কুবি প্রতিনিধি :কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুবি) অনুষ্ঠিত হয়েছে ‘অ্যাপেক্স, জ্যোতির্বিজ্ঞান অলিম্পিয়াড ২০২৫’ এর প্রথম পর্যায়ের বাছাই পরীক্ষা। বাংলাদেশ জ্যোতির্বিজ্ঞান সমিতির আয়োজনে এবং কুবি সায়েন্স ক্লাবের সহযোগিতায় আয়োজিত এই জেলা পর্যায়ের প্রতিযোগিতায় কুমিল্লা জেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রায় ১৩০ শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করে। পরীক্ষার ভিত্তিতে মেধাক্রমে সিনিয়র ও জুনিয়র পর্যায়ে মোট ২৫ জন শিক্ষার্থীকে জাতীয় পর্যায়ের জন্য মনোনীত করা হয়েছে।
২১ জুলাই (সোমবার) দুপুর আড়াইটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাডমিন্টন কোর্টে আয়োজনটির উদ্বোধন ঘোষণা করা হয়।
এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোঃ হায়দার আলী। আরও উপস্থিত ছিলেন কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সোলায়মান, প্রক্টর অধ্যাপক ড. মোঃ আব্দুল হাকিম, ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা কার্যালয়ের পরিচালক অধ্যাপক ড. মোঃ আবদুল্লাহ আল মাহবুব, বাংলাদেশ জ্যোতির্বিজ্ঞান সমিতির চেয়ারম্যান মশহুরল আমিন, বিজ্ঞান বিষয়ক লেখক আবদুল গফফার রনি এবং শরীফ মাহমুদ সিদ্দিকী।
পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ ও ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের হলরুমে বিকেল ৩টা থেকে ৪টা পর্যন্ত। পরীক্ষার পর বিকেল সাড়ে ৬টায় প্রকাশিত হয় ফলাফল। এরপর সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের কনফারেন্স রুমে বিজ্ঞানবিষয়ক লেখকদের অংশগ্রহণে এক মুক্ত আলোচনা ও প্রশ্নোত্তর পর্ব অনুষ্ঠিত হয়। প্রশ্নকারী এবং উত্তরদাতাদের মাঝে ম্যাগাজিন ও বই উপহার দেওয়া হয়।
আলোচনার পর একটি ছোট আকারের সাংস্কৃতিক আয়োজন হয়। সবশেষে বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করা হয় এবং তাদের মাঝে সনদপত্র ও পদক বিতরণের মাধ্যমে অনুষ্ঠানটির পরিসমাপ্তি ঘটে।
জানা যায়, উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীরা ঢাকায় জাতীয় পর্যায়ের প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করবে। সেখান থেকে নির্বাচিতরা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিশ্ব জ্যোতির্বিজ্ঞান ও জ্যোতির্পদার্থবিজ্ঞান অলিম্পিয়াড (ওডব্লিউএইএও), এশিয়া-প্যাসিফিক জ্যোতির্বিজ্ঞান অলিম্পিয়াড (এপিএএও) এবং আন্তর্জাতিক জ্যোতির্বিজ্ঞান অলিম্পিয়াড (আইএও)-এ বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ পাবে। বিশেষ সাফল্য অর্জনকারীরা পাবে পুরস্কার এবং বিদেশে উচ্চশিক্ষার জন্য বৃত্তি সহায়তা।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ অ্যাস্ট্রোনোমিকাল অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান মোশারুল আলম বলেন, ‘আমরা সবাই টলেমির নাম জানি, যিনি বলেছিলেন পৃথিবীকে কেন্দ্র করে সূর্য ঘোরে। পরে কপারনিকাস এ ধারণা পাল্টে বলেন, পৃথিবী সূর্যের চারদিকে ঘুরে। এই ধারণা দুই হাজার বছরের পুরোনো বিশ্বাসকে বদলে দেয়। আজকের দিনে বিজ্ঞানের অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে আমাদের জানার পরিধি এবং চিন্তার জগৎও বিস্তৃত হচ্ছে। কারণ, বিজ্ঞানে কোনো কিছুই চূড়ান্ত সত্য নয়।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা কার্যালয়ের পরিচালক অধ্যাপক ড. মোঃ আবদুল্লাহ আল মাহবুব বলেন, ‘কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় আপনাদের ভবিষ্যতের উচ্চশিক্ষার পথচলায় একটি শক্ত পাথেয় হয়ে উঠবে। অনেকেই হয়তো ভবিষ্যতে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হবেন। অ্যাস্ট্রো অলিম্পিয়াড বর্তমানে দেশের বিভিন্ন বিভাগীয় শহরে অনুষ্ঠিত হচ্ছে, আর কুমিল্লা অঞ্চলে এবারই প্রথমবার এটি অনুষ্ঠিত হচ্ছে। মহাকাশ মিলন ভাই, যিনি বাংলাদেশ অ্যাস্ট্রোনোমিকাল অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান। তাকে আমি অনুরোধ করেছিলাম কুমিল্লাতেও একটি ভেন্যু রাখতে। তিনি সঙ্গে সঙ্গেই সম্মতি দেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘গত বছর কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪০ জনের সিলেকশন ক্যাম্প হওয়ার কথা ছিল, কিন্তু তা সম্ভব হয়নি। আমরা আশা করি, বাংলাদেশ অ্যাস্ট্রোনোমিকাল অ্যাসোসিয়েশনসহ অন্যান্য বিজ্ঞানভিত্তিক সংগঠনের সঙ্গে সমন্বয় করে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে আরও বিজ্ঞানমনস্ক আয়োজনের উদ্যোগ নেওয়া হবে।’
উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোঃ হায়দার আলী বলেন, ‘মহাকাশ বিদ্যা হলো পদার্থবিজ্ঞানের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ শাখা, যেখানে রয়েছে জটিল গণিত, বিশাল অংকের বিশ্লেষণ এবং গভীর আগ্রহ ও চরম আকর্ষণ। তোমরা সবাই জামান নজরুল ইসলামকে চেনো। তিনি বলতেন, এই গ্রহ-বিশ্বের স্রষ্টা কত অসাধারণ ক্ষমতার অধিকারী, যেখানে মহাবিশ্বের যেকোনো গ্যালাক্সি বা গ্রহেই হাইড্রোজেন পরমাণুর বৈশিষ্ট্য একই থাকে। এখান থেকেই বোঝা যায় সৃষ্টিকর্তার সৃষ্টির অপার মহিমা। তোমরা যত বেশি কসমোলজি পড়বে, তত বেশি স্রষ্টাকে উপলব্ধি করতে পারবে।’
কুবি সায়েন্স ক্লাবের সভাপতি জনি সরকার বলেন, ‘কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘জ্যোতির্বিজ্ঞান অলিম্পিয়াড ২০২৫’ এর জেলা পর্যায়ের যে আয়োজন সেটির সাথে সায়েন্স যুক্ত হতে পেরে আমরা আনন্দিত। আমরা এমন আয়োজন আরও করবো ইনশাআল্লাহ! এজন্য সকলের সহযোগিতা কামনা করছি।’