শিরোনাম :
Logo মুমিনুল চান তিনশ’র লিড, দুইশ’তে আটকাতে চায় জিম্বাবুয়ে Logo স্বর্ণের দামে সব রেকর্ড ভেঙে নতুন ইতিহাস Logo দুবাইয়ে বিগ টিকিট লটারি জিতে লাখপতি দুই বাংলাদেশি Logo বাবা হলেন যুক্তরাষ্ট্রে আটক খলিল, দেখতে পারলেন না সদ্যোজাত সন্তানের মুখ Logo এটিএম আজহার মুক্তি না পাওয়ায় আমরা ব্যথিত, তবে হতাশ নই Logo আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ ৩ বিচারপতি থেকে প্রধান বিচারপতি নিয়োগের পক্ষে বিএনপি Logo ধর্ম নিরপেক্ষতা বিলুপ্তে ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে একমত বিএনপি Logo হঠাৎ বৃষ্টিতে চাঁদপুর শহরের মুসলিম কবরস্থান রোড এলাকা সড়কের বেহাল দশা, ভোগান্তিতে এলাকাবাসী Logo ইনসাফের আকাঙ্ক্ষা থেকেই চব্বিশের লড়াই:ব্যারিস্টার ফুয়াদ Logo ইবিতে বিভাগের নাম পরিবর্তসহ দুই দফা দাবিতে প্রশাসন ভবন অবরোধ

যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রপ্তানিতে ১০ বছর ধরে তৃতীয় অবস্থানে বাংলাদেশ

  • নীলকন্ঠ ডেস্ক: নীলকন্ঠ ডেস্ক:
  • আপডেট সময় : ০৮:৩৫:১৬ পূর্বাহ্ণ, মঙ্গলবার, ১৯ নভেম্বর ২০২৪
  • ৭২৫ বার পড়া হয়েছে

সারাবিশ্ব থেকে পোশাক আমদানি কমিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। তার মধ্যে বাংলাদেশ দেশটিতে অন্যতম শীর্ষ পোশাক রপ্তানিকারক। এক প্রাপ্ত তথ্যে দেখা গেছে, ২০২২ সালে যুক্তরাষ্ট্রে যে পরিমাণ পোশাক রপ্তানি হতো, ২০২৩ সালে এসে তা উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে।

বিষয়টি নিয়ে পোশাক রপ্তানি-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, করোনা মহামারির পর বিশ্বের অর্থনীতি নিম্নমুখী হওয়ার এর প্রভাব পড়েছে যুক্তরাষ্ট্রেও। সেখানকার নাগরিকরা পোশাক কেনার চাইতে খাদ্যপণ্য অন্য নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কেনার বিষয়টিতে জোর দিচ্ছেন।

যদিও দেশটির বাজারে পোশাক রপ্তানির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এখনো তৃতীয় অবস্থান ধরে রেখেছে। ওই প্রাপ্ত তথ্যে আরও দেখা যায়, ২০২২ সালে যুক্তরাষ্ট্র পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে মোট ৯ হাজার ৯৮৫ কোটি মার্কিন ডলারের তৈরি পোশাক আমদানি করেছে। কিন্তু পরের বছর তা নেমে আসে ৭ হাজার ৭৮৪ কোটি মার্কিন ডলারে।

চীন, ভিয়েতনাম, বাংলাদেশ, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, কম্বোডিয়া, মেক্সিকো, হন্ডুরাস, পাকিস্তান ও দক্ষিণ কোরিয়া থেকে সাধারণত যুক্তরাষ্ট্র পোশাক আমদানি করে। দেশটিতে রপ্তানি আয়ের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে। প্রথম স্থানে আছে চীন, আর দ্বিতীয় অবস্থানে আছে ভিয়েতনাম।

এ বিষয়ে রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান রাইজিং গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং বিজিএমইএ’র সাবেক সহ-সভাপতি মাহমুদ হাসান খান বাবু গণমাধ্যমকে বলেন, করোনা মহমারির পর যুক্তরাষ্ট্র সরকার সেখানে ভোক্তাদের প্রচুর অর্থ দিয়েছে। অবস্থার একটু উন্নতি হলে সেই অর্থ আবার তুলেও নিয়েছে। এতে জনগণের হাতে অর্থ কমে যায়। তারা ক্রয়ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে।

