শিরোনাম :
Logo শেরপুরে ৪ দিনব্যাপী রোভার মেট কোর্স অনুষ্ঠিত Logo মাদক সেবনের অভিযোগে বহিষ্কার, হুঁশিয়ারি দিলেন বৈষম্যবিরোধী নেত্রী Logo ফিনল্যান্ডে মাঝ আকাশে দুই হেলিকপ্টারের সংঘর্ষ, নিহত ৫ Logo নেত্রকোনায় বগি রেখে চলে গেল ট্রেনের ইঞ্জিন Logo যুক্তরাষ্ট্রে ভয়াবহ টর্নেডোতে ২৭ জনের প্রাণহানী Logo ইবিতে বিভাগের নাম পরিবর্তনে দাবিতে শিক্ষার্থীদের অবস্থান কর্মসূচি   Logo মেইভেনের আয়োজনে সর্ববৃহৎ ইংলিশ অলিম্পিয়াড সম্পন্ন  Logo বড়ভাই ডেভিড হ্যান্টে, মেজভাই খুন — গ্রেপ্তার ১ Logo দর্শনা থানা পুলিশের অভিযানে ৬ কেজি গাজাসহ দুজন আটক Logo চাঁদপুরে ৪৬ তম জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সপ্তাহের উদ্ভোধন বিজ্ঞান চর্চায় শিক্ষার্থীদের আরো বেশি মনোযোগী হতে হবে

‘আয়নাঘরে হাহাকার ছিল ভয়ংকর’

  • নীলকন্ঠ ডেস্ক: নীলকন্ঠ ডেস্ক:
  • আপডেট সময় : ০২:৫৮:৫০ অপরাহ্ণ, রবিবার, ১ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • ৭৩৯ বার পড়া হয়েছে

মেঘলা আবহাওয়াতেও বাইরের আলোয় চোখ মেলতে কষ্ট হচ্ছিল মানুষটার। টানা পাঁচ বছরের বেশি সময় সূর্যের মুখ দেখার সুযোগ হয়নি তার। প্রায় অর্ধ যুগ সময় ধরে বন্দী ছিলেন এক বদ্ধ ঘরে, যে ঘরে দিনের আলো ঢোকার অনুমতি ছিল না। কম পাওয়ারের বাল্ব, প্রচন্ড ফ্যানের শব্দ আর তা ছাপিয়ে অন্য বন্দীদের আর্তনাদ ছিল তার প্রতিদিনের সঙ্গী।

মাইকেল চাকমাকে ২০১৯ সালে অপহরণ করা হয়, তারপর তার জায়গা হয় বাংলাদেশের কুখ্যাত আয়না ঘরে। পাঁচ বছরের বেশি সময় ধরে বন্দি থাকার পর যখন তাকে ছেড়ে দেওয়া হয় ততদিনে তার পরিবার তাকে মৃত ভেবে শেষকৃত্য অনুষ্ঠান করে ফেলেছেন। ঢাকার রাস্তায় দাঁড়িয়ে মাইকেল মনে করতে পারছিলেন না তার বোনের নাম্বারও।

গত ৫ আগস্ট বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখে পদত্যাগ করে দেশ ছাড়েন শেখ হাসিনা। এরপর থেকেই আয়না ঘরের বন্দিদের মুক্তি দেওয়া শুরু হয়।

বন্দিদের মুক্তির খবর দেখে ঢাকা থেকে ২০০ কিলোমিটার দূরে বসে মাইকেলের বোন ভাবছিলেন তার ভাইও কি আছেন এই বন্দিদের মধ্যে।

২০১৯ সালের এপ্রিলে যেদিন মাইকেল চাকমাকে জোরপূর্বক  চোখ বেঁধে গাড়িতে তুলে নেওয়া হয়,তিনি ভেবেছিলেন এটাই শেষ।

বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্ব চট্টগ্রাম পার্বত্য অঞ্চলের জনগণের অধিকারের জন্য বছরের পর বছর প্রচারণা চালানোর পর তিনি কর্তৃপক্ষের নজরে আসেন। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের মতে, তিনি পার্বত্য চট্টগ্রামে সামরিক বাহিনীর দ্বারা সংঘটিত নির্যাতনের বিরুদ্ধে কঠোরভাবে সোচ্চার ছিলেন এবং এই অঞ্চলে সামরিক শাসনের অবসানের জন্য প্রচারণা চালিয়েছিলেন।

