মধ্যস্বত্বের পেটে ৮ হাজার কোটি!

  • নীলকন্ঠ ডেস্ক: নীলকন্ঠ ডেস্ক:
  • আপডেট সময় : ০৮:৫৩:০৯ পূর্বাহ্ণ, শুক্রবার, ১ নভেম্বর ২০২৪
  • ৭১৮ বার পড়া হয়েছে

সবজির বর্তমান বাজার চড়া হওয়ায় বেশি দাম পাওয়ায় উত্তরাঞ্চলের সবজি চাষিরা খুশি। তবে সবজির বাজার মূল্যের অর্ধেকেরও কম ভোগ করতে পারেন তারা। কারণ সবজির মূল্যের একটা বড় অংশ অর্থাৎ প্রায় ৫০ শতাংশই চলে যায় মধ্যস্বত্বভোগীদের পকেটে! জানা গেছে, শাকসবজির আবাদ করে উত্তরাঞ্চলের চাষিরা দেশের অর্থনীতিতে বছরে ২০ হাজার কোটি টাকা যোগ করেন।

এর মধ্যে ১২ হাজার কোটি টাকা পাচ্ছেন কৃষকরা। আর মধ্যস্বত্বভোগীদের পকেটে যাচ্ছে ৮ হাজার কোটি টাকার ওপরে! অঞ্চলের বৃহৎ, ক্ষুদ্র, বরগা ও প্রান্তিক চাষিরা খরিপ-১, খরিপ-২ এবং রবি মৌসুমে ১ লাখ ৮০ হাজার হেক্টরের ওপর জমিতে শাকসবজির আবাদ করেন। এদিকে কৃষি অফিসের কর্মকর্তাদের অভিমত, উৎপাদন থেকে ভোক্তাপর্যায়ে পণ্যের হাতবদল কমাতে পারলে প্রতিটি পণ্যের দাম ভোক্তাদের নাগালের মধ্যে চলে আসবে।

পীরগাছা উপজেলার দেউতি এলাকার বেশ কয়েকজন কৃষকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বর্তমানে তারা বেগুন, পেঁপে, পটোল, করলাসহ বিভিন্ন শাকসবজি পাইকারি স্থান ও প্রকারভেদে ২৫ থেকে ৩৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছেন। আর সেই একই সবজিই ভোক্তাপর্যায়ে বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৭০ টাকা কেজি দরে। মাঝখানে রয়েছে পাইকার, আড়তদার এবং খুচরা ব্যবসায়ী। এই তিন হাত ঘুরে সবজির দাম হয়ে যাচ্ছে দ্বিগুণের বেশি।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক ওবায়দুর রহমান মন্ডল জানান, উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলায় রবি ও খরিপ মৌসুমে ১ লাখ ৮০ হাজার হেক্টর জমিতে প্রায় ৩৬ লাখ মেট্রিক টন করলা, ফুলকপি, বাঁধাকপি, লালশাক, পুঁইশাক, মুলা, টম্যাটো, কুমড়াসহ বিভিন্ন শাকসবজি কৃষকরা ফলান। এতে প্রতি হেক্টরে গড় উৎপাদন হয়েছে ২০ মেট্রিক টন। প্রতি কেজি শাকসবজির কৃষক পর্যায়ে সর্বনিম্ন ৩৫ টাকা কেজি হলে প্রতি মেট্রিক টন বিক্রি হয়েছে ৩৫ হাজার টাকায়। সেই হিসাবে দুই মৌসুমে ৩৬ লাখ মেট্রিক টন শাকসবজির মূল্য দাঁড়িয়েছে ১২ হাজার কোটি টাকার ওপর। আর মধ্যস্বত্বভোগীরা প্রতি কেজিতে ২০ থেকে ৩০ টাকা লাভ করছেন। সেই হিসাবে তাদের পকেটে যাচ্ছে বাড়তি ৮ হাজার কোটি টাকা।

এদিকে রংপুর বুড়িহাট হর্টিকালচার সেন্টারের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ আবু সায়েম জানান, উৎপাদন থেকে ভোক্তাপর্যায়ে হাতবদল কমাতে পারলে সবকিছুর দাম নাগালের মধ্যে  চলে আসবে। তিনি বলেন, চলতি মৌসুমে অতিরিক্ত গরম এবং অসময়ে বৃষ্টিপাতের কারণেও সবজিতে কিছুটা নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। এ ছাড়া ভোক্তারা যখন যে জিনিসের দাম বেশি সেই পণ্যের দিকেই ঝুঁকে পড়েন। ভোক্তাদের এই প্রবণতা দূর হলে শাকসবজিসহ অন্যান্য কৃষিপণ্যের দাম সহনীয় পর্যায়ে চলে আসবে বলেও অভিমত এ কর্মকর্তার।

ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ

মধ্যস্বত্বের পেটে ৮ হাজার কোটি!