তিনি আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুদের হার বাড়ানোর ফলে সেখানে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে। মানুষ পোশাক কেনার চাইতে খাদ্যপণ্য, গাড়ির জ্বালানি প্রভৃতি খাতে বেশি পয়সা ব্যয় করেছে। মাহমুদ হাসান বলেন, অর্থনৈতিক অবস্থা খারাপ হলে মানুষ সাধারণত কাপড় কেনা কমিয়ে দেয়। এক্ষেত্রে তাই হয়েছে।

এ বিষয়ে বিজিএমইএ’র সাবেক পরিচালক এবং ডেনিম এক্সপার্ট লি.-এর এএমডি মহিউদ্দিন রুবেল গণমাধ্যমকে জানান, করোনা মহামারির পর এমনিতেই বিশ্বব্যাপী অর্থনীতিতে মন্দা শুরু হয়। এর হাওয়া যুক্তরাষ্ট্রেও লাগে। সেখানকার ক্রেতারা পোশাক কেনা কমিয়ে দেওয়ায় রপ্তানিও কমেছে। তিনি বলেন, করোনার পর পোশাক রপ্তানির যে কমতির ধারা তা ২০২৩ সাল পর্যন্ত বহাল ছিলো। অবশ্য চলতি ২০২৪ সালে সে ধারা থেকে বেরিয়ে রপ্তানি কিছুটা ইতিবাচক ধারায় ফিরেছে।

এদিকে যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানির পরিসংখ্যান থেকে এই সংক্রান্ত বেশকিছু তথ্য জানা গেছে। যুক্তরাষ্ট্রের অফিস অব টেক্সটাইলস অ্যান্ড গার্মেন্টসের (ওটেক্সার) এক প্রতিবেদনে জানা গেছে, দেশটিতে গত ১০ বছরে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি বেড়েছে প্রায় ৫০ দশমিক ৭৯ শতাংশ। তবে ২০১৪ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত পরিসংখ্যান বলছে, যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রপ্তানিতে চীন প্রথম অবস্থানে থাকলেও এক দশকে তাদের পোশাক রপ্তানি কমেছে প্রায় অর্ধেক। আর সে জায়গায় ভিয়েতনাম ও বাংলাদেশ তাদের অবস্থান তৈরি করেছে।

২০১৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রে যেখানে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি ছিল ৪ দশমিক ৮৩ বিলিয়ন ডলার, সেখানে ২০২২ সালে এই রপ্তানি উন্নীত হয় ৯ দশমিক ৭৩ বিলিয়ন ডলারে। যুক্তরাষ্ট্রে প্রথম অবস্থানে থাকা চীনের ২০১৪ সালে পোশাক রপ্তানি ছিলো ২৯ দশমিক ৭৯ বিলিয়ন ডলারের। সেখানে ২০২৩ সালে এই রপ্তানি কমে দাঁড়িয়েছে ১৬ দশমিক ৩২ বিলিয়ন ডলারে; অর্থাৎ এক দশকের মধ্যে রপ্তানি কমেছে প্রায় ৪৫ দশমিক ২৪ বিলিয়ন ডলার।

অন্যদিকে দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা ভিয়েতনামের ২০১৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রপ্তানি ছিলো ৯ দশমিক ২৭ বিলিয়ন ডলারের। সেখানে ২০২৩ সালে এই রপ্তানি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৪ দশমিক ১৮ বিলিয়ন ডলারে, অর্থাৎ গত এক দশকে যুক্তরাষ্ট্রে ভিয়েতনামের রপ্তানি বেড়েছে ৫২ দশমিক ৯৬ শতাংশ।

সেইসঙ্গে ভারত, পাকিস্তান ও কম্বোডিয়ার মতো দেশগুলোরও রপ্তানি বেড়েছে। এর বিপরীতে যুক্তরাষ্ট্রে গত এক দশকে চীনের পাশাপাশি কমেছে দক্ষিণ কোরিয়া, মেক্সিকো, হন্ডুরাস ও ইন্দোনেশিয়ার পোশাক রপ্তানি।