মাইকেলকে অপহরণের একদিন পর, তাকে রাজধানী ঢাকায় ডিরেক্টরেট জেনারেল অব ফোর্সেস ইন্টেলিজেন্স (ডিজিএফআই) কম্পাউন্ডের ভিতরে লুকানো ভবন আয়না ঘরের ভিতরে একটি কক্ষে রাখা হয়।

তিনি বলেছিলেন যে ছোট ঘরটিতে তাকে রাখা হয়েছিল, সেখানে কোনও জানালা ছিল না এবং সূর্যের আলো ছিল না, কেবল দুটি প্রচুর শব্দ করা ফ্যান ছিল।

ওই ঘরে কিছুক্ষণ পরে আপনি সময় এবং দিনের বোধ হারিয়ে ফেলবেন বলে জানান মাইকেল। তিনি বলেন, “আমি অন্যান্য বন্দীদের কান্না শুনতে পেতাম, যদিও আমি তাদের দেখতে পেতাম না, তাদের চিৎকার ছিল ভয়ঙ্কর। ”

তিনি আরও বলেন, “তারা আমাকে একটা চেয়ারে বেঁধে খুব দ্রুত ঘোরাতেন। প্রায়ই, আমাকে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট করার হুমকি দেওয়া হত। তারা জিজ্ঞেস করেছিল আমি কেন হাসিনার সমালোচনা করছি। ”

মাইকেল গুম হওয়ার পর পুরো পরিবার অনেক ট্রমা এবং যন্ত্রণার মধ্য দিয়ে গেছে। তারপর ২০২০ সালের আগস্টে, মাইকেলের বাবা কোভিডের সময় মারা যান। প্রায় ১৮ মাস পরে, পরিবার ভেবে নেয় যে মাইকেলও মারা গেছেন। তার শেষকৃত্য অনুষ্ঠান করে ফেলেছিলেন পরিবার।

বাংলাদেশের  মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলো বলছে, ২০০৯ সালে শেখ হাসিনা নির্বাচিত হওয়ার বছর থেকে ৬০০ টি বলপূর্বক গুমের ঘটনা নথিভুক্ত করা হয়েছে।

পরবর্তী বছরগুলিতে, শেখ হাসিনার সরকার তাদের শাসনের জন্য হুমকিস্বরূপ যে কোনও ভিন্নমতকে স্তব্ধ করার প্রয়াসে তাদের সমালোচক এবং ভিন্নমতাবলম্বীদের টার্গেট করেছে। অবশ্য তিনি এবং তার সরকার এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

তথাকথিত নিখোঁজদের মধ্যে কয়েকজনকে অবশেষে মুক্তি দেওয়া হয়েছে বা আদালতে হাজির করা হয়েছে, অন্যদের মৃত অবস্থায় পাওয়া গেছে। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলছে, প্রায় ১০০ জন এখনও নিখোঁজ রয়েছেন।

কিন্তু রাজধানীতে এই ধরনের একটি কারাগার আছে তার অস্তিত্ব শুধুমাত্র ২০২২ সালের মে মাসে নেত্র নিউজের একটি তদন্তের পরে প্রকাশিত হয়েছিল।

মাইকেলের দেওয়া আয়না ঘরের বর্ণনার সাথে মিল খুজে পাওয়া যায় কাতার এবং ভিয়েতনামে সাবেক বাংলাদেশি রাষ্ট্রদূত মারুফ জামানের বর্ণনারও। মারুফ জামানকে ২০১৭ সালে আয়না ঘরে বন্দি করা হয়েছিল। পরবর্তীতে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয় মুখ না খোলার শর্তে। হাসিনার পদত্যাগের পরেই বিবিসির সাথে কথা বলেছিলেন মারুফ। এর আগে যারা নেত্রা নিউজকে তথ্য দিয়েছিল তাদের সবাই বাংলাদেশের বাইরে ছিলেন।

