আলমডাঙ্গা থানা পুলিশ ধরে নিয়ে নির্যাতন, মিথ্যা মামলা দিয়ে কোর্টে হাজির – সংবাদ সম্মেলনে পরিবারের অভিযোগ

চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা থানার পুলিশ এক নিরীহ যুবককে মাছ চাষ প্রকল্প থেকে ধরে নিয়ে চোখ-মুখ বেঁধে বিভিন্ন স্থানে ঘুরিয়ে বেড়ানোর পর, গুরুতর আহত অবস্থায় আদালতে হাজির করেছে বলে অভিযোগ করেছেন তার মা মোছাঃ ফজিলা খাতুন। তিনি সোমবার (৮ এপ্রিল) চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে এই অভিযোগ করেন।

সংবাদ সম্মেলনে মা ফজিলা খাতুনের পক্ষে তার মেয়ে মোছাম্ম রেশমা খাতুন (সাদ্দামের মেজো বোন) বলেন, তার একমাত্র পুত্র পিয়াল মাহমুদ সাদ্দাম (বয়স প্রায় ৩০), গত ৭ এপ্রিল রাত ১০:৩০টার দিকে আলমডাঙ্গার হাড়গাড়ী বিল এলাকায় মাছ চাষের সময় পুলিশের হাতে আটক হন। আলমডাঙ্গা থানার অফিসার ইনচার্জ মাসুদুর রহমান, এসআই সামসুল এবং আরও কয়েকজন কর্মকর্তা ঘটনাস্থলে উপস্থিত থেকে তাকে আটক করেন বলে জানান ফজিলা খাতুন।

তিনি অভিযোগ করে বলেন, “আমার ছেলেকে ধরে নিয়ে যাওয়ার সময় তার সঙ্গে মাছ বিক্রির ৪ লাখ ৬০ হাজার টাকা, দুটি অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল, একটি রুপার চেইন ও একটি রুপার ব্যাসলেট ছিল। এরপর পুলিশ তাকে চোখ ও মুখ বেঁধে বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যায়। আমি থানায় গিয়ে ছেলের খোঁজ নিতে চাইলে পুলিশ কোনো তথ্য দিতে অস্বীকৃতি জানায়।”

রেশমা খাতুন আরও বলেন, “পরদিন সকাল ৯টায় আবার থানায় গেলে কোনো তথ্য দেওয়া হয়নি। পরে সকাল ১০:৩০টার দিকে আমার ছেলেকে মৃতপ্রায় অবস্থায় কোর্টে হাজির করা হয়। তার শরীরে অসংখ্য জখমের চিহ্ন ছিল।”

তিনি আরো অভিযোগ করেন, “পুলিশ দাবি করেছে, তাকে দুর্লভপুরের একটি ফার্ম থেকে অস্ত্রসহ আটক করা হয়েছে, কিন্তু এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট। পুরো হাড়গাড়ী গ্রামের মানুষ জানে যে, তাকে প্রকল্প এলাকা থেকেই ধরা হয়েছে।”

তিনি এ ঘটনাকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও রাজনৈতিক প্রতিহিংসার ফল বলে অভিহিত করেন। তার ভাষ্য অনুযায়ী, পুত্র সাদ্দাম বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত এবং বিগত ১৭ বছর ধরে সক্রিয়ভাবে দলীয় কর্মকাণ্ডে অংশ নিচ্ছেন। আওয়ামী লীগ সরকারের ‘দুঃশাসনের’ বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ায় তার বিরুদ্ধে একাধিক মিথ্যা মামলা হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।

গ্রেফতারকৃত সাদ্দামের মা ফজিলা খাতুন বলেন, “আমার ছেলেকে থামাতে আওয়ামী ফ্যাসিস্ট সরকার বারবার গ্রেপ্তার করেছে। প্রতিবারই ৩-৪টি করে মামলা দিয়ে তাকে জড়িয়ে ফেলা হয়েছে। এমনকি রাজশাহীর পুরোনো মামলাও তার নামে লাগানো হয়েছে। এভাবে পরিকল্পিতভাবে তাকে সন্ত্রাসী বানানো হয়েছে।”

তিনি দাবি করেন, অতীতেও তার স্বামী ও পরিবারের সদস্যদের ক্রসফায়ার দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়েছে এবং অর্থ আদায়ের চেষ্টা চালানো হয়েছে। “আমরা বহু রাত নির্ঘুম কাটিয়েছি এই ভয় আর দুঃস্বপ্ন নিয়ে। আমার ছেলে সন্ত্রাসী নয়, সে একজন দেশপ্রেমিক এবং দলের কর্মী।”

সংবাদ সম্মেলনের শেষ পর্যায়ে কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, “আমি কোনো রাজনৈতিক ভাষা জানি না, কিন্তু আমি জানি আমার ছেলে নিরপরাধ। আমি একজন মা হিসেবে ন্যায়বিচার চাই। আমার সন্তান যেন আর নির্যাতনের শিকার না হয়।”

সংবাদ সম্মেলনে গ্রেফতারকৃত সাদ্দামের মা ফজিলা খাতুন ও মেজো বোন রেশমা খাতুন ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন সাদ্দামের স্ত্রী ঝুমুর খাতুন সাদ্দামের কন্যা রোদেলা ও পুত্র আব্রাহাম।

এ বিষয়ে আলমডাঙ্গা থানার পুলিশের কোনো বক্তব্য এখনও পাওয়া যায়নি।

ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ

আলমডাঙ্গা থানা পুলিশ ধরে নিয়ে নির্যাতন, মিথ্যা মামলা দিয়ে কোর্টে হাজির – সংবাদ সম্মেলনে পরিবারের অভিযোগ

