জুয়েলারি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ না রাখার সিদ্ধান্ত নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছে বাংলাদেশ জুয়েলারি অ্যাসোসিয়েশন চুয়াডাঙ্গা জেলা শাখা। বৃহস্পতিবার বিকেল আড়াইটায় চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাব মিলনায়তনে এই সংবাদ সম্মেলন করে সংগঠনটি।
সংবাদ সম্মেলনে তারা দাবি করেন, বাজুসের সহসভাপতি রিপনুল হাসান একজন চিহ্নিত স্বর্ণচোরাকারবারী ও আওয়ামী লীগের দোসর। তার বিরুদ্ধে ৫ই আগস্টের পর দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করে তুলতে নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও আওয়ামী লীগকে অবৈধ অর্থের যোগান দেয়ার অভিযোগসহ বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হত্যা মামলার আসামি। ব্যক্তির অপরাধের দায়, সংগঠন নেবে না। এছাড়াও, চুয়াডাঙ্গার ব্যবসায়ীরা বৃহস্পতিবার কোনো দোকানপাট বন্ধ না রেখে বাজুসের সিদ্ধান্তেরও প্রতিবাদ জানিয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তবে বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাজুস) চুয়াডাঙ্গা জেলা শাখার আহ্বায়ক লতিফুল ইসলাম বলেন,
“গতকাল বুধবার এক বিজ্ঞপ্তিতে বাংলাদেশ জুয়েলারী সমিতির (বাজুস) ভারপ্রাপ্ত সভাপতি গুলজার আহমেদ ও সাধারণ সম্পাদক বাদল চন্দ্র রায় আজ বৃহস্পতিবার থেকে দেশের সকল জুয়েলারী প্রতিষ্ঠান অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছেন। মূলত বাজুসের সহসভাপতি মোঃ রিপনুল হাসানকে গ্রেফতারের প্রতিবাদে এই কর্মসূচীর ডাক দেয়া হয়েছে। আমরা প্রান্তিক পর্যায়ের জুয়েলারী ব্যবসায়ী। মফস্বল এলাকায় আমাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। আমরা নিয়মিত বাজুসের সকল নির্দেশনা মেনে থাকি। তবে বর্তমানে উদ্ভুত পরিস্থিতি নিয়ে আমাদের দ্বিমত আছে। যে ব্যক্তিকে কেন্দ্র করে এই কর্মসূচীর ডাক দেয়া হয়েছে, তার বাড়ি আমাদের নিজ জেলা চুয়াডাঙ্গাতেই। ৫ই আগস্টের পর দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করে তুলতে নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও আওয়ামী লীগকে অবৈধ অর্থের যোগান দেয়ার অভিযোগ রয়েছে। তার বিরুদ্ধে স্বর্ণ চোরাকারবারসহ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালীন সময়ে এক ব্যক্তি নিহতের ঘটনায় হত্যা মামলা রয়েছে। এছাড়াও, নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগ ও যুবলীগকে সংগঠিত করতে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাইফুর রহমান সোহাগসহ কেন্দ্রীয় নেতাদেরকে অবৈধ অর্থের যোগান দেবার অভিযোগসহ কমপক্ষে চারটি মামলা রয়েছে। মামলাগুলো হলো—
১. ডিএমপির পল্টন থানার, এফআইআর নম্বর ৩৯, তারিখ ২৯ এপ্রিল, ২০২৫; জিআর নম্বর ২০৫, ধারা- ১৪৩/১৪৪/১৪৭/১৪৮/৩২৪/৩২৫/৩২৬/৩০৭/১০৯/৩৪।
২. ডিএমপির পল্টন থানার এফআইআর নম্বর ২৬, তারিখ ১৬ মার্চ, ২০২৫; জিআর নম্বর ১৩৪, ধারা- ৩০২/১৪৯/১৪৮/১৪৭/১৪৩/১২০ই/৩৪/১০৯।
৩. ডিএমপির পল্টন থানার এফআইআর নম্বর ১৭, তারিখ ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫; জিআর নম্বর ৭৯, ধারা- ৩০২/১০৯।
৪. ডিএমপির পল্টন থানার এফআইআর নম্বর ১৬, তারিখ ০৬ মে, ২০২৫; জিআর নম্বর ২২২, ধারা- ১৪৩/১৪৭/১৪৮/১৪৯/৩২৫/৩২৬/৩০৭/৫০৬/১০৯।”
লিখিত বক্তব্যে বাজুস চুয়াডাঙ্গা জেলা শাখার আহ্বায়ক লতিফুল ইসলাম আরও বলেন,
“অপরদিকে, কদিন পরেই পবিত্র ঈদুল আজহা। মফস্বল এলাকায় আমাদের মতো ব্যবসায়ীরা উৎসব-পার্বনে কিছুটা বেচাকেনা করে। ঠিক ঈদের কয়েকদিন আগে, অনিদিষ্টকালের জন্য জুয়েলারী প্রতিষ্ঠান বন্ধের সিদ্ধান্ত আমাদের মতো ব্যবসায়ীদের পেটে লাথি মারার সিদ্ধান্ত। সাংগঠনিকভাবে সংগঠনের সকল নির্দেশনা মেনে নিতে আমরা বদ্ধ পরিকর। কিন্তু পেটে লাথি মারার এই সিদ্ধান্ত আমরা মেনে নিতে পারিনা। বহু অন্যায় ও দূর্নীতির হোতা, চিহ্নিত স্বর্ণ চোরাচালানকারী, জুয়ার ব্যবসায়ী এবং হত্যা মামলার আসামীর ব্যক্তিগত দায়- দোষের কারণে জুয়েলারী ব্যবসায়ীরা কক্ষিগ্রস্থ হতে পারে না। আমরা মনে করি, বাজুসের এই সিদ্ধান্ত একজন ব্যক্তিকে বাঁচাতে গিয়ে আমাদের মতো হাজার হাজার জুয়েলারী ব্যবসায়ীর পেটে লাথি মারা হবে। ইতোমধ্যে চুয়াডাঙ্গার ব্যবসায়ীরা এই প্রতিবাদ জানিয়ে জুয়েলারী প্রতিষ্ঠান খোলা রেখেছে। তাই, বাজুস কেন্দ্রীয় কমিটির সম্মানিত নেতৃবৃন্দের কাছে আমাদের আকুল এবং উদ্বাত্ত আহ্বান, অতিদ্রুত-এই মূহুর্তে বাজুসের দেয়া জুয়েলারী প্রতিষ্ঠান অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা প্রত্যাহার করতে হবে। ব্যক্তির দোষের কারণে সাধারণ ব্যবসায়ীদের পেটে লাথি মারা চলবে না। ব্যক্তির অপরাধের দায়, সংগঠন নেবে না।”
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ জুয়েলারি সমিতি (বাজুস) চুয়াডাঙ্গা জেলা শাখার যুগ্ম আহ্বায়ক শেখ সাদী, সদস্য আকরামুর রহমান, মাসুম কামাল, কামরুজ্জামান খোকা, নিজাম উদ্দীন ও রঞ্জিত কুমার প্রমুখ।
এদিকে, কেন্দ্রীয় ঘোষণা না মেনে চুয়াডাঙ্গার সকল স্বর্ণ দোকানপাট খোলা রেখেছেন।