শিরোনাম :
Logo ঘাতকের বুলেটে সাভারের রাজপথে অত্যন্ত নির্মমভাবে শহীদ হন শিক্ষার্থী ইয়ামিন Logo পলাশবাড়ীতে ধানের শীর্ষ প্রতিকের পক্ষে উঠান বৈঠক অনুষ্ঠিত Logo হাবিপ্রবিতে প্রথমবারের মতো দুই দিনব্যাপী ব্র‍্যাকনেট প্রেজেন্টস আইইইই কম্পিউটার সোসাইটি সামার সিম্পোজিয়াম ২০২৫ Logo সাজিদের মৃত্যু ‘অস্বাভাবিক’ দাবি করে ইবি শিক্ষার্থীদের প্রেস কনফারেন্স Logo শেরপুরে ‘রূপসী শেরপুর’-এর মাসব্যাপী বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি উদ্বোধন Logo জবির উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের প্রথম পুনর্মিলনী অনুষ্ঠিত Logo খাগড়াছড়ির ত্রিপুরা কিশোরীকে ধর্ষণের প্রতিবাদে রাবিতে বিক্ষোভ মিছিল Logo ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র মৃত্যুর ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন Logo সাজিদের জানাজা সম্পন্ন, মৃত্যুরহস্য উদঘাটনে তদন্তের ঘোষণা Logo ঊচত এর দাবীতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ

বিচারহীনতায় বাড়ছে মানব পাচার, কার্যকর উদ্যোগ নেই সরকারের6

দেশে মানব পাচার পরিস্থিতি উদ্বেগজনক রূপ নিয়েছে। ২০১৯ থেকে ২০২৫ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত মানব পাচারের ৪ হাজার ৫৪৬টি মামলা হলেও সাজা হয়েছে মাত্র ১৫৭ জনের। অভিবাসনপ্রত্যাশীদের ঠকিয়ে, উন্নত জীবনের আশ্বাস দিয়ে এবং বিদেশে কর্মসংস্থানের নামে প্রতারণার মাধ্যমে দালাল ও এজেন্সিগুলো দীর্ঘদিন ধরে মানব পাচারের সঙ্গে যুক্ত।

বিদেশে কর্মী পাঠানোর ক্ষেত্রে সিন্ডিকেট ও দালালচক্রের দৌরাত্ম্য থামাতে দীর্ঘদিন ধরেই কার্যকর পদক্ষেপ দাবি করে আসছেন অভিবাসন বিশেষজ্ঞরা। অনেকেই আশা করেছিলেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতায় আসার পর এ খাতে সংস্কার হবে। তবে ১০ মাস পার হলেও দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি নেই।

অভিবাসন বিশেষজ্ঞরা জানান, মানব পাচারের বিপুল সংখ্যক মামলা হলেও সাজাপ্রাপ্তির হার অত্যন্ত কম। বিচারহীনতার কারণে অপরাধীরা জামিনে বেরিয়ে পুনরায় একই অপরাধে জড়াচ্ছে। ফলে দেশের অভিবাসন খাত ঝুঁকির মুখে পড়েছে।

জানা গেছে, এক ভুক্তভোগী ইতালিতে যাওয়ার আশায় জমি বিক্রির মোটা অঙ্কের টাকা তুলে দেন দালালের হাতে। কিন্তু তাকে লিবিয়ায় নিয়ে গিয়ে অপহরণ করে নির্যাতন চালানো হয়। পরিবারকে ভয় দেখিয়ে আদায় করা হয় আরও টাকা। শেষ পর্যন্ত লিবিয়া উপকূলরক্ষীরা তাকে উদ্ধার করে কারাগারে পাঠায়, পরে আইওএম-এর সহায়তায় দেশে ফেরেন।

মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকার অনেক দেশ বাংলাদেশ থেকে কর্মী নেওয়া বন্ধ করেছে, যা মানব পাচারের নেতিবাচক ফল। বিএমইটি তথ্য অনুযায়ী, গত ১২ বছরে ওমান, বাহরাইন, ইরাক, লিবিয়া, সুদান, মিসর, রোমানিয়া, ব্রুনাই ও মালদ্বীপে শ্রমবাজার বন্ধ হয়ে গেছে।

