মুখ ও মুখগহ্বরে ক্যানসার হয়েছে কিনা জেনে নিন, ঝুঁকিতে কারা

  • নীলকন্ঠ অনলাইন নীলকন্ঠ অনলাইন
  • আপডেট সময় : ০৮:৫১:১৪ অপরাহ্ণ, শনিবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৫
  • ৭১১ বার পড়া হয়েছে
প্রতি বছর বেড়েই চলেছে ক্যানসার আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। দেশে মোট ক্যানসার আক্রান্তের প্রায় এক তৃতীয়াংশ ওরাল ক্যাভিটি বা মুখ ও মুখগহ্বরের ক্যানসারে ভুগছেন। তবে পুরুষের তুলনায় নারীদের ওরাল ক্যাভিটি ক্যানসার বেশি হয়।

মুখ ও মুখহ্বর ক্যানসার কী

মুখ ও মুখগহ্বর ক্যানসার হলো এক ধরনের ম্যালিগন্যান্ট টিউমার, যা মুখের ভেতর এবং আশপাশের যেকোনো স্থানে যেমন—ঠোঁট, মাড়ি, জিহ্বা, গালের ভেতরের অংশ, তালু ইত্যাদিতে হতে পারে। এটি অন্যান্য ক্যানসারের মতোই শরীরের অস্বাভাবিক কোষ বৃদ্ধির ফলে সৃষ্টি হয় এবং আশপাশের টিস্যুকে আক্রান্ত করতে পারে।

দীর্ঘমেয়াদি ক্ষত বা আলসার মুখগহ্বর ক্যানসারের একটি সতর্কতা চিহ্ন। প্রতিদিন আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে মুখের ভেতরে ক্ষত বা পরিবর্তন আছে কি না, তা খেয়াল করা জরুরি। চিকিৎসকরা বলছেন, শুধুমাত্র ওরাল হাইজিন বজায় না রাখাই নয়, বরং মুখে কোনো ক্ষত অবহেলা করাও ক্যানসার দেরিতে শনাক্ত হওয়ার একটি বড় কারণ। বছরে অন্তত দু’বার একজন ডেন্টাল সার্জনের কাছে মুখ ও মুখগহ্বরের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা উচিত। কারণ ক্যানসার যত দেরিতে ধরা পড়ে, ততই ঝুঁকি বাড়ে।

মুখ ও মুখগহ্বর ক্যানসারের প্রধান কারণগুলো
১. ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য সেবন
২. পান, জর্দা, সুপারি, গুল ইত্যাদি মুখে রেখে দীর্ঘ সময় রাখা ও কুলকুচি না করা
৩. ভাঙা দাঁত বা কৃত্রিম দাঁতের আঘাতে মুখে ক্ষত সৃষ্টি
৪. ওরাল হাইজিন মেনে না চলা
৫. এইচপিভি ভাইরাস সংক্রমণ, যা অপরিষ্কার মুখগহ্বরে সহজে ছড়িয়ে পড়ে

লক্ষণ
মুখে দীর্ঘস্থায়ী ক্ষত বা আলসার

জিহ্বা নাড়ালে বা কথা বললে ব্যথা

খাবার গিলতে বা চিবোতে কষ্ট

মুখে ব্যথা ও অস্পষ্ট কথা

এ ধরনের লক্ষণ দেখা দিলে অবহেলা না করে দ্রুত একজন ডেন্টাল সার্জন বা মুখ ও দাঁতের চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

চিকিৎসা ও করণীয়
ক্যানসারের চিকিৎসা নির্ভর করে রোগীর অবস্থা ও ক্যানসারের স্তরের উপর। চিকিৎসা পদ্ধতির মধ্যে রয়েছে:

অস্ত্রোপচার (সার্জারি)

রেডিওথেরাপি

কেমোথেরাপি

ইমিউনোথেরাপি

প্রথম ও দ্বিতীয় পর্যায়ের ক্যানসার অপারেশনের মাধ্যমে চিকিৎসা সম্ভব, তবে তৃতীয় ও চতুর্থ পর্যায়ে অপারেশন অনেক সময় সম্ভব হয় না। সেক্ষেত্রে কেমোথেরাপি বা রেডিওথেরাপির মাধ্যমে চিকিৎসা করা হয়।

অধ্যাপক স্বপন বলেন, “ম্যাক্সিলোফেসিয়াল সার্জন ও ক্যানসার বিশেষজ্ঞ যৌথভাবে চিকিৎসার সিদ্ধান্ত নিলে ফলাফল আরও ভালো হয়। অনলাইন মেডিকেল বোর্ড গঠন করাও হতে পারে কার্যকর উপায়।”

প্রতিরোধ
ওরাল হাইজিন বজায় রাখা—দিনে অন্তত দু’বার ব্রাশ করা

তামাক ও তামাকজাত দ্রব্য থেকে দূরে থাকা

নিয়মিত আয়নায় মুখ পরীক্ষা করা

বার্ষিকভাবে ডেন্টাল চেকআপ করানো

সুস্থ খাদ্যাভ্যাস ও সচেতনতা বৃদ্ধি

মুখ ও মুখগহ্বর ক্যানসার অনেকাংশে প্রতিরোধযোগ্য। সচেতনতা, নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা মেনে চললেই এই মরণব্যাধির ঝুঁকি অনেকটাই কমানো সম্ভব।

ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ

মুখ ও মুখগহ্বরে ক্যানসার হয়েছে কিনা জেনে নিন, ঝুঁকিতে কারা

আপডেট সময় : ০৮:৫১:১৪ অপরাহ্ণ, শনিবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৫
প্রতি বছর বেড়েই চলেছে ক্যানসার আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। দেশে মোট ক্যানসার আক্রান্তের প্রায় এক তৃতীয়াংশ ওরাল ক্যাভিটি বা মুখ ও মুখগহ্বরের ক্যানসারে ভুগছেন। তবে পুরুষের তুলনায় নারীদের ওরাল ক্যাভিটি ক্যানসার বেশি হয়।

মুখ ও মুখহ্বর ক্যানসার কী

মুখ ও মুখগহ্বর ক্যানসার হলো এক ধরনের ম্যালিগন্যান্ট টিউমার, যা মুখের ভেতর এবং আশপাশের যেকোনো স্থানে যেমন—ঠোঁট, মাড়ি, জিহ্বা, গালের ভেতরের অংশ, তালু ইত্যাদিতে হতে পারে। এটি অন্যান্য ক্যানসারের মতোই শরীরের অস্বাভাবিক কোষ বৃদ্ধির ফলে সৃষ্টি হয় এবং আশপাশের টিস্যুকে আক্রান্ত করতে পারে।

দীর্ঘমেয়াদি ক্ষত বা আলসার মুখগহ্বর ক্যানসারের একটি সতর্কতা চিহ্ন। প্রতিদিন আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে মুখের ভেতরে ক্ষত বা পরিবর্তন আছে কি না, তা খেয়াল করা জরুরি। চিকিৎসকরা বলছেন, শুধুমাত্র ওরাল হাইজিন বজায় না রাখাই নয়, বরং মুখে কোনো ক্ষত অবহেলা করাও ক্যানসার দেরিতে শনাক্ত হওয়ার একটি বড় কারণ। বছরে অন্তত দু’বার একজন ডেন্টাল সার্জনের কাছে মুখ ও মুখগহ্বরের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা উচিত। কারণ ক্যানসার যত দেরিতে ধরা পড়ে, ততই ঝুঁকি বাড়ে।

মুখ ও মুখগহ্বর ক্যানসারের প্রধান কারণগুলো
১. ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য সেবন
২. পান, জর্দা, সুপারি, গুল ইত্যাদি মুখে রেখে দীর্ঘ সময় রাখা ও কুলকুচি না করা
৩. ভাঙা দাঁত বা কৃত্রিম দাঁতের আঘাতে মুখে ক্ষত সৃষ্টি
৪. ওরাল হাইজিন মেনে না চলা
৫. এইচপিভি ভাইরাস সংক্রমণ, যা অপরিষ্কার মুখগহ্বরে সহজে ছড়িয়ে পড়ে

লক্ষণ
মুখে দীর্ঘস্থায়ী ক্ষত বা আলসার

জিহ্বা নাড়ালে বা কথা বললে ব্যথা

খাবার গিলতে বা চিবোতে কষ্ট

মুখে ব্যথা ও অস্পষ্ট কথা

এ ধরনের লক্ষণ দেখা দিলে অবহেলা না করে দ্রুত একজন ডেন্টাল সার্জন বা মুখ ও দাঁতের চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

চিকিৎসা ও করণীয়
ক্যানসারের চিকিৎসা নির্ভর করে রোগীর অবস্থা ও ক্যানসারের স্তরের উপর। চিকিৎসা পদ্ধতির মধ্যে রয়েছে:

অস্ত্রোপচার (সার্জারি)

রেডিওথেরাপি

কেমোথেরাপি

ইমিউনোথেরাপি

প্রথম ও দ্বিতীয় পর্যায়ের ক্যানসার অপারেশনের মাধ্যমে চিকিৎসা সম্ভব, তবে তৃতীয় ও চতুর্থ পর্যায়ে অপারেশন অনেক সময় সম্ভব হয় না। সেক্ষেত্রে কেমোথেরাপি বা রেডিওথেরাপির মাধ্যমে চিকিৎসা করা হয়।

অধ্যাপক স্বপন বলেন, “ম্যাক্সিলোফেসিয়াল সার্জন ও ক্যানসার বিশেষজ্ঞ যৌথভাবে চিকিৎসার সিদ্ধান্ত নিলে ফলাফল আরও ভালো হয়। অনলাইন মেডিকেল বোর্ড গঠন করাও হতে পারে কার্যকর উপায়।”

প্রতিরোধ
ওরাল হাইজিন বজায় রাখা—দিনে অন্তত দু’বার ব্রাশ করা

তামাক ও তামাকজাত দ্রব্য থেকে দূরে থাকা

নিয়মিত আয়নায় মুখ পরীক্ষা করা

বার্ষিকভাবে ডেন্টাল চেকআপ করানো

সুস্থ খাদ্যাভ্যাস ও সচেতনতা বৃদ্ধি

মুখ ও মুখগহ্বর ক্যানসার অনেকাংশে প্রতিরোধযোগ্য। সচেতনতা, নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা মেনে চললেই এই মরণব্যাধির ঝুঁকি অনেকটাই কমানো সম্ভব।