শিরোনাম :
Logo ভেড়ামারায় আগ্নেয়াস্ত্রসহ শীর্ষ সন্ত্রাসী গ্রেপ্তার Logo বাংলাদেশি ও রোহিঙ্গা সন্দেহে ভারতে আটক ৪৪৮ জন Logo ফ্রান্সে ভয়াবহ দাবানল, আহত শতাধিক মানুষ Logo জমি বিরোধকে কেন্দ্র করে যুবককে কুপিয়ে হত্যার চেষ্টা Logo বীরগঞ্জে দুই ডায়াগনস্টিক সেন্টারে অনিয়ম, ৬০ হাজার টাকা জরিমানা Logo দিনমজুরি করেও স্বপ্ন দেখেছে আইনজীবী হওয়ার, পাঁচ বিশ্ববিদ্যালয় চান্স পেয়ে আইন বিভাগে ভর্তি হলেও পড়ালেখার ভবিষ্যৎ টাকার অভাবে অনিশ্চিৎ Logo কুবিতে জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উদযাপনের দায়িত্বে বঙ্গবন্ধু পরিষদের নেতাকর্মীরা! Logo মাদরাসা শিক্ষা ব্যবস্থার ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে হবে: ধর্ম উপদেষ্টা Logo সুপারস্টার ডি এ তায়েব অফিসিয়াল ফ্যান ক্লাবের আয়োজনে ঈদ পুনর্মিলনী” শিশু শিল্পী টুনটুনির জন্মদিন উদযাপন Logo রাবিতে ডাইনিং সংকটসহ ৫ দফা দাবিতে গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের

ঠাকুরগাঁওয়ে ক্রমেই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে কেঁচো জৈব সার!

  • amzad khan
  • আপডেট সময় : ০৬:৩৮:৫৩ অপরাহ্ণ, শনিবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০১৬
  • ৭৭১ বার পড়া হয়েছে
নিউজ ডেস্ক:

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার বালিয়া ইউনিয়নের কৃষকেরা এক সময় শুধুমাত্র রাসায়নিক সার ব্যবহার করে ফসল উৎপাদন করতেন। এতে জমির জমির অম্লত্ব ও ক্ষারত্ব বৃদ্ধি পায়। এ অবস্থায় কৃষি বিভাগের পরামর্শে ২০১৫ সালে ওই ইউনিয়নের ছোট বালিয়া গ্রামের ২ শতাধিক কৃষক সিমেন্টের রিং ও বিশেষায়িত কেঁচো দিয়ে প্রথম শুরু করেন কেঁচো জৈব সার তৈরির কাজ। এজন্য সিমেন্টের তৈরি রিংয়ে গোবর দিয়ে সেখানে ২শ থেকে ২শ ৫০টি কোঁচো ছেড়ে দিয়ে প্লাস্টিক দিয়ে ঢেকে রাখা হয়। ৩০-৪০ দিনের মধ্যে কেঁচোগুলি বিপাকীয় প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তাদের মল ত্যাগ এবং মুখের বিশেষ লালা দিয়ে তৈরি করে কেঁচো জৈব সার।

ওই সার জমিতে প্রয়োগ করে আশানুরুপ উৎপাদন পেয়ে ওই সারের চাহিদা বেড়ে যায়। পরের বার বগুলাডাঙ্গী গ্রামের ৩শ ও বানিয়াপাড়া গ্রামের ২ শতাধিক পরিবার নিজ বাড়িতে কেঁচো সার উৎপাদন করতে থাকে। এ সার প্রয়োগ করলে জমিতে রাসায়নিক সার প্রয়োগ করতে হয় না। জমির স্বাস্থ্য ও মাটির গুণাগুণ ভালো থাকে এবং উৎপাদন আগের চাইতে বৃদ্ধি পায়।

বগুলাডাঙ্গী গ্রামের কৃষক জিয়াউর রহমান জানান, তিনি পিয়াজ-মরিচ, আলু ও লালশাক ক্ষেতে কেঁচো জৈব সার প্রয়োগ পূর্বের চেয়ে অনেক বেশি উৎপাদন  পেয়েছেন।

ছোট বালিয়া গ্রামের কৃষক ময়নুল ইসলাম ১ বিঘা জমিতে এ সার প্রয়োগ করে লাউ ও করলার চাষ করেছিলেন। খরচ হয়েছিল প্রায় ৩৫ হাজার টাকা। পরবর্তীতে ফলন করা লাউ-করলা বিক্রি করে পেয়েছেন ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা। এ ফলনে তিনি খুব খুশি।

