সুরা ফাতাহ
আলোচ্য সুরায় প্রধানত হুদাইবিয়ার সন্ধি সম্পর্কে বর্ণনা করা হয়েছে। মক্কার কুরাইশদের সঙ্গে মুসলমানদের ঐতিহাসিক এই সন্ধি হয়েছিল। এরপর কাফিরদের জন্য জাহান্নামের এবং ঈমানদারদের জন্য জান্নাতের ওয়াদা করা হয়েছে। পরে বাইআতে রিদওয়ান সম্পর্কে বর্ণনা করা হয়েছে। তিনটি কথার মাধ্যমে সুরাটি শেষ হয়েছে : এক. ইসলাম এসেছে বিজয়ী হওয়ার জন্য, দুই. ঈমানদাররা পরস্পরের ওপর সদয়, তিন. ঈমানদারদের জন্য আছে ক্ষমা ও উত্তম প্রতিদান।
আদেশ-নিষেধ-হেদায়েত
১. বিজয় আল্লাহর অনুগ্রহ। (আয়াত : ১-২)
২. আল্লাহর ব্যাপারে মন্দ ধারণা পোষণ করো না। (আয়াত : ৬)
৩. সকাল-সন্ধ্যা আল্লাহর মহিমা ঘোষণা করো। (আয়াত : ৯)
৪. দ্বিনের কাজে পিছিয়ে থেকো না। (আয়াত : ১১)
৫. আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের আনুগত্য করো। (আয়াত : ১৭)
৬. মানুষকে মসজিদে যেতে বাধা দিয়ো না। (আয়াত : ২৫)
৭. যুদ্ধের ভয়াবহতা থেকে মানুষকে রক্ষা করো। (আয়াত : ২৫)
৮. গোত্রীয় অহমিকা পরিহারযোগ্য। (আয়াত : ২৬)
৯. পরস্পরের প্রতি সহানুভূতিশীল হও। (আয়াত : ২৯)
১০. সিজদার চিহ্ন মুমিনের গৌরব। (আয়াত : ২৯)
সুরা হুজরাত
এ সুরায় মুসলমানদের আদব-কায়দা, শিষ্টাচার ও আচরণ শিক্ষা দেওয়া হয়েছে। নির্দেশ দেওয়া হয়েছে সংবাদ যাচাই-বাছাই করেই গ্রহণ করতে হবে। মুসলমানদেরকে একে অপরকে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করা, বদনাম ও উপহাস করা, খারাপ নামে আখ্যায়িত করা, খারাপ ধারণা পোষণ করা, অন্যের গোপনীয় বিষয় অনুসন্ধান করা ইত্যাদি গুনাহের কাজ বেঁচে থাকতে বলা হয়েছে। এগুলো সমাজে বিপর্যয় সৃষ্টি করে।
আদেশ-নিষেধ-হেদায়েত
১. দ্বিনের পথে অগ্রগামীরাই সিদ্ধান্ত নেবে। (আয়াত : ১)
২. বড়দের সামনে উচ্চকণ্ঠ হয়ো না। (আয়াত : ২)
৩. সাহাবায়ে কেরাম (রা.) ক্ষমাপ্রাপ্ত। (আয়াত : ৩)
৪. প্রচারের আগে সংবাদ যাচাই করো। (আয়াত : ৬)
৫. মানুষের বিবাদ মিটিয়ে দাও। (আয়াত : ৯)
৬. কাউকে নিয়ে উপহাস করো না। (আয়াত : ১১)
৭. কাউকে মন্দ নামে ডেকো না। (আয়াত : ১১)
৮. খারাপ ধারণা ও গিবত থেকে বেঁচে থেকো। (আয়াত : ১২)
৯. আল্লাহভীতি সম্মানের মাপকাঠি। (আয়াত : ১৩)
১০. মৌখিক দাবি ঈমান গ্রহণযোগ্য হওয়ার পক্ষে যথেষ্ট নয়। (আয়াত : ১৪)
সুরা কাফ
আলোচ্য সুরায় কাফিরদের ঈমানবিমুখতা সম্পর্কে বর্ণনা করা হয়েছে। তাদের কথা খণ্ডন করা হয়েছে, যারা পুনরুত্থানে বিশ্বাস করে না। পরে সৃষ্টিজগতের বিভিন্ন বস্তুর কথা তুলে ধরে আল্লাহর কুদরতের প্রমাণ দেওয়া হয়েছে। অতীতের পাপীদের কিছু উদাহরণ আনা হয়েছে। যারা আলস্নাহর আজাবকে ভয় করে, তাদের কোরআনের মাধ্যমে সতর্ক করার নির্দেশ দিয়ে সুরাটি শেষ করা হয়েছে।
আদেশ-নিষেধ-হেদায়েত
১. সত্য স্পষ্ট হওয়ার পর তা প্রত্যাখ্যান করো না। (আয়াত : ৫)
২. আল্লাহর মানুষের সন্নিকটে উপস্থিত। (আয়াত : ১৬)
৩. মানুষের সব কথাই লিপিবদ্ধ হয়। (আয়াত : ১৮)
