শিরোনাম :
Logo বেরোবিতে বহিরাগত প্রবেশ নিষিদ্ধ Logo দেশব্যাপী হত্যাকাণ্ড এবং চলমান চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে চুয়াডাঙ্গায় তীব্র প্রতিবাদ Logo উত্তর কচুয়া জাতীয়তাবাদী প্রবাসী কল্যাণ সংগঠনের উদ্যোগে মহিলা দলের বিশাল গনমিছিল Logo কচুয়ায় বিএনপির উদ্যোগে লিফলেট বিতরন ও মিছিল Logo চাঁদপুরে খতিবের উপর হামলার প্রতিবাদে শহর জামায়াতের বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ Logo ইসলামী শ্রমিক আন্দোলন চাঁদপুর জেলা শাখার উদ্যোগে দায়িত্বশীল তারবিয়াত অনুষ্ঠিত Logo চাঁদপুর জেলা বিজেপি’র জেলা কমিটি গঠনকল্পে সমন্বয় সভা আন্দালিভ রহমান পার্থ বাংলাদেশে সুস্থধারার রাজনীতির দিকপাল ………উপাধ্যক্ষ নুরুজ্জামান হীরা Logo আমরা সংস্কার চেয়েছি,জুলাই গণহত্যার বিচার চেয়েছি এবং নতুন সংবিধান চেয়েছি: নাহিদ ইসলাম Logo মিটফোর্ডে হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে হাবিপ্রবিতে বিক্ষোভ Logo ইবিতে শাখা ছাত্রদলের সক্রিয় কর্মীর পদত্যাগ

সরকারি বেধে দেওয়া দামে পাট বিক্রি করতে পারছে না মেহেরপুরের কৃষক

  • Nil Kontho
  • আপডেট সময় : ০৭:৩৬:৪৮ অপরাহ্ণ, মঙ্গলবার, ২৯ আগস্ট ২০১৭
  • ৭৯১ বার পড়া হয়েছে

মাসুদ রানা, মেহেরপুর ॥ সরকারি বেধে দেওয়া দামে পাট বিক্রি করতে পারছেননা মেহেরপুরের কৃষক। সরকারি ক্রয় কেন্দ্রেও পাট নেওয়া হচ্ছে ব্যবসায়ীদের সাথে। মন প্রতি ৯০০ থেকে এক হাজার দরে পাট বিক্রি করে উৎপান খরচই উঠছেনা চাষিদের। ফলে হাঁসি নেই তাদের মাঝে। সরকারি পাট ক্রয় কেন্দ্রের সহ ব্যবস্থাপক বলছেন, সময়মত কৃষকদের পাটের দাম দিতে না পারায় পাট দিতে চাচ্ছেন না কৃষকেরা। ফলে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে পাট কিনছেন তারা।

সোনালি আঁশ ক্ষ্যাত পাটের সে সুদিন আর নেই। তারপরও লাভের আশায় পাট চাষ করে যাচ্ছেন কৃষকেরা। চলতি মৌসূমে সরকার মন প্রতি পাটের মূল্য নির্ধারন করেছেন ১৭৫০ টাকা। তার প্রভাব নেই মেহেরপুরের বাজারে। সরকারের বেধে দেওয়া অর্ধেক দামে পাট বিক্রি করতে হচ্ছে কৃষকদের। ফলে উৎপাদন খরচই উঠছেনা তাদের। বিঘা প্রতি জমিতে পাট উৎপাদন করতে খরচ হচ্ছে ১০ থেকে ১১ হাজার টাকা। আর পাট বিক্রি করতে হচ্ছে ৮ থেকে ৯ হাজার টাকায়।
পাট চাষীরা জানান, সরকার ১৭শ টাকা মন মূল্যে পাট ক্রয় করছেন ব্যবসায়ীদের সাথে ফলে কৃষকেরা সেই দাম পাচ্ছেন না। আমি প্রতি বছর ৫ ,৬ বিঘা পাট চাষ করি। এভাবে যদি পাটের দাম পাই তাহলে আগামী বছরে আর পাট চাষ করব না। কারণ সরকারের দেওয়া পাটের ন্যায্য দাম আমরা পাই না। আমরা ৮শ টাকা থেকে ১ হাজার টাকায় পাট বিক্রয় করতে পারি । এর বেশি পারি না। প্রতি বিঘা পাট চাষ করতে আমাদের খরচ হয় ১২ হাজার টাকা আর আমরা পাট বিক্রয় করে পায় ৯ হাজার টাকা । সরকার যদি কৃষকদের সাথে পাট ক্রয় করেন তাহলে আমরা ভালো দাম পাবো। এতেকরে চাষীরা পাট চাষে আরো আগ্রহী হবে বলে আমি মনে করি।

কৃষকদের অভিযোগ, প্রতি বছর সরকার ঘোষণা দেন কৃষকদের কাছ থেকে পাট কেনার। কিন্তু কোন সময়ই প্রকৃত কৃষকদের কাছ তা নেওয়া হয়না। সরকার পাট কেনা শুরু করেন কৃষকদের হাত থেকে চলে যাবার পর। এদিকে মধ্যসত্বভূগীরা কম দামে কৃষকদের কাছ থেকে পাট কেনেন। পরে চড়া দামে সরকারি ও বেসরকারি মিলগুলোতে বিক্রি করেন তারা।

