শিরোনাম :
Logo আমরা সংস্কার চেয়েছি,জুলাই গণহত্যার বিচার চেয়েছি এবং নতুন সংবিধান চেয়েছি: নাহিদ ইসলাম Logo মিটফোর্ডে হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে হাবিপ্রবিতে বিক্ষোভ Logo ইবিতে শাখা ছাত্রদলের সক্রিয় কর্মীর পদত্যাগ Logo কুষ্টিয়ায় ভুল প্রশ্নপত্র বিতরণের ঘটনায় কেন্দ্রসচিবসহ ৬ জনকে অব্যাহতি Logo রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগের শিক্ষার্থীদের ফেয়ারওয়েল অনুষ্ঠিত Logo ঢাকায় ব্যবসায়ীকে নৃশংস হত্যার প্রতিবাদে রাবিতে বিক্ষোভ মিছিল Logo নির্মম ভাবে সোহাগ হত্যার ঘটনায় ইবিতে বিক্ষোভ Logo সুপারস্টার ডি এ তায়েব অফিসিয়াল ফ্যান ক্লাবের আয়োজনে সাংবাদিক অপু চৌধুরীকে সংবর্ধনা Logo চাঁদপুরে মসজিদে খতিবকে কুপিয়ে জখম Logo আম্মা-আব্বা আমাকে মাফ করে দিবেন; আমি আপনাদের ভালো মেয়ে হতে পারি নাই

মৌলভীবাজারে সাবেক সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেলের ‘আয়না ঘর’

  • নীলকন্ঠ ডেস্ক: নীলকন্ঠ ডেস্ক:
  • আপডেট সময় : ০৭:৫৮:০৯ অপরাহ্ণ, রবিবার, ৩ নভেম্বর ২০২৪
  • ৭৩৭ বার পড়া হয়েছে

জানালা বিহীন প্রায় ৭ ফুট দৈর্ঘ্য ও ৮ ফুট প্রস্থের ৭টি রহস্যজনক ঘর। ঘর গুলোর মালিক কেন্দ্রীয় যুবলীগের সদস্য ও সাবেক সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল অ্যাডভোকেট আব্দুর রকিব মন্টু। এলাকায় এগুলো মন্টুর টর্চার সেল হিসেবে পরিচিত। মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলার উত্তরভাগ ইউনিয়নের পানিশাইল এলাকায় এই টর্চার সেলের সন্ধান পাওয়া গেছে।

স্থানীয় লোকজনের দাবি, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের আগে গভীর রাতে কালো রঙের গাড়িতে করে এই বাড়িতে লোকজন নিয়ে আসতেন মন্টু। চলে যেতেন ভোরে। সাবেক সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল ও বাংলাদেশ অ্যাথলেটিক্স ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন মন্টু। তারই করা হত্যা মামলায় দীর্ঘদিন কারাগারে থাকা তার আপন মামার জমি দখল করে আব্দুর রকিব মন্টু সেখানে তৈরি করেছে তার ৭ টি টর্চার সেল।

জানা যায়, সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার নিজামপুর গ্রামের বাসিন্দা আব্দুর রকিব মন্টু রাজনগরের পানিশাইল গ্রামে নিজের ২ একর ৭ শতাংশ জমি থাকলেও অন্যদের সম্পত্তি দখল করে ভোগ করছেন মোট ২ একর ৪৭ শতাংশ জমি। অভিযোগ রয়েছে, সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল থাকাকালে বসতবাড়িসহ পাশের সব জমি কেড়ে নিতে একের পর এক মামলা দিয়েছেন তারই আপন মামা পাশের জমির মালিক নুরুল ইসলাম কলা মিয়া ও তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে। নিজের মামা কলা মিয়াকে জেলে পাঠিয়ে ওই জায়গাগুলো দখলে নেন মন্টু।

২০২১ সালের ১৭ নভেম্বর রাতের আধাঁরে নিজগাঁও কমিউিনিটি ক্লিনিকের পাশে আব্দুর রকিব মন্টুর সম্পত্তির কেয়ারটেকার আব্দুল মালেককে হত্যা করে ফেলে যায় দুর্বৃত্তরা। পরে ওই রাতেই বসতঘর থেকে পুলিশ গিয়ে নুরুল ইসলাম কলা মিয়া ও তার পরিবারের সব সদস্যদের ধরে নিয়ে যায়। এ ঘটনায় মন্টু বাদী হয়ে রাজনগর থানায় ওই পরিবারের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেন। কলা মিয়ার পরিবারের সবাই কারাগারে থাকার সুযোগে তার বসতঘরসহ সব জমি দখলে নেন মন্টু। পরে কলা মিয়ার বসতঘরসহ নিজের জমির সামনের দিকে সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করেন। বাড়ির নাম দেন ‘বশির-রাবেয়া কটেজ’। ওই সীমানা প্রাচীরের ভেতরে নির্মাণ করেছেন একচালা টিনের আধা পাকা ৭টি আলাদা আলাদা ঘর। প্রায় ৭ ফুট দৈর্ঘ্য ও ৮ ফুট প্রস্থের রহস্যজনক এসব ঘরে নেই কোনো জানালা।

