আজ বাংলা নববর্ষ। এ দিন বাঙালির খাদ্য-সংস্কৃতির অন্যতম অনুষঙ্গ পান্তা-ইলিশ হলেও, মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তের পাতে এবার ইলিশ উঠছে না সহজে। এক সময় পদ্মার রাজশাহী ও গোয়ালন্দ এলাকায় ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ মিলত। এত বেশি ছিল মাছের প্রাচুর্য যে পচে যাওয়ার ভয়ে সেসব মাটিতে পুঁতে রাখতেন জেলেরা।
কিন্তু এখন সেই দৃশ্য অতীত। ফরাক্কা বাঁধের প্রভাবে পদ্মায় স্রোত কমে যাওয়ায় বড় ইলিশ আর রাজশাহীর পদ্মায় আসে না বলেই মনে করছেন অভিজ্ঞরা। বর্তমানে বাজারে যা ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে, তা আসছে বরিশাল কিংবা খুলনা থেকে।
রাজশাহীর বাজারে গতকাল এক কেজির ইলিশ বিক্রি হয়েছে ১ হাজার ৮০০ থেকে ২ হাজার ২০০ টাকায়। তিন বছর আগেও এই সময়ের দাম ছিল প্রায় ৬০০ টাকায় কম। এমনকি ৪০০-৬০০ গ্রাম ওজনের ছোট ইলিশও এখন বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ২০০–১ হাজার ৪০০ টাকায়, যা আগে ছিল ৮০০–৯০০ টাকার মধ্যে।
নিউমার্কেট এলাকায় ইলিশ কিনতে এসে হতাশ মাজেদুল ইসলাম বলেন, ‘এ বছর একদিনও ইলিশ কিনতে পারিনি। আজ পহেলা বৈশাখে খাওয়ার জন্য এলাম, কিন্তু দাম দেখে সাহসটাই হারিয়ে ফেললাম।’
বিক্রেতারা বলছেন, ইলিশের সরবরাহ যেমন কম, তেমন দামও ক্রয়ক্ষমতার বাইরে। এমন পরিস্থিতিতে গত বছর ইলিশ কেটে ছোট টুকরোতে বিক্রির চেষ্টা করা হয়েছিল, তবে তাতে তেমন সাড়া মেলেনি।
গোয়ালন্দ, রাজশাহী, দৌলতদিয়ার জেলেরা জানাচ্ছেন, এখন সারা দিন জাল টেনেও হাতে গোনা কয়েকটি ইলিশ পাওয়া যায়। পদ্মায় ইলিশের চাহিদা বাড়লেও, স্থানীয় সরবরাহ নেই বললেই চলে। ফলে বরিশাল থেকে এনে চড়া দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।
সবমিলিয়ে, পহেলা বৈশাখে বাঙালির প্রাণের উৎসব যেমন চলছে, তেমনি পান্তা-ইলিশের ঐতিহ্য যেন হয়ে উঠছে শুধুই উচ্চবিত্তের জন্য সংরক্ষিত এক স্মৃতি।