শিরোনাম :
Logo ভেড়ামারায় আগ্নেয়াস্ত্রসহ শীর্ষ সন্ত্রাসী গ্রেপ্তার Logo বাংলাদেশি ও রোহিঙ্গা সন্দেহে ভারতে আটক ৪৪৮ জন Logo ফ্রান্সে ভয়াবহ দাবানল, আহত শতাধিক মানুষ Logo জমি বিরোধকে কেন্দ্র করে যুবককে কুপিয়ে হত্যার চেষ্টা Logo বীরগঞ্জে দুই ডায়াগনস্টিক সেন্টারে অনিয়ম, ৬০ হাজার টাকা জরিমানা Logo দিনমজুরি করেও স্বপ্ন দেখেছে আইনজীবী হওয়ার, পাঁচ বিশ্ববিদ্যালয় চান্স পেয়ে আইন বিভাগে ভর্তি হলেও পড়ালেখার ভবিষ্যৎ টাকার অভাবে অনিশ্চিৎ Logo কুবিতে জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উদযাপনের দায়িত্বে বঙ্গবন্ধু পরিষদের নেতাকর্মীরা! Logo মাদরাসা শিক্ষা ব্যবস্থার ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে হবে: ধর্ম উপদেষ্টা Logo সুপারস্টার ডি এ তায়েব অফিসিয়াল ফ্যান ক্লাবের আয়োজনে ঈদ পুনর্মিলনী” শিশু শিল্পী টুনটুনির জন্মদিন উদযাপন Logo রাবিতে ডাইনিং সংকটসহ ৫ দফা দাবিতে গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের

ইনসাফভিত্তিক বিচারব্যবস্থার গুরুত্ব

  • নীলকন্ঠ অনলাইন নীলকন্ঠ অনলাইন
  • আপডেট সময় : ০৫:৪৪:৫৫ অপরাহ্ণ, বুধবার, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
  • ৭২৭ বার পড়া হয়েছে
একটি কল্যাণমূলক রাষ্ট্র টিকে থাকে ইনসাফের ওপর। অন্যদিকে জুলুম একটি রাষ্ট্র ভেঙে গুড়িয়ে দেয়। বিচারের ক্ষেত্রে ধনী-গরীব, নেতা-কর্মী, প্রভাবশালী-দুর্বল পার্থক্য না করাই হল ইনসাফ। শুধু ইসলামী রাষ্ট্র নয়; বরং কল্যাণমূলক যেকোনো ধর্ম বা মতবাদের ওপর গড়ে ওঠা রাষ্ট্রের জন্যই ইনসাফভিত্তিক বিচারব্যবস্থা জরুরি। ইনসাফভিত্তিক বিচার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার নির্দেশ দিয়ে আল্লাহ  রাব্বুল আলামিন নবীজিকে বলেন, ‘হে নবী! তুমি কি তাদের দেখনি, যারা এই মর্মে দাবি করে চলেছে যে তারা ঈমান এনেছে সেই কিতাবের প্রতি, যা তোমার ওপর নাজিল করা হয়েছে এবং সেসব কিতাবের প্রতি, যেগুলো তোমার আগে নাজিল করা হয়েছিল; কিন্তু তারা নিজেদের বিষয় ফায়সালা করার জন্য ‘তাগুতে’র দিকে ফিরতে চায়, অথচ তাদের তাগুত অস্বীকার করার হুকুম দেওয়া হয়েছিল? শয়তান তাদেরকে পথভ্রষ্ট করে সরল সোজা পথ থেকে অনেক দূরে সরিয়ে নিয়ে যেতে চায়।’ (সুরা নিসা, আয়াত : ৬০)

