মানুষের হাঁপিয়ে ওঠার জন্য সবচেয়ে বড় কারণ হলো, হার্ট ব্যক্তির প্রয়োজনের সময় নির্দিষ্ট পরিমাণের চেয়ে আরও অধিক পরিমাণে রক্ত পাম্প করতে অসামর্থ্য হয়। হার্ট অধিক পরিমাণে রক্ত পাম্প করার জন্য তার গতি বৃদ্ধি করে থাকে। তবে এই গতি বৃদ্ধিরও একটা সীমা থাকে। তার চেয়ে বেশি বৃদ্ধি করলে আরও বেশি রক্ত পাম্প করতে পারে না। তাই প্রতিটি ব্যক্তিকেই তার হার্টের লিমিট অতিক্রম করা অসম্ভব। কেউ হাঁপিয়ে উঠলে তার শরীরের প্রতিটি অঙ্গ, বিশেষ করে মাংসপেশি, ব্রেন ও অন্যান্য অঙ্গ অত্যাধিক অক্সিজেন ও খাদ্যবস্তু গ্রহণ করে থাকে। এতে শরীরে অত্যাবশ্যকীয় মজুদকৃত অক্সিজেন ও রসদ ব্যবহৃত হয়ে যায়। এতে রক্তে অক্সিজেনের ঘাটতি এবং কার্বন-ডাই-অক্সাইডের আধিক্য পরিলক্ষিত হয়। ব্যবহৃত অক্সিজেন ও রসদের মজুদ পূর্ণ করার জন্য মানুষ পরিশ্রম বন্ধ করার পরও হাঁপাতে থাকেন। মানুষ যখন কোনোরূপ স্টেসফুল অবস্থায় পতিত হয়, তখন অজানা আতঙ্কে সারা শরীরে অক্সিজেন ও রসদ (খাদ্যবস্তু) অধিক পরিমাণে ব্যবহৃত হয়ে থাকে শুধু অনিশ্চয়তার কারণে। এমতাবস্থায় কখনো কখনো অল্প পরিশ্রমে বা বিনাপরিশ্রমে হাঁপিয়ে উঠতে পারেন।
ব্যক্তির হার্ট তাকে যতটুকু পরিশ্রম করতে সাপোর্ট করে, তার চেয়ে বেশি পরিশ্রম ও স্ট্রেস নিলে সে হাঁপিয়ে উঠবে। হাঁপিয়ে ওঠার ফলে শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়, রক্তে অক্সিজেন ও কার্বন-ডাই-অক্সাইডের অনুপাত বদলে যায়। শ্বাস-প্রশ্বাস ঘন হয়ে যায়, নাড়ির গতি মানে হার্টের গতি বৃদ্ধি পায়, শরীর প্রচণ্ডভাবে ঘেমে যায়, কারও কারও ক্ষেত্রে বমিবমি ভাব বা বমি হতে পারে, তার সঙ্গে হার্টের অসুস্থতায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের বুকে চাপ, বুকে ব্যথা, শ্বাস নিতে কষ্ট অনুভূত হয়। এসব কর্মকাণ্ড ঘটানোর জন্য অনেক মেকানিজম মানব শরীরে বিদ্যমান আছে। প্রথমে আমাদের ব্রেন পরিস্থিতি অনুধাবন করে ডাইরেক্ট নার্ভের মাধ্যমে কর্ম তৎপরতা বৃদ্ধি করে থাকে এবং তার সঙ্গে হরমনের মাধ্যমেও করে থাকে। এটি একটা জটিল পক্রিয়া তবে কার্যকরি একটা ব্যবস্থা। এই দুভাবে শরীর পরিশ্রম ও স্ট্রেসফুল অবস্থা মোকাবিলা করে। আগে বর্ণিত সব লক্ষণ বা অবস্থা নার্ভ এবং হরমুনের মাধ্যমে ঘটে থাকে। এসব নার্ভ ইমপালস এবং বিভিন্ন ধরনের হরমনের প্রভাবে যত কিছু ঘটে, তা বর্ণনা করে শেষ করা যাবে না, তবে যারা বিভিন্ন অসুস্থতায় আক্রান্ত আছেন (জানা বা অজানায়) তারা সুস্থদের চেয়ে অনেক আগেই হাঁপিয়ে উঠবেন। আপনি কতটুকু পরিশ্রম বা স্ট্রেস নিতে পারছেন ঠিক এ বিষয় বিবেচনা করে, কোনো ব্যক্তির সুস্থতা বা অসুস্থতা অনেকাংশেই নির্ণয় করা যায়।
আগেই আলোচনা করেছি, আপনার হার্ট আপনাকে যতটুকু পরিশ্রম বা স্ট্রেস লিমিট দেবে তার চেয়ে বেশি হলেই আপনি হাঁপিয়ে উঠবেন। বলা হয় যে, ব্যক্তির পরিশ্রম বা স্ট্রেস নেওয়ার পরিমাণ সরাসরি হার্টের কর্মদক্ষতার ওপর নির্ভর করে।
ব্যক্তির বয়স যাই হোক না কেন, সে যদি তার সমসাময়িক ব্যক্তির চেয়ে আগেই হাঁপিয়ে ওঠে, তবে সবার আগে হার্টের সমস্যার কথা ভাবতে হবে। অধিকাংশ সময়ই সহজে হাঁপিয়ে ওঠার মূল কারণ হার্টের সমস্যা। যদি কারও হার্টে ব্লক সৃষ্টি হয়ে থাকে তবে এই ব্যক্তি অল্প পরিশ্রমে হাঁপিয়ে উঠবেন। হার্ট স্পেশালিস্টরা একটি পরীক্ষার মাধ্যমেই তা নির্ণয় করতে পারবেন। যাকে ডাক্তারি পরিভাষায় ইটিটি (এক্সারসাইজ টলারেন্স টেস্ট) বা ইএমটি (ট্রেডমিল টেস্ট) বলা হয়।