ম্যারিকো বাংলাদেশ লিমিটেডের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন প্রতিষ্ঠানটির প্রাক্তন শ্রমিকরা। শ্রম আইনে শ্রমিকদের পাওনা ১৮২৩ কোটি টাকা পাচার রোধে ম্যারিকোর বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আবেদনও করেছেন তারা।
বুধবার (২১ মে) বিষয়টি নিশ্চিত করেন আবেদনকারীদের পক্ষের আইনজীবী মো. মাহবুবুর রহমান। এর আগে মঙ্গলবার শ্রমিকদের সঙ্গে চলমান মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত ম্যারিকোর ভারতীয় মূল প্রতিষ্ঠানে ১৮২২ কোটি ৯৮ লাখ টাকা যেন পাঠাতে না পারে, সেজন্য অর্থ অবরুদ্ধ করতে রুল চেয়ে আবেদন করেন ভুক্তভোগীরা।
আবেদনকারীরা জানান, শ্রমিকদের ন্যায্য পাওনা বঞ্চিত রেখে বিপুল পরিমাণ অর্থ বিদেশে স্থানান্তরের চেষ্টা করছে ম্যারিকো বাংলাদেশ লিমিটেড। অথচ বহু শ্রমিকের পাওনা পরিশোধ করেনি প্রতিষ্ঠানটি। এ নিয়ে উদ্বিগ্ন শ্রমিকরা। নিজেদের টাকা আদায়ের ব্যাপারে হাইকোর্ট থেকে ন্যায়বিচার পাবেন বলে আশাবাদী।
জানা গেছে, শ্রমিক অংশগ্রহণ তহবিল ও শ্রমিক কল্যাণ তহবিল গঠন না করার অভিযোগে মামলাটি করেন ২০০৬-০৭ অর্থবছর থেকে ২০১২-১৩ অর্থবছর পর্যন্ত কর্মরত প্রাক্তন কর্মচারীদের পক্ষ থেকে ১৯ জন বাদী। ঢাকার শ্রম আদালতে করা মামলা (নম্বর ৬৯১/২০১৪) দায়ের করার পর হাইকোর্টে রিট করে ম্যারিকো বাংলাদেশ লিমিটেড। রিটের প্রেক্ষিতে মামলার বাদী ১৯ শ্রমিক শ্রম আইনের ২৩৪ ও ২৪০(৩) ধারা অনুযায়ী হাইকোর্টে ১ হাজার ৮২২ কোটি ৯৮ লাখ টাকার দাবি উত্থাপন করে আবেদন দাখিল করেছেন।
আবেদনে ম্যারিকো বাংলাদেশ লিমিটেড শ্রমিকদের সাথে চলমান মামলা শেষ হওয়ার আগ পর্যন্ত ১ হাজার ৮২২ কোটি ৯৮ লাখ টাকা ম্যারিকো বাংলাদেশ লিমিটেডের ভারতীয় মূল প্রতিষ্ঠান ম্যারিকো লিমিটেড এ প্রেরণ করতে না পারে সে জন্য অর্থ ব্লক করার জন্য আদালতের রুল চেয়ে আবেদন করেছেন ভুক্তভোগী শ্রমিকরা।
সূত্র বলছে, বাংলাদেশ শ্রম আইনের ২৩৪ ধারা অনুযায়ী শ্রমিক অংশগ্রহণ তহবিল ও শ্রমিক কল্যাণ তহবিল গঠন বাধ্যতামূলক হলেও ম্যারিকো বাংলাদেশ লিমিটেড ২০০৬-০৭ অর্থবছর থেকে ২০১২-১৩ অর্থবছর পর্যন্ত আইনের ব্যত্যয় ঘটিয়ে এই তহবিল গঠন করা থেকে বিরত থাকে। পরবর্তীতে ২০১৩-১৪ অর্থবছর থেকে প্রতিষ্ঠানটি নিয়মিতভাবে এই তহবিল গঠন শুরু করে।
জানা গেছে, ম্যারিকো বাংলাদেশ লিমিটেড ১৯৯৯ সালে বাংলাদেশে ব্যবসায়িক কার্যক্রম শুরু করে। বর্তমানে কোম্পানির উল্লেখযোগ্য পণ্যের মধ্যে প্যারাসুট নারিকেল তেল, প্যারাসুট বেলি ফুল, প্যারাসুট এক্সট্রা কেয়ার, প্যারাসুট ন্যাচারাল শ্যাম্পু, সাফোলা এডিবল অয়েল, প্যারাসুট জাস্ট ফর বেবি ও অন্যান্য পণ্য রয়েছে। শুরুর দিকে কল্লোল গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান, কল্লোল ট্রেডার্স লিমিটেড তাদের পণ্যের পরিবেশনার দায়িত্বে ছিল। পরবর্তীতে ২০০৩ সালের ৪ ডিসেম্বর, ম্যারিকো লিমিটেড ইন্ডিয়া ও Adil & Associates LLC (AA) এর যৌথ উদ্যোগে Marico Bangladesh Limited (MBL) তাদের ব্যবসায়িক পরিসর বিস্তৃত করে। ম্যারিকো বাংলাদেশ লিমিটেড, ম্যারিকো ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড ও কায়া স্কিন কেয়ার লিমিটেডসহ ম্যারিকোর বিভিন্ন সহযোগী প্রতিষ্ঠান হিসেবে বাংলাদেশে ব্যবসা পরিচালনা করেছে।
ম্যারিকো লিমিটেড ইন্ডিয়া, ম্যারিকো বাংলাদেশ লিমিটেডের ৯০% শেয়ারের মালিক এবং বিগত ১৬ বছরে প্রায় ৩২০০ কোটি টাকা মুনাফা করেছে যার মধ্যে ৪১৯ কোটি ২৯ লাখ টাকা রেমিট যোগ্য হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। শুধুমাত্র ২০২৪-২৫ অর্থবছরেই রেমিট যোগ্য হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে ১ হাজার ৭৭ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। যা ১৬ বছরের মোট রেমিট টাকার প্রায় ৩৪ শতাংশ। এ অবস্থায় মামলার নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত এবং প্রাক্তন শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধ না হওয়া পর্যন্ত আর কোনো অর্থ বিদেশে রেমিট না করার জন্য আবেদনকারীরা হাইকোর্টে আবেদন করেছেন।