এর মধ্যে দক্ষিণ কোরিয়ার রপ্তানি ১৩ দশমিক ৩১ শতাংশ, মেক্সিকোর ২৪ দশমিক ৬৬ শতাংশ, হন্ডুরাসের ৬ দশমিক ০৮ শতাংশ ও ইন্দোনেশিয়ার রপ্তানি কমেছে ১৭ দশমিক ৯৯ শতাংশ।

যুক্তরাষ্ট্রের এই রপ্তানি খাতের অবস্থা স্বাভাবিক হতে বা আগের পর্যায়ে ফিরিয়ে আনতে কিছুটা সময় লাগবে বলে ধারনা করছেন ব্যবসায়ীরা।

ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ

মুমিনুল চান তিনশ’র লিড, দুইশ’তে আটকাতে চায় জিম্বাবুয়ে

যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রপ্তানিতে ১০ বছর ধরে তৃতীয় অবস্থানে বাংলাদেশ

আপডেট সময় : ০৮:৩৫:১৬ পূর্বাহ্ণ, মঙ্গলবার, ১৯ নভেম্বর ২০২৪

সারাবিশ্ব থেকে পোশাক আমদানি কমিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। তার মধ্যে বাংলাদেশ দেশটিতে অন্যতম শীর্ষ পোশাক রপ্তানিকারক। এক প্রাপ্ত তথ্যে দেখা গেছে, ২০২২ সালে যুক্তরাষ্ট্রে যে পরিমাণ পোশাক রপ্তানি হতো, ২০২৩ সালে এসে তা উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে।

বিষয়টি নিয়ে পোশাক রপ্তানি-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, করোনা মহামারির পর বিশ্বের অর্থনীতি নিম্নমুখী হওয়ার এর প্রভাব পড়েছে যুক্তরাষ্ট্রেও। সেখানকার নাগরিকরা পোশাক কেনার চাইতে খাদ্যপণ্য অন্য নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কেনার বিষয়টিতে জোর দিচ্ছেন।

যদিও দেশটির বাজারে পোশাক রপ্তানির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এখনো তৃতীয় অবস্থান ধরে রেখেছে। ওই প্রাপ্ত তথ্যে আরও দেখা যায়, ২০২২ সালে যুক্তরাষ্ট্র পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে মোট ৯ হাজার ৯৮৫ কোটি মার্কিন ডলারের তৈরি পোশাক আমদানি করেছে। কিন্তু পরের বছর তা নেমে আসে ৭ হাজার ৭৮৪ কোটি মার্কিন ডলারে।

চীন, ভিয়েতনাম, বাংলাদেশ, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, কম্বোডিয়া, মেক্সিকো, হন্ডুরাস, পাকিস্তান ও দক্ষিণ কোরিয়া থেকে সাধারণত যুক্তরাষ্ট্র পোশাক আমদানি করে। দেশটিতে রপ্তানি আয়ের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে। প্রথম স্থানে আছে চীন, আর দ্বিতীয় অবস্থানে আছে ভিয়েতনাম।

এ বিষয়ে রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান রাইজিং গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং বিজিএমইএ’র সাবেক সহ-সভাপতি মাহমুদ হাসান খান বাবু গণমাধ্যমকে বলেন, করোনা মহমারির পর যুক্তরাষ্ট্র সরকার সেখানে ভোক্তাদের প্রচুর অর্থ দিয়েছে। অবস্থার একটু উন্নতি হলে সেই অর্থ আবার তুলেও নিয়েছে। এতে জনগণের হাতে অর্থ কমে যায়। তারা ক্রয়ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে।

তিনি আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুদের হার বাড়ানোর ফলে সেখানে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে। মানুষ পোশাক কেনার চাইতে খাদ্যপণ্য, গাড়ির জ্বালানি প্রভৃতি খাতে বেশি পয়সা ব্যয় করেছে। মাহমুদ হাসান বলেন, অর্থনৈতিক অবস্থা খারাপ হলে মানুষ সাধারণত কাপড় কেনা কমিয়ে দেয়। এক্ষেত্রে তাই হয়েছে।

