টিসিবির তথ্য বলছে— এক বছরে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে প্রায় ৪৭ শতাংশ, আর আলুর বেড়েছে প্রায় ৪৬ শতাংশ।
এদিকে রাজধানীসহ সারাদেশে আলুর সাধারণ দাম কেজিপ্রতি ৬০-৬৫ টাকা। পণ্যটির দাম ৭০ টাকা পর্যন্ত উঠেছিল। তবে সেটি একবার নেমে ২৫-৩০ টাকায় আসার পর আবারও লাগামহীনভাবে বাড়তে থাকে। তা আর থামছে না। বৃহস্পতিবার রাজধানীর কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা যায়— আলুর সরবরাহে কোনো ঘাটতি নেই; কিন্তু দাম ঊর্ধ্বমুখী। বিক্রেতারা জানান, কমার কোনো খবর নেই; বরং আরও বাড়তে পারে বলে তাদের আশঙ্কা। সরকারি সংস্থা টিসিবির বাজারদরের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, বাজারে আলু বিক্রি হচ্ছে ৫৬-৬৫ টাকা কেজিতে। এক বছর আগে পণ্যটির দাম ছিল ৩৮ থেকে ৪৫ টাকা। বছর ব্যবধানে বেড়েছে ৪৫ দশমিক ৭৮ শতাংশ।
দেশে আলুর চাহিদা ৯০ লাখ টন। এর উৎপাদন নিয়ে তথ্যের গরমিল রয়েছে। কোল্ড স্টোরেজ মালিকদের পক্ষে বলা হচ্ছে, আলুর চলতি উৎপাদন ৭০ লাখ টন। আবার কৃষি বিভাগ বলছে, ১ কোটি টনের বেশি। ১ কোটি টন হলেও অন্তত ২৫ শতাংশ পচে নষ্ট হয় বলে জানা যায়। সেটি হলে চাহিদার তুলনায় উৎপাদন কম।
আলুর দাম বাড়ার কারণ হিসেবে কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু বলেন, কৃষকেরা এবার প্রতি কেজিতে ৮ থেকে ২৫ টাকা পর্যন্ত মুনাফায় আলু বিক্রি করেছেন। গতবার ১০ থেকে ১২ টাকায় আলু বিক্রি করতে হয়েছিল। কিন্তু এবার ২৫ থেকে ৪০ টাকা বিক্রি করেছে। এই দামে আলু কিনে কোল্ড স্টোরেজে রাখলে সেখানে প্রতি কেজিতে আরও ১০ টাকা খরচ হয়। বর্তমানে কোল্ড স্টোরেজেই ৪৬ টাকা কেজি দরে আলু বিক্রি হচ্ছে। তাহলে বাজারে তো ১০-১২ টাকা বেশি দাম বিক্রি হবেই। আর প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে আলুর ফলন ব্যাহত হয়, সংকট দেখা দেয়।
অপর দিকে আলুর চেয়ে পেঁয়াজের দাম আরও লাগামহীন। বলতে গেলে প্রায় প্রতিদিনই বাড়ছে পণ্যটির দাম। বাজারে এখন প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ১৪০ টাকা কেজিতে। গতকাল রাজধানীর বেশ কয়েকটি বাজারে খবর নিয়ে এ তথ্য জানা যায়। টিসিবির হিসাবে প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম ১০০ থেকে ১২০ টাকা। এ হিসাব ধরলেও গত এক বছরে পণ্যটির দাম বেড়েছে ৪৬ দশমিক ৬৭ শতাংশ।
বিক্রেতাদের অজুহাত বাজারে সরবরাহ কম, তাই দাম বেশি। তাদের কেউ কউ বলছেন, দেশে উৎপাদিত পেঁয়াজের স্থানীয় উৎস থেকে ঠিকমতো আসছে না, আবার আমদানি করা পেঁয়াজের খরচ বেশি। ফলে দাম না বাড়িয়ে উপায় নেই।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত তিন বছরে গড়ে প্রায় ৩৫ লাখ টন পেঁয়াজ উৎপাদন হয়েছে। সর্বোচ্চ ২৫-৩০ শতাংশ অপচয় ধরলেও যেটুকু ঘাটতি থাকে, তা আমদানি করে মেটানো হয়।
এছাড়া বাজারে কাঁচা মরিচের দাম এখনও বেশ চড়া। বিক্রেতারা জানান— চলতি বছরের এপ্রিলে দেশে তীব্র তাপপ্রবাহের কারণে মরিচগাছ নষ্ট হয়ে যায়। এতে স্থানীয়ভাবে সরবরাহে ঘাটতি দেখা দেয় এবং দাম বাড়তে থাকে। এমন পরিস্থিতিতে ভারত থেকে আমদানি বাড়লেও বাজারে মরিচের দাম সেভাবে কমেনি। সর্বশেষ দুই সপ্তাহ ধরে বাজারে ভালো মানের কাঁচা মরিচ ২২০-২৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। তবে কম মানের কাঁচা মরিচের দাম কিছুটা কম; ১৫০-২০০ টাকা কেজি।
আফরিন সুলতানা নামে এক গৃহিণী বলেন, শুধু কি পেঁয়াজের দাম বেড়েছে; চাল, কাঁচা মরিচ, ব্রয়লার মুরগি—সবই তো বেশি দাম দিয়ে কিনতে হচ্ছে। এভাবে সংসার চালাতে রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছি।