শিরোনাম :

তিতাস থেকে তারাপুর—প্রযুক্তি, বিনিয়োগ ও রাজনৈতিক সদিচ্ছায় খুলতে পারে নতুন অর্থনৈতিক দ্বার

বাংলাদেশের জ্বালানি-নির্ভর অর্থনীতির কাঠামোয় এখনো ব্রাহ্মণবাড়িয়ার গ্যাস-সম্পদ প্রত্যাশিত গুরুত্ব পায়নি। অথচ এই জেলার তিতাস, সালদা, তারাপুর ও কাশিরামপুর গ্যাসক্ষেত্র বহন করে অসাধারণ ভূতাত্ত্বিক সম্ভাবনা। আধুনিক প্রযুক্তি, সময়োপযোগী বিনিয়োগ এবং রাজনৈতিক সদিচ্ছার সমন্বয়ে এই সম্পদ জাতীয় জ্বালানি নিরাপত্তা ও টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির মূল চালিকাশক্তি হয়ে উঠতে পারে।

তিতাস গ্যাসক্ষেত্র: বাংলাদেশের গ্যাস ইতিহাসের মুকুটমণি
১৯৬২ সালে আবিষ্কৃত ও ১৯৬৮ সালে উৎপাদন শুরু করা তিতাস গ্যাসক্ষেত্র এখনো দেশের সর্ববৃহৎ উৎপাদন ক্ষেত্র। ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর ও আশপাশের এলাকায় অবস্থিত এই ক্ষেত্র থেকে বর্তমানে দৈনিক প্রায় ৩৯৫ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উত্তোলন করা হয়।

মূল চ্যালেঞ্জ

কূপগুলোর চাপ ক্রমশ হ্রাস পাচ্ছে।
বিগত এক দশকে রিজার্ভ মডেল হালনাগাদ হয়নি।
প্রস্তাবিত পদক্ষেপ
১. ওয়েলহেড কম্প্রেশন ও Rigless Intervention প্রযুক্তি
২. পুরনো কূপসমূহের পুনর্বিন্যাস ও রিমডেলিং
৩. স্বাধীন রিজার্ভ নিরীক্ষা ও আপডেটেড রিজার্ভ মডেল তৈরি

সালদা গ্যাসক্ষেত্র: সম্ভাবনার ছায়ায় অপূর্ণ ব্যবহার
১৯৯৬ সালে কসবার বায়েক ইউনিয়নে আবিষ্কৃত সালদা গ্যাসক্ষেত্র থেকে দৈনিক মাত্র ৩ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উত্তোলন হয়। অথচ প্রাথমিক হিসাব অনুযায়ী এখানে ২০০ বিলিয়ন ঘনফুটেরও বেশি রিজার্ভ রয়েছে।

সীমাবদ্ধতা
পূর্ণাঙ্গ ৩ডি সিসমিক জরিপ হয়নি।
হরাইজন্টাল ড্রিলিং বা গভীর অনুসন্ধান অনুপস্থিত।

প্রস্তাবনা
১. আন্তর্জাতিক অংশীদারিত্বে ৩ডি সিসমিক জরিপ।
২. PPP (Public-Private Partnership) মডেলে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন।

তারাপুর গ্যাসক্ষেত্র: সীমান্ত রাজনীতির জটিলতায় আটকে থাকা সম্ভাবনা
বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত থেকে মাত্র ৫০০ গজ দূরত্বে অবস্থিত এই ক্ষেত্র নিয়ে স্থানীয় অভিযোগ রয়েছে যে, ভারতের ত্রিপুরায় ONGC ইতোমধ্যে একই রিজার্ভ থেকে গ্যাস উত্তোলন করছে; অথচ বাংলাদেশের অংশে তেমন কোনো কার্যকর অনুসন্ধান হয়নি।

মূল সমস্যা

কৌশলগত অনুসন্ধানে সরকারি অবহেলা।
সীমান্ত ইস্যুতে ভারতকে অঘোষিত সুবিধা দেওয়ার অভিযোগ।
প্রস্তাবিত করণীয়
১. যৌথ সীমান্ত জরিপ ও আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষণ।
২. তারাপুরকে একটি স্বতন্ত্র অন্বেষণ ব্লক হিসেবে ঘোষণা।
৩. বিষয়টি সংসদীয় ও আন্তর্জাতিক আলোচনায় উপস্থাপন।

