চুয়াডাঙ্গায় গত তিন দিনের ব্যবধানে প্রায় ৪ ডিগ্রি তাপমাত্রা কমলেও প্রচণ্ড গরমে নাভিশ্বাস উঠেছে জেলার মানুষের। গরমের তীব্রতায় দুর্ভোগে পড়েছে খেটে খাওয়া মানুষ। এই তাপমাত্রা আরও ২-৩ দিন অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
এদিকে, তীব্র গরমে সদর হাসপাতালে বৃদ্ধি পেয়েছে ডাইরিয়া ও নিউমোনিয়া রোগীর সংখ্যা। আক্রান্তদের মধ্যে শিশু ও নারীর সংখ্যাই বেশি। অন্যদিকে রোগির চাপ রয়েছে বহিঃবিভাগেও। বহির্বিভাগে প্রতিদিন ডাইরিয়া ও নিউমোনিয়ায় আক্রাক্ত হয়ে ৫০০-৬০০ রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন। এই প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়ায় অভিভাবক মহল চিন্তিত হয়ে পড়েছেন। যদিও চিকিৎসকেরা বলছেন, অভিভাবকদের সচেতনতা আরো বাড়াতে হবে। চিন্তার কোনো কারণ নেই।
চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের শিশু ও ডাইরিয়া ওয়ার্ড সুত্রে জানা গেছে, গত ১০ দিনে অর্থাৎ ৩ মে থেকে ১৩ মে রাত ৯টা পর্যন্ত শিশু ওয়ার্ডের মোট ভর্তি হয়েছে ২৩৭ শিশু রোগী। এরমধ্যে অধিকাংশ শিশুই নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত।
অপরদিকে গত ১০ দিনে ডাইরিয়া ওয়ার্ডের নারী, শিশু, বয়োবৃদ্ধসহ মোট ৩৮৫ রোগী ভর্তি হয়েছেন।
চুয়াডাঙ্গার প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার সুত্রে জানা গেছে, ১৫ মে পর্যন্ত তাপপ্রবাহ চলমান থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। এর থেকে তাপমাত্রা কমতে পারে।
এর আগে, চলতি মৌসুমে গত শনিবার (১০ মে) চুয়াডাঙ্গায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা চলতি মৌসুমে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। গতকাল সন্ধায় চুয়াডাঙ্গায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৩৮ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা প্রায় ৪ ডিগ্রি তাপমাত্রা কমেছে।
তীব্র তাপপ্রবাহে বয়স্কদের হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি থাকে সবচেয়ে বেশি জানিয়ে চুয়াডাঙ্গার সিভিল সার্জন ডা. হাদী জিয়া উদ্দিন আহমেদ বলেন, ৩৮ ডিগ্রি তাপমাত্রা পার হলেই হিটস্ট্রোকের ঝুঁকি থাকে বয়স্ক ব্যক্তিদের। এ জন্য অতি প্রয়োজনীয় কাজ ছাড়া বাইরে বের না হতে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। বেশি বেশি পানি, ও ফলমূল খেতে বলা হচ্ছে। শিশু-কিশোরদের ঘন ঘন পানি ও শরবত পান করার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
এদিকে, গতকাল মঙ্গলবার রাতে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডে গিয়ে কথা হয় দিনমজুর এহসান হাবীব নামের এক রোগীর স্বজনের সঙ্গে। তিনি বলেন, গত ৪ দিন যাবত আমার ছোট ছেলে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছে। এরমধ্যে আমার বড় মেয়েও হঠাৎ ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ভর্তি করা হয়েছে। অতিরিক্ত গরমে নাজেহাল অবস্থা আমাদের।
সদর উপজেলার গাইটঘাট এলাকার পারুল বেগম তার অসুস্থ নাতনিকে নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। তিনি বলেন, গত পরশু থেকে আমার নাতনির ডায়রিয়া হয়েছে। পরে গতকালকে অনেক বেশি অসুস্থ হয়ে গেলে বেলা ১১টার দিকে হাসপাতালে নিয়ে আসি। এখনো অবস্থা খুব একটা ভালো না। একদিকে গরম অন্য দিকে রোগীদের চাপে আরও গরমের তীব্রতা বাড়ছে।
শিশু ওয়ার্ডে সাবিনা নামের এক নারী বলেন, গত ৩দিন যাবত আমার ছেলের প্রচণ্ড জ্বর ও ঠান্ডায় আক্রান্ত হয়। বাড়িতে প্রাথমিক চিকিৎসা করেও কম না হলে হাসপাতালে নিয়েছি। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন ছেলে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে। তবে চিন্তার কোনো কারণ নেই। । হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা নিয়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করে তিনি আরও বলেন, আগের তুলনায় চিকিৎসা সেবা ভালো হয়েছে। বাচ্চাদের কোনো সমস্যা হলে নার্সের ডাকার সঙ্গে সঙ্গেই সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। এমনকি জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসককে জানানো হলে তিনিও তাৎক্ষণিক এসে চিকিৎসা দিচ্ছেন।
এ বিষয়ে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের সিনিয়র কনসালট্যান্ট শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. আসাদুর রহমান মালিক খোকন বলেন, তীব্র গরমের কারণে এই সময়ে শিশুরা ডায়রিয়া রোগে আক্রান্ত হয়। গরমে ঘামের কারণে ঠান্ডা থেকে নিউমোনিয়াও আক্রান্ত হচ্ছে বেশিভাগ শিশু। প্রত্যেক বছরের এই সময়ে এটা হয়ে থাকে। এ কারণেই গত কয়েকদিন ধরে জেলা হাসপাতালে ডায়রিয়ায় ও নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে।
তিনি আরও বলেন, এই সময়ে অভিভাবকদেরকে সতর্ক থাকতে হবে। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে এবং শিশুদের নিয়মিত গোসল করাতে হবে। গরমের কারণে খুব দ্রুত খাবার নষ্ট হয়ে যায়। তাই এসব খাবার শিশুদের দেওয়া যাবে না। আমরা দেখেছি শিশু অসুস্থ হলেই তাদের অভিভাবকরা ফার্মেসি থেকে অ্যান্টিবায়োটিক নিয়ে এসে খাওয়ান, কোনোমতেই এটি করা যাবে না। শুধু মাত্র রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ওষুধ খাওয়াতে হবে শিশুদের।