সনেকা বেগম নামে এক কৃষাণী জানান,  বাড়িতে রিং বসিয়ে মহিলারাই এটি দেখাশুনা করতে পারে। তিনি এ পর্যন্ত প্রায় ১ হাজার টাকার সার বিক্রি করেছেন। এছাড়াও ছোট বালিয়া গ্রামে ২ টন জৈব সার প্রস্তুত হয়। প্রস্তুত করা সার নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে বাইরে বিক্রি করে ওই গ্রামের কৃষকেরা মাসে ২৪ হাজার টাকা আয় করছেন।

এরই ধারাবাহিকতায় বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার ২শ, রানীংশংকৈল উপজেলার দেড়শ ও হরিপুর উপজেলার ৫০ বাড়িতে কেঁচো জৈব সার উৎপাদন শুরু হয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, কেঁচো জৈব সার শতক প্রতি ২/৪ কেজি প্রয়োগ করতে হয়। এ সার প্রয়োগ করলে রাসায়নিক সার প্রয়োগ করতে হয়না। কোনো প্রকার রাসায়নিক সার, কীটনাশক প্রয়োগ না করে প্রাকৃতিকভাবে কেঁচো জৈব সার প্রয়োগ করে  তুলনামূলকভাবে বেশি ফসল উৎপাদন করা সম্ভব।

এ ব্যাপারে বালিয়া ইউনিয়ন কৃষি কর্মকর্তা আব্দুর রহিম জানান, জমিতে রাসায়নিক সার বার বার প্রয়োগ করলে জমির অম্লত্ব ও ক্ষারত্ব বৃদ্ধি পায়। আর কেঁচো সার প্রয়োগ করলে জমির গুণগত মান ঠিক থাকে এবং জমির অন্যান্য চাহিদা পূরণ হয়। এ কারণে রাসায়নিক সারের চাইতে কেঁচো সারে ফসল উৎপাদন ভাল হয়। মাটির উর্বরা শক্তি ঠিক থাকে এবং বিভিন্ন পোকার উপদ্রব কম হয়।

এ ব্যাপারে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক আরশেদ আলী  জানান, ঠাকুরগাঁও জেলার জমিতে ব্যাপক জৈব সারের ঘাটতি রয়েছে। জমির সুস্বাস্থ্য রক্ষায়  জৈব সারের বিকল্প নেই। ইতোমধ্যে সদর উপজেলার বালিয়া ইউনিয়নের ৩টি গ্রামে জৈব সার উৎপাদন শুরু হয়েছে। গ্রামের কৃষকরা বাড়িতে বসে গোবর থেকে কেঁচো জৈব সার তৈরি করে রাসায়নিক সার ছাড়াই ফসল উৎপাদন করছেন। অন্যদিকে নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে অবশিষ্ট সার বিক্রি করে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন।

এখানকার কৃষকদের লাভ দেখে অন্যন্য উপজেলার চাষিরাও জৈব সার তৈরিতে উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন। ইতোমধ্যে কেঁচো জৈব সার সদর উপজেলা থেকে রানীশংকৈল, বালিয়াডাঙ্গী ও হরিপুর উপজেলাতেও ছড়িয়ে পড়েছে। এ ধারা অব্যাহত থাকলে খুব শিগগিরই ঠাকুরগাঁও জেলা জৈব কৃষির আওতায় আসবে এবং মাটির উন্নয়ন ঘটিয়ে ফসলের উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব হবে।

ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ

ভেড়ামারায় আগ্নেয়াস্ত্রসহ শীর্ষ সন্ত্রাসী গ্রেপ্তার

ঠাকুরগাঁওয়ে ক্রমেই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে কেঁচো জৈব সার!

আপডেট সময় : ০৬:৩৮:৫৩ অপরাহ্ণ, শনিবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০১৬
নিউজ ডেস্ক:

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার বালিয়া ইউনিয়নের কৃষকেরা এক সময় শুধুমাত্র রাসায়নিক সার ব্যবহার করে ফসল উৎপাদন করতেন। এতে জমির জমির অম্লত্ব ও ক্ষারত্ব বৃদ্ধি পায়। এ অবস্থায় কৃষি বিভাগের পরামর্শে ২০১৫ সালে ওই ইউনিয়নের ছোট বালিয়া গ্রামের ২ শতাধিক কৃষক সিমেন্টের রিং ও বিশেষায়িত কেঁচো দিয়ে প্রথম শুরু করেন কেঁচো জৈব সার তৈরির কাজ। এজন্য সিমেন্টের তৈরি রিংয়ে গোবর দিয়ে সেখানে ২শ থেকে ২শ ৫০টি কোঁচো ছেড়ে দিয়ে প্লাস্টিক দিয়ে ঢেকে রাখা হয়। ৩০-৪০ দিনের মধ্যে কেঁচোগুলি বিপাকীয় প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তাদের মল ত্যাগ এবং মুখের বিশেষ লালা দিয়ে তৈরি করে কেঁচো জৈব সার।