৪. মৃত্যু অবধারিত। (আয়াত : ১৯)
৫. অতৃপ্তি জাহান্নামের বৈশিষ্ট্য। (আয়াত : ৩০)
৬. আল্লাহমুখী মানুষের জন্য জান্নাত। (আয়াত : ৩২)
৭. আল্লাহকে ভয় করো। (আয়াত : ৩৩-৩৪)
সুরা জারিয়াত
আলোচ্য সুরায় আল্লাহর ওয়াদা সত্য হওয়ার কিছু নজির তুলে ধরা হয়েছে। এখানে বিভিন্ন নবীর ঘটনা বর্ণনা করে দেখানো হয়েছে যে, যুগে যুগে আল্লাহর আজাবের ওয়াদা সত্য হয়েছে। কিয়ামতের বর্ণনার মাধ্যমে সুরাটি শুরু হয়েছে। সুরার শেষের দিকে বলা হয়েছে, মানুষ ও জিন জাতিকে সৃষ্টি করা হয়েছে আল্লাহর পরিচয় লাভের জন্য, তাঁর ইবাদতের জন্য।
আদেশ-নিষেধ-হেদায়েত
১. মিথ্যাচারীরা আল্লাহর দরবারে অভিশপ্ত। (আয়াত : ১০-১১)
২. তাহাজ্জুদ আল্লাহর প্রিয় আমল। (আয়াত : ১৭-১৮)
৩. ধনীর সম্পদে গরিবের অধিকার রয়েছে। (আয়াত : ১৯)
৪. ‘সালাম’ দ্বারা পরস্পরকে অভিনন্দিত করো। (আয়াত : ২৫)
৫. আল্লাহ বন্ধ্যা নারীকেও সন্তান দিতে পারেন। (আয়াত : ২৯-৩০)
৬. অভিশপ্ত জাতিদের দেখে শিক্ষা নাও। (আয়াত : ৩৭)
৭. ক্ষমতার দম্ভে সত্যবিমুখ হয়ো না। (আয়াত : ৩৯)
৮. দ্বিনপ্রচারকরা সমালোচনা উপেক্ষা করবে। (আয়াত : ৫৪-৫৫)
সুরা তুর
আলোচ্য সুরায় বিভিন্ন বিষয়ের কসম খেয়ে সেই ওয়াদার পুনরাবৃত্তি করা হয়েছে। পাশাপাশি মহানবী (সা.)-এর প্রতি দ্বীন প্রচারের তাগিদ দেওয়া হয়েছে। কাফিরদের অপপ্রচারে কান দিতে নিষেধ করা হয়েছে। মহানবী (সা.)-এর প্রতি ধৈর্যের উপদেশ দিয়ে সুরাটি শেষ হয়েছে।
আদেশ-নিষেধ-হেদায়েত
১. অর্থহীন কথা ও কাজ পরিহার করো। (আয়াত : ১১-১২)
২. জাহান্নামিদের অপমানের সঙ্গে হাজির করা হবে। (আয়াত : ১৩-১৪)
৩. কোরআন সব সংশয়ের উর্ধ্বে। (আয়াত : ৩৩-৩৪)
সুরা নাজম
সুরার বক্তব্য শুরু হয়েছে এভাবে যে, মুহাম্মাদ (সা.) পথভ্রষ্ট ব্যক্তি নন। তিনি নিজের পক্ষ থেকে কোনো কথা বলেন না, বরং তিনি ওহির অনুসরণ করেন। ইসরা ও মিরাজ সম্পর্কে তিনি যা বর্ণনা করেছেন, তা তাঁর অনুমাননির্ভর নয়, বরং নিজ চোখ দেখা অকাট্য সত্য। তিনি জিবরাঈল (আ.)-কে তাঁর নিজস্ব অবয়বে দেখেছেন। তিনি সিদরাতুল মুনতাহাসহ ঊর্ধ্বজগত্ ভ্রমণ করেছেন।
আদেশ-নিষেধ-হেদায়েত
১. আল্লাহ ফেরেশতাদের প্রজ্ঞা দান করেছেন। (আয়াত : ৪-৬)
২. রাসুল (সা.) সংশয়গ্রস্ত হতেন না। (আয়াত : ১১-১২)
৩. নবী-রাসুলরা বিভ্রমের শিকার হতেন না। (আয়াত : ১৭)
৪. জ্ঞানহীন মানুষরাই অনুমানের পেছনে ছোটে। (আয়াত : ২৮)
৫. দুনিয়ামুখী মানুষরাই আল্লাহ বিমুখ। (আয়াত : ২৯)
৬. স্বল্প জ্ঞানের অধিকারীরাই পার্থিব জীবনে মত্ত হয়। (আয়াত : ৩০)
৭. সকল পাপ পরিহার করো। বিশেষত যা গুরুতর। (আয়াত : ৩২)
৮. অভাবীদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ো না। (আয়াত : ৩৩-৩৪)
৯. চেষ্টানুপাতেই আল্লাহ মানুষকে দেন। (আয়াত : ৩৯-৪০)
১০. নারী-পুরুষকে আল্লাহই যুগল বন্দী করেন। (আয়াত : ৪৫)
১১. আল্লাহর অনুগ্রহের ব্যাপারে সন্দেহ পোষণ কোরো না। (আয়াত : ৫৫)
গ্রন্থনা : মুফতি আতাউর রহমান