১. তরমুজ: এতে ৯২% পানি থাকে, যা শরীরকে হাইড্রেটেড রাখে। তাছাড়া প্রচুর ইলেক্ট্রোলাইট ও ভিটামিন সি থাকে তরমুজে। ইফতারে এক গ্লাস তরমুজের জুস বা কেটে খাওয়া যেতে পারে।
২. শসা: এতে ৯৫% পানি থাকে, যা শরীর ঠান্ডা রাখে। হজমে সহায়ক ও ত্বকের জন্য ভালো শসা। সালাদ বা স্মুদি করে খেতে পারেন।
৩. কমলা: কমলায় ৮৬% পানি থাকে ও প্রচুর ভিটামিন সি ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ। এটি ক্লান্তি দূর করে ও ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করে। সরাসরি খেতে পারেন বা জুস বানিয়ে নিতে পারেন।
৪. ডাবের পানি: প্রাকৃতিক ইলেক্ট্রোলাইট ও মিনারেল সমৃদ্ধ, যা শরীরকে রিফ্রেশ করে। রোজায় পানি ও শক্তির ঘাটতি পূরণ করে। ইফতার বা সেহরিতে ডাবের পানি পান করলে শরীর সারা দিন ভালো থাকবে।
রোজায় খাদ্যাভ্যাসের সামান্য পরিকল্পনা ও পরিবর্তন শরীরকে পানিশূন্যতার থেকে রক্ষা করতে পারে। যেমন:
১. সেহরি ও ইফতারে শুধু পানি পান করার উপর বেশি জোর দেবেন না। কারণ পানি পান করার পর শরীরের কোষের মধ্যে সরবরাহের পর অবশিষ্ট পানি ইউরিন, ঘাম, নিঃশ্বাসের মাধ্যমে শরীর থেকে রের হয়ে যায়।
২. রোজায় সেহরি ও ইফতারে খাদ্যাভ্যাস হতে সুষম, হাই ফাইবার বা উচ্চ খাদ্য-আঁশ সমৃদ্ধ ও লো-গ্লাইসেমিক ইনডেক্স সমৃদ্ধ খাবার। যেমন: ভুসিসমেত অটো বা লাল আটা, লাল চাল, ওটস, চিড়া, বাদাম, মিক্সড ডাল, শাক-সবজি ও ফল। পাশাপাশি থাকবে- ডিম, মাছ ও মাংস। যেন খাবারগুলো আস্তে আস্তে ভেঙে সারাদিন এনার্জি প্রদান করবে।
৩. চা-কপি পান করা থেকে বিরত থাকুন। সেহরিতে চিয়া সিড ভিজানো পানি বা হালকা চিনি দিয়ে চিয়া সিড বা তোকমার শরবত খেতে পারেন। কিংবা ইসুবগুল মিশিয়ে এক গ্লাস দুধ পান করতে পারেন।
৪. সেহরিতে প্লেটে রাখুন সহজপাচ্য মাছের সঙ্গে সবজির ঝোল, মিক্সড ভেজিটেবল, টমেটো দিয়ে পাতলা বা ঘন ডাল। মুরগি পাতলা ঝোল দিয়েও ভাত খেতে পারেন। ডায়াবেটিক রোগীরা চিকেন-সবজির স্ট্যুর সঙ্গে ব্রাউন আটার রুটি ও টকদই রাখুন পাতে।
৫. ইফতারে প্লেটে রাখুন খেজুর, আস্ত বা টুকরো করা কয়েক পদের ফল, বেশ খানেক শসা, দই, দই-চিড়া, কলা-দই-চিড়া, মাছ বা মাংসের কাবাব, লাচ্ছি, লাবাং, মাঠা, ছানা, আখের রস, বিটের জুস, ডাবের পানি, আখের গুড় শরবত, লেবু-পানি, ইসুবগুল বা তোকমার শরবত।
৬. কিংবা ইফতারে খেতে পারেন চিয়া সীড মিশানো শরবত। চিয়া সীড পানি ধরে রাখতে সহায়তা করে। রক্তের কোলেস্টেরল কমায়, ওজন কমাতে সাহায্য করে। এ ছাড়া খেতে পারেন চিড়া দিয়ে আখের গুড়ের শরবত, চিড়ার শরবত, তরমুজ ও বেলের শরবত।
৭. ইফতারে ভাজাপোড়ার খাবার যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলুন। ছোলা ভুনার সঙ্গে সালাদ খেতে পারেন। খেতে পারেন নানা পদের ফল। এ ছাড়া খেতে পারেন সবজি খিচুড়ি, পাতলা মাছ বা মুরগি ঝোল দিয়ে সাদা ভাত। তবে অবশ্যই শারীরিক অবস্থার দিকে লক্ষ্য রাখবেন।
৮. সন্ধ্যারাতে প্লেটে বেছে নিন শাক-সবজি, পাতলা ঝোলের তরকারি, সালাদ, ছোট মাছের চচ্চড়ি।
৯. তারাবির নামাজের সময় পানির বোতল নিয়ে যান মসজিদে। ইফতারের পর সেহরি পর্যন্ত যে সময়টুকু জেগে থাকাবেন, অল্প অল্প করে পানি পান করে করুন।
১০. সেহরিতে খেতে পারেন দুধ-কলা-ভাত। কিংবা ১ কাপ ননীতোলা বা লো ফ্যাট দুধ বা টকদই। চা, কফির পরিবর্তে খান জিরা-পানি বা আদা-পানি।
এসব পরিকল্পনা সারা দিন আপনার শরীরকে রাখবে ব্যালেন্সড ও ডিহাইড্রেড। কেটে যাবে দুর্বলতা, রোজার সময় খুব বেশি তৃষ্ণাও পাবে না।
লেখক: পুষ্টিবিদ, ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হাসপাতাল