এ বিষয়ে বিজিএমইএ’র সাবেক পরিচালক এবং ডেনিম এক্সপার্ট লি.-এর এএমডি মহিউদ্দিন রুবেল গণমাধ্যমকে জানান, করোনা মহামারির পর এমনিতেই বিশ্বব্যাপী অর্থনীতিতে মন্দা শুরু হয়। এর হাওয়া যুক্তরাষ্ট্রেও লাগে। সেখানকার ক্রেতারা পোশাক কেনা কমিয়ে দেওয়ায় রপ্তানিও কমেছে। তিনি বলেন, করোনার পর পোশাক রপ্তানির যে কমতির ধারা তা ২০২৩ সাল পর্যন্ত বহাল ছিলো। অবশ্য চলতি ২০২৪ সালে সে ধারা থেকে বেরিয়ে রপ্তানি কিছুটা ইতিবাচক ধারায় ফিরেছে।

এদিকে যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানির পরিসংখ্যান থেকে এই সংক্রান্ত বেশকিছু তথ্য জানা গেছে। যুক্তরাষ্ট্রের অফিস অব টেক্সটাইলস অ্যান্ড গার্মেন্টসের (ওটেক্সার) এক প্রতিবেদনে জানা গেছে, দেশটিতে গত ১০ বছরে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি বেড়েছে প্রায় ৫০ দশমিক ৭৯ শতাংশ। তবে ২০১৪ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত পরিসংখ্যান বলছে, যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রপ্তানিতে চীন প্রথম অবস্থানে থাকলেও এক দশকে তাদের পোশাক রপ্তানি কমেছে প্রায় অর্ধেক। আর সে জায়গায় ভিয়েতনাম ও বাংলাদেশ তাদের অবস্থান তৈরি করেছে।

২০১৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রে যেখানে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি ছিল ৪ দশমিক ৮৩ বিলিয়ন ডলার, সেখানে ২০২২ সালে এই রপ্তানি উন্নীত হয় ৯ দশমিক ৭৩ বিলিয়ন ডলারে। যুক্তরাষ্ট্রে প্রথম অবস্থানে থাকা চীনের ২০১৪ সালে পোশাক রপ্তানি ছিলো ২৯ দশমিক ৭৯ বিলিয়ন ডলারের। সেখানে ২০২৩ সালে এই রপ্তানি কমে দাঁড়িয়েছে ১৬ দশমিক ৩২ বিলিয়ন ডলারে; অর্থাৎ এক দশকের মধ্যে রপ্তানি কমেছে প্রায় ৪৫ দশমিক ২৪ বিলিয়ন ডলার।

অন্যদিকে দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা ভিয়েতনামের ২০১৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রপ্তানি ছিলো ৯ দশমিক ২৭ বিলিয়ন ডলারের। সেখানে ২০২৩ সালে এই রপ্তানি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৪ দশমিক ১৮ বিলিয়ন ডলারে, অর্থাৎ গত এক দশকে যুক্তরাষ্ট্রে ভিয়েতনামের রপ্তানি বেড়েছে ৫২ দশমিক ৯৬ শতাংশ।

সেইসঙ্গে ভারত, পাকিস্তান ও কম্বোডিয়ার মতো দেশগুলোরও রপ্তানি বেড়েছে। এর বিপরীতে যুক্তরাষ্ট্রে গত এক দশকে চীনের পাশাপাশি কমেছে দক্ষিণ কোরিয়া, মেক্সিকো, হন্ডুরাস ও ইন্দোনেশিয়ার পোশাক রপ্তানি।

এর মধ্যে দক্ষিণ কোরিয়ার রপ্তানি ১৩ দশমিক ৩১ শতাংশ, মেক্সিকোর ২৪ দশমিক ৬৬ শতাংশ, হন্ডুরাসের ৬ দশমিক ০৮ শতাংশ ও ইন্দোনেশিয়ার রপ্তানি কমেছে ১৭ দশমিক ৯৯ শতাংশ।

যুক্তরাষ্ট্রের এই রপ্তানি খাতের অবস্থা স্বাভাবিক হতে বা আগের পর্যায়ে ফিরিয়ে আনতে কিছুটা সময় লাগবে বলে ধারনা করছেন ব্যবসায়ীরা।