শিরোনাম :
Logo রাজধানীতে বিমান দুর্ঘটনায় নিহত ও আহতদের স্মরণে টেকনাফ প্রেসক্লাবের দোয়া মাহফিল ও আলোচনা সভা Logo বাংলাদেশি না বাঙালি : আমাদের ভবিষ্যৎ কোথায় Logo শিশুদের ঝলসানো শরীর যেন ঝলসানো বাংলাদেশ Logo বিমান বিধ্বস্তে নিহতদের রুহের মাগফিরাত কামনায় কচুয়ায় ওয়ার্ড যুবদলের আয়োজনে দোয়া মাহফিল Logo বিনয়কাঠিতে ছিনতাইয়ের অভিযোগে জনগনের হাতে আটক ২ পুলিশে সোপর্দ Logo পাকিস্তানকে ১৩৪ রানের টার্গেট দিল বাংলাদেশ Logo সাজিদের ইস্যুতে ইবি শিক্ষার্থীদের মৌন অবস্থান, আমরণ অনশনের হুঁশিয়ারি Logo ফিলিপাইনে ভয়াবহ বন্যা Logo ইসরাইলি হামলায় গাজায় নিহত ১৫ Logo বীরগঞ্জে রাস্তার গাছ কাটা ও চাঁদা দাবীর অপরাধে এনসিপি নেতা ও সাবেক ইউপি সদস্য সহ ১০ জনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা

শেষবিদায় দিলেন মেয়ের কফিনে চুমু দিয়ে

  • নীলকন্ঠ ডেস্ক: নীলকন্ঠ ডেস্ক:
  • আপডেট সময় : ০৬:৩৯:১৬ অপরাহ্ণ, মঙ্গলবার, ২২ জুলাই ২০২৫
  • ৭১৪ বার পড়া হয়েছে

বাবার কপালে চুমু দিয়ে প্রতিদিন ক্লাসে যেত মেহেনাজ আফরি হুমায়রা (৯)। আর কখনো বাবার হাত ধরে স্কুলে যাবে না সে। রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হয়ে নিহত হয়েছে মেহেনাজ। মেয়েকে চিরবিদায় দেওয়ার আগে কফিনে বারবার চুমু খাচ্ছিলেন বাবা দেলোয়ার হোসাইন।

মঙ্গলবার সকালে টাঙ্গাইলের সখীপুর উপজেলার হতেয়া কেরানিপাড়া মেহেনাজের গ্রামের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে এমন হৃদয়বিদারক দৃশ্য। মেহেনাজ মাইলস্টোন স্কুল শাখার তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী ছিল। বাবা দেলোয়ার হোসাইন মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক।

তবে বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনায় তিনি ও তাঁর স্ত্রী সুমি আক্তার প্রাণে বেঁচে গেছেন।পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, মাইলস্টোন স্কুলে বিমান দুর্ঘটনায় মেহেনাজের কোনো খবর পাওয়া যাচ্ছিল না। পরে বিকেলের দিকে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) বাবা দেলোয়ার হোসাইন মেয়ের লাশ শনাক্ত করেন।

এরপর মেহেনাজের মৃত্যুর খবরটি বিকেলেই এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। স্থানীয় লোকজন সন্ধ্যার পর থেকেই গ্রামের বাড়িতে ভিড় করেন। রাত দুইটার দিকে অ্যাম্বুলেন্সে লাশ গ্রামের বাড়িতে আসে। এ সময় স্বজনদের আহাজারিতে রাতের আকাশ ভারী হয়ে ওঠে। সবার প্রিয় মেহেনাজের মৃত্যু যেন এলাকাবাসী মেনে নিতে পারছেন না।

উপজেলার হতেয়া গ্রামের আবদুল বাছেদের ছেলে দেলোয়ার হোসাইন ১৫ বছর আগে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের বাংলা বিভাগের প্রভাষক পদে যোগ দেন। ১১ বছর আগে টাঙ্গাইলের মেয়ে সুমি আক্তারকে বিয়ে করেন। তাঁদের একমাত্র মেয়ে মেহেনাজ আফরি হুমায়রা বাবার স্কুলেই তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ত।

দেলোয়ার হোসাইন বলেন, ‘মেহেনাজের ছুটি হয়েছিল। তাকে বলেছিলাম, অপেক্ষা করো, তোমার মা নিতে আসবে। সবচেয়ে কষ্টের বিষয় হচ্ছে, আমার স্ত্রী (সুমি) শ্রেণিকক্ষের কাছে যাওয়ার আগেই ওর সামনে দিয়ে বিমানটি আমার মেয়ের শ্রেণিকক্ষের ভেতর ঢুকে পড়ে। সব ঘটনা আমার স্ত্রীর চোখের সামনেই ঘটেছে। তাঁকে কীভাবে সান্ত্বনা দেব।’ তিনি সরকারের কাছে প্রশ্ন করেন, কোটি লোকের বাসস্থান ঢাকা শহরের ভেতরে কেনো বিমানের প্রশিক্ষণ হয়?

