যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের হুমকির প্রেক্ষাপটে কানাডার প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নি পার্লামেন্ট ভেঙে দিয়ে আগামী ২৮ এপ্রিল আগাম নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছেন। রোববার (২৩ মার্চ) তিনি এই ঘোষণা দেন, যা কানাডার নির্বাচনি প্রচারণার আনুষ্ঠানিক সূচনা করল।
কার্নি মাত্র দুই সপ্তাহ আগে জাস্টিন ট্রুডোর স্থলাভিষিক্ত হন। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার মধ্যেই তিনি অটোয়ার গভর্নর জেনারেলের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে পার্লামেন্ট ভেঙে দেওয়ার অনুরোধ জানান।
জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে কার্নি বলেন, “আমরা আমাদের জীবনের সবচেয়ে বড় সংকটের মুখোমুখি। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের অযৌক্তিক বাণিজ্য নীতি এবং আমাদের সার্বভৌমত্বের প্রতি তার হুমকি আমাদের অর্থনীতিকে বিপর্যস্ত করতে পারে। এই সংকট মোকাবিলার সর্বোত্তম উপায় হলো জাতীয়ভাবে শক্তিশালী অবস্থান তৈরি করা এবং ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তা করা।”
আগামী ২০ অক্টোবর কানাডার সাধারণ নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল। তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, আগাম নির্বাচন লিবারেল পার্টির জন্য কৌশলগত সুবিধা বয়ে আনতে পারে। ট্রুডোর পদত্যাগ এবং ট্রাম্পের লাগাতার হুমকির কারণে লিবারেল পার্টির জনসমর্থন উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সম্প্রতি কানাডাকে যুক্তরাষ্ট্রের ‘৫১তম রাজ্য’ বানানোর ইচ্ছা প্রকাশ করেন এবং কানাডিয়ান পণ্যের ওপর উচ্চ শুল্ক আরোপ করেন। এতে কানাডার জনগণের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয় এবং জাতীয়তাবাদী মনোভাব জোরদার হয়।
নির্বাচন সামনে রেখে সাম্প্রতিক জনমত জরিপ অনুযায়ী, কার্নি বর্তমান ফেডারেল নেতাদের মধ্যে সর্বোচ্চ জনসমর্থন পাচ্ছেন। ইপসোসের এক জরিপ অনুযায়ী, কানাডাবাসীরা তাকে ট্রাম্পের শুল্ক নীতি ও অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত নেতা হিসেবে দেখছেন।
অন্যদিকে, বিরোধী কনজারভেটিভ পার্টি তাদের হারানো অবস্থান ফিরে পেতে চাইছে। দলটির নেতা পিয়েরে পোয়েলিভ্রে ট্রাম্পের বিষয়ে স্পষ্ট অবস্থান নিতে দোটানায় রয়েছেন, যা নির্বাচনের ফলাফলে প্রভাব ফেলতে পারে।
সিবিসি নিউজের পোল ট্র্যাকার অনুযায়ী, রোববার পর্যন্ত লিবারেল পার্টির সমর্থন ৩৭.৫ শতাংশ, কনজারভেটিভ পার্টির ৩৭.১ শতাংশ, নিউ ডেমোক্র্যাটিক পার্টির ১১.৬ শতাংশ এবং ব্লক ক্যুবেকোয়ার ৬.৪ শতাংশ।
কানাডার পার্লামেন্টারি ব্যবস্থায়, যে দল সর্বোচ্চ আসন পায়, সাধারণত সরকার গঠনের সুযোগ পায় এবং সেই দলের নেতাই প্রধানমন্ত্রী হন। এখন প্রশ্ন হলো, কানাডার জনগণ আসন্ন নির্বাচনে ট্রাম্পের হুমকির বিরুদ্ধে কার্নির নেতৃত্বকে সমর্থন করবেন, নাকি রাজনৈতিক পরিবর্তনের পক্ষে রায় দেবেন।