ব্যবসায়ীরা জানান, গত বছরের পাট ঘরে রয়েছে। এখনও সে পাট বিক্রি করতে পারেননি। মিলগুলোতে পাটের চাহিদাও  দিনদি কম যাচ্ছে। এজন্য কৃষকদের কাছ থেকে কম দামে পাট কিনতে হচ্ছে আমাদের।

পাট ক্রয় কেন্দ্রের সহ ব্যবস্থাপকের দাবি, পাট কেনার ৬ থেকে ৭ মাস পর পাটের দাম দেওয়া হয় কৃষকদের। ফলে তারা পাট দিতে অনাগ্রহ প্রকাশ করেন। বাধ্য হয়েই ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে পাট কিনতে হয় বলে জানান তিনি।
মেহেরপুর সরকারি পাট ক্রয় কেন্দ্রের সহ ব্যবস্থাপক মোঃ ইব্রাহীম জানান, বর্তমান আবহাওয়ার করণে আমরা পাট ক্রয় করতে পারছিনা। আর দ্বিতীয়ত আমরা কৃষকদের কাছ থেকে সরাসরি পাট ক্রয় করার নির্দেশনা থাকলেও আমরা নিতে পারছিনা। কারণ আমরা কৃষকদের সময় মত টাকা পরিশোধ করতে পারছিনা । যার ফলে কৃষকদের কাছ থেকে পাট ক্রয় করতে পারছি না। আর এখানে যারা ব্যবসায়ীরা আছে তাদের কাছে প্রর্যাপ্ত পাট আছে। ব্যবসায়ীদের কাছে থেকে পাট ক্রয় করলে টাকা দিতে দেরী হলেও কোন সমস্যা নাই।

কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, এবার পাটের ফলন ভাল হয়েছে। তবে পাট জাগে কাদা মাটি ব্যাবহারের ফলে পাটের মান নষ্ঠ হয়ে যায়। যার ফলে চাষীরা পাটের ভাল দাম পায় না। এজন্য জেলার পাটের মান ভাল করার জন্য কৃষকদের কাঁদামাটি দিয়ে পাট জাগ না দেবার পরামর্শ দিচ্ছেন তারা।
মেহেরপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরে উপ পরিচালক এস. এম মোস্তাফিজুর রহমান জানান, মেহেরপুরে বিভিন্ন ধরনের ফসলের চাষ হয়ে থাকে কারণ এখানে জলাবদ্ধতা কম থাকে। যেহেতু মাটি সমতল যার ফলে পাট চাষ প্রচুর হয়ে থাকে। জেলায় এবার ২৫ হাজার ৮৪৫ হেক্টর জমিতে পাটের  আবাদ হয়েছে। যা থেকে ৭৭ হাজার ৫৩৫ মেট্রিকটন পাট উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে। এবছরে পাটে ফলন বেশী হবে। আর একটি বিষয় আমাদের দেশীয় যে পাট আছে সেগুলি চাষ করে যদি ভালো মানের আশঁ তৈরী করতে পারে তাহলে কৃষকেরা বেশী লাভবান হবে বলে আমি মনে করি।

ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ

বেরোবিতে বহিরাগত প্রবেশ নিষিদ্ধ

সরকারি বেধে দেওয়া দামে পাট বিক্রি করতে পারছে না মেহেরপুরের কৃষক

আপডেট সময় : ০৭:৩৬:৪৮ অপরাহ্ণ, মঙ্গলবার, ২৯ আগস্ট ২০১৭

মাসুদ রানা, মেহেরপুর ॥ সরকারি বেধে দেওয়া দামে পাট বিক্রি করতে পারছেননা মেহেরপুরের কৃষক। সরকারি ক্রয় কেন্দ্রেও পাট নেওয়া হচ্ছে ব্যবসায়ীদের সাথে। মন প্রতি ৯০০ থেকে এক হাজার দরে পাট বিক্রি করে উৎপান খরচই উঠছেনা চাষিদের। ফলে হাঁসি নেই তাদের মাঝে। সরকারি পাট ক্রয় কেন্দ্রের সহ ব্যবস্থাপক বলছেন, সময়মত কৃষকদের পাটের দাম দিতে না পারায় পাট দিতে চাচ্ছেন না কৃষকেরা। ফলে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে পাট কিনছেন তারা।

সোনালি আঁশ ক্ষ্যাত পাটের সে সুদিন আর নেই। তারপরও লাভের আশায় পাট চাষ করে যাচ্ছেন কৃষকেরা। চলতি মৌসূমে সরকার মন প্রতি পাটের মূল্য নির্ধারন করেছেন ১৭৫০ টাকা। তার প্রভাব নেই মেহেরপুরের বাজারে। সরকারের বেধে দেওয়া অর্ধেক দামে পাট বিক্রি করতে হচ্ছে কৃষকদের। ফলে উৎপাদন খরচই উঠছেনা তাদের। বিঘা প্রতি জমিতে পাট উৎপাদন করতে খরচ হচ্ছে ১০ থেকে ১১ হাজার টাকা। আর পাট বিক্রি করতে হচ্ছে ৮ থেকে ৯ হাজার টাকায়।
পাট চাষীরা জানান, সরকার ১৭শ টাকা মন মূল্যে পাট ক্রয় করছেন ব্যবসায়ীদের সাথে ফলে কৃষকেরা সেই দাম পাচ্ছেন না। আমি প্রতি বছর ৫ ,৬ বিঘা পাট চাষ করি। এভাবে যদি পাটের দাম পাই তাহলে আগামী বছরে আর পাট চাষ করব না। কারণ সরকারের দেওয়া পাটের ন্যায্য দাম আমরা পাই না। আমরা ৮শ টাকা থেকে ১ হাজার টাকায় পাট বিক্রয় করতে পারি । এর বেশি পারি না। প্রতি বিঘা পাট চাষ করতে আমাদের খরচ হয় ১২ হাজার টাকা আর আমরা পাট বিক্রয় করে পায় ৯ হাজার টাকা । সরকার যদি কৃষকদের সাথে পাট ক্রয় করেন তাহলে আমরা ভালো দাম পাবো। এতেকরে চাষীরা পাট চাষে আরো আগ্রহী হবে বলে আমি মনে করি।

কৃষকদের অভিযোগ, প্রতি বছর সরকার ঘোষণা দেন কৃষকদের কাছ থেকে পাট কেনার। কিন্তু কোন সময়ই প্রকৃত কৃষকদের কাছ তা নেওয়া হয়না। সরকার পাট কেনা শুরু করেন কৃষকদের হাত থেকে চলে যাবার পর। এদিকে মধ্যসত্বভূগীরা কম দামে কৃষকদের কাছ থেকে পাট কেনেন। পরে চড়া দামে সরকারি ও বেসরকারি মিলগুলোতে বিক্রি করেন তারা।

ব্যবসায়ীরা জানান, গত বছরের পাট ঘরে রয়েছে। এখনও সে পাট বিক্রি করতে পারেননি। মিলগুলোতে পাটের চাহিদাও  দিনদি কম যাচ্ছে। এজন্য কৃষকদের কাছ থেকে কম দামে পাট কিনতে হচ্ছে আমাদের।

পাট ক্রয় কেন্দ্রের সহ ব্যবস্থাপকের দাবি, পাট কেনার ৬ থেকে ৭ মাস পর পাটের দাম দেওয়া হয় কৃষকদের। ফলে তারা পাট দিতে অনাগ্রহ প্রকাশ করেন। বাধ্য হয়েই ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে পাট কিনতে হয় বলে জানান তিনি।
মেহেরপুর সরকারি পাট ক্রয় কেন্দ্রের সহ ব্যবস্থাপক মোঃ ইব্রাহীম জানান, বর্তমান আবহাওয়ার করণে আমরা পাট ক্রয় করতে পারছিনা। আর দ্বিতীয়ত আমরা কৃষকদের কাছ থেকে সরাসরি পাট ক্রয় করার নির্দেশনা থাকলেও আমরা নিতে পারছিনা। কারণ আমরা কৃষকদের সময় মত টাকা পরিশোধ করতে পারছিনা । যার ফলে কৃষকদের কাছ থেকে পাট ক্রয় করতে পারছি না। আর এখানে যারা ব্যবসায়ীরা আছে তাদের কাছে প্রর্যাপ্ত পাট আছে। ব্যবসায়ীদের কাছে থেকে পাট ক্রয় করলে টাকা দিতে দেরী হলেও কোন সমস্যা নাই।

কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, এবার পাটের ফলন ভাল হয়েছে। তবে পাট জাগে কাদা মাটি ব্যাবহারের ফলে পাটের মান নষ্ঠ হয়ে যায়। যার ফলে চাষীরা পাটের ভাল দাম পায় না। এজন্য জেলার পাটের মান ভাল করার জন্য কৃষকদের কাঁদামাটি দিয়ে পাট জাগ না দেবার পরামর্শ দিচ্ছেন তারা।
মেহেরপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরে উপ পরিচালক এস. এম মোস্তাফিজুর রহমান জানান, মেহেরপুরে বিভিন্ন ধরনের ফসলের চাষ হয়ে থাকে কারণ এখানে জলাবদ্ধতা কম থাকে। যেহেতু মাটি সমতল যার ফলে পাট চাষ প্রচুর হয়ে থাকে। জেলায় এবার ২৫ হাজার ৮৪৫ হেক্টর জমিতে পাটের  আবাদ হয়েছে। যা থেকে ৭৭ হাজার ৫৩৫ মেট্রিকটন পাট উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে। এবছরে পাটে ফলন বেশী হবে। আর একটি বিষয় আমাদের দেশীয় যে পাট আছে সেগুলি চাষ করে যদি ভালো মানের আশঁ তৈরী করতে পারে তাহলে কৃষকেরা বেশী লাভবান হবে বলে আমি মনে করি।