কক্সবাজারের মাতারবাড়ী বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য সম্প্রতি আমদানি করা কয়লার একটি বড় চালানে ভেজাল ধরা পড়েছে। বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য ব্যবহৃত এ কয়লায় খালি চোখে ‘ফরেন পার্টিকেল’ বা মাটিজাতীয় ক্ষুদ্র কণা পাওয়া গেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নিম্নমানের এ কয়লা ব্যবহার করলে বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির মূল্যবান যন্ত্রপাতি নষ্ট হয়ে যাবে। এ কারণে ৬৩ হাজার টন কয়লার বিশাল এ চালানটি ফিরিয়ে দিয়েছে কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি লিমিটেড (সিপিজিসিএল)।
এ চালান প্রত্যাখ্যানের সিদ্ধান্তের পর কয়লাবাহী জাহাজটিকে চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে সংবাদমাধ্যমকে সিপিজিসিএল কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করেছে।
বঙ্গোপসাগরের তীরে ১ হাজার ৬০০ একর জমিজুড়ে তৈরি করা ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াটের আল্ট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল কয়লাচালিত মাতারবাড়ী বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির প্রথম ইউনিট বাণিজ্যিক উৎপাদনে আসে ২০২২ সালের ডিসেম্বরে। এরপর ২০২৩ সালের আগস্টে এর দ্বিতীয় ইউনিটটি উৎপাদনে আসে।
সিপিজিসিএল সূত্র সংবাদমাধ্যমকে জানায়, টেন্ডারের মাধ্যমে ইন্দোনেশিয়া থেকে কয়লা সংগ্রহের দায়িত্ব পাওয়া একটি ভারতীয় প্রতিষ্ঠান এ চালান পাঠায়। কিন্তু এবারের চালানে পাঠানো কয়লায় বিপুল পরিমাণ মাটি ছিল, যা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বিদ্যুৎ উৎপাদনের মানের নয়।
মাতারবাড়ী কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র প্রকল্পের নির্বাহী পরিচালক মো. নাজমুল হক গতকাল বলেন, আমরা মান অনুযায়ী এবার কয়লা পাইনি। আমদানিকৃত এ কয়লা দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব নয়। এ কয়লা ব্যবহার করলে মাতারবাড়ী বিদ্যুৎ কেন্দ্রের যন্ত্রপাতি নষ্ট হয়ে যাবে। এরইমধ্যে সেই কয়লা বহনকারী জাহাজ জেটি থেকে বের হয়ে চলে গেছে। এখন বাকিটা সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের ব্যাপার, ওরা এ কয়লা দিয়ে কী করবে। আমরা এ কয়লা প্রত্যাখ্যান করে দিয়েছি। পরে যদি মানসম্পন্ন কয়লা সরবরাহ করে তখন চিন্তাভাবনা করে দেখা হবে। ভবিষ্যতেও যদি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান নিম্নমানের এ কয়লা দেয় তাহলে সেটিও ফিরিয়ে দেওয়া হবে।
মাতারবাড়ী সাইট অফিসের প্রধান প্রকৌশলীর দপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী (পরিচালন ও সংরক্ষণ) মুহাম্মদ সাইফুর রহমান বলেন, আমদানিকৃত এ কয়লায় দৃশ্যত কিছু ‘ফরেন পার্টিকেল’ ছিল। এটি মানসম্পন্ন কয়লা ছিল না। এ কারণে আমরা এ কয়লার চালান বাতিল করে দিয়েছি। গত তিন-চার মাস ধরে এ কোম্পানিটি মাতারবাড়ী বিদ্যুৎ কেন্দ্রে কয়লা সরবরাহ করে আসছিল। এ কেন্দ্রে কয়লা সরবরাহের জন্য আন্তর্জাতিক টেন্ডার হয়েছিল। পরে জয়েন্ট ভেঞ্চারে আদিত্য বিরলা অ্যান্ড ইউনিক সিমেন্ট কয়লা সরবরাহের কাজ পায়। এরইমধ্যে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ (সিপিএ) নিশ্চিত করেছে, সিপিজিসিএল ও শিপিং কোম্পানির নির্দেশে কয়লাবাহী জাহাজটিকে বহির্নোঙরে পাঠানো হয়েছে।
চট্টগ্রাম বন্দরের সচিব মো. ওমর ফারুক বলেন, ‘মাতারবাড়ী বিদ্যুৎ কেন্দ্র অভিযোগ করেছে কয়লায় প্রচুর মাটি রয়েছে। তাই কয়লা খালাস বন্ধ করে জাহাজটি বহির্নোঙরে নিয়ে আসা হয়েছে। এ বিষয় নিয়ে মন্ত্রণালয়ে বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। সেখানে সিদ্ধান্ত অনুসারে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে। মাতারবাড়ী বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য ১ হাজার কোটি টাকা দামের ৬৩ হাজার টন কয়লা নিয়ে ইন্দোনেশিয়া থেকে সিঙ্গাপুরের পতাকাবাহী এমভি জাহাজ এমভি ওরিয়েন্ট অর্কিড গত ১৭ মার্চ মাতারবাড়ী বন্দরের চ্যানেলে প্রবেশ করে। কয়লা খালাসের সময় দেখা যায় তাতে প্রচুর মাটি রয়েছে। এরমধ্যেই আমদানি করা ৬৩ হাজার টন কয়লার মধ্যে ২২ হাজার ৩৫০ টন কয়লা আনলোড করাও হয়। চালানে অতিরিক্ত মাটি থাকায় কয়লা খালাসের জন্য ব্যবহৃত কনভেয়র বেল্ট বারবার বিকল হয়ে যাচ্ছিল। পরে বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কর্মকর্তারা জাহাজ থেকে কয়লা খালাস বন্ধ করে দিয়ে জাহাজটিকে ৪০ হাজার ৬৫০ টন কয়লাসহ চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে পাঠিয়ে দেন।
বর্তমানে জাহাজটি বহির্নোঙরে অবস্থান করছে। অথচ চুক্তি অনুযায়ী বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য উন্নতমানের কয়লা সরবরাহ করার কথা ছিল টেন্ডার পাওয়া প্রতিষ্ঠানটির। আন্তর্জাতিক বাজারে বর্তমানে প্রতি টন কয়লার দাম গড়ে ১২০ ডলার বা বাংলাদেশি সাড়ে ১৪ হাজার টাকা।