রামাদান বিদায়ের পথে, সময়ের চাকা দ্রুত ঘুরে চলছে। কিন্তু এখনো আপনার জন্য দুয়ার খোলা। হয়তো আপনি এখনো গভীরভাবে রামাদানের মাহাত্ম্য অনুভব করতে পারেননি, ইবাদতে একাগ্রতা খুঁজে পাননি, অন্তরে প্রশান্তির পরশ লাগেনি। চারপাশে মানুষ ইবাদতে মশগুল, কেউ কোরআন তিলাওয়াতে রত, কেউ লাইলাতুল কদরের সন্ধানে রাত্রি জাগরণে মগ্ন। অথচ আপনার হৃদয় যেন শূন্য, আবেগহীন, কাঠিন্যে মোড়ানো!তবে সুখবর হলো—আল্লাহর রহমত এতটাই বিশাল যে, তিনি মুহূর্তের মধ্যে আপনার অবস্থান বদলে দিতে পারেন। তিনি বলেন, ‘হে আমার বান্দারা! যারা নিজেদের ওপর জুলুম করেছ, তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ সব গুনাহ মাফ করে দেন। তিনি ক্ষমাশীল, দয়ালু।’ (সুরা আজ-জুমার, আয়াত : ৫৩)
এই আয়াত কি যথেষ্ট নয় আমাদের জন্য—যেখানে মহান রব নিজেই ডাকছেন, ‘তোমরা নিরাশ হয়ো না!’ তাহলে আমরা কেন তার রহমত থেকে মুখ ফিরিয়ে নেব? লাইলাতুল কদর—এক রাতের ইবাদতে ৮৪ বছরের সওয়াব। এখন রামাদানের শেষ দশকের গুরুত্বপূর্ণ রাতগুলো পার হচ্ছে। হতে পারে, এটাই লাইলাতুল কদর! যে রাত সম্পর্কে আল্লাহ ঘোষণা করেছেন : ‘নিশ্চয়ই আমি কদরের রাতে কোরআন নাজিল করেছি। আর তুমি কী জানো কদরের রাত কী? কদরের রাত হলো এক হাজার মাসের চেয়েও উত্তম!’ (সুরা আল-কদর, আয়াত : ১-৩)
ভাবুন, এই রাতে যদি আপনি একটি নফল নামাজ পড়েন, একটি তাসবিহ বলেন, একটি দোয়া করেন—আপনার আমলনামায় ৮৪ বছরের ইবাদতের সওয়াব লেখা হবে! এমন সুবর্ণ সুযোগ আর কোথায় পাওয়া যাবে?
তাওবার দরজা এখনো খোলা
হয়তো আপনি ভাবছেন—‘আমি অনেক গুনাহ করে ফেলেছি, আল্লাহ কি আমাকে মাফ করবেন?” রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন—‘যে ব্যক্তি অন্তর থেকে খাঁটি তাওবা করে, আল্লাহ তার গুনাহ এমনভাবে মাফ করে দেন যেন সে কখনো সেই পাপ করেনি।’ (ইবন মাজাহ, হাদিস : ৪২৫০) সুতরাং, আপনি যতই পাপ করে থাকুন না কেন, এই মুহূর্তে যদি আল্লাহর দরবারে ফিরে আসেন, তিনি আপনাকে ক্ষমা করবেন।
শেষ সময়ে বিজয়ীর মতো ছুটুন
আমাদের পূর্বসূরিরা রামাদানের শেষ দশকে নিজেদের আরও বেশি ইবাদতে ডুবিয়ে দিতেন। আয়েশা (রা.) বলেন, ‘নবী (সা.) যখন রমাদানের শেষ দশকে প্রবেশ করতেন, তখন তিনি রাত জাগতেন, পরিবারের সবাইকে জাগাতেন এবং ইবাদতে অধিক মনোযোগী হতেন।’ (বুখারি, হাদিস : ২০২৪) আমরা কি সেই সুন্নাহকে অনুসরণ করব না?
এখনো সময় আছে—আল্লাহর কাছে ফিরে যান। অনেকেই মনে করেন, ‘আরেকটা বছর আসবে, তখন ভালোভাবে ইবাদত করব।’ কিন্তু আপনি কি নিশ্চিত যে আপনি আরেকটি রামাদান পাবেন?
রাসুল (সা.) বলেছেন : ‘সুযোগ থাকতেই পাঁচটি জিনিসকে গ্রহণ করো—
(১) বৃদ্ধ হওয়ার আগে তোমার যৌবনকে,
(২) অসুস্থ হওয়ার আগে তোমার সুস্থতাকে,
(৩) দরিদ্র হওয়ার আগে তোমার সম্পদকে,
(৪) ব্যসত্ম হওয়ার আগে তোমার অবসরকে,
(৫) মৃত্যুর আগে তোমার জীবনকে।’ (হাকিম, হাদিস : ৭৮৪৬) এখনো সময় আছে! আল্লাহর দিকে ফিরে যান, তাহাজ্জুদের মেহরাবে দাঁড়ান, হাত তুলে দোয়া করুন, অশ্রু ঝরান, কোরআনে মনোযোগ দিন।
এই রামাদান হতে পারে আপনার জীবনের শ্রেষ্ঠ রামাদান
রামাদান শেষ হয়ে যাচ্ছে, কিন্তু এই শেষ সময়ে আপনি যে আমল করবেন, সেটাই হতে পারে আপনার জান্নাতের চাবিকাঠি। হাদিসে আছে, ‘যে ব্যক্তি শেষ সময়ে ভালো আমল নিয়ে মৃত্যুবরণ করে, সে ভালো পরিণতি লাভ করবে।’ (তিরমিজি, হাদিস : ২১৪১)
এখনো সময় আছে—নিজেকে বদলানোর, আল্লাহর দিকে ফিরে যাওয়ার, কদরের রাতের সর্বোচ্চ ফায়দা নেওয়ার।
উঠুন, ফিরে আসুন! রামাদান চলে যাচ্ছে, কিন্তু আপনার সুযোগ এখনো শেষ হয়নি। ইতিহাসে অনেক মানুষ জীবনের শেষ সময়ে আমল বাড়িয়ে বিজয়ী হয়েছেন। আপনি কি সেই তালিকায় থাকতে চান না?
আল্লাহ আপনাকে ডাকছেন। আপনি কি সাড়া দেবেন?
লেখক: সহকারী শিক্ষক (ইসলাম শিক্ষা)
আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, মতিঝিল, ঢাকা-১০০০