২০২৩ সালে আরব আমিরাতে প্রবাসী বাংলাদেশিদের মিছিলের পর দেশটি ভিসা দেওয়া বন্ধ করে দেয়। এখন পর্যন্ত ভিসা সমস্যা সমাধান হয়নি। এ কারণে দেশটিতে কর্মী প্রেরণ বন্ধ রয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের ট্রাফিকিং ইন পারসনস রিপোর্টেও বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়ায় মানব পাচারের গুরুতর অভিযোগ তোলা হয়েছে। সম্প্রতি বাংলাদেশ-মালয়েশিয়া যৌথ ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকে বিষয়টি আলোচনায় আসে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ জানায়, এই সময়কালে ১৯ হাজার ২৮০ জনকে আসামি করা হলেও সাজা হয়েছে মাত্র ১৫৭ জনের, যার মধ্যে ২৪ জন যাবজ্জীবন ও ১৩৩ জন বিভিন্ন মেয়াদে সাজা পেয়েছেন। বিপরীতে খালাস পেয়েছেন তিন হাজার ১৪১ জন।

এ বিষয়ে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. নেয়ামত উল্যা ভূঁইয়া বলেন, এ বিষয়ে আমার জানা নেই। গণমাধ্যমে এসব বিষয়ে কথা বলার এখতিয়ার উপদেষ্টার (আসিফ নজরুল) রয়েছে।

অভিবাসন ও শরণার্থী বিশেষজ্ঞ আসিফ মুনীর বলেন, মানব পাচার প্রতিরোধে স্বরাষ্ট্র ও প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মধ্যে সমন্বয়ের ঘাটতি রয়েছে। শুধু দেশের আইন প্রয়োগে হবে না, আন্তর্জাতিক সমন্বয় জরুরি।

এ দিকে বায়রা নেতা ফখরুল ইসলাম দাবি করেন, যারা বৈধ পথে বিদেশে যান, তাদের ক্ষেত্রে মানব পাচারের বিষয়টি প্রযোজ্য নয়। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, রিক্রুটিং এজেন্সির অসাধু আচরণ ও প্রতারণাও মানব পাচারের আওতায় পড়ে।

সরকারি কর্মকর্তারা দাবি করেছেন, মানব পাচার ও সিন্ডিকেট দমনে সরকার সোচ্চার, দুদক ও বিএমইটি যৌথভাবে অভিযানও পরিচালনা করেছে।

 

ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ

ঘাতকের বুলেটে সাভারের রাজপথে অত্যন্ত নির্মমভাবে শহীদ হন শিক্ষার্থী ইয়ামিন

বিচারহীনতায় বাড়ছে মানব পাচার, কার্যকর উদ্যোগ নেই সরকারের6

আপডেট সময় : ০১:০৫:৪০ অপরাহ্ণ, রবিবার, ১ জুন ২০২৫

দেশে মানব পাচার পরিস্থিতি উদ্বেগজনক রূপ নিয়েছে। ২০১৯ থেকে ২০২৫ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত মানব পাচারের ৪ হাজার ৫৪৬টি মামলা হলেও সাজা হয়েছে মাত্র ১৫৭ জনের। অভিবাসনপ্রত্যাশীদের ঠকিয়ে, উন্নত জীবনের আশ্বাস দিয়ে এবং বিদেশে কর্মসংস্থানের নামে প্রতারণার মাধ্যমে দালাল ও এজেন্সিগুলো দীর্ঘদিন ধরে মানব পাচারের সঙ্গে যুক্ত।

বিদেশে কর্মী পাঠানোর ক্ষেত্রে সিন্ডিকেট ও দালালচক্রের দৌরাত্ম্য থামাতে দীর্ঘদিন ধরেই কার্যকর পদক্ষেপ দাবি করে আসছেন অভিবাসন বিশেষজ্ঞরা। অনেকেই আশা করেছিলেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতায় আসার পর এ খাতে সংস্কার হবে। তবে ১০ মাস পার হলেও দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি নেই।

