চুল পড়ার সমস্যায় কমবেশি সবাই ভোগেন। চুল উঠতে উঠতে অনেক সময় টাক পড়ে যায়। তাই চুল পাতলা হতে শুরু করলেই ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি। আমেরিকান একাডেমি অব ডার্মাটোলজিস্টদের মতে, প্রতিদিন প্রায় ৯০-১০০টি চুল পড়া স্বাভাবিক। এর চেয়ে বেশি উঠলে সেটি অস্বাভাবিক অর্থাৎ আপনার চুলের অতিরিক্ত যত্নের প্রয়োজন।
চুল পড়া রোধে সর্বপ্রথম যে ২টি কাজ করা জরুরি সেটি হলো-
১. পর্যাপ্ত ঘুমানো: ঘুমের অভাব থাকলে চুল পড়া বেশি হয়, তাই পর্যাপ্ত ঘুমাতে হবে। প্রতিদিন অন্তত ৬-৮ ঘন্টা ঘুম জরুরি।
২. স্ট্রেস কমানো: অতিরিক্ত স্ট্রেস বা চিন্তাভাবনা চুল পড়ার একটি প্রধান কারণ। নিয়মিত ব্যায়াম, ধ্যান বা যোগব্যায়াম আপনার মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি করতে সহায়তা করবে। তাই দুশ্চিন্তা বা চাপমুক্ত থাকতে হবে।
আবার বংশগত বহুবিধ সমস্যার কারণেও অতিরিক্ত চুল পড়তে পারে। তবে বংশগত সমস্যায় আমাদের করার কিছু থাকে না। কিন্তু উপরের দুটি পদ্ধতি অনুসরন করতে পারলেই অনেকাংশে চুল পড়া বন্ধ হবে বলে চিকিৎসকদের মত।
আর যদি চুল পড়া রোধে সম্পূর্ণ সমাধান চান তাহলে খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন আনতে হবে। চুলের জন্য বিশেষত ভিটামিন B, ভিটামিন D, জিঙ্ক, এবং আয়রন গুরুত্বপূর্ণ। প্রোটিন, ভিটামিন, মিনারেল, এবং আয়রনসমৃদ্ধ খাবার খান। শাকসবজি, ফলমূল, মাংস, মাছ, ডিম, এবং দুধের মতো প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার খেতে পারেন। সেক্ষেত্রে চুল পড়া থামাতে রোজ মেন্যুতে রাখতে পারেন বিশেষ কিছু খাবার। যেমন-
ডিম
অত্যধিক পরিমাণে চুল পড়ছে? রোজ একটি করে ডিম খেতে পারেন। উপকার পাবেন। ডিমে রয়েছে ভিটামিন বি, যা চুল লম্বা ও ঘন করতে সাহায্য করে। তা ছাড়া ডিমে রয়েছে ভরপুর প্রোটিন, বায়োটিন যা চুলের গোড়া শক্ত করে।
মাছ
চুল ভালো রাখতে মাছ খাওয়া জরুরি। কারণ মাছে এমন অনেক উপাদান রয়েছে, যেগুলো চুল ভালো রাখে। ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিড তার মধ্যে অন্যতম। এ ছাড়া মাছে রয়েছে ভিটামিন বি১২, যা নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে।
দুগ্ধজাত খাবার
দুধ খেলে ভালো থাকে হাড়। কারণ এতে ভরপুর পরিমাণে ক্যালশিয়াম রয়েছে। এই ক্যালশিয়াম কিন্তু চুল ঝরার পরিমাণও রোধ করতে পারে। ক্যালশিয়াম ছাড়াও দুগ্ধজাত খাবারে রয়েছে বায়োটিন, যা চুল ঘন করতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।
ডাল
বিভিন্ন প্রকারের ডাল চুলের জন্য ভালো। ডালে রয়েছে উপকারী স্বাস্থ্য উপাদান ভিটামিন বি। এ ছাড়া ফোলেট এবং অন্যান্য উপাদানও আছে। চুল লম্বা করতে চাইলে রোজ পাতে রাখতে হবে ডাল।
বাদাম এবং বিভিন্ন বীজ
কাঠবাদাম, আখরোট, চিয়া, তিসির বীজ— এই ধরনের খাবারগুলো নিয়ম করে খেলে চুল ঝরার পরিমাণ কমে। এই খাবারগুলোতে রয়েছে বায়োটিন ও ভিটামিন বি, যা শুধু চুল প়ড়া কমায় এবং চুল মসৃণ করে।
চুলের যত্ন নেওয়া:
*চুল পরিষ্কার রাখুন, তবে বেশি শ্যাম্পু না দিয়ে হালকা শ্যাম্পু ব্যবহার করুন।
*চুলে প্রাকৃতিক তেল ব্যবহার করুন, যেমন নারকেল তেল, অলিভ তেল, অথবা আমলকী তেল।
*চুলে খুব বেশি তাপ প্রয়োগ বা রঙ করা থেকে বিরত থাকুন।
অতিরিক্ত চুল টানা বা আঁটসাঁট ব্যান্ড পরা থেকে বিরত থাকুন:
চুল আঁটসাঁট করে বাঁধলে বা টান দিলে চুল পড়া বাড়তে পারে। হালকা করে চুল বাঁধুন এবং সিলিকন ফ্রি হেয়ার ব্যান্ড ব্যবহার করুন।
এ ছাড়া চুলে ভুল প্রসাধনী ব্যবহার, মাথার ত্বকের সংক্রমণ, হরমোনের প্রভাব পিসিওএস বা ফাইব্রয়েড, থাইরয়েড, ডায়াবেটিস, ক্যানসারের চিকিৎসা, বিপাকে সমস্যা ইত্যাদি কারণেও চুল পড়া বাড়তে পারে। এসব সমস্যা থাকলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া জরুরি।
ডাক্তারের পরামর্শ:
যদি চুল পড়া অনেক বেশি হয় এবং কোনো পরিবর্তন না আসে, তবে একজন ডাক্তারের পরামর্শ নিতে পারেন। হরমোনাল সমস্যা বা অন্য কোনো স্বাস্থ্য সমস্যা থাকতে পারে, যা চুল পড়ার কারণ হতে পারে।