মারুফও বর্ণনা করেছেন যে কীভাবে তাকে সূর্যালোক ছাড়া একটি ঘরে আটকে রাখা হয়েছিল। ঘরে থাকা ফ্যানের প্রচন্ড শব্দে বাইরের কিছু কানে আসতো না বলেও জানান তিনি।
মারুফ বলেন, “প্রথম সাড়ে চার মাস, এটি একটি মৃত্যু অঞ্চলের মতো ছিল। আমাকে ক্রমাগত মারধর করা হয়েছে, লাথি মেরেছে এবং বন্দুকের মুখে হুমকি দেওয়া হয়েছে। এটা অসহ্য ছিল, আমি ভেবেছিলাম শুধুমাত্র মৃত্যুই আমাকে এই নির্যাতন থেকে মুক্তি দেবে। ”

২০১৯ সালের মার্চের শেষের দিকে তার কন্যা এবং সমর্থকদের দ্বারা একটি প্রচারণার পর অবশেষে তাকে মুক্তি দেওয়া হয়েছিল। এটি ঠিক মাইকেল নিজেকে আয়না ঘরে পাওয়ার এক মাস আগের ঘটনা ছিল।

মাইকেলের মতো ব্যক্তিরা যখন বছরের পর বছর গোপন কারাগারে বন্দী ছিলেন, হাসিনা, তার মন্ত্রীরা এবং তার আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপদেষ্টা গওহর রিজভী অপহরণের অভিযোগ স্পষ্টভাবে প্রত্যাখ্যান করছেন।

এমনকি হাসিনার ছেলে, সজীব ওয়াজেদ জয়, অভিযোগগুলি প্রত্যাখ্যান করে, অন্যদের ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে বলেন, “আমাদের কিছু আইন প্রয়োগকারী নেতৃত্বে থাকা ব্যক্তিরা আইনের বাইরে কাজ করেছিলেন। ”

মাইকেলের পাশাপাশি, আয়না ঘর থেকে আরও অনেকে ছাড়া পান।  যার মধ্যে ইসলামপন্থী রাজনৈতিক দল জামায়াত-ই-ইসলামীর দুই সিনিয়র সদস্য, একজন অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার, আবদুল্লাহি আমান আজমি এবং ব্যারিস্টার আহমেদ বিন কাসেম। তারা দুজনেই প্রায় আট বছর গোপন কারাগারে কাটিয়েছেন।

জেনেভায় জাতিসংঘের মানবাধিকার অফিসের মুখপাত্র রাভিনা শামদাসানির মতে, রাজনীতিবিদ এবং মাইকেলের মতো লোকদের পুনরুত্থান দেখায়, “বাংলাদেশের জন্য নতুন কর্তৃপক্ষের জরুরী যারা এ বিষয়গুলোতে নজর দেবে। ”

এই সপ্তাহের শুরুতে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার ২০০৯ সাল থেকে হাসিনার শাসনামলে নিরাপত্তা সংস্থাগুলির দ্বারা বলপূর্বক গুমের ঘটনা তদন্তের জন্য একটি পাঁচ সদস্যের কমিশন গঠন করেছে।

ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ

শেরপুরে ৪ দিনব্যাপী রোভার মেট কোর্স অনুষ্ঠিত

‘আয়নাঘরে হাহাকার ছিল ভয়ংকর’

আপডেট সময় : ০২:৫৮:৫০ অপরাহ্ণ, রবিবার, ১ সেপ্টেম্বর ২০২৪

মেঘলা আবহাওয়াতেও বাইরের আলোয় চোখ মেলতে কষ্ট হচ্ছিল মানুষটার। টানা পাঁচ বছরের বেশি সময় সূর্যের মুখ দেখার সুযোগ হয়নি তার। প্রায় অর্ধ যুগ সময় ধরে বন্দী ছিলেন এক বদ্ধ ঘরে, যে ঘরে দিনের আলো ঢোকার অনুমতি ছিল না। কম পাওয়ারের বাল্ব, প্রচন্ড ফ্যানের শব্দ আর তা ছাপিয়ে অন্য বন্দীদের আর্তনাদ ছিল তার প্রতিদিনের সঙ্গী।

মাইকেল চাকমাকে ২০১৯ সালে অপহরণ করা হয়, তারপর তার জায়গা হয় বাংলাদেশের কুখ্যাত আয়না ঘরে। পাঁচ বছরের বেশি সময় ধরে বন্দি থাকার পর যখন তাকে ছেড়ে দেওয়া হয় ততদিনে তার পরিবার তাকে মৃত ভেবে শেষকৃত্য অনুষ্ঠান করে ফেলেছেন। ঢাকার রাস্তায় দাঁড়িয়ে মাইকেল মনে করতে পারছিলেন না তার বোনের নাম্বারও।