মুফাসসিরে কেরাম বলেন, এ আয়াতে ‘তাগুত’ বলতে সুস্পষ্টভাবে এমন শাসককে বুঝানো হয়েছে, যিনি ইনসাফ বাদ দিয়ে জনগণের ওপর জুলুমের নীতি গ্রহণ করে নিয়েছেন। একইভাবে এমন সব বিচারক ও বিচার ব্যবস্থাকে তাগুত বলা হয় যেখানে জুলুমের ভিত্তিতে বিচার করা হয়। কাজেই যে আদালত ইনসাফ বাদ দিয়ে বিচারের নামে প্রহসন করে সে আদালতে বিচারপ্রার্থী হওয়া কেবল নাজায়েজই নয় ইমান বিরোধীও বটে। আর আল্লাহ ও তাঁর কিতাবের ওপর ঈমান আনার অপরিহার্য দাবি অনুযায়ী এ ধরনের আদালতকে বৈধ আদালত হিসেবে অস্বীকৃত জানানোই প্রত্যেক ঈমানদারের কর্তব্য। কোরআনের দৃষ্টিতে আল্লাহর প্রতি ঈমান আনা ও তাগুতকে অস্বীকার করা, এ দুটি বিষয় পরস্পরের সাথে অংগাংগীভাবে সংযুক্ত এবং এদের একটি অন্যটির অনিবার্য পরিণতি। আল্লাহ  ও তাগুত উভয়ের সামনে একই সাথে মাথা নত করাই হচ্ছে সুস্পষ্ট মুনাফেকি।

ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, রাসুল (সা.) মদিনায় ইনসাফভিত্তিক বিচারব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাই সন্তুষ্ট চিত্তে সে বিচার ব্যবস্থা মেনে নিয়েছে। কিন্তু কিছু নামধারী মুসলমান-মুনাফিক কুরআনের বিচার ব্যবস্থা মেনে নিতে পারেনি। তারা মুখে দাবি করে—‘কোরআন মেনে নিয়েছি, পূর্ববর্তী সব আসমানি গ্রন্থে বিশ্বাস করি’; কিন্তু নিজেদের মামলা-মোকাদ্দমা পরিচালনার জন্য এমন ব্যক্তি বা আদালতের কাছে যায় যেখানে ইনসাফ নয় অর্থের জোরে রায় পাওয়া যায়। এমন আদালত ও বিচাররককে কোরআনের ভাষায় ‘তাগুত’ বলা হয়েছে।

মুফাসসির ইবনে আবি হাতেম (রহ.) আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) সূত্রে বর্ণনা করেছেন, আবু বুরদা আসলামি নামে এক গণক ছিল। ইহুদিরা নিজেদের বিরোধ মেটানোর জন্য তার কাছে আসত। ইহুদিদের দেখাদেখি কয়েকজন নতুন মুসলমানও তার কাছে বিচারের জন্য যাওয়া আসা করত। যেহেতু আবু বুরদা আসলামি আসমানি কিতাব বিশ্বাস করত না, তাই ইনসাফ তার বিচারের নীতি ছিল না। ফলে মুনাফিকদের মুখোশ উম্মোচন করে আল্লাহ সুরা নিসার ৬০ নম্বর আয়াত নাজিল করেছেন এবং ওই গণককে তাগুত বলে উল্লেখ করেছেন। (তাফসিরে মাজহারি, তৃতীয় খন্ড, পৃষ্ঠা ১৫৫)

মুফাসিসররা এ আয়াতের শানে নুজুল সম্পর্কে বেশ কয়েকটি ঘটনা উল্লেখ করেছেন। এর মধ্যে প্রসিদ্ধ ঘটনাটি বিশর নামক মুনাফিক সম্পর্কে। তার সঙ্গে এক ইহুদির জমি নিয়ে বিরোধ ছিল। ইহুদি বলল, ‘চলো! আমরা এ মোকাদ্দমার ফায়সালা মুহাম্মাদের (সা.) কাছ থেকে নিই।’ মুনাফিক মনে মনে ভাবল, নবীজির ইনসাফের আদালতে গেলে নির্ঘাত ইহুদির পক্ষে রায় আসবে। কেননা এখানে ইহুদিই সঠিক। তাই নবীজির কাছে যাওয়া যাবে না। সে বলল, ‘মুহাম্মদ নয় বরং তোমাদের নেতা কাব বিন আশরাফের কাছে চলো।’ কাব বিন আশরাফ ছিল চরম ঘুষখোর। সে ঘুষ খেয়ে রায় বদলে দিত। ইহুদি বলল, ‘ঘটনা কী? আমি যেতে চাচ্ছি তোমাদের নবীর কাছে, আর তুমি চাচ্ছো আমাদের নেতার কাছে!’ অনেকটা বাধ্য হয়েই তারা দুজন নবীজির কাছে গেলেন। নবীজি (সা.) তদন্ত শেষে যথারীতি ইনসাফভিত্তিক বিচার করে দিলেন এবং রায় গেল ইহুদির পক্ষে মুনাফিকের বিপক্ষে। এরপর ঘটনা আরো লম্বা। মুনাফিক নবীজির বিচার মানতে চাইলেন না। সে ওমর (রা.)-এর কাছে গিয়ে আপিল করে। ওমর (রা.) নবীজির বিচার না মানার কারণে তাকে হত্যা করে। এ পুরো ঘটনার প্রেক্ষিতে সুরা নিসার ৬০ নম্বর আয়াত নাজিল হয়। (তাফসিরে মাআরেফুল কুরআন, ২য় খণ্ড, পৃষ্ঠা ৪১৫-৪১৬ )