ওই সার জমিতে প্রয়োগ করে আশানুরুপ উৎপাদন পেয়ে ওই সারের চাহিদা বেড়ে যায়। পরের বার বগুলাডাঙ্গী গ্রামের ৩শ ও বানিয়াপাড়া গ্রামের ২ শতাধিক পরিবার নিজ বাড়িতে কেঁচো সার উৎপাদন করতে থাকে। এ সার প্রয়োগ করলে জমিতে রাসায়নিক সার প্রয়োগ করতে হয় না। জমির স্বাস্থ্য ও মাটির গুণাগুণ ভালো থাকে এবং উৎপাদন আগের চাইতে বৃদ্ধি পায়।

বগুলাডাঙ্গী গ্রামের কৃষক জিয়াউর রহমান জানান, তিনি পিয়াজ-মরিচ, আলু ও লালশাক ক্ষেতে কেঁচো জৈব সার প্রয়োগ পূর্বের চেয়ে অনেক বেশি উৎপাদন  পেয়েছেন।

ছোট বালিয়া গ্রামের কৃষক ময়নুল ইসলাম ১ বিঘা জমিতে এ সার প্রয়োগ করে লাউ ও করলার চাষ করেছিলেন। খরচ হয়েছিল প্রায় ৩৫ হাজার টাকা। পরবর্তীতে ফলন করা লাউ-করলা বিক্রি করে পেয়েছেন ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা। এ ফলনে তিনি খুব খুশি।

সনেকা বেগম নামে এক কৃষাণী জানান,  বাড়িতে রিং বসিয়ে মহিলারাই এটি দেখাশুনা করতে পারে। তিনি এ পর্যন্ত প্রায় ১ হাজার টাকার সার বিক্রি করেছেন। এছাড়াও ছোট বালিয়া গ্রামে ২ টন জৈব সার প্রস্তুত হয়। প্রস্তুত করা সার নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে বাইরে বিক্রি করে ওই গ্রামের কৃষকেরা মাসে ২৪ হাজার টাকা আয় করছেন।

এরই ধারাবাহিকতায় বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার ২শ, রানীংশংকৈল উপজেলার দেড়শ ও হরিপুর উপজেলার ৫০ বাড়িতে কেঁচো জৈব সার উৎপাদন শুরু হয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, কেঁচো জৈব সার শতক প্রতি ২/৪ কেজি প্রয়োগ করতে হয়। এ সার প্রয়োগ করলে রাসায়নিক সার প্রয়োগ করতে হয়না। কোনো প্রকার রাসায়নিক সার, কীটনাশক প্রয়োগ না করে প্রাকৃতিকভাবে কেঁচো জৈব সার প্রয়োগ করে  তুলনামূলকভাবে বেশি ফসল উৎপাদন করা সম্ভব।

এ ব্যাপারে বালিয়া ইউনিয়ন কৃষি কর্মকর্তা আব্দুর রহিম জানান, জমিতে রাসায়নিক সার বার বার প্রয়োগ করলে জমির অম্লত্ব ও ক্ষারত্ব বৃদ্ধি পায়। আর কেঁচো সার প্রয়োগ করলে জমির গুণগত মান ঠিক থাকে এবং জমির অন্যান্য চাহিদা পূরণ হয়। এ কারণে রাসায়নিক সারের চাইতে কেঁচো সারে ফসল উৎপাদন ভাল হয়। মাটির উর্বরা শক্তি ঠিক থাকে এবং বিভিন্ন পোকার উপদ্রব কম হয়।

এ ব্যাপারে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক আরশেদ আলী  জানান, ঠাকুরগাঁও জেলার জমিতে ব্যাপক জৈব সারের ঘাটতি রয়েছে। জমির সুস্বাস্থ্য রক্ষায়  জৈব সারের বিকল্প নেই। ইতোমধ্যে সদর উপজেলার বালিয়া ইউনিয়নের ৩টি গ্রামে জৈব সার উৎপাদন শুরু হয়েছে। গ্রামের কৃষকরা বাড়িতে বসে গোবর থেকে কেঁচো জৈব সার তৈরি করে রাসায়নিক সার ছাড়াই ফসল উৎপাদন করছেন। অন্যদিকে নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে অবশিষ্ট সার বিক্রি করে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন।

এখানকার কৃষকদের লাভ দেখে অন্যন্য উপজেলার চাষিরাও জৈব সার তৈরিতে উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন। ইতোমধ্যে কেঁচো জৈব সার সদর উপজেলা থেকে রানীশংকৈল, বালিয়াডাঙ্গী ও হরিপুর উপজেলাতেও ছড়িয়ে পড়েছে। এ ধারা অব্যাহত থাকলে খুব শিগগিরই ঠাকুরগাঁও জেলা জৈব কৃষির আওতায় আসবে এবং মাটির উন্নয়ন ঘটিয়ে ফসলের উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব হবে।