রাবিতে বাইরের শিক্ষার্থীদের মাস্টার্সের সুযোগ, বাদ জাতীয় ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়

  • নীলকন্ঠ ডেস্ক: নীলকন্ঠ ডেস্ক:
  • আপডেট সময় : ১১:২৯:৫৪ পূর্বাহ্ণ, মঙ্গলবার, ২৫ মার্চ ২০২৫
  • ৭১৬ বার পড়া হয়েছে

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) নিয়মিত স্নাতকোত্তর (মাস্টার্স) ডিগ্রি কোর্সে দেশের যেকোনো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, অধিভুক্ত কলেজ এবং অন্য বিভাগ থেকে স্নাতক সম্পন্ন করা শিক্ষার্থীরা ভর্তি হতে পারবেন। তবে সুযোগ পাচ্ছেন না জাতীয়, উন্মুক্ত, প্রাইভেট ও ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনস্থ মাদরাসা শিক্ষার্থীরা। আসন ফাঁকা থাকা সাপেক্ষে ভর্তির ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীকে অবশ্যই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে।

সোমবার (২৪ মার্চ) বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সদস্য অধ্যাপক ড. নিজাম উদ্দীন তথ্যটি নিশ্চিত করেছেন।

তিনি বলেন, ‘এটা সিন্ডিকেটে নয় মূলত একাডেমিক কাউন্সিলের আলোচনার ভিত্তিতে সিদ্ধান্তটি গৃহীত হয়। পরে সিন্ডিকেট সভায় শুধু অনুমোদিত হয়েছে। এখানে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় বলতে জাতীয় ও উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য কোনো সুযোগ রাখা হয়নি। একইভাবে, প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় ও ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স পড়ুয়া মাদরাসা শিক্ষার্থীরাও এই সুযোগ পাবেন না।’

বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট সূত্রে জানা গেছে, গত ৯ মার্চ অনুষ্ঠিত রাবির ৫৩৭তম সিন্ডিকেট সভায় এই সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীর আবেদনের জন্য স্নাতক (সম্মান) পরীক্ষায় ন্যূনতম সিজিপিএ ৩.০০ থাকতে হবে। এছাড়া স্নাতক পাশের পর তিন শিক্ষাবর্ষের মধ্যে ভর্তির জন্য আবেদন করতে হবে। অনুষদের অধিকর্তার তত্ত্বাবধানে বিভাগগুলো আসন ফাঁকা থাকা সাপেক্ষে পৃথকভাবে নিজ নিজ বিভাগে ভর্তি পরীক্ষার আয়োজন করবেন। তবে ভর্তি হতে শিক্ষার্থীকে অবশ্যই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাদেশ অনুযায়ী, শিক্ষার্থীরা স্নাতক শেষ করে মাস্টার্সে সরাসরি ভর্তি হন। স্নাতক পাস করার পর ৩ বছর পর্যন্ত এই সুযোগ থাকে। তবে স্নাতক পাস করার পর অনেক শিক্ষার্থী বিভিন্ন কারণে স্নাতকোত্তরে ভর্তি হয় না। এই ফাঁকা আসন পূর্ণ করার জন্যই বাইরের শিক্ষার্থীদের ভর্তির সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

তবে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের এমন সিদ্ধান্তে মনঃক্ষুণ্ন হয়েছেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। সদ্য অনার্স সম্পন্ন করা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী সানজিদা ইসলাম বলেন, ‘যেহেতু ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে, তাহলে এর আগেই কেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বাদ দেওয়া হচ্ছে? ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েও নিয়মিত মাস্টার্স প্রোগ্রাম চালু আছে, সেখানে ইউজিসি অনুমোদিত সব বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাই আবেদন করতে পারছেন। রাবির মতো একটি ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে এ ধরনের সিদ্ধান্ত খুবই দুঃখজনক।’

ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা ভর্তি হলেও কেন তাদের এই সুযোগ থেকে বঞ্চিত করা হবে—এমন প্রশ্নের জবাবে অধ্যাপক নিজাম উদ্দীন বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষে ভর্তির সুযোগ তো সবাই পায় না। এখানে একটি নির্দিষ্ট ক্রাইটেরিয়া বা মানদণ্ড নির্ধারণ করতেই হয়। যদিও তারা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্ভুক্ত, তারা সরাসরি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও সংশ্লিষ্ট সুযোগ-সুবিধার অধীনে পড়াশোনা করেন না। কার্যত তারা কলেজের শিক্ষার্থী হিসেবেই বিবেচিত।’

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) ড. মোহা. ফরিদ উদ্দীন খান বলেন, ‘স্নাতক শেষে অনেক বিভাগের শিক্ষার্থী চলে যাওয়ায় মাস্টার্সে আসন ফাঁকাই থাকে। বিশেষ করে কৃষি অনুষদে এটা বেশি দেখা যাচ্ছে। ফলে আসন ফাঁকা থাকা সাপেক্ষে অন্যরা ভর্তির সুযোগ পাবে। তবে অবশ্যই পরীক্ষার মাধ্যমে ভর্তি হতে হবে।’

প্রসঙ্গত, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভাগ ও ইনস্টিটিউটগুলোতে নিয়মিত মাস্টার্সে আলাদাভাবে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া হতো না। তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়মিত মাস্টার্সে ভর্তি পরীক্ষা শুরুর পর বিষয়টি আলোচনায় আসে। নিয়মিত মাস্টার্সে ভর্তি প্রক্রিয়া চালু না থাকলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগ ও ইনস্টিটিউটে সন্ধ্যাকালীন মাস্টার্স প্রোগ্রাম চালু আছে— যা নিয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া রয়েছে।

ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ

রাবিতে বাইরের শিক্ষার্থীদের মাস্টার্সের সুযোগ, বাদ জাতীয় ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়

আপডেট সময় : ১১:২৯:৫৪ পূর্বাহ্ণ, মঙ্গলবার, ২৫ মার্চ ২০২৫

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) নিয়মিত স্নাতকোত্তর (মাস্টার্স) ডিগ্রি কোর্সে দেশের যেকোনো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, অধিভুক্ত কলেজ এবং অন্য বিভাগ থেকে স্নাতক সম্পন্ন করা শিক্ষার্থীরা ভর্তি হতে পারবেন। তবে সুযোগ পাচ্ছেন না জাতীয়, উন্মুক্ত, প্রাইভেট ও ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনস্থ মাদরাসা শিক্ষার্থীরা। আসন ফাঁকা থাকা সাপেক্ষে ভর্তির ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীকে অবশ্যই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে।

সোমবার (২৪ মার্চ) বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সদস্য অধ্যাপক ড. নিজাম উদ্দীন তথ্যটি নিশ্চিত করেছেন।

তিনি বলেন, ‘এটা সিন্ডিকেটে নয় মূলত একাডেমিক কাউন্সিলের আলোচনার ভিত্তিতে সিদ্ধান্তটি গৃহীত হয়। পরে সিন্ডিকেট সভায় শুধু অনুমোদিত হয়েছে। এখানে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় বলতে জাতীয় ও উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য কোনো সুযোগ রাখা হয়নি। একইভাবে, প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় ও ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স পড়ুয়া মাদরাসা শিক্ষার্থীরাও এই সুযোগ পাবেন না।’

বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট সূত্রে জানা গেছে, গত ৯ মার্চ অনুষ্ঠিত রাবির ৫৩৭তম সিন্ডিকেট সভায় এই সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীর আবেদনের জন্য স্নাতক (সম্মান) পরীক্ষায় ন্যূনতম সিজিপিএ ৩.০০ থাকতে হবে। এছাড়া স্নাতক পাশের পর তিন শিক্ষাবর্ষের মধ্যে ভর্তির জন্য আবেদন করতে হবে। অনুষদের অধিকর্তার তত্ত্বাবধানে বিভাগগুলো আসন ফাঁকা থাকা সাপেক্ষে পৃথকভাবে নিজ নিজ বিভাগে ভর্তি পরীক্ষার আয়োজন করবেন। তবে ভর্তি হতে শিক্ষার্থীকে অবশ্যই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাদেশ অনুযায়ী, শিক্ষার্থীরা স্নাতক শেষ করে মাস্টার্সে সরাসরি ভর্তি হন। স্নাতক পাস করার পর ৩ বছর পর্যন্ত এই সুযোগ থাকে। তবে স্নাতক পাস করার পর অনেক শিক্ষার্থী বিভিন্ন কারণে স্নাতকোত্তরে ভর্তি হয় না। এই ফাঁকা আসন পূর্ণ করার জন্যই বাইরের শিক্ষার্থীদের ভর্তির সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

তবে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের এমন সিদ্ধান্তে মনঃক্ষুণ্ন হয়েছেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। সদ্য অনার্স সম্পন্ন করা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী সানজিদা ইসলাম বলেন, ‘যেহেতু ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে, তাহলে এর আগেই কেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বাদ দেওয়া হচ্ছে? ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েও নিয়মিত মাস্টার্স প্রোগ্রাম চালু আছে, সেখানে ইউজিসি অনুমোদিত সব বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাই আবেদন করতে পারছেন। রাবির মতো একটি ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে এ ধরনের সিদ্ধান্ত খুবই দুঃখজনক।’

ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা ভর্তি হলেও কেন তাদের এই সুযোগ থেকে বঞ্চিত করা হবে—এমন প্রশ্নের জবাবে অধ্যাপক নিজাম উদ্দীন বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষে ভর্তির সুযোগ তো সবাই পায় না। এখানে একটি নির্দিষ্ট ক্রাইটেরিয়া বা মানদণ্ড নির্ধারণ করতেই হয়। যদিও তারা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্ভুক্ত, তারা সরাসরি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও সংশ্লিষ্ট সুযোগ-সুবিধার অধীনে পড়াশোনা করেন না। কার্যত তারা কলেজের শিক্ষার্থী হিসেবেই বিবেচিত।’

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) ড. মোহা. ফরিদ উদ্দীন খান বলেন, ‘স্নাতক শেষে অনেক বিভাগের শিক্ষার্থী চলে যাওয়ায় মাস্টার্সে আসন ফাঁকাই থাকে। বিশেষ করে কৃষি অনুষদে এটা বেশি দেখা যাচ্ছে। ফলে আসন ফাঁকা থাকা সাপেক্ষে অন্যরা ভর্তির সুযোগ পাবে। তবে অবশ্যই পরীক্ষার মাধ্যমে ভর্তি হতে হবে।’

প্রসঙ্গত, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভাগ ও ইনস্টিটিউটগুলোতে নিয়মিত মাস্টার্সে আলাদাভাবে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া হতো না। তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়মিত মাস্টার্সে ভর্তি পরীক্ষা শুরুর পর বিষয়টি আলোচনায় আসে। নিয়মিত মাস্টার্সে ভর্তি প্রক্রিয়া চালু না থাকলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগ ও ইনস্টিটিউটে সন্ধ্যাকালীন মাস্টার্স প্রোগ্রাম চালু আছে— যা নিয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া রয়েছে।