ভাতেও রয়েছে ক্যান্সারের ঝুঁকি, গবেষণায় উঠে এলো চাঞ্চল্যকর তথ্য

  • নীলকন্ঠ অনলাইন নীলকন্ঠ অনলাইন
  • আপডেট সময় : ০৮:৪৯:৪৬ অপরাহ্ণ, শনিবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৫
  • ৭১১ বার পড়া হয়েছে
আমাদের অজান্তেই ভাত ক্যানসারসহ ভয়াবহ স্বাস্থ্যঝুঁকির কারণ হতে পারে। সম্প্রতি ‘দ্য ল্যানসেট প্ল্যানেটারি হেলথ’ জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণায় উঠে এসেছে এমন উদ্বেগজনক তথ্য।

আমাদের খাদ্যতালিকার বড় একটি অংশ জুড়ে আছে ভাত। তবে আমাদের অজান্তেই ভাত ক্যানসারসহ ভয়াবহ স্বাস্থ্যঝুঁকির কারণ হতে পারে। সম্প্রতি ‘দ্য ল্যানসেট প্ল্যানেটারি হেলথ’ জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণায় উঠে এসেছে এমন উদ্বেগজনক তথ্য। হিন্দুস্তান টাইমসের এক প্রতিবেদন উঠে এসেছে বিস্তারিত।

যুক্তরাষ্ট্রের কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে ধীরে ধীরে চালের দানায় বাড়ছে বিষাক্ত আর্সেনিকের মাত্রা। বিশেষ করে তাপমাত্রা ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি বেড়ে গেলে এবং বাতাসে কার্বন ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ বাড়লে মাটির রাসায়নিক গঠনে এমন পরিবর্তন হয়, যা চালের দানায় আর্সেনিক শোষণকে আরও বাড়িয়ে তোলে।

গবেষক দলের প্রধান লুইস জিসকা বলেন, এই পরিবর্তনের ফলে ভবিষ্যতে হৃদরোগ, ডায়াবেটিস এবং নানা রকম অ-ক্যানসারজনিত স্বাস্থ্যঝুঁকিও বহুগুণে বেড়ে যেতে পারে।

গবেষণায় বাংলাদেশ, ভারত, চীন, ইন্দোনেশিয়া, মিয়ানমার, ফিলিপাইন ও ভিয়েতনামের ২৮টি চালের জাত নিয়ে ১০ বছরের মাঠ পর্যায়ের তথ্য বিশ্লেষণ করা হয়। এতে দেখা গেছে, তাপমাত্রা ও কার্বন ডাই-অক্সাইড একসঙ্গে কাজ করে চালের আর্সেনিক মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। এর ফলে ২০৫০ সালের মধ্যে এই অঞ্চলের কোটিকোটি মানুষের মধ্যে ক্যানসার ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

গবেষণায় বাংলাদেশ, ভারত, চীন, ইন্দোনেশিয়া, মিয়ানমার, ফিলিপাইন ও ভিয়েতনামের ২৮টি চালের জাত নিয়ে ১০ বছরের মাঠ পর্যায়ের তথ্য বিশ্লেষণ করা হয়। এতে দেখা গেছে, তাপমাত্রা ও কার্বন ডাই-অক্সাইড একসঙ্গে কাজ করে চালের আর্সেনিক মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। এর ফলে ২০৫০ সালের মধ্যে এই অঞ্চলের কোটিকোটি মানুষের মধ্যে ক্যানসার ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। ছবি: সংগৃহীত
গবেষণায় বাংলাদেশ, ভারত, চীন, ইন্দোনেশিয়া, মিয়ানমার, ফিলিপাইন ও ভিয়েতনামের ২৮টি চালের জাত নিয়ে ১০ বছরের মাঠ পর্যায়ের তথ্য বিশ্লেষণ করা হয়। এতে দেখা গেছে, তাপমাত্রা ও কার্বন ডাই-অক্সাইড একসঙ্গে কাজ করে চালের আর্সেনিক মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। এর ফলে ২০৫০ সালের মধ্যে এই অঞ্চলের কোটিকোটি মানুষের মধ্যে ক্যানসার ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। ছবি: সংগৃহীত