অভিবাসন বিশেষজ্ঞরা জানান, মানব পাচারের বিপুল সংখ্যক মামলা হলেও সাজাপ্রাপ্তির হার অত্যন্ত কম। বিচারহীনতার কারণে অপরাধীরা জামিনে বেরিয়ে পুনরায় একই অপরাধে জড়াচ্ছে। ফলে দেশের অভিবাসন খাত ঝুঁকির মুখে পড়েছে।

জানা গেছে, এক ভুক্তভোগী ইতালিতে যাওয়ার আশায় জমি বিক্রির মোটা অঙ্কের টাকা তুলে দেন দালালের হাতে। কিন্তু তাকে লিবিয়ায় নিয়ে গিয়ে অপহরণ করে নির্যাতন চালানো হয়। পরিবারকে ভয় দেখিয়ে আদায় করা হয় আরও টাকা। শেষ পর্যন্ত লিবিয়া উপকূলরক্ষীরা তাকে উদ্ধার করে কারাগারে পাঠায়, পরে আইওএম-এর সহায়তায় দেশে ফেরেন।

মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকার অনেক দেশ বাংলাদেশ থেকে কর্মী নেওয়া বন্ধ করেছে, যা মানব পাচারের নেতিবাচক ফল। বিএমইটি তথ্য অনুযায়ী, গত ১২ বছরে ওমান, বাহরাইন, ইরাক, লিবিয়া, সুদান, মিসর, রোমানিয়া, ব্রুনাই ও মালদ্বীপে শ্রমবাজার বন্ধ হয়ে গেছে।

২০২৩ সালে আরব আমিরাতে প্রবাসী বাংলাদেশিদের মিছিলের পর দেশটি ভিসা দেওয়া বন্ধ করে দেয়। এখন পর্যন্ত ভিসা সমস্যা সমাধান হয়নি। এ কারণে দেশটিতে কর্মী প্রেরণ বন্ধ রয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের ট্রাফিকিং ইন পারসনস রিপোর্টেও বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়ায় মানব পাচারের গুরুতর অভিযোগ তোলা হয়েছে। সম্প্রতি বাংলাদেশ-মালয়েশিয়া যৌথ ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকে বিষয়টি আলোচনায় আসে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ জানায়, এই সময়কালে ১৯ হাজার ২৮০ জনকে আসামি করা হলেও সাজা হয়েছে মাত্র ১৫৭ জনের, যার মধ্যে ২৪ জন যাবজ্জীবন ও ১৩৩ জন বিভিন্ন মেয়াদে সাজা পেয়েছেন। বিপরীতে খালাস পেয়েছেন তিন হাজার ১৪১ জন।

এ বিষয়ে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. নেয়ামত উল্যা ভূঁইয়া বলেন, এ বিষয়ে আমার জানা নেই। গণমাধ্যমে এসব বিষয়ে কথা বলার এখতিয়ার উপদেষ্টার (আসিফ নজরুল) রয়েছে।

অভিবাসন ও শরণার্থী বিশেষজ্ঞ আসিফ মুনীর বলেন, মানব পাচার প্রতিরোধে স্বরাষ্ট্র ও প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মধ্যে সমন্বয়ের ঘাটতি রয়েছে। শুধু দেশের আইন প্রয়োগে হবে না, আন্তর্জাতিক সমন্বয় জরুরি।

এ দিকে বায়রা নেতা ফখরুল ইসলাম দাবি করেন, যারা বৈধ পথে বিদেশে যান, তাদের ক্ষেত্রে মানব পাচারের বিষয়টি প্রযোজ্য নয়। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, রিক্রুটিং এজেন্সির অসাধু আচরণ ও প্রতারণাও মানব পাচারের আওতায় পড়ে।

সরকারি কর্মকর্তারা দাবি করেছেন, মানব পাচার ও সিন্ডিকেট দমনে সরকার সোচ্চার, দুদক ও বিএমইটি যৌথভাবে অভিযানও পরিচালনা করেছে।