কাশিরামপুর গ্যাসক্ষেত্র: অনাবিষ্কৃত সম্ভাবনার ভাণ্ডার
২০০০ দশকে অনুসন্ধান হলেও পূর্ণাঙ্গ কূপ খনন হয়নি। এর সীমান্তঘেঁষা অবস্থান কৌশলগত দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ।

প্রস্তাবিত পদক্ষেপ
১. Magnetotelluric Survey ও Exploratory Drilling.
২. অভিজ্ঞ আন্তর্জাতিক কোম্পানি যেমন Schlumberger ও Halliburton-এর প্রযুক্তিগত সহায়তা গ্রহণ।

উন্নয়নের পথনির্দেশ: প্রযুক্তি ও বিনিয়োগ
বিশ্বের অনেক উন্নয়নশীল দেশ প্রযুক্তি, বিনিয়োগ এবং রাজনৈতিক সদিচ্ছার মাধ্যমে তাদের গ্যাসসম্পদকে ব্যবহারযোগ্য উন্নয়নের ইঞ্জিনে রূপ দিয়েছে—যেমন ভারতের কৃষ্ণা-গোদাবরী বেসিন, মিশরের জোহর ক্ষেত্র, কিংবা মোজাম্বিকের রোভুমা ব্লক।

প্রস্তাবিত কৌশলসমূহ

AI সমন্বিত 3D Seismic Imaging.
Horizontal ও Directional Drilling.
সীমান্ত অঞ্চলে Modular Rig ব্যবহার।
PSC, Tax Holiday ও প্রতিযোগিতামূলক বিডিং।
Single-Window Licensing.
Energy Investment Priority Zone ঘোষণা।
স্থানীয় নেতৃত্ব ও রাজনৈতিক সদিচ্ছা
ভূঁইয়া ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান, বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ ও আন্তর্জাতিক ব্যবসায়ী আলহাজ্ব কবীর আহমেদ ভূঁইয়া বলেন, ‘ব্রাহ্মণবাড়িয়ার গ্যাস-সম্পদ কেবল একটি জেলার নয়—এটি পুরো জাতির শক্তি। স্বচ্ছ নীতি ও জনগণের সক্রিয় অংশগ্রহণের মাধ্যমে আমরা এই সম্পদকে কাজে লাগাতে চাই।’

তিনি ভবিষ্যতে এই ইস্যুতে একটি গণভিত্তিক আন্দোলনের ইঙ্গিত দিয়েছেন। তিনি আরো বলেন, ‘আমি আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪ (কসবা-আখাউড়া) আসন থেকে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী। যদি জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে সংসদে যেতে পারি, তাহলে কসবায় সালদা, তারাপুর ও কাশিরামপুর গ্যাসক্ষেত্রসহ তিতাস গ্যাসক্ষেত্রের সর্বোচ্চ ব্যবহারে আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীদের আমন্ত্রণ জানিয়ে একটি আধুনিক গ্যাস উৎপাদন ও উন্নয়ন মডেল বাস্তবায়ন করব।’

এখনই সময় অবহেলিত সম্ভাবনাকে জাতীয় সম্পদে রূপান্তর করার
তিতাস, সালদা, তারাপুর ও কাশিরামপুর—এই চারটি ক্ষেত্র যদি যথাযথভাবে কাজে না লাগে, তবে তা জাতীয় জ্বালানি নিরাপত্তার জন্য এক বিশাল সুযোগ হারানোর পাশাপাশি একটি ভবিষ্যৎ সংকটের কারণও হতে পারে। এই সম্ভাবনাকে বাস্তব উন্নয়নে রূপ দিতে হলে প্রয়োজন—প্রযুক্তির প্রয়োগ, বিনিয়োগে উৎসাহ এবং স্থানীয়-জাতীয় নেতৃত্বের যৌথ সদিচ্ছা।

ট্যাগস :