গত ৫ আগস্ট বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখে পদত্যাগ করে দেশ ছাড়েন শেখ হাসিনা। এরপর থেকেই আয়না ঘরের বন্দিদের মুক্তি দেওয়া শুরু হয়।

বন্দিদের মুক্তির খবর দেখে ঢাকা থেকে ২০০ কিলোমিটার দূরে বসে মাইকেলের বোন ভাবছিলেন তার ভাইও কি আছেন এই বন্দিদের মধ্যে।

২০১৯ সালের এপ্রিলে যেদিন মাইকেল চাকমাকে জোরপূর্বক  চোখ বেঁধে গাড়িতে তুলে নেওয়া হয়,তিনি ভেবেছিলেন এটাই শেষ।

বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্ব চট্টগ্রাম পার্বত্য অঞ্চলের জনগণের অধিকারের জন্য বছরের পর বছর প্রচারণা চালানোর পর তিনি কর্তৃপক্ষের নজরে আসেন। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের মতে, তিনি পার্বত্য চট্টগ্রামে সামরিক বাহিনীর দ্বারা সংঘটিত নির্যাতনের বিরুদ্ধে কঠোরভাবে সোচ্চার ছিলেন এবং এই অঞ্চলে সামরিক শাসনের অবসানের জন্য প্রচারণা চালিয়েছিলেন।

মাইকেলকে অপহরণের একদিন পর, তাকে রাজধানী ঢাকায় ডিরেক্টরেট জেনারেল অব ফোর্সেস ইন্টেলিজেন্স (ডিজিএফআই) কম্পাউন্ডের ভিতরে লুকানো ভবন আয়না ঘরের ভিতরে একটি কক্ষে রাখা হয়।

তিনি বলেছিলেন যে ছোট ঘরটিতে তাকে রাখা হয়েছিল, সেখানে কোনও জানালা ছিল না এবং সূর্যের আলো ছিল না, কেবল দুটি প্রচুর শব্দ করা ফ্যান ছিল।

ওই ঘরে কিছুক্ষণ পরে আপনি সময় এবং দিনের বোধ হারিয়ে ফেলবেন বলে জানান মাইকেল। তিনি বলেন, “আমি অন্যান্য বন্দীদের কান্না শুনতে পেতাম, যদিও আমি তাদের দেখতে পেতাম না, তাদের চিৎকার ছিল ভয়ঙ্কর। ”

তিনি আরও বলেন, “তারা আমাকে একটা চেয়ারে বেঁধে খুব দ্রুত ঘোরাতেন। প্রায়ই, আমাকে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট করার হুমকি দেওয়া হত। তারা জিজ্ঞেস করেছিল আমি কেন হাসিনার সমালোচনা করছি। ”

মাইকেল গুম হওয়ার পর পুরো পরিবার অনেক ট্রমা এবং যন্ত্রণার মধ্য দিয়ে গেছে। তারপর ২০২০ সালের আগস্টে, মাইকেলের বাবা কোভিডের সময় মারা যান। প্রায় ১৮ মাস পরে, পরিবার ভেবে নেয় যে মাইকেলও মারা গেছেন। তার শেষকৃত্য অনুষ্ঠান করে ফেলেছিলেন পরিবার।

বাংলাদেশের  মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলো বলছে, ২০০৯ সালে শেখ হাসিনা নির্বাচিত হওয়ার বছর থেকে ৬০০ টি বলপূর্বক গুমের ঘটনা নথিভুক্ত করা হয়েছে।

পরবর্তী বছরগুলিতে, শেখ হাসিনার সরকার তাদের শাসনের জন্য হুমকিস্বরূপ যে কোনও ভিন্নমতকে স্তব্ধ করার প্রয়াসে তাদের সমালোচক এবং ভিন্নমতাবলম্বীদের টার্গেট করেছে। অবশ্য তিনি এবং তার সরকার এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

তথাকথিত নিখোঁজদের মধ্যে কয়েকজনকে অবশেষে মুক্তি দেওয়া হয়েছে বা আদালতে হাজির করা হয়েছে, অন্যদের মৃত অবস্থায় পাওয়া গেছে। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলছে, প্রায় ১০০ জন এখনও নিখোঁজ রয়েছেন।

