নিউজ ডেস্ক:
রাজধানীসহ আশপাশের এলাকায় বস্তির সংখ্যা প্রায় চার হাজার। এতে বসবাস করে ৪০ লাখেরও বেশি নিম্ন আয়ের মানুষ।
অশিক্ষা, দারিদ্র্য আর মা-বাবার অসচেতনতার কারণে বস্তিতে বসবাসকারীদের একটি বড় অংশ অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। বাড়ছে বস্তিকেন্দ্রিক অপরাধ। অপরিকল্পিত নগরায়ণের পাশাপাশি অবাধ বস্তির বিস্তারে নাগরিক পরিসেবা ব্যাহত হচ্ছে। বাড়ছে নানারকম সামাজিক ও রাজনৈতিক অপরাধ।গোয়েন্দা সংস্থার হিসাব মতে, এসব বস্তিতে লক্ষাধিক অপরাধী রয়েছে। তাদের মধ্যে শিশু-কিশোরদের সংখ্যাই বেশি। তারা বস্তিতে কিশোর সন্ত্রাসী বা বস্তির খুদে রাজা হিসেবে পরিচিত। অনেকের নামে হত্যা থেকে শুরু করে মাদক-ছিনতাই, চুরি, গাড়ি ভাঙচুর ও ডাকাতির একাধিক মামলা রয়েছে। মূলত রাজধানীর বস্তিগুলো এখন অপরাধের আখড়ায় পরিণত হয়েছে।
জানা গেছে, প্রভাবশালী মহল ও রাজনৈতিক নেতারা বস্তির অপরাধীদের ব্যবহার করে নানাভাবে ফায়দা লুটছে। অস্ত্র-মাদক কেনাবেচা, নারী-শিশু পাচার, ছিনতাই, চুরি, ডাকাতি ও অসামাজিক কার্যক্রমসহ নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়েছে বস্তির অপরাধীরা। প্রশাসন ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থা নানা উদ্যোগ নিয়েও তাদের নিয়ন্ত্রণে আনতে পারছে না।
রাজধানীর বিভিন্ন বস্তিতে সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, মহাখালীর কড়াইল বস্তি, জুরাইন বালুর মাঠ বস্তি, গোপীবাগ টিটিপাড়া বস্তি, মালিবাগের কুমিল্লা বস্তি, মোহাম্মদপুর বালুর মাঠ বস্তি, মালিবাগ রেললাইন বস্তি, খিলগাঁও নোয়াখাইল্লা বস্তি, মীর হাজিরবাগ বস্তি, ধলপুর সিটি পল্লী বস্তি, নামা শ্যামপুর বস্তি, গেন্ডারিয়ার রেললাইনের পাশের বস্তি, পার গেন্ডারিয়া বস্তি, আগারগাঁওয়ের বিএনপি বস্তি, মহাখালী সাততলা বস্তি, পোস্তগোলা ডিআইটি প্লট বস্তি, ডেমরার চরপাড়া বস্তি, পূর্ব ধোলাইপাড় ডিপটি গলির বস্তিসহ অধিকাংশ বস্তিতে বেপরোয়াভাবে অপরাধ কর্মকাণ্ড চলে আসছে। এসব জায়গায় এমন কোনো অপরাধ নেই, যা ঘটছে না। নিম্ন আয়ের মানুষের পাশাপাশি বহু সন্ত্রাসীও আশ্রয় নিয়েছে এসব বস্তিতে। ক্রিয়াশীল রয়েছে অনেক গোষ্ঠীও। এখানে প্রকাশ্যেই চলে মাদক বেচাকেনা। এলাকার উঠতি বয়সী ছেলেরা ক্রমেই মাদকাসক্ত হয়ে পড়ছে। চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই হয়ে উঠেছে বস্তিগুলোর নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা। এমনকি অপহরণ, খুন-ধর্ষণের মতো ঘটনাও ঘটছে অহরহ।
বস্তিবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বস্তির লোকজন অপরাধে জড়িয়ে পড়ার মূল কারণ হলো অর্থনৈতিক নিরাপত্তা আর শিক্ষার অভাব। তা ছাড়া বস্তির প্রায় ৯৮ ভাগ মা-বাবা নিজেরা কখনো স্কুলে পড়েনি। ফলে সন্তানদের তদারকির ব্যাপারে তারা সচেতন নয়। কড়াইল বস্তিতে থাকেন আকমল হোসেন। তিনি দীর্ঘদিন ধরে মাদক ব্যবসা করেন। তিনি জানান, তার গ্রামের বাড়ি ভোলায়। আগে থাকতেন টিটিপাড়া বস্তিতে। তার আয়ের অন্যতম উৎস এখন মাদক ব্যবসা। এলাকার রাজনৈতিক নেতা ও পুলিশকে মাসিক মাসোয়ারা দিয়েই তারা এই ব্যবসা করে আসছেন।
কড়াইল বস্তির জুলফিকার আলী (৪০) জানান, তিনি কোনো কাজ করেন না। রাজনৈতিক দলের সভা-সমাবেশে বস্তির লোকজনকে নিয়ে যান। আওয়ামী লীগ, বিএনপিসহ বিভিন্ন দলের মিছিল-মিটিং হলেই তার ডাক পড়ে। জনপ্রতি ১০০ থেকে ২০০ টাকা দেয়। তিনি সেখান থেকে কমিশন পান বলে জানান।
জুলফিকার বলেন, নেতারা আমাদের ব্যবহার করে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। আর পুলিশও বস্তির লোকজনকে নানাভাবে হয়রানি করে। মালিবাগ রেললাইন বস্তির সোলায়মান ফকিরের বাড়ি ছিল সিরাজগঞ্জ। নদী ভাঙনে সব কিছু হারিয়ে এখন বস্তিতে আশ্রয় নিয়েছেন। তিনি জানান, এখানে সবসময় গাঁজা, ফেনসিডিল, হেরোইন, ইয়াবাসহ নানা ধরনের মাদক বেচাকেনা হয়।
জানা গেছে, রাজধানীর আলোচিত কড়াইল বস্তিতে গণধোলাইয়ে মারা যাওয়া শীর্ষ সন্ত্রাসী মোশারফ হোসেন মশার উত্থান হয়েছিল এই বস্তিতেই। আন্ডারওয়ার্ল্ডের শীর্ষ সন্ত্রাসী অঢেল অর্থবিত্তের মালিক গোলাম রসুল সাগর ওরফে টোকাই সাগরও বড় হয়েছিলেন বস্তিতে। মগবাজারের টিঅ্যান্ডটি বস্তিতে বড় হয়ে ওঠেন সুব্রত বাইন। কাফরুলের আগামিয়ার বস্তিতে বেড়ে ওঠেন আরেক দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী কালা জাহাঙ্গীর।