নরেন্দ্র মোদীর স্লোগান ‘আব কি বার চারশো পার’- পূরণ হবে বিজেপির?

  • নীলকন্ঠ ডেস্ক: নীলকন্ঠ ডেস্ক:
  • আপডেট সময় : ১২:৪০:২৪ অপরাহ্ণ, বৃহস্পতিবার, ১৬ মে ২০২৪
  • ৭৬৩ বার পড়া হয়েছে

নিউজ ডেক্স:

ভারতে এবারের সংসদীয় নির্বাচন শুরুর আগে পার্লামেন্টে দাঁড়িয়ে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী স্লোগান দিয়েছিলেন ‘আব কি বার চারশো পার’ – অর্থাৎ কি না বিজেপি জোট এবার চারশো আসন অতিক্রম করার লক্ষ্য নিয়ে এগোচ্ছে।

কিন্তু ভারতে সাত দফার নির্বাচনে চার দফার ভোটগ্রহণ শেষ হয়ে যাওয়ার পর এখন বিজেপি নেতারাও আর ‘চারশো’-র কথা ভুলেও মুখে আনছেন না, অন্য দিকে বিরোধী ইন্ডিয়া জোট প্রকাশ্যে বলতে শুরু করেছে ‘দেখবেন, বিজেপির আসনসংখ্যা দুশোরও নিচে নেমে আসবে!’
ভারতের প্রায় সব রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক ও বিশ্লেষকরাও মোটামুটি একমত যে প্রধানমন্ত্রী মোদীর নেতৃত্বে বিজেপি জোট এখনও অবশ্যই এগিয়ে – কিন্তু চারশো তো দূরস্থান, গত নির্বাচনে এককভাবে বিজেপি যে ৩০৩টি আসনে জিতেছিল, সেই পুরনো রেকর্ড ধরে রাখাও তাদের পক্ষে খুবই কঠিন।
এমন কী, পার্লামেন্টে ‘সিম্পল মেজরিটি’ বা সাধারণ গরিষ্ঠতা পেতেও হয়তো তাদের বেগ পেতে হতে পারে বলে অনেকেই মনে করছেন।
বিজ্ঞাপন
ভারতে পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ লোকসভায় মোট ৫৪৩টি আসন, ফলে সাধারণ গরিষ্ঠতা পেতে হলে কোনও দল বা জোটের অন্তত ২৭২টি আসনে জেতাটা জরুরি।
২০১৪ সালের নির্বাচনে এই ‘ম্যাজিক নাম্বার’কে নিশানা করেই বিজেপি ‘মিশন ২৭২ প্লাসে’র টার্গেট রেখেছিল ও তা পূর্ণও হয়েছিল। চল্লিশ বছরের মধ্যে সেই প্রথম ভারতে কোনও রাজনৈতিক দল এককভাবে লোকসভায় গরিষ্ঠতা অর্জন করে।
নরেন্দ্র মোদীর গত দশ বছরের শাসনকাল, যেটাকে ভারতে ‘মোদী ডিকেড’ বলে ডাকা হচ্ছে, তারপর এবারের নির্বাচনে সেই লক্ষ্য পূরণে কোনও চ্যালেঞ্জ আসতে পারে – মাত্র কয়েক সপ্তাহ আগেও বিজেপি নেতারা তা ভাবতেও পারেননি।
অনেকটা সেই কারণেই কিন্তু নরেন্দ্র মোদি জোটের জন্য একেবারে ‘চারশো প্লাসে’র লক্ষ্যমাত্রা বেঁধে দিয়েছিলেন, যাতে নিশানাটা অনেক উঁচু তারে বেঁধে ফেলা যায়।
মুম্বাইতে নিজের বাড়িতে বসেই ভোট দিচ্ছেণ একজন প্রবীণ নাগরিকছবির উৎস,GETTY IMAGES
ছবির ক্যাপশান,মুম্বাইতে নিজের বাড়িতে বসেই ভোট দিচ্ছেণ একজন প্রবীণ নাগরিক
কিন্তু চার দফায় দেশের ৭০ শতাংশেরও বেশি আসনে ভোট হয়ে যাওয়ার পর বিজেপি নেতাদের গলায় সেই আত্মবিশ্বাসী সুর আর শোনা যাচ্ছে না, অন্য দিকে রাহুল গান্ধী, অরবিন্দ কেজরিওয়াল বা মমতা ব্যানার্জীর মতো বিরোধী নেতা-নেত্রীরা রোজই তাদের আক্রমণের সুর চড়াচ্ছেন। বিজেপি কোনওক্রমে দুশো পেরোবে, বা দুশোরও নিচে নেমে যাবে তাদের আসন – এই জাতীয় হুঙ্কারও দিতে শুরু করেছেন তারা।
যোগেন্দ্র যাদব, প্রশান্ত ভূষণের মতো রাজনৈতিক অ্যাক্টিভিস্ট – যারা সরাসরি কোনও দলের সঙ্গে যুক্ত নন – তারাও পূর্বাভাস করছেন, নির্বাচনি গতিপ্রকৃতি দেখে এখন মনে হচ্ছে বিজেপি জোটের পক্ষে গরিষ্ঠতা অর্জন করাই খুব মুশকিল। সুরজিৎ ভাল্লার মতো কোনও কোনও বিশ্লেষক আবার এই মতের শরিক নন – তারা এখনও মনে করেন বিজেপি খুব সহজেই জিতবে।
এরই মধ্যে গত সপ্তাহে ভারতের শেয়ার বাজারে যে আকস্মিক পতন লক্ষ্য করা গেছে, সেটাকেও অনেকে এই রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার প্রতিফলন বলেই ব্যাখ্যা করছেন।
শেয়ার বাজার সবচেয়ে ভয় পায় রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতাকে। বিজেপি কোনও কারণে গরিষ্ঠতা না-পেলে তা বাজারে অস্থিরতা ডেকে আনবে, এই আশঙ্কা থেকেই বোম্বে স্টক এক্সচেঞ্জ বা ‘নিফটি’তে দরপতন হয়েছে বলে বিশেষজ্ঞরা অনেকে মনে করছেন।
এগুলোর অনেকটাই হয়তো জল্পনা বা তাত্ত্বিক আলোচনা, কিন্তু একটা জিনিস নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই – মাসদুয়েক আগে তফসিল ঘোষণার সময়ও যে নির্বাচনকে ‘ডান ডিল’ বা ‘ফলাফল তো জানাই’ বলে ভাবা হচ্ছিল – হঠাৎ করেই ভারতের সেই নির্বাচনটা যেন একেবারে ‘ওপেন’ হয়ে গেছে।
অর্থাৎ কি না, এই নির্বাচনেও অবাক করার মতো ফল হতে পারে – এই কথাটা রাজনৈতিক পন্ডিত থেকে সাধারণ ভোটাররা অনেকেই এখন প্রবলভাবে বিশ্বাস করছেন।
কেন আর কীভাবে এমনটা ঘটল, তারই পাঁচটি নির্দিষ্ট কারণ বিশ্লেষণ করা হয়েছে এই প্রতিবেদনে।
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ

কুষ্টিয়ায় ভুল প্রশ্নপত্র বিতরণের ঘটনায় কেন্দ্রসচিবসহ ৬ জনকে অব্যাহতি

নরেন্দ্র মোদীর স্লোগান ‘আব কি বার চারশো পার’- পূরণ হবে বিজেপির?

আপডেট সময় : ১২:৪০:২৪ অপরাহ্ণ, বৃহস্পতিবার, ১৬ মে ২০২৪

নিউজ ডেক্স:

ভারতে এবারের সংসদীয় নির্বাচন শুরুর আগে পার্লামেন্টে দাঁড়িয়ে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী স্লোগান দিয়েছিলেন ‘আব কি বার চারশো পার’ – অর্থাৎ কি না বিজেপি জোট এবার চারশো আসন অতিক্রম করার লক্ষ্য নিয়ে এগোচ্ছে।

কিন্তু ভারতে সাত দফার নির্বাচনে চার দফার ভোটগ্রহণ শেষ হয়ে যাওয়ার পর এখন বিজেপি নেতারাও আর ‘চারশো’-র কথা ভুলেও মুখে আনছেন না, অন্য দিকে বিরোধী ইন্ডিয়া জোট প্রকাশ্যে বলতে শুরু করেছে ‘দেখবেন, বিজেপির আসনসংখ্যা দুশোরও নিচে নেমে আসবে!’
ভারতের প্রায় সব রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক ও বিশ্লেষকরাও মোটামুটি একমত যে প্রধানমন্ত্রী মোদীর নেতৃত্বে বিজেপি জোট এখনও অবশ্যই এগিয়ে – কিন্তু চারশো তো দূরস্থান, গত নির্বাচনে এককভাবে বিজেপি যে ৩০৩টি আসনে জিতেছিল, সেই পুরনো রেকর্ড ধরে রাখাও তাদের পক্ষে খুবই কঠিন।
এমন কী, পার্লামেন্টে ‘সিম্পল মেজরিটি’ বা সাধারণ গরিষ্ঠতা পেতেও হয়তো তাদের বেগ পেতে হতে পারে বলে অনেকেই মনে করছেন।
বিজ্ঞাপন
ভারতে পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ লোকসভায় মোট ৫৪৩টি আসন, ফলে সাধারণ গরিষ্ঠতা পেতে হলে কোনও দল বা জোটের অন্তত ২৭২টি আসনে জেতাটা জরুরি।
২০১৪ সালের নির্বাচনে এই ‘ম্যাজিক নাম্বার’কে নিশানা করেই বিজেপি ‘মিশন ২৭২ প্লাসে’র টার্গেট রেখেছিল ও তা পূর্ণও হয়েছিল। চল্লিশ বছরের মধ্যে সেই প্রথম ভারতে কোনও রাজনৈতিক দল এককভাবে লোকসভায় গরিষ্ঠতা অর্জন করে।
নরেন্দ্র মোদীর গত দশ বছরের শাসনকাল, যেটাকে ভারতে ‘মোদী ডিকেড’ বলে ডাকা হচ্ছে, তারপর এবারের নির্বাচনে সেই লক্ষ্য পূরণে কোনও চ্যালেঞ্জ আসতে পারে – মাত্র কয়েক সপ্তাহ আগেও বিজেপি নেতারা তা ভাবতেও পারেননি।
অনেকটা সেই কারণেই কিন্তু নরেন্দ্র মোদি জোটের জন্য একেবারে ‘চারশো প্লাসে’র লক্ষ্যমাত্রা বেঁধে দিয়েছিলেন, যাতে নিশানাটা অনেক উঁচু তারে বেঁধে ফেলা যায়।
মুম্বাইতে নিজের বাড়িতে বসেই ভোট দিচ্ছেণ একজন প্রবীণ নাগরিকছবির উৎস,GETTY IMAGES
ছবির ক্যাপশান,মুম্বাইতে নিজের বাড়িতে বসেই ভোট দিচ্ছেণ একজন প্রবীণ নাগরিক
কিন্তু চার দফায় দেশের ৭০ শতাংশেরও বেশি আসনে ভোট হয়ে যাওয়ার পর বিজেপি নেতাদের গলায় সেই আত্মবিশ্বাসী সুর আর শোনা যাচ্ছে না, অন্য দিকে রাহুল গান্ধী, অরবিন্দ কেজরিওয়াল বা মমতা ব্যানার্জীর মতো বিরোধী নেতা-নেত্রীরা রোজই তাদের আক্রমণের সুর চড়াচ্ছেন। বিজেপি কোনওক্রমে দুশো পেরোবে, বা দুশোরও নিচে নেমে যাবে তাদের আসন – এই জাতীয় হুঙ্কারও দিতে শুরু করেছেন তারা।
যোগেন্দ্র যাদব, প্রশান্ত ভূষণের মতো রাজনৈতিক অ্যাক্টিভিস্ট – যারা সরাসরি কোনও দলের সঙ্গে যুক্ত নন – তারাও পূর্বাভাস করছেন, নির্বাচনি গতিপ্রকৃতি দেখে এখন মনে হচ্ছে বিজেপি জোটের পক্ষে গরিষ্ঠতা অর্জন করাই খুব মুশকিল। সুরজিৎ ভাল্লার মতো কোনও কোনও বিশ্লেষক আবার এই মতের শরিক নন – তারা এখনও মনে করেন বিজেপি খুব সহজেই জিতবে।
এরই মধ্যে গত সপ্তাহে ভারতের শেয়ার বাজারে যে আকস্মিক পতন লক্ষ্য করা গেছে, সেটাকেও অনেকে এই রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার প্রতিফলন বলেই ব্যাখ্যা করছেন।
শেয়ার বাজার সবচেয়ে ভয় পায় রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতাকে। বিজেপি কোনও কারণে গরিষ্ঠতা না-পেলে তা বাজারে অস্থিরতা ডেকে আনবে, এই আশঙ্কা থেকেই বোম্বে স্টক এক্সচেঞ্জ বা ‘নিফটি’তে দরপতন হয়েছে বলে বিশেষজ্ঞরা অনেকে মনে করছেন।
এগুলোর অনেকটাই হয়তো জল্পনা বা তাত্ত্বিক আলোচনা, কিন্তু একটা জিনিস নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই – মাসদুয়েক আগে তফসিল ঘোষণার সময়ও যে নির্বাচনকে ‘ডান ডিল’ বা ‘ফলাফল তো জানাই’ বলে ভাবা হচ্ছিল – হঠাৎ করেই ভারতের সেই নির্বাচনটা যেন একেবারে ‘ওপেন’ হয়ে গেছে।
অর্থাৎ কি না, এই নির্বাচনেও অবাক করার মতো ফল হতে পারে – এই কথাটা রাজনৈতিক পন্ডিত থেকে সাধারণ ভোটাররা অনেকেই এখন প্রবলভাবে বিশ্বাস করছেন।
কেন আর কীভাবে এমনটা ঘটল, তারই পাঁচটি নির্দিষ্ট কারণ বিশ্লেষণ করা হয়েছে এই প্রতিবেদনে।