স্থানীয় লোকজন জানান, দিনের বেলায় কখনো এসব ঘর খুলতে দেখেনি তারা। তবে গভীর রাতে মন্টু লোকজন নিয়ে কালো রঙের গাড়িতে করে এখানে আসতেন আবার ভোরে বেরিয়ে যেতেন। তাকে স্থানীয়রা এতোটাই ভয় পেতেন যে প্রাচীরের ভেতরে যাওয়ার সাহস করতেন না কেউ।

পানিশাইল গ্রামের নান্নু মিয়া বাংলা এডিশনকে বলেন, আমরা ছোট থেকে দেখেছি কলা মিয়া এই বাড়িতে বসবাস করতেন। আমাদের এলাকায় একটি হত্যাকান্ডের ঘটনায় কলা মিয়া ও তার পরিবারের সদস্যরা জেলে থাকার সময় মন্টু মিয়া তার বাড়ি ও জমিজমা দখল করে জানালাবিহীন আরও ৭টি ছোট ঘর বানিয়েছে। রাতের বেলায় এসব ঘরে মন্টু ও তার লোকজন আসতো। গ্রামবাসী মন্টুর ভয়ে এখানে আসতো না। আমার মনে হয় আওয়ামী লীগের ‘টর্চার সেল’ আয়নাঘরের মতো ব্যবহার করতো। এসব ঘর ভেঙ্গে দেখা দরকার তারা এখানে কি করতো।

প্রায় আড়াই বছর পর চলতি বছরের জুন মাসে হত্যা মামলা থেকে জামিনে বের হয়ে কলা মিয়া ও তার পরিবারের সদস্যরা দেখেন বসতঘরসহ প্রায় ৪০ শতাংশ জমি দখল করে নিয়েছেন মন্টু।

মন্টুর মামা নুরুল ইসলাম কলা মিয়া বলেন, আমি ৭০ বছর এই বাড়িতে বসবাস করছি। আমার বোন ও বোনের ছেলেরা আমাকে স্থায়ীভাবে থাকতে এসব জমি আমার কাছে বিক্রি করেছেন বলে লিখে দিয়েছেন। সকল কাগজপত্র আমার থাকার পরও এই জমি কেড়ে নিতে বারবার মামলা দিয়ে আমাকে হয়রানি করেছে মন্টু। পরে আর উপায় না পেয়ে সে নিজেই তার কেয়ারটেকারকে হত্যা করিয়ে আমার পুরো পরিবারের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেছে।

বিষয়টি সম্পর্কে জানতে কেন্দ্রীয় যুবলীগের সদস্য অ্যাডভোকেট আব্দুর রকিব মন্টুর মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তা বন্ধ পাওয়া যায়।

এ ব্যাপারে রাজনগর থানার অফিসার ইনচার্জ শাহ মো. মুবাশ্বির এর নিকট টর্চার সেল সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি শুনেছি। এ বিষয়টি আমরা তদন্ত করে দেখবো।

ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ

আমরা সংস্কার চেয়েছি,জুলাই গণহত্যার বিচার চেয়েছি এবং নতুন সংবিধান চেয়েছি: নাহিদ ইসলাম

মৌলভীবাজারে সাবেক সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেলের ‘আয়না ঘর’

আপডেট সময় : ০৭:৫৮:০৯ অপরাহ্ণ, রবিবার, ৩ নভেম্বর ২০২৪

জানালা বিহীন প্রায় ৭ ফুট দৈর্ঘ্য ও ৮ ফুট প্রস্থের ৭টি রহস্যজনক ঘর। ঘর গুলোর মালিক কেন্দ্রীয় যুবলীগের সদস্য ও সাবেক সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল অ্যাডভোকেট আব্দুর রকিব মন্টু। এলাকায় এগুলো মন্টুর টর্চার সেল হিসেবে পরিচিত। মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলার উত্তরভাগ ইউনিয়নের পানিশাইল এলাকায় এই টর্চার সেলের সন্ধান পাওয়া গেছে।

স্থানীয় লোকজনের দাবি, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের আগে গভীর রাতে কালো রঙের গাড়িতে করে এই বাড়িতে লোকজন নিয়ে আসতেন মন্টু। চলে যেতেন ভোরে। সাবেক সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল ও বাংলাদেশ অ্যাথলেটিক্স ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন মন্টু। তারই করা হত্যা মামলায় দীর্ঘদিন কারাগারে থাকা তার আপন মামার জমি দখল করে আব্দুর রকিব মন্টু সেখানে তৈরি করেছে তার ৭ টি টর্চার সেল।

জানা যায়, সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার নিজামপুর গ্রামের বাসিন্দা আব্দুর রকিব মন্টু রাজনগরের পানিশাইল গ্রামে নিজের ২ একর ৭ শতাংশ জমি থাকলেও অন্যদের সম্পত্তি দখল করে ভোগ করছেন মোট ২ একর ৪৭ শতাংশ জমি। অভিযোগ রয়েছে, সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল থাকাকালে বসতবাড়িসহ পাশের সব জমি কেড়ে নিতে একের পর এক মামলা দিয়েছেন তারই আপন মামা পাশের জমির মালিক নুরুল ইসলাম কলা মিয়া ও তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে। নিজের মামা কলা মিয়াকে জেলে পাঠিয়ে ওই জায়গাগুলো দখলে নেন মন্টু।

২০২১ সালের ১৭ নভেম্বর রাতের আধাঁরে নিজগাঁও কমিউিনিটি ক্লিনিকের পাশে আব্দুর রকিব মন্টুর সম্পত্তির কেয়ারটেকার আব্দুল মালেককে হত্যা করে ফেলে যায় দুর্বৃত্তরা। পরে ওই রাতেই বসতঘর থেকে পুলিশ গিয়ে নুরুল ইসলাম কলা মিয়া ও তার পরিবারের সব সদস্যদের ধরে নিয়ে যায়। এ ঘটনায় মন্টু বাদী হয়ে রাজনগর থানায় ওই পরিবারের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেন। কলা মিয়ার পরিবারের সবাই কারাগারে থাকার সুযোগে তার বসতঘরসহ সব জমি দখলে নেন মন্টু। পরে কলা মিয়ার বসতঘরসহ নিজের জমির সামনের দিকে সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করেন। বাড়ির নাম দেন ‘বশির-রাবেয়া কটেজ’। ওই সীমানা প্রাচীরের ভেতরে নির্মাণ করেছেন একচালা টিনের আধা পাকা ৭টি আলাদা আলাদা ঘর। প্রায় ৭ ফুট দৈর্ঘ্য ও ৮ ফুট প্রস্থের রহস্যজনক এসব ঘরে নেই কোনো জানালা।

স্থানীয় লোকজন জানান, দিনের বেলায় কখনো এসব ঘর খুলতে দেখেনি তারা। তবে গভীর রাতে মন্টু লোকজন নিয়ে কালো রঙের গাড়িতে করে এখানে আসতেন আবার ভোরে বেরিয়ে যেতেন। তাকে স্থানীয়রা এতোটাই ভয় পেতেন যে প্রাচীরের ভেতরে যাওয়ার সাহস করতেন না কেউ।

পানিশাইল গ্রামের নান্নু মিয়া বাংলা এডিশনকে বলেন, আমরা ছোট থেকে দেখেছি কলা মিয়া এই বাড়িতে বসবাস করতেন। আমাদের এলাকায় একটি হত্যাকান্ডের ঘটনায় কলা মিয়া ও তার পরিবারের সদস্যরা জেলে থাকার সময় মন্টু মিয়া তার বাড়ি ও জমিজমা দখল করে জানালাবিহীন আরও ৭টি ছোট ঘর বানিয়েছে। রাতের বেলায় এসব ঘরে মন্টু ও তার লোকজন আসতো। গ্রামবাসী মন্টুর ভয়ে এখানে আসতো না। আমার মনে হয় আওয়ামী লীগের ‘টর্চার সেল’ আয়নাঘরের মতো ব্যবহার করতো। এসব ঘর ভেঙ্গে দেখা দরকার তারা এখানে কি করতো।

প্রায় আড়াই বছর পর চলতি বছরের জুন মাসে হত্যা মামলা থেকে জামিনে বের হয়ে কলা মিয়া ও তার পরিবারের সদস্যরা দেখেন বসতঘরসহ প্রায় ৪০ শতাংশ জমি দখল করে নিয়েছেন মন্টু।

মন্টুর মামা নুরুল ইসলাম কলা মিয়া বলেন, আমি ৭০ বছর এই বাড়িতে বসবাস করছি। আমার বোন ও বোনের ছেলেরা আমাকে স্থায়ীভাবে থাকতে এসব জমি আমার কাছে বিক্রি করেছেন বলে লিখে দিয়েছেন। সকল কাগজপত্র আমার থাকার পরও এই জমি কেড়ে নিতে বারবার মামলা দিয়ে আমাকে হয়রানি করেছে মন্টু। পরে আর উপায় না পেয়ে সে নিজেই তার কেয়ারটেকারকে হত্যা করিয়ে আমার পুরো পরিবারের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেছে।

বিষয়টি সম্পর্কে জানতে কেন্দ্রীয় যুবলীগের সদস্য অ্যাডভোকেট আব্দুর রকিব মন্টুর মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তা বন্ধ পাওয়া যায়।

এ ব্যাপারে রাজনগর থানার অফিসার ইনচার্জ শাহ মো. মুবাশ্বির এর নিকট টর্চার সেল সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি শুনেছি। এ বিষয়টি আমরা তদন্ত করে দেখবো।