যদি শুরুতেই সমস্যাটি ধরা পড়ে, তাহলে দ্রুত চিকিৎসার মাধ্যমে শিশুকে সম্পূর্ণ সুস্থ করা সম্ভব। তবে যদি দেরী হয়, জটিলতা ততো বাড়ে। এর চিকিৎসা কেমন হবে সেটা নির্ভর করে ছিদ্রটি হার্টের কোথায় আছে এবং ছিদ্রটি কতো বড় সেটার ওপর।
ছিদ্র হওয়ার কারণ : মায়ের বয়স ৩৫ বছরের বেশি, ঋতুচক্রের শেষ দিকের নিষেক, মায়ের ডায়াবেটিস থাকলে, গর্ভাবস্থায় মা যদি নিয়মিত ধূমপান বা অ্যালকোহল পান করেন। মানুষে হৃদপিণ্ডে ছিদ্র থাকা মূলত একটি জন্মগত ত্রুটি। সাধারণত গর্ভাবস্থায় শিশুর হৃৎপিণ্ডের বিকাশজনিত সমস্যা কারণে এই ছিদ্র দেখা দিতে পারে।
আবার গর্ভধারণের প্রথম কয়েক মাসের মধ্যে যদি মায়ের রুবেলা হয় বা ভাইরালজনিত ইনফেকশন হলেও ছিদ্র হতে পারে। মায়ের গর্ভকালীন অপুষ্টিজনিত রোগও এর জন্য দায়ী। এ ছাড়া গর্ভকালীন মা যদি খিঁচুনি প্রতিরোধী ওষুধ, কোলেস্টরেল কমানোর ওষুধ, ব্রণের ওষুধ এবং মানসিক রোগের চিকিৎসার ওষুধ খেয়ে থাকেন, সেটিও শিশুর হার্টে বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে।
চিকিৎসা: প্রাথমিকভাবে বুকের এক্স-রে, ইসিজি এবং ইকো-কার্ডিওগ্রাফির মাধ্যমে রোগ নির্ণয় করা যায়। প্রাথমিকভাবে ওষুধ দিয়ে রোগের উপসর্গ আয়ত্তে এনে পরে এর কারেকটিভ সার্জারি করা যেতে পারে। ওষুধ দিয়ে ছিদ্র বন্ধ করা সম্ভব নয়। ছিদ্র বন্ধ হওয়ার থাকলে তা বয়সের সঙ্গে সঙ্গে এমনিতেই বন্ধ হবে। ওষুধ ব্যবহার করে শুধু অসুখটির উপসর্গ কমানো যায়। কখন অস্ত্রোপচার লাগবে এটি নির্ভর করছে ত্রুটির ধরন ও তা শিশুর ওপর কী ধরনের প্রভাব ফেলছে তার ওপর। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, শিশুর উপসর্গগুলো এত বেশি হচ্ছে, যা ওষুধ দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। সে ক্ষেত্রে দ্রুত অস্ত্রোপচার করাতে হবে। ফুসফুসের রক্তচাপ খুব বেড়ে যাওয়ার আগেই তা করাতে হয়। অনেকক্ষেত্রে আবার একাধিক অস্ত্রোপচারেরও প্রয়োজন হতে পারে। কারও ক্ষেত্রে ভূমিষ্ঠ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই এই কারেকটিভ সার্জারির দরকার হয়। এতে আক্রান্ত শিশুরা একসঙ্গে বেশি খাবার খেতে পারে না। তাই তাদের অল্প পরিমাণে পুষ্টিকর খাবার খেতে হয়। এখন অ্যানজিওগ্রাম পদ্ধতিতে বিশেষ ধরনের ডিভাইসের সাহায্যে হার্টের অনেক ছিদ্রই বন্ধ করা সম্ভব। এতে রোগীকে অস্ত্রোপচারের ধকলের ভেতর যেতে হয় না।
প্রতিরোধ : অনেক সময় এই ছিদ্র বিশেষ কোনো কারণ ছাড়াও হতে পারে। তবে ঝুঁকি কমানোর ক্ষেত্রে কিছু ব্যবস্থা আগে থেকেই নেওয়া যায়। নারীদের সময়মতো সব টিকা দেওয়া, বিশেষ করে এমএমআর ভ্যাকসিন দেওয়া ও ডাক্তারে চেকআপে থাকা এবং ২৪ সপ্তাহের গর্ভাবস্থায় একটি অ্যান্টিনেটাল ইকোকার্ডিওগ্রাম করে দেখে নেওয়া যেতে পারে যে গর্ভস্থ শিশুটির কোনো জন্মগত হৃদরোগ আছে কি না।
সূত্র: মায়োক্লিনিক ও বিবিসি