আপডেট সময় : ০৪:৪১:২৮ অপরাহ্ণ, বুধবার, ৯ এপ্রিল ২০২৫

চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা থানার পুলিশ এক নিরীহ যুবককে মাছ চাষ প্রকল্প থেকে ধরে নিয়ে চোখ-মুখ বেঁধে বিভিন্ন স্থানে ঘুরিয়ে বেড়ানোর পর, গুরুতর আহত অবস্থায় আদালতে হাজির করেছে বলে অভিযোগ করেছেন তার মা মোছাঃ ফজিলা খাতুন। তিনি সোমবার (৮ এপ্রিল) চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে এই অভিযোগ করেন।

সংবাদ সম্মেলনে মা ফজিলা খাতুনের পক্ষে তার মেয়ে মোছাম্ম রেশমা খাতুন (সাদ্দামের মেজো বোন) বলেন, তার একমাত্র পুত্র পিয়াল মাহমুদ সাদ্দাম (বয়স প্রায় ৩০), গত ৭ এপ্রিল রাত ১০:৩০টার দিকে আলমডাঙ্গার হাড়গাড়ী বিল এলাকায় মাছ চাষের সময় পুলিশের হাতে আটক হন। আলমডাঙ্গা থানার অফিসার ইনচার্জ মাসুদুর রহমান, এসআই সামসুল এবং আরও কয়েকজন কর্মকর্তা ঘটনাস্থলে উপস্থিত থেকে তাকে আটক করেন বলে জানান ফজিলা খাতুন।

তিনি অভিযোগ করে বলেন, “আমার ছেলেকে ধরে নিয়ে যাওয়ার সময় তার সঙ্গে মাছ বিক্রির ৪ লাখ ৬০ হাজার টাকা, দুটি অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল, একটি রুপার চেইন ও একটি রুপার ব্যাসলেট ছিল। এরপর পুলিশ তাকে চোখ ও মুখ বেঁধে বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যায়। আমি থানায় গিয়ে ছেলের খোঁজ নিতে চাইলে পুলিশ কোনো তথ্য দিতে অস্বীকৃতি জানায়।”

রেশমা খাতুন আরও বলেন, “পরদিন সকাল ৯টায় আবার থানায় গেলে কোনো তথ্য দেওয়া হয়নি। পরে সকাল ১০:৩০টার দিকে আমার ছেলেকে মৃতপ্রায় অবস্থায় কোর্টে হাজির করা হয়। তার শরীরে অসংখ্য জখমের চিহ্ন ছিল।”

তিনি আরো অভিযোগ করেন, “পুলিশ দাবি করেছে, তাকে দুর্লভপুরের একটি ফার্ম থেকে অস্ত্রসহ আটক করা হয়েছে, কিন্তু এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট। পুরো হাড়গাড়ী গ্রামের মানুষ জানে যে, তাকে প্রকল্প এলাকা থেকেই ধরা হয়েছে।”

তিনি এ ঘটনাকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও রাজনৈতিক প্রতিহিংসার ফল বলে অভিহিত করেন। তার ভাষ্য অনুযায়ী, পুত্র সাদ্দাম বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত এবং বিগত ১৭ বছর ধরে সক্রিয়ভাবে দলীয় কর্মকাণ্ডে অংশ নিচ্ছেন। আওয়ামী লীগ সরকারের ‘দুঃশাসনের’ বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ায় তার বিরুদ্ধে একাধিক মিথ্যা মামলা হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।

গ্রেফতারকৃত সাদ্দামের মা ফজিলা খাতুন বলেন, “আমার ছেলেকে থামাতে আওয়ামী ফ্যাসিস্ট সরকার বারবার গ্রেপ্তার করেছে। প্রতিবারই ৩-৪টি করে মামলা দিয়ে তাকে জড়িয়ে ফেলা হয়েছে। এমনকি রাজশাহীর পুরোনো মামলাও তার নামে লাগানো হয়েছে। এভাবে পরিকল্পিতভাবে তাকে সন্ত্রাসী বানানো হয়েছে।”

তিনি দাবি করেন, অতীতেও তার স্বামী ও পরিবারের সদস্যদের ক্রসফায়ার দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়েছে এবং অর্থ আদায়ের চেষ্টা চালানো হয়েছে। “আমরা বহু রাত নির্ঘুম কাটিয়েছি এই ভয় আর দুঃস্বপ্ন নিয়ে। আমার ছেলে সন্ত্রাসী নয়, সে একজন দেশপ্রেমিক এবং দলের কর্মী।”

সংবাদ সম্মেলনের শেষ পর্যায়ে কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, “আমি কোনো রাজনৈতিক ভাষা জানি না, কিন্তু আমি জানি আমার ছেলে নিরপরাধ। আমি একজন মা হিসেবে ন্যায়বিচার চাই। আমার সন্তান যেন আর নির্যাতনের শিকার না হয়।”

সংবাদ সম্মেলনে গ্রেফতারকৃত সাদ্দামের মা ফজিলা খাতুন ও মেজো বোন রেশমা খাতুন ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন সাদ্দামের স্ত্রী ঝুমুর খাতুন সাদ্দামের কন্যা রোদেলা ও পুত্র আব্রাহাম।

এ বিষয়ে আলমডাঙ্গা থানার পুলিশের কোনো বক্তব্য এখনও পাওয়া যায়নি।