নিউজ ডেস্ক:
আগামী ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেটে অঘোষিত অর্থ মূলধারায় ব্যবহারে উৎসাহিত করা হতে পারে। বিশেষ করে ভূমি রেজিস্ট্রেশনের সময় এসব টাকার মালিকরা ভূমির সঠিক দাম উল্লেখ করছে না। এতে সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এ প্রবণতা বন্ধ করে রাজস্ব আদায় বাড়ানোর পাশাপাশি বাজেটে অঘোষিত অর্থ মূলধারায় ব্যবহারে উৎসাহিত করতে নতুন উপায় বের করার চিন্তা করছে সরকার।
গতকাল রোববার সচিবালয়ে আর্থিক সমন্বয় কমিটি ও বাজেট মনিটরিং কমিটির বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বৈঠক শেষে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত সাংবাদিকদের কাছে আগামী বাজেটের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন। বৈঠকে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদসহ উভয় কমিটির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
সূত্র জানায়, কালো টাকা সাদা করার কোনো সুযোগ আগামী বাজেটেও থাকছে না। তবে অঘোষিত অর্থ সাদা করার সুযোগ আগের মতোই থাকবে। বিশেষ করে ভূমি রেজিস্ট্রেশনের ক্ষেত্রে রাজস্ব ফাঁকির যে প্রবণতা রয়েছে তা বন্ধ করতে নতুন পদ্ধতি ভাবা হচ্ছে। দেশ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ বিদেশে চলে যাচ্ছে- বৈঠকে এ বিষয়টিও প্রাধান্য পেয়েছে। এসব বিষয়ে কী ব্যবস্থা নেওয়া যায় তা নির্ধারণে উচ্চ পর্যায়ের একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। অর্থমন্ত্রী আগামী ১৯ এপ্রিল যুক্তরাষ্ট্র যাচ্ছেন, সেখান থেকে ফেরার পর বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হবে।
সূত্র জানায়, বৈঠকে জনশক্তি রপ্তানি এবং রেমিট্যান্স প্রবাহ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। গত কয়েক বছর ধরে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর সার্বিক অবস্থা অস্থিতিশীল হওয়ায় দেশগুলোর অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নিম্নগামী। আর আর এ কারণে কর্মীদের বেতন-ভাতা কমে যাওয়ায় রেমিট্যান্স প্রবাহ অনেকটা কমে গেছে। বিষয়টি বেশ উদ্বেগজনক।
বৈঠকে বলা হয়েছে, গত তিন বছরে প্রায় দেড় লাখ কর্মী কাজ নিয়ে বিভিন্ন দেশে গেছেন। কিন্তু সে তুলনায় রেমিট্যান্স বাড়েনি। ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স আসা নানা কারণে ব্যাহত হচ্ছে। বিশেষ করে হুন্ডি এবং বিকাশের মাধ্যমে দ্রুত টাকা পাঠানোর সুযোগ থাকায় ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স আসার প্রবণতা কমেছে। এ থেকে উত্তরণের করণীয় নিয়েও বৈঠকে আলোচনা হয়েছে।
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেট হবে বর্তমান সরকারের মেয়াদকালে শেষ পূর্ণাঙ্গ বাজেট। এ কারণে আসন্ন বাজেটকে নির্বাচনী বাজেট বলা হচ্ছে। আর স্বাভাবিক কারণে বাজেটের আকারও কিছুটা বড় হবে। বৈঠকে আগামী বাজেটের আকার প্রাথমিকভাবে চার লাখ ৭০০ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। বাজেটে ঘাটতি ধরা হয়েছে ৫ দশমিক ৫ শতাংশ। চলতি অর্থবছর বাজেট ঘাটতি ধরা হয়েছে ৫ শতাংশ।
উল্লেখ্য, বর্তমান বাজেটে ঘাটতি ধরা হয়েছিল ৩৮ হাজার কোটি টাকা, যা পরে সংশোধন করে আনা হয় ৩৫ হাজার কোটি টাকা। আগামী বাজেটে এ ঘাটতি ৬০ হাজার কোটি টাকা হতে পারে বলে অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
বাজেট ঘাটতি প্রসঙ্গে বৈঠক শেষে অর্থমন্ত্রী বলেন, এবারে বাজেট ঘাটতি আমরা বেশি রাখছি। বাজেট ঘাটতি ৫ দশমিক ১ শতাংশ হতে পারে। আগামী বছরের জিডিপির প্রবৃদ্ধি লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৭ দশমিক ৪ শতাংশ। চলতি অর্থবছর ছিল ৭ দশমিক ২ শতাংশ।
সূত্র জানায়, আগামী অর্থবছরের মূল্যস্ফীতি ধরা হয়েছে ৫ দশমিক ১ শতাংশ। চলতি অর্থবছর এটি ছিল ৫ দশমিক ৪১ শতাংশ। আর গত বছর একই সময় মূল্যস্ফীতি ছিল ৫ দশমিক ৬২ শতাংশ। রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হবে বলে বৈঠকে জানানো হয়। এ সময় বলা হয়, আট মাসে রাজস্ব আদায়ের প্রবৃদ্ধি ছিল ১৯ দশমিক ৩৭ শতাংশ। আগামী অর্থবছর রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হবে দুই লাখ ৪৫ হাজার কোটি টাকা। এছাড়া বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) আকার হবে দেড় লাখ কোটি টাকা।