পৃথিবীতে যা কিছু মহান সৃষ্টি চির কল্যাণকর, অর্ধেক তার করিয়াছে নারী অর্ধেক তার নর’। নারী ও পুরুষকে এভাবেই দেখেছেন জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম। বর্তমানে নারীরা কোনো কাজেই পিছিয়ে নেই। তারা তাদের নিজ যোগ্যতায় এগিয়ে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত। ঘরে বাইরে সব পেশায় নিজেদের নিয়োজিত করছে। সৃষ্টি হচ্ছে নতুন নতুন উদ্যোক্তা। অনলাইন ব্যবসায়ের প্রবর্তনের ফলে নারীরা আরও বেশি পরিমাণে সফল উদ্যোক্তায় পরিণত হচ্ছে। তেমনি একজন তানিয়া ইশতিয়াক খান।
বিজয়ী কন্যা তানিয়া চাঁদপুর শহরেই বড় হয়েছেন। প্রাথমিক সম্পন্ন করে মাধ্যমিক পড়েছেন লেডি দেহলভী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, উচ্চ মাধ্যমিক চাঁদপুর সরকারি মহিলা কলেজ এবং ২০১৮ সালে ইংরেজি লিটারেচারে স্নাতক ও ২০২০ সালে স্নাতকোত্তার সম্পন্ন করেন চাঁদপুর সরকারি কলেজ থেকে।
স্নাতকে অধ্যয়নরত অবস্থায় বিয়ে করেন শহরের পুরান বাজারের আরেক বেসরকারি চাকরিজীবী মো. আশিক খানকে। তানিয়া নায়রা খান ও আরিশফা খান নামে দুই কন্যা সন্তানের জননী। স্বামী-সন্তান নিয়ে বর্তমানে থাকেন শহরের পুরান বাজারের শ্বশুর বাড়িতে। আর নিজস্ব ব্যবসা প্রতিষ্ঠানটি খান’স ধাবা বড় পরিসরে চালু আছে শহরের বড় স্টেশন যুমনা রোডে।
তানিয়া ইশতিয়াক খান শিক্ষিত ও কর্মহীন নারীদের জন্য বিজয়ী নারী উন্নয়ন সংস্থা এর মাধ্যমে ২০২০ সাল থেকে বিনা মূল্যে শতাধিক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে হাজার হাজার নারীকে প্রশিক্ষিত করেছেন। এর মধ্যে অনেকেই উদ্যোক্তা হিসেবে নিজের কর্মদক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন। এছাড়া নারী উদ্যোক্তা হওয়ার জন্য বিজয়ীর পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা সব সময় করে আসছে।
একজন উদ্যোক্তার প্রথম এবং প্রধান কাজ হলো স্বপ্ন দেখা। একজন ব্যবসায়ী ও একজন উদ্যোক্তার মধ্যে এটাই পার্থক্য। স্বপ্নবাজ তানিয়া তার মনের লালিত স্বপ্ন পূরণে কাজ করে যাচ্ছেন।
জানা যায়, বিজয়ী নারী উন্নয়ন সংস্থার উদ্যোগে এই পর্যন্ত নতুন উদ্যোক্তা তৈরির লক্ষ্যে শতাধিক হাতে কলমে প্রশিক্ষন প্রদান, নারী ও শিশুদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় বিনামূল্যে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের চিকিৎসা সেবা, ঔষধ বিতরন, চক্ষু সেবা ও চশমা বিতরন, শিক্ষর্থীদের মাঝে শিক্ষা সামগ্রী বিতরন, বিভিন্ন পরীক্ষার ফি প্রদান, মাদ্রাসার ছাত্রদের মাঝে পাঞ্জাবি, কোরআন শরীফসহ শিক্ষা সামগ্রী বিতরন, বিভিন্ন সচেতনতামূলক সভা সেমিনার (মাদক বিরোধী,বাল্য বিবাহ বন্ধ,
নারী নির্যাতন বিরোধী, যৌতুক বিরোধী) আয়োজন, পারিবারিক শৃঙ্খলা রক্ষায় ভূমিকা রাখা, প্রতিবন্ধিদের মাঝে হুইল চেয়ার বিতরন, শীতকালে কম্বল বিতরন, গরমে শরবত ও বিশুদ্ধ পানি বিতরন, রমজানে ইফতার সামগ্রী বিতরন, ঈদে অসহায়দের মাঝে ঈদ সামগ্রী বিতরন,বিভিন্ন অনুষ্ঠানে রান্না করা খাবার বিতরন, গরিব অসহায় রোগীদের চোখের ছানি অপারেশন, গরিব ও অস্বচ্ছল নারীদের বিয়েতে সহায়তা প্রদান, নারীদের বিভিন্ন স্থানে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা, গৃহহীনদের ঘর তৈরির লক্ষ্যে টিন সমেন্টের খুটিসহ নারা রকম নির্মান সামগ্রী বিতরন সহ নানা রকম জন সচেতনতামূলক কার্যক্রম করে আসছে।