হাসনাতের উপর সন্ত্রাসী হামলার প্রতিবাদে ইবিতে বিক্ষোভ

তিতাস থেকে তারাপুর—প্রযুক্তি, বিনিয়োগ ও রাজনৈতিক সদিচ্ছায় খুলতে পারে নতুন অর্থনৈতিক দ্বার

আপডেট সময় : ০৩:০৫:০০ অপরাহ্ণ, রবিবার, ৪ মে ২০২৫

বাংলাদেশের জ্বালানি-নির্ভর অর্থনীতির কাঠামোয় এখনো ব্রাহ্মণবাড়িয়ার গ্যাস-সম্পদ প্রত্যাশিত গুরুত্ব পায়নি। অথচ এই জেলার তিতাস, সালদা, তারাপুর ও কাশিরামপুর গ্যাসক্ষেত্র বহন করে অসাধারণ ভূতাত্ত্বিক সম্ভাবনা। আধুনিক প্রযুক্তি, সময়োপযোগী বিনিয়োগ এবং রাজনৈতিক সদিচ্ছার সমন্বয়ে এই সম্পদ জাতীয় জ্বালানি নিরাপত্তা ও টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির মূল চালিকাশক্তি হয়ে উঠতে পারে।

তিতাস গ্যাসক্ষেত্র: বাংলাদেশের গ্যাস ইতিহাসের মুকুটমণি
১৯৬২ সালে আবিষ্কৃত ও ১৯৬৮ সালে উৎপাদন শুরু করা তিতাস গ্যাসক্ষেত্র এখনো দেশের সর্ববৃহৎ উৎপাদন ক্ষেত্র। ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর ও আশপাশের এলাকায় অবস্থিত এই ক্ষেত্র থেকে বর্তমানে দৈনিক প্রায় ৩৯৫ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উত্তোলন করা হয়।

মূল চ্যালেঞ্জ

কূপগুলোর চাপ ক্রমশ হ্রাস পাচ্ছে।
বিগত এক দশকে রিজার্ভ মডেল হালনাগাদ হয়নি।
প্রস্তাবিত পদক্ষেপ
১. ওয়েলহেড কম্প্রেশন ও Rigless Intervention প্রযুক্তি
২. পুরনো কূপসমূহের পুনর্বিন্যাস ও রিমডেলিং
৩. স্বাধীন রিজার্ভ নিরীক্ষা ও আপডেটেড রিজার্ভ মডেল তৈরি

সালদা গ্যাসক্ষেত্র: সম্ভাবনার ছায়ায় অপূর্ণ ব্যবহার
১৯৯৬ সালে কসবার বায়েক ইউনিয়নে আবিষ্কৃত সালদা গ্যাসক্ষেত্র থেকে দৈনিক মাত্র ৩ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উত্তোলন হয়। অথচ প্রাথমিক হিসাব অনুযায়ী এখানে ২০০ বিলিয়ন ঘনফুটেরও বেশি রিজার্ভ রয়েছে।

সীমাবদ্ধতা
পূর্ণাঙ্গ ৩ডি সিসমিক জরিপ হয়নি।
হরাইজন্টাল ড্রিলিং বা গভীর অনুসন্ধান অনুপস্থিত।

প্রস্তাবনা
১. আন্তর্জাতিক অংশীদারিত্বে ৩ডি সিসমিক জরিপ।
২. PPP (Public-Private Partnership) মডেলে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন।

তারাপুর গ্যাসক্ষেত্র: সীমান্ত রাজনীতির জটিলতায় আটকে থাকা সম্ভাবনা
বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত থেকে মাত্র ৫০০ গজ দূরত্বে অবস্থিত এই ক্ষেত্র নিয়ে স্থানীয় অভিযোগ রয়েছে যে, ভারতের ত্রিপুরায় ONGC ইতোমধ্যে একই রিজার্ভ থেকে গ্যাস উত্তোলন করছে; অথচ বাংলাদেশের অংশে তেমন কোনো কার্যকর অনুসন্ধান হয়নি।

