয়েকজন অভিভাবক জানান, সম্প্রতি তাদের স্কুলগামী কোমলমতি শিশুদেরকে বাসে তোলা হচ্ছে না!। এর কারণ হিসেবে জানাযায়, গত ১৩ মার্চ আলীকদম ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজ এর বাস (গাড়ি নং- চট্টগ্রাম-জ-১৭৯২) এর সুপারভাইজার আবুল কাসেম,কার্ড নং- ৪৪০০ কতৃক এক ছাত্রী অশ্লীল, আপত্তিকর ও কুরুচিপূর্ণ, ইভটিজিং এর শিকার হয়। ওই সময় বাসে থাকা সহপাটি ছাত্র-ছাত্রীরা প্রতিবাদ করলে সবাইকে গাড়ি চাপা দিয়ে হত্যার হুমকী ও অশ্লীল ভাষায় গালমন্দ করে। বিষয়টি তাৎক্ষনিক ড্রাইভারকে জানালে সেও নিরব থাকেন। এর পর বিষয়টি ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুলের ম্যাডাম ও শিক্ষকদের জানায় ছাত্ররা। স্কুল কর্তৃপক্ষ ১৫ মার্চ পরিবহন নেতৃবৃন্দদের নিয়ে বৈঠক করে। বৈঠকে ইভটিজিংকারী সুপার ভাইজার নিজের কু-কর্মের কথা স্বীকার করে, এমন অপরাধ আর করবেনা মর্মে একটি লিখিত অঙ্গিকার দেয়। এই ঘটনার জেরধরে পরিবহন শ্রমিকরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে স্কুলগামী কোন শিশুকে গাড়িতে না তোলার সিদ্ধান্ত নেয়!।
অভিভাবকরা জানায়, গাড়ি শ্রমিক নেতৃবৃন্দের এহেন বর্বররচিত কর্মকান্ডে ও সিদ্ধান্তের ফলে ১৭ মার্চ শিশুরা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের ৯৮ তম জম্ম বার্ষিকী ও জাতীয় শিশু দিবসের নানা অনুষ্ঠানমালায় অংশ নিতে পারেনি। বিষয়টি খুবই দু:খ জনক ও অমার্জনীয় কর্মকান্ড বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন স্থানীয় অভিভাবকরা।
এদিকে ইভটিজিং এর শিকার ওই ছাত্রীটি ও তার পরিবার বর্তমানে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত অবস্থায় রয়েছে। অপরদিকে বাসে স্কুলগামী ছাত্রদের না তোলায়, আলীকদম ক্যান্টমেন্ট পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজে পড়–য়া লামা উপজেলার ২৩ জন কোমলমতি ছাত্র/ছাত্রী বিদ্যালয়ে যাতায়তে চরম ভোগান্তিতে পতিত হয়েছে। বিষয়টিকে কেন্দ্র করে লামা-আলীকদমের অভিভাবক ও যাত্রী সাধারণের মাঝে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। যে কোন সময়ে পরিবহন সেক্টরের অন্যায়ের প্রতিবাদে স্থানীয়রা আন্দোলনে ফুসে উঠতে পারে বলে জানাগেছে।
এ ব্যপারে বাস পরিবহন শ্রমিক সংগঠনের সেক্রেটারী মো: রফিক উদ্দিন জানান, তাদের শ্রমিক আবুল কাশেম ইভটিজিং করেননি। ভুল বুঝে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে তাকে মারধর করা হয়েছে। দু;মহিলা যাত্রীর সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনায় দু;খ প্রকাশ করে সে জানায়, এ বিষয়ে দু’পক্ষের মাঝে সমজোতা হয়েছে। এই শ্রমিক নেতা আরো বলেন, উধ্বর্তন কর্তৃপক্ষ বিষয়টি সুরাহা না করলে “আমরা পরবর্তীতে কর্মসূচী দেব”। এ নিয়ে আগামী শনিবার পরিবহন সেক্টরের নেতৃবৃন্দ চকরিয়া শহীদ আবদুল হামিদ বাস টারমিনালে বৈঠক করবে বলেও জানায়।
যাত্রীদেরকে হয়রানীর কবল থেকে রক্ষায় এ ব্যপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নজর দেয়া প্রয়োজন।