নিউজ ডেস্ক:
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমরা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করছি। এর প্রতিশোধ নিতে চাচ্ছে বিএনপি-জামায়াত। এজন্য লিটনকে হত্যা করা হয়েছে। লিটনের হত্যার সঙ্গে জড়িতদের অবশ্যই ধরব এবং শাস্তি নিশ্চিত করব। এই ধরনের ঘটনা যেন না ঘটে, এটাই আমরা চাই। এমপিদের নিরাপত্তা যেন নিশ্চিত হয়, সেই ব্যবস্থা করারও অঙ্গীকার করেন তিনি।
সন্ত্রাসীদের হাতে নিহত গাইবান্ধা-১ আসনের এমপি মঞ্জুরুল ইসলাম লিটনের মৃত্যুতে গত রবিবার জাতীয় সংসদে আনীত শোক প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
লিটনের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করে শেখ হাসিনা বলেন, নিজেরই খুব কষ্ট লাগছে। লিটন এমন একটি এলাকা থেকে নির্বাচিত যে এলাকা সন্ত্রাসীদের আখড়া, জামায়াত শিবিরের আখড়া। ২০১৩ সালে ওই এলাকায় ব্যাপক সন্ত্রাসী ঘটনা ঘটেছে। পুলিশ ফাঁড়ি আক্রমণ করে ৪ জন পুলিশকে হত্যা, মুক্তিযোদ্ধা সংসদে আগুন দিয়ে কর্মকর্তাদের পুড়িয়ে মারার চেষ্টার করা হয়। আওয়ামী লীগের শত শত নেতাকর্মীর ওপর আক্রমণ ও বাড়িঘরে হামলা চালানো। রেললাইনে ফিসপ্লেট তুলে ফেলা। এসব তাণ্ডবে ওই এলাকার কোনো মানুষ ঘরে থাকতে পারেনি।
তিনি আরও বলেন, সেখানে বিএনপি-জামায়াত কত মানুষকে যে হত্যা করেছে তার কোনো হিসাব নেই। এই সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লিটন রুখে দাঁড়িয়েছিল। এটাই বুঝি তার কাল হয়ে গেল।
শেখ হাসিনা বলেন, আমরা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করছি। তারা এর প্রতিশোধ নিতে চাচ্ছে বিএনপি-জামায়াত। এজন্য লিটনকে হত্যা করা হয়েছে। সেখানকার মানুষের জীবনে লিটন শান্তি ফিরিয়ে এনেছিল। এই এলাকার মানুষের জীবনে স্বস্তি এনেছিল। এটিই তার কাল হয়েছে। বহুল আলোচিত কিশোরকে গুলি প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, লিটন সৌরভকে গুলি করেনি। তিনি কেন একজন শিশুকে গুলি করতে যাবেন? লিটনের বাবা তো আওয়ামী লীগ করতো। কিন্তু এ কারণে তার অস্ত্র ও গুলি সিজ করে করে নেওয়া হয়।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, সেদিন আমরা সবাই হতভাগ হয়েছিলাম। সদস্য সদস্যরা স্তম্ভিত হয়েছিলাম। লিটন মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষ শক্তি ছিলেন। বিএনপি-জামায়াত অধ্যুষিত এলাকায় তিনি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে কাজ করেছেন। জামায়াতের নেতাকে মিটিং করার জন্য তিনি ওই এলাকায় ঢুকতে দেননি। এজন্য তাকে হত্যা করা হতে পারে। আমাদের চৌকস পুলিশ বাহিনী সেখানে কাজ করছে। এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের অবশ্যই ধরে বিচার করব।
বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন, দুঃখ লাগে, অবাক লাগে-লিটন অত্যন্ত প্রতিকূল অবস্থায় রাজনীতি করেছেন। ওই এলাকাটি জামায়াত অধ্যুষিত এলাকা। ২০১২-১৩ সালে জামায়াত-বিএনপি ওই এলাকায় ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছিল। লিটনের উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি বলেন, সে আমাকে বলেছে নিজেকে রক্ষার জন্যই আমি গুলি ছুড়েছিলাম। কিন্তু সেটা যে সৌরভের পায়ে লাগবে বুঝিনি। গণমাধ্যম সঠিক তথ্য তুলে ধরেনি সেদিন।
একই জেলার এমপি ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়া বলেন, স্বাভাবিক মৃত্যু তার হয়নি। তাকে গুলি করে পাখির মত হত্যা করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, লিটন কোনো শিশুকে গুলি করেনি। কিন্তু আমরা মিডিয়ার কাছে হেরে গিয়েছিলাম। আমি লিটনের স্ত্রীর কাছে শুনেছি। তিনি গিয়েছিলেন বাজারে মাছ কেনার জন্য। ওই এলাকাটি জামায়াত-শিবির অধ্যুষিত। তার উপর হামলার প্রেক্ষিতে ওই ঘটনা ঘটেছিল। এরপর তার আগ্নেয়াস্ত্র ফেরত নেওয়া হলো। আবেদন করেও তাকে আর সেটা দেওয়া হলো না। অস্ত্রটি পেলে হয়তো তার এ অকাল মৃত্যু হতো না। কি পরিকল্পনায় তাকে হত্যা করা হয়েছিল আমরা তার সঠিক তদন্ত চাই।
স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সংসদের বৈঠকে গত ৩১ ডিসেম্বর অজ্ঞাত সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত এমপি লিটনের অকাল মৃত্যুতে আলোচনায় আরও অংশ নেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, প্রবীণ পার্লামেন্টারিয়ান সুরঞ্জিত সেন গুপ্ত, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, তথ্য, যোগাযোগ ও প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জোনায়েদ আহমেদ পলক, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক, চিফ হুইপ আসম ফিরোজ, হুইপ মাহবুব আরা গিনি, শামীম ওসমান, মীর শওকত আলী বাদশা প্রমুখ। পরে সর্বসম্মতিক্রমে সংসদে শোক প্রস্তাব গ্রহীত হয় এবং বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করে দোয়া ও মোনাজত করা হয়। পরে মরহুমের সম্মানে সংসদের বৈঠক কিছুক্ষণের জন্য মুলতবি রাখা হয়।