আপডেট সময় : ০৮:৫৩:০৯ পূর্বাহ্ণ, শুক্রবার, ১ নভেম্বর ২০২৪

সবজির বর্তমান বাজার চড়া হওয়ায় বেশি দাম পাওয়ায় উত্তরাঞ্চলের সবজি চাষিরা খুশি। তবে সবজির বাজার মূল্যের অর্ধেকেরও কম ভোগ করতে পারেন তারা। কারণ সবজির মূল্যের একটা বড় অংশ অর্থাৎ প্রায় ৫০ শতাংশই চলে যায় মধ্যস্বত্বভোগীদের পকেটে! জানা গেছে, শাকসবজির আবাদ করে উত্তরাঞ্চলের চাষিরা দেশের অর্থনীতিতে বছরে ২০ হাজার কোটি টাকা যোগ করেন।

এর মধ্যে ১২ হাজার কোটি টাকা পাচ্ছেন কৃষকরা। আর মধ্যস্বত্বভোগীদের পকেটে যাচ্ছে ৮ হাজার কোটি টাকার ওপরে! অঞ্চলের বৃহৎ, ক্ষুদ্র, বরগা ও প্রান্তিক চাষিরা খরিপ-১, খরিপ-২ এবং রবি মৌসুমে ১ লাখ ৮০ হাজার হেক্টরের ওপর জমিতে শাকসবজির আবাদ করেন। এদিকে কৃষি অফিসের কর্মকর্তাদের অভিমত, উৎপাদন থেকে ভোক্তাপর্যায়ে পণ্যের হাতবদল কমাতে পারলে প্রতিটি পণ্যের দাম ভোক্তাদের নাগালের মধ্যে চলে আসবে।

পীরগাছা উপজেলার দেউতি এলাকার বেশ কয়েকজন কৃষকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বর্তমানে তারা বেগুন, পেঁপে, পটোল, করলাসহ বিভিন্ন শাকসবজি পাইকারি স্থান ও প্রকারভেদে ২৫ থেকে ৩৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছেন। আর সেই একই সবজিই ভোক্তাপর্যায়ে বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৭০ টাকা কেজি দরে। মাঝখানে রয়েছে পাইকার, আড়তদার এবং খুচরা ব্যবসায়ী। এই তিন হাত ঘুরে সবজির দাম হয়ে যাচ্ছে দ্বিগুণের বেশি।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক ওবায়দুর রহমান মন্ডল জানান, উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলায় রবি ও খরিপ মৌসুমে ১ লাখ ৮০ হাজার হেক্টর জমিতে প্রায় ৩৬ লাখ মেট্রিক টন করলা, ফুলকপি, বাঁধাকপি, লালশাক, পুঁইশাক, মুলা, টম্যাটো, কুমড়াসহ বিভিন্ন শাকসবজি কৃষকরা ফলান। এতে প্রতি হেক্টরে গড় উৎপাদন হয়েছে ২০ মেট্রিক টন। প্রতি কেজি শাকসবজির কৃষক পর্যায়ে সর্বনিম্ন ৩৫ টাকা কেজি হলে প্রতি মেট্রিক টন বিক্রি হয়েছে ৩৫ হাজার টাকায়। সেই হিসাবে দুই মৌসুমে ৩৬ লাখ মেট্রিক টন শাকসবজির মূল্য দাঁড়িয়েছে ১২ হাজার কোটি টাকার ওপর। আর মধ্যস্বত্বভোগীরা প্রতি কেজিতে ২০ থেকে ৩০ টাকা লাভ করছেন। সেই হিসাবে তাদের পকেটে যাচ্ছে বাড়তি ৮ হাজার কোটি টাকা।

এদিকে রংপুর বুড়িহাট হর্টিকালচার সেন্টারের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ আবু সায়েম জানান, উৎপাদন থেকে ভোক্তাপর্যায়ে হাতবদল কমাতে পারলে সবকিছুর দাম নাগালের মধ্যে  চলে আসবে। তিনি বলেন, চলতি মৌসুমে অতিরিক্ত গরম এবং অসময়ে বৃষ্টিপাতের কারণেও সবজিতে কিছুটা নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। এ ছাড়া ভোক্তারা যখন যে জিনিসের দাম বেশি সেই পণ্যের দিকেই ঝুঁকে পড়েন। ভোক্তাদের এই প্রবণতা দূর হলে শাকসবজিসহ অন্যান্য কৃষিপণ্যের দাম সহনীয় পর্যায়ে চলে আসবে বলেও অভিমত এ কর্মকর্তার।