গত কোরবানির ঈদের ছুটিতে মেহেনাজ তার মা–বাবার সঙ্গে গ্রামের বাড়িতে এসেছিলেন। দাদা-দাদির সঙ্গে বেশির ভাগ সময় কাটিয়েছে। নাতনির সেই স্মৃতি ভুলতে পারছেন না দাদা আবদুল বাছেদ। দাদার আর্তনাদে উপস্থিত কেউ চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি।

তিনি শুধু বলছেন, ‘আমার দাদু আর কোনো দিন আসবে না। আর আমাকে দাদু বলে ডাকবে না!আজ সকাল ৯টায় হতেয়া গাবলের বাজারে মেহেনাজের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।

ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ

রাজধানীতে বিমান দুর্ঘটনায় নিহত ও আহতদের স্মরণে টেকনাফ প্রেসক্লাবের দোয়া মাহফিল ও আলোচনা সভা

শেষবিদায় দিলেন মেয়ের কফিনে চুমু দিয়ে

আপডেট সময় : ০৬:৩৯:১৬ অপরাহ্ণ, মঙ্গলবার, ২২ জুলাই ২০২৫

বাবার কপালে চুমু দিয়ে প্রতিদিন ক্লাসে যেত মেহেনাজ আফরি হুমায়রা (৯)। আর কখনো বাবার হাত ধরে স্কুলে যাবে না সে। রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হয়ে নিহত হয়েছে মেহেনাজ। মেয়েকে চিরবিদায় দেওয়ার আগে কফিনে বারবার চুমু খাচ্ছিলেন বাবা দেলোয়ার হোসাইন।

মঙ্গলবার সকালে টাঙ্গাইলের সখীপুর উপজেলার হতেয়া কেরানিপাড়া মেহেনাজের গ্রামের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে এমন হৃদয়বিদারক দৃশ্য। মেহেনাজ মাইলস্টোন স্কুল শাখার তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী ছিল। বাবা দেলোয়ার হোসাইন মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক।

তবে বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনায় তিনি ও তাঁর স্ত্রী সুমি আক্তার প্রাণে বেঁচে গেছেন।পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, মাইলস্টোন স্কুলে বিমান দুর্ঘটনায় মেহেনাজের কোনো খবর পাওয়া যাচ্ছিল না। পরে বিকেলের দিকে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) বাবা দেলোয়ার হোসাইন মেয়ের লাশ শনাক্ত করেন।

এরপর মেহেনাজের মৃত্যুর খবরটি বিকেলেই এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। স্থানীয় লোকজন সন্ধ্যার পর থেকেই গ্রামের বাড়িতে ভিড় করেন। রাত দুইটার দিকে অ্যাম্বুলেন্সে লাশ গ্রামের বাড়িতে আসে। এ সময় স্বজনদের আহাজারিতে রাতের আকাশ ভারী হয়ে ওঠে। সবার প্রিয় মেহেনাজের মৃত্যু যেন এলাকাবাসী মেনে নিতে পারছেন না।

উপজেলার হতেয়া গ্রামের আবদুল বাছেদের ছেলে দেলোয়ার হোসাইন ১৫ বছর আগে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের বাংলা বিভাগের প্রভাষক পদে যোগ দেন। ১১ বছর আগে টাঙ্গাইলের মেয়ে সুমি আক্তারকে বিয়ে করেন। তাঁদের একমাত্র মেয়ে মেহেনাজ আফরি হুমায়রা বাবার স্কুলেই তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ত।

দেলোয়ার হোসাইন বলেন, ‘মেহেনাজের ছুটি হয়েছিল। তাকে বলেছিলাম, অপেক্ষা করো, তোমার মা নিতে আসবে। সবচেয়ে কষ্টের বিষয় হচ্ছে, আমার স্ত্রী (সুমি) শ্রেণিকক্ষের কাছে যাওয়ার আগেই ওর সামনে দিয়ে বিমানটি আমার মেয়ের শ্রেণিকক্ষের ভেতর ঢুকে পড়ে। সব ঘটনা আমার স্ত্রীর চোখের সামনেই ঘটেছে। তাঁকে কীভাবে সান্ত্বনা দেব।’ তিনি সরকারের কাছে প্রশ্ন করেন, কোটি লোকের বাসস্থান ঢাকা শহরের ভেতরে কেনো বিমানের প্রশিক্ষণ হয়?

গত কোরবানির ঈদের ছুটিতে মেহেনাজ তার মা–বাবার সঙ্গে গ্রামের বাড়িতে এসেছিলেন। দাদা-দাদির সঙ্গে বেশির ভাগ সময় কাটিয়েছে। নাতনির সেই স্মৃতি ভুলতে পারছেন না দাদা আবদুল বাছেদ। দাদার আর্তনাদে উপস্থিত কেউ চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি।

তিনি শুধু বলছেন, ‘আমার দাদু আর কোনো দিন আসবে না। আর আমাকে দাদু বলে ডাকবে না!আজ সকাল ৯টায় হতেয়া গাবলের বাজারে মেহেনাজের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।