কিন্তু রাজধানীতে এই ধরনের একটি কারাগার আছে তার অস্তিত্ব শুধুমাত্র ২০২২ সালের মে মাসে নেত্র নিউজের একটি তদন্তের পরে প্রকাশিত হয়েছিল।

মাইকেলের দেওয়া আয়না ঘরের বর্ণনার সাথে মিল খুজে পাওয়া যায় কাতার এবং ভিয়েতনামে সাবেক বাংলাদেশি রাষ্ট্রদূত মারুফ জামানের বর্ণনারও। মারুফ জামানকে ২০১৭ সালে আয়না ঘরে বন্দি করা হয়েছিল। পরবর্তীতে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয় মুখ না খোলার শর্তে। হাসিনার পদত্যাগের পরেই বিবিসির সাথে কথা বলেছিলেন মারুফ। এর আগে যারা নেত্রা নিউজকে তথ্য দিয়েছিল তাদের সবাই বাংলাদেশের বাইরে ছিলেন।

মারুফও বর্ণনা করেছেন যে কীভাবে তাকে সূর্যালোক ছাড়া একটি ঘরে আটকে রাখা হয়েছিল। ঘরে থাকা ফ্যানের প্রচন্ড শব্দে বাইরের কিছু কানে আসতো না বলেও জানান তিনি।
মারুফ বলেন, “প্রথম সাড়ে চার মাস, এটি একটি মৃত্যু অঞ্চলের মতো ছিল। আমাকে ক্রমাগত মারধর করা হয়েছে, লাথি মেরেছে এবং বন্দুকের মুখে হুমকি দেওয়া হয়েছে। এটা অসহ্য ছিল, আমি ভেবেছিলাম শুধুমাত্র মৃত্যুই আমাকে এই নির্যাতন থেকে মুক্তি দেবে। ”

২০১৯ সালের মার্চের শেষের দিকে তার কন্যা এবং সমর্থকদের দ্বারা একটি প্রচারণার পর অবশেষে তাকে মুক্তি দেওয়া হয়েছিল। এটি ঠিক মাইকেল নিজেকে আয়না ঘরে পাওয়ার এক মাস আগের ঘটনা ছিল।

মাইকেলের মতো ব্যক্তিরা যখন বছরের পর বছর গোপন কারাগারে বন্দী ছিলেন, হাসিনা, তার মন্ত্রীরা এবং তার আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপদেষ্টা গওহর রিজভী অপহরণের অভিযোগ স্পষ্টভাবে প্রত্যাখ্যান করছেন।

এমনকি হাসিনার ছেলে, সজীব ওয়াজেদ জয়, অভিযোগগুলি প্রত্যাখ্যান করে, অন্যদের ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে বলেন, “আমাদের কিছু আইন প্রয়োগকারী নেতৃত্বে থাকা ব্যক্তিরা আইনের বাইরে কাজ করেছিলেন। ”

মাইকেলের পাশাপাশি, আয়না ঘর থেকে আরও অনেকে ছাড়া পান।  যার মধ্যে ইসলামপন্থী রাজনৈতিক দল জামায়াত-ই-ইসলামীর দুই সিনিয়র সদস্য, একজন অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার, আবদুল্লাহি আমান আজমি এবং ব্যারিস্টার আহমেদ বিন কাসেম। তারা দুজনেই প্রায় আট বছর গোপন কারাগারে কাটিয়েছেন।

জেনেভায় জাতিসংঘের মানবাধিকার অফিসের মুখপাত্র রাভিনা শামদাসানির মতে, রাজনীতিবিদ এবং মাইকেলের মতো লোকদের পুনরুত্থান দেখায়, “বাংলাদেশের জন্য নতুন কর্তৃপক্ষের জরুরী যারা এ বিষয়গুলোতে নজর দেবে। ”

এই সপ্তাহের শুরুতে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার ২০০৯ সাল থেকে হাসিনার শাসনামলে নিরাপত্তা সংস্থাগুলির দ্বারা বলপূর্বক গুমের ঘটনা তদন্তের জন্য একটি পাঁচ সদস্যের কমিশন গঠন করেছে।