ঈদুল আজহার ছুটিতে স্বায়ত্ত্বশাসিত অন্য তিনটি বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলো খোলা থাকলেও বন্ধ রাখার সিদ্ধান্তে অটল রয়েছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) প্রশাসন। বিশ্ববিদ্যালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে জানা গেছে, আগামী সোমবার (৫ জুন) থেকে মঙ্গলবার (১৩ জুন) পর্যন্ত আবাসিক হলগুলো বন্ধ থাকবে।
এই সিদ্ধান্তে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অনেক শিক্ষার্থী। তাদের অভিযোগ, দূর-দূরান্ত থেকে আসা শিক্ষার্থীদের জন্য এই ছুটিতে বাড়ি ফেরা সবসময় সম্ভব হয় না। বিশেষ করে যারা চাকরির পরীক্ষাসহ বিভিন্ন পরীক্ষার প্রস্তুতিতে ব্যস্ত বা আংশিক সময়ের কাজ করেন, তাদের জন্য হল বন্ধ থাকা বেশ ভোগান্তির কারণ।
এর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফেইসবুক গ্ৰুপগুলোর এক জরিপে দেখা যায়, জরিপে অংশগ্রহণকারী ৭৭৯ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ৮৭শতাংশ শিক্ষার্থীই ঈদের ছুটিতে হল বন্ধ রাখার বিপক্ষে।
এ বিষয়ে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক সালাউদ্দিন আম্মার বলেন, গত ঈদে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের হল খোলা রাখা নিয়ে এত আলাপ তুললাম, যারা হলে থাকবে (প্রায় ৬৪জন) তাদের তালিকা করলাম, হল খোলা রাখার হাজারটা যৌক্তিকতা দেখালাম- তবুও প্রশাসন তোয়াক্কাই করেনি। প্রশাসনের এই আচরণগুলোকে ফ্যাসিজম বললে, কাল আবার আমাদের নামে তদন্ত কমিটি গঠন হবে। আসলে প্রশাসন আর কিছুর রোডম্যাপ দিক আর না দিক, তারা পূর্নাঙ্গ ফ্যাসিস্ট হয়ে যাওয়ার রোডম্যাপ দিয়ে দিচ্ছে শিক্ষার্থীদের। এদের মাথায় এখন নিয়োগ ছাড়া আর কিছুই কাজ করতেছেনা।
শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক সুলতান আহমেদ রাহী বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ঈদুল ফিতরের আগে হল বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর বিষয়টি নিয়ে প্রচুর সমালোচনা হয়। তখন কিছু শিক্ষার্থী প্রশাসন ভবনের সামনে অবস্থান নিলে প্রক্টর ও রেজিস্ট্রার মহোদয়ের সঙ্গে ধস্তাধস্তির মতো এক অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে।
তিনি আরো বলেন, মুসলিম সম্প্রদায় ঈদ উদযাপন করলেও অন্যান্য সম্প্রদায়ের শিক্ষার্থীরা, এমনকি মুসলিম সম্প্রদায়েরও কিছু শিক্ষার্থী চাকরির প্রস্তুতি ও অন্যান্য কারণে হলে অবস্থান করতে চায়। হল খোলা রাখার এমন অনেক প্রাসঙ্গিক কারণ রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের কাছে আহ্বান থাকবে-আপনারা বিষয়টি পুনর্বিবেচনায় নিয়ে ছুটির দিনগুলোতে হল খোলা রাখার সিদ্ধান্ত নেবেন-এই প্রত্যাশা করছি।
শাখা ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারী মুজাহিদ ফয়সাল বলেন, জীবনযুদ্ধে একজন শিক্ষার্থী যখন খুব খারাপ সময় মোকাবিলা করে, তখনই মূলত তিনি পরিবার, আত্মীয় স্বজন ব্যতিরেকে একাকী ঈদ করার সিদ্ধান্ত নেন। সেই সময়টা তাদের জন্য কতটুকু উপভোগ্য করা যায়- সে বিষয়ে হল প্রশাসনের পেরেশানি থাকা দরকার ছিল; কিন্তু উল্টা মাথা গোঁজার ঠাঁইটুকুও কেড়ে নিচ্ছে। এটা শুধু একজন শিক্ষার্থীর অধিকার ক্ষুন্নই নয় বরং অমানবিক আচরণও বটে। আমরা হল প্রশাসনকে গৃহীত সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করার অনুরোধ জানাই।
সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. সালেহ্ হাসান নকীব বলেন, প্রভোস্ট কাউন্সিলের সুপারিশ অনুযায়ী, ঈদের ছুটিতে আবাসিক হলগুলো বন্ধ থাকবে। তবে ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে যারা একান্তই থাকতে চায়, তাদের জন্য ব্যবস্থা থাকবে। এই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।