বিশেষ করে ফুসফুস ও মূত্রথলির ক্যানসারের আশঙ্কা ব্যাপক হারে বাড়তে পারে। চীনে শুধু চালের আর্সেনিকজনিত কারণে ২০৫০ সালে ক্যানসারের সংখ্যা দাঁড়াতে পারে প্রায় ১.৩৪ কোটি-তে, যা এই গবেষণায় উল্লেখিত দেশগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ।

গবেষণায় আরও বলা হয়েছে, আর্সেনিক শুধু ক্যানসার নয়—ডায়াবেটিস, গর্ভকালীন জটিলতা, স্নায়বিক বিকাশে সমস্যা এবং রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে। যেহেতু দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে চাল প্রধান খাদ্য, তাই এখানকার জনসংখ্যা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে।

সমাধানের উপায়: বিশেষজ্ঞরা একাধিক গবেষণা করে স্বাস্থ্যঝুঁকির সমাধানের চেষ্টা করেছেন। তারা বলছেন, আর্সেনিকের পরিমাণ কমাতে উদ্ভিদের জাত উন্নয়ন, জমির মাটি ব্যবস্থাপনা ও সেচের পানির মান নিয়ন্ত্রণ জরুরি। সেই সঙ্গে জনসচেতনতা ও সরকারি স্বাস্থ্য উদ্যোগ গ্রহণ করাও খুব প্রয়োজন।

আমাদের সচেতনতাই পারে ক্যানসারের মতো ভয়াবহ রোগ থেকে আমাদের রক্ষা করতে। তবে কোনোভাবেই ভাত খাওয়া বন্ধ করা সমাধান নয়। বরং পরিবেশবান্ধব চাষাবাদ ও প্রযুক্তিনির্ভর কৃষিই হতে পারে ভবিষ্যতের নিরাপদ খাদ্যের মূল চাবিকাঠি।

ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ

ভাতেও রয়েছে ক্যান্সারের ঝুঁকি, গবেষণায় উঠে এলো চাঞ্চল্যকর তথ্য

আপডেট সময় : ০৮:৪৯:৪৬ অপরাহ্ণ, শনিবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৫
আমাদের অজান্তেই ভাত ক্যানসারসহ ভয়াবহ স্বাস্থ্যঝুঁকির কারণ হতে পারে। সম্প্রতি ‘দ্য ল্যানসেট প্ল্যানেটারি হেলথ’ জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণায় উঠে এসেছে এমন উদ্বেগজনক তথ্য।

আমাদের খাদ্যতালিকার বড় একটি অংশ জুড়ে আছে ভাত। তবে আমাদের অজান্তেই ভাত ক্যানসারসহ ভয়াবহ স্বাস্থ্যঝুঁকির কারণ হতে পারে। সম্প্রতি ‘দ্য ল্যানসেট প্ল্যানেটারি হেলথ’ জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণায় উঠে এসেছে এমন উদ্বেগজনক তথ্য। হিন্দুস্তান টাইমসের এক প্রতিবেদন উঠে এসেছে বিস্তারিত।

যুক্তরাষ্ট্রের কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে ধীরে ধীরে চালের দানায় বাড়ছে বিষাক্ত আর্সেনিকের মাত্রা। বিশেষ করে তাপমাত্রা ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি বেড়ে গেলে এবং বাতাসে কার্বন ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ বাড়লে মাটির রাসায়নিক গঠনে এমন পরিবর্তন হয়, যা চালের দানায় আর্সেনিক শোষণকে আরও বাড়িয়ে তোলে।

গবেষক দলের প্রধান লুইস জিসকা বলেন, এই পরিবর্তনের ফলে ভবিষ্যতে হৃদরোগ, ডায়াবেটিস এবং নানা রকম অ-ক্যানসারজনিত স্বাস্থ্যঝুঁকিও বহুগুণে বেড়ে যেতে পারে।

গবেষণায় বাংলাদেশ, ভারত, চীন, ইন্দোনেশিয়া, মিয়ানমার, ফিলিপাইন ও ভিয়েতনামের ২৮টি চালের জাত নিয়ে ১০ বছরের মাঠ পর্যায়ের তথ্য বিশ্লেষণ করা হয়। এতে দেখা গেছে, তাপমাত্রা ও কার্বন ডাই-অক্সাইড একসঙ্গে কাজ করে চালের আর্সেনিক মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। এর ফলে ২০৫০ সালের মধ্যে এই অঞ্চলের কোটিকোটি মানুষের মধ্যে ক্যানসার ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

গবেষণায় বাংলাদেশ, ভারত, চীন, ইন্দোনেশিয়া, মিয়ানমার, ফিলিপাইন ও ভিয়েতনামের ২৮টি চালের জাত নিয়ে ১০ বছরের মাঠ পর্যায়ের তথ্য বিশ্লেষণ করা হয়। এতে দেখা গেছে, তাপমাত্রা ও কার্বন ডাই-অক্সাইড একসঙ্গে কাজ করে চালের আর্সেনিক মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। এর ফলে ২০৫০ সালের মধ্যে এই অঞ্চলের কোটিকোটি মানুষের মধ্যে ক্যানসার ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। ছবি: সংগৃহীত
গবেষণায় বাংলাদেশ, ভারত, চীন, ইন্দোনেশিয়া, মিয়ানমার, ফিলিপাইন ও ভিয়েতনামের ২৮টি চালের জাত নিয়ে ১০ বছরের মাঠ পর্যায়ের তথ্য বিশ্লেষণ করা হয়। এতে দেখা গেছে, তাপমাত্রা ও কার্বন ডাই-অক্সাইড একসঙ্গে কাজ করে চালের আর্সেনিক মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। এর ফলে ২০৫০ সালের মধ্যে এই অঞ্চলের কোটিকোটি মানুষের মধ্যে ক্যানসার ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। ছবি: সংগৃহীত

বিশেষ করে ফুসফুস ও মূত্রথলির ক্যানসারের আশঙ্কা ব্যাপক হারে বাড়তে পারে। চীনে শুধু চালের আর্সেনিকজনিত কারণে ২০৫০ সালে ক্যানসারের সংখ্যা দাঁড়াতে পারে প্রায় ১.৩৪ কোটি-তে, যা এই গবেষণায় উল্লেখিত দেশগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ।

গবেষণায় আরও বলা হয়েছে, আর্সেনিক শুধু ক্যানসার নয়—ডায়াবেটিস, গর্ভকালীন জটিলতা, স্নায়বিক বিকাশে সমস্যা এবং রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে। যেহেতু দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে চাল প্রধান খাদ্য, তাই এখানকার জনসংখ্যা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে।

সমাধানের উপায়: বিশেষজ্ঞরা একাধিক গবেষণা করে স্বাস্থ্যঝুঁকির সমাধানের চেষ্টা করেছেন। তারা বলছেন, আর্সেনিকের পরিমাণ কমাতে উদ্ভিদের জাত উন্নয়ন, জমির মাটি ব্যবস্থাপনা ও সেচের পানির মান নিয়ন্ত্রণ জরুরি। সেই সঙ্গে জনসচেতনতা ও সরকারি স্বাস্থ্য উদ্যোগ গ্রহণ করাও খুব প্রয়োজন।

আমাদের সচেতনতাই পারে ক্যানসারের মতো ভয়াবহ রোগ থেকে আমাদের রক্ষা করতে। তবে কোনোভাবেই ভাত খাওয়া বন্ধ করা সমাধান নয়। বরং পরিবেশবান্ধব চাষাবাদ ও প্রযুক্তিনির্ভর কৃষিই হতে পারে ভবিষ্যতের নিরাপদ খাদ্যের মূল চাবিকাঠি।