শীর্ষস্থানীয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল নীলকন্ঠের প্রতিবেদকের সাথে একান্ত আলাপচারিতায় তিনি বলেন, মনের ভেতরে যে স্বপ্ন, যে প্রত্যাশা সেটা হচ্ছে, নারীদের স্বাবলম্বী ও স্বয়ংসম্পূর্ণ করা।
নারীদের সামাজিক নিরাপত্তাহীনতা, স্বীকৃতিবিহীন নারীর শ্রম, পারিবারিক সহিংসতা, অর্থ-সম্পত্তির ওপর নারীর নিয়ন্ত্রণহীনতা, নারী নির্যাতন ও সহিংসতা বন্ধ হবে বলে আমি বিশ্বাস করি। আমার স্বপ্ন ছিল একজন উদ্যোক্তা হওয়ার। সেই লক্ষ্যে এগিয়ে যাচ্ছি সঙ্গে পরিশ্রম করে যাচ্ছি। শুরুটা অনেক সহজ না হলেও পরিবার এবং বিশেষ একজনের সহযোগিতায় আমি এগিয়ে চলতে সাহস পেয়েছি। পড়াশুনার পাশাপাশি নিজে কিছু একটা করার দৃঢ় ইচ্ছে থেকেই মাথায় আসে অনলাইন ব্যবসার প্ল্যান। তবে এ কাজে সব সময় আমার শ্বশুর বাড়ির মানুষ বিশেষ করে আমার ননাশ নিলুফার করিম আপু আর ফুফু শ্বাশুড়ি খালেদা ইয়াসমিন রুবি অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন। সেই সঙ্গে বিশেষ মানুষটির সাপোর্টের কথাও জানান তিনি।
তিনি বলেন, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম তার ‘নারী’ কবিতার ভাষায় , ‘বিশ্বে যা কিছু মহান সৃষ্টি চিরকল্যাণকর, অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর।’ কবিতাটি তিনি শেষ করেছিলেন এভাবে, ‘সেদিন সুদূর নয়, যেদিন ধরণী পুরুষের সঙ্গে গাহিবে নারীরও জয়!’ কিন্তু সে ‘সুদূর নয়’ যে আসলে কত দূর, তা আজও আমাদের অজানা।
জীবন দর্শনের প্রতিটি পর্বে দৃষ্টিপাত করলে দেখা যায়, সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠা ও মানুষের মৌলিক অধিকার সংরক্ষণে ইসলামের বিধান রয়েছে। কিন্তু মানুষ তা মানছে না বলেই নানাবিধ অশান্তির ঘটনা ঘটে। আরেকটি বিষয়, ইসলাম বিধান প্রবর্তনের ক্ষেত্রে নারী ও পুরুষের ন্যায্য অধিকার, সম্মান ও নিরাপত্তা রক্ষায় তৎপর। তাই নারী নির্যাতন ও নিপীড়ন বন্ধে ইসলামি অনুশাসন মেনে চলার কোনো বিকল্প নেই। আর ইসলামের বিধানগুলো নারীর অগ্রযাত্রা কিংবা উন্নতির জন্য কোনো প্রতিবন্ধক নয়। তাই আমার বিশ্বাস নারীরা স্বাবলম্বী হলে মুক্তি পাবে পারিবারিক ও জাতীয় অর্থনৈতিক সংকট।
তিনি আরও বলেন, নতুন নারী উদ্যোক্তাদের জন্য আমার পরামর্শ- স্বাবলম্বী হয়ে বেঁচে থাকার স্বার্থকতাটাই আলাদা। তাই বলবো, একজন সফল নারী উদ্যোক্তা হলে আপনাকে অবশ্যই ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে মাঠে নেমে পড়তে হবে। প্রতিবন্ধকতা থাকবেই, তবে ইচ্ছা থাকলে তা ওভারকাম করা সম্ভব। স্বপ্ন, সামান্য পুঁজি আর পরিশ্রম থাকলেই অনেক দূর এগিয়ে যাওয়া যায়।
তানিয়া ইশতিয়াক বলেন, “আমরা নহে দেবী, নহে সমান্য নারী, আমরা নারী, আমরা পারি, আমরাই বিজয়ী” এই স্লোগানে ২০২০ সালে প্রতিষ্ঠিত নারী উন্নয়ন সংস্থা বিজয়ীর মাধ্যমে মানুষের মৌলিক চাহিদাগুলো পূরনের লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছি গত পাঁচ বছর যাবত। বিশেষ করে নারীদের নিজ পরিচয় পরিচিত হওয়া,কর্মসংস্হান তৈরী করা,নিজের পরিবারে আয়ের উৎস হওয়াসহ সমাজে বিভিন্ন সচেতনতা মূলক কাজ করে যাচ্ছি । আমার লক্ষ্য হচ্ছে নারীদের আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী করা,নারী ও শিশুদের শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা। জনকল্যাণে আপনাদের দোয়া ভালবাসা নিয়ে আমৃত্যু কাজ করে যাব ইনশাআল্লাহ।