আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে জুলাই ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সাংবাদিকের ভূমিকা শীর্ষক আলোচনা সভা ও শহীদ সাংবাদিক পরিবারের সম্মাননা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মির্জা ফখরুল এ কথাগুলো বলেন। অনুষ্ঠানটির আয়োজন করে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে) ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে)।
নির্বাচন কমিশন দ্রুততম সময়ের মধ্যে সব কাজ শেষ করে নির্বাচনী পরিবেশ তৈরির মাধ্যমে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন দিতে পারবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘দেশের জনগণ নির্বাচন ও ভোটাধিকারের জন্য প্রাণ দিয়েছে। কাজেই আমি মনে করি, নির্বাচন নিয়ে আর কোনো সমস্যা হবে না।’
অনুষ্ঠানে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ঐকমত্য কমিশনে প্রত্যেকটি বিষয়ে মতামত দেওয়া হয়েছে। বেশির ভাগ বিষয়ের সঙ্গে বিএনপি একমত হয়েছে। কতগুলো মৌলিক বিষয়ে বিএনপি একমত হতে পারেনি। ভবিষ্যতে সংসদে বিতর্কের মাধ্যমে এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া যেতে পারে।বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আমি আশাবাদী মানুষ। নির্বাচন তো এ দেশের মানুষ চায়। নির্বাচনের জন্য এ দেশের মানুষ প্রাণ দিয়েছে তো। মানুষ একটা নির্বাচিত প্রতিনিধিত্ব চায় সংসদের মাধ্যমে। এগুলো নিয়ে কোনো সমস্যা নেই। যত দ্রুত সম্ভব একটা নির্বাচিত সরকারের দিকে যাই, গণতন্ত্রে উত্তরণের দিকে যাই।’
মির্জা ফখরুল বলেন, গত ১৭ বছরে বিএনপির প্রায় ৬০ লাখ নেতা–কর্মীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা হয়েছে, ২০ হাজার নেতা-কর্মীকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে, ইলিয়াস আলীসহ ১৭০০ মানুষকে গুম করা হয়েছে। এগুলো বলা প্রয়োজন।
বিএনপি সংস্কারে বাধা দিচ্ছে, এমন খবর পত্রিকায় এসেছে উল্লেখ করে বিষয়টিকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে তাঁর দল তিন দিন আগে সংবাদ সম্মেলন করেছেন বলে জানান বিএনপি মহাসচিব। তিনি বলেন, তাঁদের জন্ম সংস্কারের জন্য। আজ যদি বলা হয়, বিএনপি সংস্কার আটকে দিচ্ছে, তাহলে এটি অন্যায়ভাবে বলা হবে।জুলাই সনদের কথা প্রথম যখন উঠল, তখনই বিএনপি সরকারকে মতামত দিয়েছে উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘কয়েক দিন আগে সরকারের তরফ থেকে মতামত চাওয়া হয়েছে। গতকাল রাতে আমরা পুরো মতামত দিয়েছি।’
সাংবাদিকদের উদ্দেশ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা সামান্য লেখাপড়া করেছি। আপনারা শব্দের মারপ্যাঁচ করে কোথায়, কোনদিকে নিয়ে যেতে চান, সেটা বোঝার মতো ক্ষমতা আমাদের আছে। আমরা তিনবার সরকার চালিয়েছি।যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক আরোপিত ট্যারিফের বিষয়টি উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে যোগ্য ব্যক্তিদের দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা করার দরকার ছিল। এই সময় এখনো পার হয়ে যায়নি।
সীমান্তে হত্যা ও পুশইনের বিষয়ে ফখরুল বলেন, পুশইনকে হালকাভাবে দেখার সুযোগ নেই। সরকারকে এটা গুরুত্বের সঙ্গে দেখতে হবে। জনমত সৃষ্টি করা দরকার। সরকার যেন ভারতের সঙ্গে দর–কষাকষিতে চূড়ান্ত পর্যায়ে যায়। এ ছাড়া পানির হিস্যার বিষয়টি জোরালোভাবে দেখতে হবে। পানি বণ্টনের বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষায় জাতীয় ঐক্যের প্রয়োজন বলেও জানান মির্জা ফখরুল।
ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) সভাপতি মো. শহীদুল ইসলামের সভাপতিত্বে ও ডিইউজে সাধারণ সম্পাদক খুরশীদ আলমের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন—জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম, স্থায়ী কমিটির সদস্য এ জেড এম জাহিদ হোসেন, জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি ও দৈনিক কালের কণ্ঠের সম্পাদক হাসান হাফিজ, বিএফইউজের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ওবায়দুর রহমান শাহীন, মহাসচিব কাদের গণি চৌধুরী, দৈনিক যুগান্তরের সম্পাদক আবদুল হাই সিকদার, দৈনিক আমার দেশের নির্বাহী সম্পাদক সৈয়দ আবদাল রহমান, জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খান, বিএফইউজের সহসভাপতি এ কে এম মহসিন, প্রবাসী সাংবাদিক ইমরান আনসারী, ডিইউজের সহসভাপতি রাশেদুল হক, সাংগঠনিক সম্পাদক এম সাইদ খান, কোষাধ্যক্ষ খন্দকার আলমগীর হোসেন প্রমুখ।