রাজধানীর খালগুলো পুনরুদ্ধার নিয়ে নানা প্রতিশ্রুতি, উদ্যোগ, প্রচেষ্টা, কর্মসূচি, প্রকল্পের শেষ নেই। যে সরকারই থাকুক, মেয়র কিংবা প্রশাসক সিটি করপোরেশনের দায়িত্বে থাকুক—গতানুগতিক পথে হাঁটা, কার্যকর কৌশল অবলম্বন না করা বা বাস্তবমুখী সিদ্ধান্ত নেওয়ার কারণে ঘুরেফিরে খালগুলোর অবস্থা সংকটাপন্নই থেকে যাচ্ছে। ফলে রাজধানীর খালগুলো নিয়ে আমাদের শঙ্কা কোনোভাবেই দূর হয় না।
ঢাকা শহরের খালগুলো এখন ময়লা-আবর্জনার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। সম্প্রতি ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) এলাকার ১৩টি খালের সরেজমিন চিত্র আমাদের সেই হতাশাজনক বাস্তবতাকেই তুলে ধরেছে।
যেখানে থাকার কথা পানির প্রবাহ, সেখানে এখন জমাটবাঁধা বর্জ্য, পলিথিন আর আগাছায় পরিপূর্ণ। চট করে দেখলে খাল বলে মনে হয় না, মনে হয় যেন এক বিশাল আবর্জনার স্তূপ।ডিএনসিসি কর্তৃপক্ষ দাবি করছে যে তারা ১০০ কিলোমিটারের বেশি খাল দখলমুক্ত করে পানির প্রবাহ ফিরিয়ে এনেছে।
কিন্তু বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের তথ্য বলছে, ২৯টি খালের মোট দৈর্ঘ্যই যেখানে ৯৮ কিলোমিটার, সেখানে কীভাবে ১০০ কিলোমিটারের বেশি পরিষ্কার করা সম্ভব? এই তথ্যের গরমিল স্বচ্ছতার অভাবকে প্রকট করে তোলে এবং এ দাবির বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তৈরি করে। দুই সিটি করপোরেশন মিলিয়ে ১০৮ কিলোমিটার বা ১১২ কিলোমিটার খাল নেটওয়ার্কের কাজ শেষ করার দাবিও স্পষ্ট ব্যাখ্যার দাবি রাখে।
যদিও কিছু খাল, যেমন বাউনিয়া খাল, সাংবাদিক কলোনি খাল এবং কল্যাণপুর-খ ও কল্যাণপুর-ঘ খালগুলো তুলনামূলকভাবে পরিষ্কার দেখা গেছে, যা নিঃসন্দেহে ইতিবাচক দিক। বিশেষ করে বাউনিয়া খালের পরিষ্কার ও খননকাজ প্রমাণ করে যে যদি সদিচ্ছা ও সঠিক উদ্যোগ থাকে, তবে খালগুলোকে বাঁচানো সম্ভব। তবে এই বিচ্ছিন্ন সাফল্যগুলো অধিকাংশ খালের করুণ অবস্থার কাছে ম্লান হয়ে যায়। আরামবাগ খাল, রূপনগর খাল, বাইশটেকি খাল এবং রামচন্দ্রপুর খালের অংশবিশেষের যে চিত্র আমরা দেখেছি, তা সত্যিই উদ্বেগজনক।
ডিএনসিসি প্রশাসক নিজেই স্বীকার করেছেন যে খাল পরিষ্কারের এক সপ্তাহের মধ্যেই মানুষ আবার ময়লা ফেলে ভরে ফেলেন। জনসচেতনতার ঘাটতির বিষয়টি প্রকট থাকলেও সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রমের ধারাবাহিকতা এবং কার্যকারিতা নিয়েও কি প্রশ্ন উঠে না? প্রতিবছর বরাদ্দের শতকোটি টাকার সঠিক ব্যবহার হচ্ছে কি?
শুধু কিছু খাল নয়, সব খালকে বর্জ্যমুক্ত করার জন্য একটি সমন্বিত ও ধারাবাহিক অভিযান শুরু করা প্রয়োজন। একবার পরিষ্কার করেই দায়িত্ব শেষ করলে হবে না, নিয়মিত তদারক ও রক্ষণাবেক্ষণের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। কীভাবে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করা যায়, সেদিকে গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন।
খাল পরিষ্কার ও খনন প্রকল্পে বরাদ্দকৃত অর্থ এবং কাজের অগ্রগতি সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জনসমক্ষে প্রকাশ করার একটা সংস্কৃতি গড়ে তোলা জরুরি। সব ধরনের জলাশয় রক্ষার জন্য চাই টেকসই পরিকল্পনা।