শিরোনাম :
Logo ঘাতকের বুলেটে সাভারের রাজপথে অত্যন্ত নির্মমভাবে শহীদ হন শিক্ষার্থী ইয়ামিন Logo পলাশবাড়ীতে ধানের শীর্ষ প্রতিকের পক্ষে উঠান বৈঠক অনুষ্ঠিত Logo হাবিপ্রবিতে প্রথমবারের মতো দুই দিনব্যাপী ব্র‍্যাকনেট প্রেজেন্টস আইইইই কম্পিউটার সোসাইটি সামার সিম্পোজিয়াম ২০২৫ Logo সাজিদের মৃত্যু ‘অস্বাভাবিক’ দাবি করে ইবি শিক্ষার্থীদের প্রেস কনফারেন্স Logo শেরপুরে ‘রূপসী শেরপুর’-এর মাসব্যাপী বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি উদ্বোধন Logo জবির উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের প্রথম পুনর্মিলনী অনুষ্ঠিত Logo খাগড়াছড়ির ত্রিপুরা কিশোরীকে ধর্ষণের প্রতিবাদে রাবিতে বিক্ষোভ মিছিল Logo ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র মৃত্যুর ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন Logo সাজিদের জানাজা সম্পন্ন, মৃত্যুরহস্য উদঘাটনে তদন্তের ঘোষণা Logo ঊচত এর দাবীতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ

ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ বাঁধলে যেভাবে প্রভাব ফেলবে চীন

পহেলগামে সাম্প্রতিক হামলার পর ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে তীব্র উত্তেজনা বিরাজ করছে। পরিস্থিতি এমন যে, অনেকেই আশঙ্কা করছেন যেকোনো সময় শুরু হতে পারে সামরিক সংঘর্ষ। এই প্রেক্ষাপটে চীনের অবস্থান ও ভূমিকা নিয়ে দক্ষিণ এশিয়ায় কূটনৈতিক মহলে জোর আলোচনা চলছে।

চীন-পাকিস্তান ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক এবং চীনের প্রভাবশালী ভূমিকাকে সামনে রেখে প্রশ্ন উঠছে—এমন উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে ভারত চীনের প্রতিক্রিয়ার ভয়ে কি কড়া পদক্ষেপ নেওয়া থেকে বিরত থাকবে? চীনই বা কীভাবে ভারসাম্য রক্ষা করবে, যেখানে তার বাণিজ্যিক স্বার্থ আছে উভয় দেশের সঙ্গেই?

চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই জানিয়েছেন, জম্মু-কাশ্মীরে হামলার পর তিনি ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনার ওপর নজর রাখছেন এবং দুই দেশকে সংযত থাকার অনুরোধ করেছেন। পহেলগাম হামলার পরদিনই চীন ঘটনার নিন্দা জানায় এবং ভারতের নিহতদের প্রতি সমবেদনা জানায়।

নিরপেক্ষ তদন্তের পক্ষে চীন:
বেইজিংভিত্তিক বিশ্লেষক আইনার ট্যাঙ্গেন বলেন, ভারত কোনো দৃঢ় প্রমাণ ছাড়াই পাকিস্তানকে দায়ী করছে, যা সমস্যাকে আরও জটিল করে তুলছে। তিনি বলেন, পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে হলে একটি নিরপেক্ষ, আন্তর্জাতিক তদন্ত জরুরি, যাতে ব্রিকসসহ বিভিন্ন দেশ ও সংস্থা যুক্ত থাকতে পারে।

চীনের অগ্রাধিকার: অর্থনৈতিক স্বার্থ ও আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা:
চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডোর, গদরে চীনা বিনিয়োগ, এবং পাকিস্তানে চীনা নাগরিকদের নিরাপত্তার প্রশ্নে চীনের গভীর স্বার্থ জড়িত। চীন পাকিস্তানের সবচেয়ে বড় অস্ত্র সরবরাহকারী দেশ—গত পাঁচ বছরে পাকিস্তান তার ৮১ শতাংশ অস্ত্রই পেয়েছে চীন থেকে।

পাকিস্তানের সাবেক কূটনীতিক তসনীম আসলাম মনে করেন, চীন চাইবে এই অঞ্চলে শান্তি বজায় থাকুক, কারণ সংঘর্ষ তার অর্থনৈতিক স্বার্থকে হুমকিতে ফেলবে। তাই চীন চায়, ভারত-পাকিস্তান বিরোধ যেন আলোচনার মাধ্যমে মেটানো হয়।

সামরিক সহায়তা নাকি কূটনৈতিক সমর্থন:
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চীন পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা নিয়ে উদ্বেগকে স্বীকার করলেও এটি কোনো সামরিক জোট নয়। বরং, কূটনৈতিকভাবে পাকিস্তানকে সহায়তা করছে চীন। ২০১৯ সালের মতো এবারও আন্তর্জাতিক চাপ থেকে পাকিস্তানকে অনেকটাই রক্ষা করতে পেরেছে বেইজিং।

চীনের পক্ষ থেকে বারবার আকার-ইঙ্গিতে বোঝানো হচ্ছে, পাকিস্তান একটি সার্বভৌম দেশ এবং প্রতিরক্ষায় তার উদ্যোগকে চীন সমর্থন করে। বিশেষজ্ঞ মুহম্মদ শোয়েব মনে করেন, এসব বার্তা ভারতের প্রতি সতর্কবার্তা হিসেবেই দেখা উচিত, যেন বালাকোটের মতো ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে।

চীনের অস্ত্রে ভরসা পাকিস্তানের:
চীন থেকে পাওয়া পিএল-১৫ এবং এসডি-১০ ক্ষেপণাস্ত্রসহ অত্যাধুনিক বিভিআর প্রযুক্তির অস্ত্র পাকিস্তানের কাছে রয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, সম্ভাব্য যুদ্ধে এগুলোই ব্যবহৃত হবে। তবে এই অস্ত্রগুলো আগেই সম্পাদিত চুক্তির আওতায় এসেছে, বর্তমানে উত্তেজনার সঙ্গে সরাসরি সম্পর্ক নেই।

পারমাণবিক বাস্তবতা:
ট্যাঙ্গেন বলেন, ভারত ও পাকিস্তান উভয়েই পারমাণবিক অস্ত্রসমৃদ্ধ দেশ। সম্ভবত সেই কারণেই সরাসরি যুদ্ধ এখনও শুরু হয়নি। তবে উত্তেজনা প্রশমনে চীনসহ আন্তর্জাতিক কূটনীতিকদের দায়িত্ব আরও বেড়েছে।

এই সংকটে চীন এমন এক অবস্থানে রয়েছে, যেখানে তাকে ভারসাম্য রাখতে হবে অর্থনৈতিক স্বার্থ, আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা এবং তার কৌশলগত মিত্র পাকিস্তানের প্রতি সমর্থনের মধ্যে। নিরপেক্ষ তদন্ত এবং শান্তিপূর্ণ সংলাপই হতে পারে এই উত্তপ্ত পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের একমাত্র পথ।

ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ

ঘাতকের বুলেটে সাভারের রাজপথে অত্যন্ত নির্মমভাবে শহীদ হন শিক্ষার্থী ইয়ামিন

ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ বাঁধলে যেভাবে প্রভাব ফেলবে চীন

আপডেট সময় : ০২:০১:২৩ অপরাহ্ণ, শনিবার, ৩ মে ২০২৫

পহেলগামে সাম্প্রতিক হামলার পর ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে তীব্র উত্তেজনা বিরাজ করছে। পরিস্থিতি এমন যে, অনেকেই আশঙ্কা করছেন যেকোনো সময় শুরু হতে পারে সামরিক সংঘর্ষ। এই প্রেক্ষাপটে চীনের অবস্থান ও ভূমিকা নিয়ে দক্ষিণ এশিয়ায় কূটনৈতিক মহলে জোর আলোচনা চলছে।

চীন-পাকিস্তান ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক এবং চীনের প্রভাবশালী ভূমিকাকে সামনে রেখে প্রশ্ন উঠছে—এমন উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে ভারত চীনের প্রতিক্রিয়ার ভয়ে কি কড়া পদক্ষেপ নেওয়া থেকে বিরত থাকবে? চীনই বা কীভাবে ভারসাম্য রক্ষা করবে, যেখানে তার বাণিজ্যিক স্বার্থ আছে উভয় দেশের সঙ্গেই?

চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই জানিয়েছেন, জম্মু-কাশ্মীরে হামলার পর তিনি ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনার ওপর নজর রাখছেন এবং দুই দেশকে সংযত থাকার অনুরোধ করেছেন। পহেলগাম হামলার পরদিনই চীন ঘটনার নিন্দা জানায় এবং ভারতের নিহতদের প্রতি সমবেদনা জানায়।

নিরপেক্ষ তদন্তের পক্ষে চীন:
বেইজিংভিত্তিক বিশ্লেষক আইনার ট্যাঙ্গেন বলেন, ভারত কোনো দৃঢ় প্রমাণ ছাড়াই পাকিস্তানকে দায়ী করছে, যা সমস্যাকে আরও জটিল করে তুলছে। তিনি বলেন, পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে হলে একটি নিরপেক্ষ, আন্তর্জাতিক তদন্ত জরুরি, যাতে ব্রিকসসহ বিভিন্ন দেশ ও সংস্থা যুক্ত থাকতে পারে।

চীনের অগ্রাধিকার: অর্থনৈতিক স্বার্থ ও আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা:
চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডোর, গদরে চীনা বিনিয়োগ, এবং পাকিস্তানে চীনা নাগরিকদের নিরাপত্তার প্রশ্নে চীনের গভীর স্বার্থ জড়িত। চীন পাকিস্তানের সবচেয়ে বড় অস্ত্র সরবরাহকারী দেশ—গত পাঁচ বছরে পাকিস্তান তার ৮১ শতাংশ অস্ত্রই পেয়েছে চীন থেকে।

পাকিস্তানের সাবেক কূটনীতিক তসনীম আসলাম মনে করেন, চীন চাইবে এই অঞ্চলে শান্তি বজায় থাকুক, কারণ সংঘর্ষ তার অর্থনৈতিক স্বার্থকে হুমকিতে ফেলবে। তাই চীন চায়, ভারত-পাকিস্তান বিরোধ যেন আলোচনার মাধ্যমে মেটানো হয়।

সামরিক সহায়তা নাকি কূটনৈতিক সমর্থন:
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চীন পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা নিয়ে উদ্বেগকে স্বীকার করলেও এটি কোনো সামরিক জোট নয়। বরং, কূটনৈতিকভাবে পাকিস্তানকে সহায়তা করছে চীন। ২০১৯ সালের মতো এবারও আন্তর্জাতিক চাপ থেকে পাকিস্তানকে অনেকটাই রক্ষা করতে পেরেছে বেইজিং।

চীনের পক্ষ থেকে বারবার আকার-ইঙ্গিতে বোঝানো হচ্ছে, পাকিস্তান একটি সার্বভৌম দেশ এবং প্রতিরক্ষায় তার উদ্যোগকে চীন সমর্থন করে। বিশেষজ্ঞ মুহম্মদ শোয়েব মনে করেন, এসব বার্তা ভারতের প্রতি সতর্কবার্তা হিসেবেই দেখা উচিত, যেন বালাকোটের মতো ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে।

চীনের অস্ত্রে ভরসা পাকিস্তানের:
চীন থেকে পাওয়া পিএল-১৫ এবং এসডি-১০ ক্ষেপণাস্ত্রসহ অত্যাধুনিক বিভিআর প্রযুক্তির অস্ত্র পাকিস্তানের কাছে রয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, সম্ভাব্য যুদ্ধে এগুলোই ব্যবহৃত হবে। তবে এই অস্ত্রগুলো আগেই সম্পাদিত চুক্তির আওতায় এসেছে, বর্তমানে উত্তেজনার সঙ্গে সরাসরি সম্পর্ক নেই।

পারমাণবিক বাস্তবতা:
ট্যাঙ্গেন বলেন, ভারত ও পাকিস্তান উভয়েই পারমাণবিক অস্ত্রসমৃদ্ধ দেশ। সম্ভবত সেই কারণেই সরাসরি যুদ্ধ এখনও শুরু হয়নি। তবে উত্তেজনা প্রশমনে চীনসহ আন্তর্জাতিক কূটনীতিকদের দায়িত্ব আরও বেড়েছে।

এই সংকটে চীন এমন এক অবস্থানে রয়েছে, যেখানে তাকে ভারসাম্য রাখতে হবে অর্থনৈতিক স্বার্থ, আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা এবং তার কৌশলগত মিত্র পাকিস্তানের প্রতি সমর্থনের মধ্যে। নিরপেক্ষ তদন্ত এবং শান্তিপূর্ণ সংলাপই হতে পারে এই উত্তপ্ত পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের একমাত্র পথ।