মূল সমস্যা

কৌশলগত অনুসন্ধানে সরকারি অবহেলা।
সীমান্ত ইস্যুতে ভারতকে অঘোষিত সুবিধা দেওয়ার অভিযোগ।
প্রস্তাবিত করণীয়
১. যৌথ সীমান্ত জরিপ ও আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষণ।
২. তারাপুরকে একটি স্বতন্ত্র অন্বেষণ ব্লক হিসেবে ঘোষণা।
৩. বিষয়টি সংসদীয় ও আন্তর্জাতিক আলোচনায় উপস্থাপন।

কাশিরামপুর গ্যাসক্ষেত্র: অনাবিষ্কৃত সম্ভাবনার ভাণ্ডার
২০০০ দশকে অনুসন্ধান হলেও পূর্ণাঙ্গ কূপ খনন হয়নি। এর সীমান্তঘেঁষা অবস্থান কৌশলগত দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ।

প্রস্তাবিত পদক্ষেপ
১. Magnetotelluric Survey ও Exploratory Drilling.
২. অভিজ্ঞ আন্তর্জাতিক কোম্পানি যেমন Schlumberger ও Halliburton-এর প্রযুক্তিগত সহায়তা গ্রহণ।

উন্নয়নের পথনির্দেশ: প্রযুক্তি ও বিনিয়োগ
বিশ্বের অনেক উন্নয়নশীল দেশ প্রযুক্তি, বিনিয়োগ এবং রাজনৈতিক সদিচ্ছার মাধ্যমে তাদের গ্যাসসম্পদকে ব্যবহারযোগ্য উন্নয়নের ইঞ্জিনে রূপ দিয়েছে—যেমন ভারতের কৃষ্ণা-গোদাবরী বেসিন, মিশরের জোহর ক্ষেত্র, কিংবা মোজাম্বিকের রোভুমা ব্লক।

প্রস্তাবিত কৌশলসমূহ

AI সমন্বিত 3D Seismic Imaging.
Horizontal ও Directional Drilling.
সীমান্ত অঞ্চলে Modular Rig ব্যবহার।
PSC, Tax Holiday ও প্রতিযোগিতামূলক বিডিং।
Single-Window Licensing.
Energy Investment Priority Zone ঘোষণা।
স্থানীয় নেতৃত্ব ও রাজনৈতিক সদিচ্ছা
ভূঁইয়া ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান, বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ ও আন্তর্জাতিক ব্যবসায়ী আলহাজ্ব কবীর আহমেদ ভূঁইয়া বলেন, ‘ব্রাহ্মণবাড়িয়ার গ্যাস-সম্পদ কেবল একটি জেলার নয়—এটি পুরো জাতির শক্তি। স্বচ্ছ নীতি ও জনগণের সক্রিয় অংশগ্রহণের মাধ্যমে আমরা এই সম্পদকে কাজে লাগাতে চাই।’

তিনি ভবিষ্যতে এই ইস্যুতে একটি গণভিত্তিক আন্দোলনের ইঙ্গিত দিয়েছেন। তিনি আরো বলেন, ‘আমি আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪ (কসবা-আখাউড়া) আসন থেকে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী। যদি জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে সংসদে যেতে পারি, তাহলে কসবায় সালদা, তারাপুর ও কাশিরামপুর গ্যাসক্ষেত্রসহ তিতাস গ্যাসক্ষেত্রের সর্বোচ্চ ব্যবহারে আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীদের আমন্ত্রণ জানিয়ে একটি আধুনিক গ্যাস উৎপাদন ও উন্নয়ন মডেল বাস্তবায়ন করব।’

এখনই সময় অবহেলিত সম্ভাবনাকে জাতীয় সম্পদে রূপান্তর করার
তিতাস, সালদা, তারাপুর ও কাশিরামপুর—এই চারটি ক্ষেত্র যদি যথাযথভাবে কাজে না লাগে, তবে তা জাতীয় জ্বালানি নিরাপত্তার জন্য এক বিশাল সুযোগ হারানোর পাশাপাশি একটি ভবিষ্যৎ সংকটের কারণও হতে পারে। এই সম্ভাবনাকে বাস্তব উন্নয়নে রূপ দিতে হলে প্রয়োজন—প্রযুক্তির প্রয়োগ, বিনিয়োগে উৎসাহ এবং স্থানীয়-জাতীয় নেতৃত্বের যৌথ সদিচ্ছা।