লেখক : চেয়ারম্যান, জামালী তালিমুল কোরআন ফাউন্ডেশন
এবং খতিব, রূপায়ণ টাউন সেন্ট্রাল মসজিদ।

ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ

ভেড়ামারায় আগ্নেয়াস্ত্রসহ শীর্ষ সন্ত্রাসী গ্রেপ্তার

ইনসাফভিত্তিক বিচারব্যবস্থার গুরুত্ব

আপডেট সময় : ০৫:৪৪:৫৫ অপরাহ্ণ, বুধবার, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
একটি কল্যাণমূলক রাষ্ট্র টিকে থাকে ইনসাফের ওপর। অন্যদিকে জুলুম একটি রাষ্ট্র ভেঙে গুড়িয়ে দেয়। বিচারের ক্ষেত্রে ধনী-গরীব, নেতা-কর্মী, প্রভাবশালী-দুর্বল পার্থক্য না করাই হল ইনসাফ। শুধু ইসলামী রাষ্ট্র নয়; বরং কল্যাণমূলক যেকোনো ধর্ম বা মতবাদের ওপর গড়ে ওঠা রাষ্ট্রের জন্যই ইনসাফভিত্তিক বিচারব্যবস্থা জরুরি। ইনসাফভিত্তিক বিচার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার নির্দেশ দিয়ে আল্লাহ  রাব্বুল আলামিন নবীজিকে বলেন, ‘হে নবী! তুমি কি তাদের দেখনি, যারা এই মর্মে দাবি করে চলেছে যে তারা ঈমান এনেছে সেই কিতাবের প্রতি, যা তোমার ওপর নাজিল করা হয়েছে এবং সেসব কিতাবের প্রতি, যেগুলো তোমার আগে নাজিল করা হয়েছিল; কিন্তু তারা নিজেদের বিষয় ফায়সালা করার জন্য ‘তাগুতে’র দিকে ফিরতে চায়, অথচ তাদের তাগুত অস্বীকার করার হুকুম দেওয়া হয়েছিল? শয়তান তাদেরকে পথভ্রষ্ট করে সরল সোজা পথ থেকে অনেক দূরে সরিয়ে নিয়ে যেতে চায়।’ (সুরা নিসা, আয়াত : ৬০)

মুফাসসিরে কেরাম বলেন, এ আয়াতে ‘তাগুত’ বলতে সুস্পষ্টভাবে এমন শাসককে বুঝানো হয়েছে, যিনি ইনসাফ বাদ দিয়ে জনগণের ওপর জুলুমের নীতি গ্রহণ করে নিয়েছেন। একইভাবে এমন সব বিচারক ও বিচার ব্যবস্থাকে তাগুত বলা হয় যেখানে জুলুমের ভিত্তিতে বিচার করা হয়। কাজেই যে আদালত ইনসাফ বাদ দিয়ে বিচারের নামে প্রহসন করে সে আদালতে বিচারপ্রার্থী হওয়া কেবল নাজায়েজই নয় ইমান বিরোধীও বটে। আর আল্লাহ ও তাঁর কিতাবের ওপর ঈমান আনার অপরিহার্য দাবি অনুযায়ী এ ধরনের আদালতকে বৈধ আদালত হিসেবে অস্বীকৃত জানানোই প্রত্যেক ঈমানদারের কর্তব্য। কোরআনের দৃষ্টিতে আল্লাহর প্রতি ঈমান আনা ও তাগুতকে অস্বীকার করা, এ দুটি বিষয় পরস্পরের সাথে অংগাংগীভাবে সংযুক্ত এবং এদের একটি অন্যটির অনিবার্য পরিণতি। আল্লাহ  ও তাগুত উভয়ের সামনে একই সাথে মাথা নত করাই হচ্ছে সুস্পষ্ট মুনাফেকি।

ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, রাসুল (সা.) মদিনায় ইনসাফভিত্তিক বিচারব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাই সন্তুষ্ট চিত্তে সে বিচার ব্যবস্থা মেনে নিয়েছে। কিন্তু কিছু নামধারী মুসলমান-মুনাফিক কুরআনের বিচার ব্যবস্থা মেনে নিতে পারেনি। তারা মুখে দাবি করে—‘কোরআন মেনে নিয়েছি, পূর্ববর্তী সব আসমানি গ্রন্থে বিশ্বাস করি’; কিন্তু নিজেদের মামলা-মোকাদ্দমা পরিচালনার জন্য এমন ব্যক্তি বা আদালতের কাছে যায় যেখানে ইনসাফ নয় অর্থের জোরে রায় পাওয়া যায়। এমন আদালত ও বিচাররককে কোরআনের ভাষায় ‘তাগুত’ বলা হয়েছে।

মুফাসসির ইবনে আবি হাতেম (রহ.) আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) সূত্রে বর্ণনা করেছেন, আবু বুরদা আসলামি নামে এক গণক ছিল। ইহুদিরা নিজেদের বিরোধ মেটানোর জন্য তার কাছে আসত। ইহুদিদের দেখাদেখি কয়েকজন নতুন মুসলমানও তার কাছে বিচারের জন্য যাওয়া আসা করত। যেহেতু আবু বুরদা আসলামি আসমানি কিতাব বিশ্বাস করত না, তাই ইনসাফ তার বিচারের নীতি ছিল না। ফলে মুনাফিকদের মুখোশ উম্মোচন করে আল্লাহ সুরা নিসার ৬০ নম্বর আয়াত নাজিল করেছেন এবং ওই গণককে তাগুত বলে উল্লেখ করেছেন। (তাফসিরে মাজহারি, তৃতীয় খন্ড, পৃষ্ঠা ১৫৫)

মুফাসিসররা এ আয়াতের শানে নুজুল সম্পর্কে বেশ কয়েকটি ঘটনা উল্লেখ করেছেন। এর মধ্যে প্রসিদ্ধ ঘটনাটি বিশর নামক মুনাফিক সম্পর্কে। তার সঙ্গে এক ইহুদির জমি নিয়ে বিরোধ ছিল। ইহুদি বলল, ‘চলো! আমরা এ মোকাদ্দমার ফায়সালা মুহাম্মাদের (সা.) কাছ থেকে নিই।’ মুনাফিক মনে মনে ভাবল, নবীজির ইনসাফের আদালতে গেলে নির্ঘাত ইহুদির পক্ষে রায় আসবে। কেননা এখানে ইহুদিই সঠিক। তাই নবীজির কাছে যাওয়া যাবে না। সে বলল, ‘মুহাম্মদ নয় বরং তোমাদের নেতা কাব বিন আশরাফের কাছে চলো।’ কাব বিন আশরাফ ছিল চরম ঘুষখোর। সে ঘুষ খেয়ে রায় বদলে দিত। ইহুদি বলল, ‘ঘটনা কী? আমি যেতে চাচ্ছি তোমাদের নবীর কাছে, আর তুমি চাচ্ছো আমাদের নেতার কাছে!’ অনেকটা বাধ্য হয়েই তারা দুজন নবীজির কাছে গেলেন। নবীজি (সা.) তদন্ত শেষে যথারীতি ইনসাফভিত্তিক বিচার করে দিলেন এবং রায় গেল ইহুদির পক্ষে মুনাফিকের বিপক্ষে। এরপর ঘটনা আরো লম্বা। মুনাফিক নবীজির বিচার মানতে চাইলেন না। সে ওমর (রা.)-এর কাছে গিয়ে আপিল করে। ওমর (রা.) নবীজির বিচার না মানার কারণে তাকে হত্যা করে। এ পুরো ঘটনার প্রেক্ষিতে সুরা নিসার ৬০ নম্বর আয়াত নাজিল হয়। (তাফসিরে মাআরেফুল কুরআন, ২য় খণ্ড, পৃষ্ঠা ৪১৫-৪১৬ )

লেখক : চেয়ারম্যান, জামালী তালিমুল কোরআন ফাউন্ডেশন
এবং খতিব, রূপায়ণ টাউন সেন্ট্রাল মসজিদ।