শুক্রবার | ১২ ডিসেম্বর ২০২৫ | হেমন্তকাল
শিরোনাম :
Logo চাঁদপুর সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়কের পিতার মৃত্যুতে দোয়া Logo জাতীয় ছাত্রশক্তি জাবি শাখার নতুন কমিটি ঘোষণা Logo জাবিতে ইলিয়াস ও পিনাকীর কুশপুত্তলিকা দাহন Logo পদত্যাগ করলেন উপদেষ্টা মাহফুজ আলম ও আসিফ মাহমুদ Logo সাতক্ষীরা-কলারোয়া সীমান্তে বিজিবির বিশেষ অভিযানে ভারতীয় মদ ও ঔষধসহ আড়াই লক্ষাধিক টাকার চোরাচালানী মালামাল জব্দ Logo কয়রায় আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস পালন উপলক্ষে র‍্যালি ও আলোচনা সভা Logo চাঁদপুর ভূঁইয়ার ঘাট ডিঙ্গি মাঝি সমবায় সমিতির ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠন Logo টেকনাফে বিজিবির অভিযানে সাগর পথে মানব পাচারকালে দুই দালালসহ ৭ জন ভিকটিম উদ্ধার Logo দেশকে এগিয়ে নেয়ার ‘ডিটেইল প্ল্যানিং’ শুধু বিএনপির আছে: তারেক রহমান Logo রাশিয়াকে ভূখণ্ড ছেড়ে দেওয়ার কোনো অধিকার নেই কিয়েভের : জেলেনস্কি

মসজিদে দাঁড়িয়ে উচ্চস্বরে সাহায্যের আবেদন, ইসলাম কি বলে

  • নীলকন্ঠ ডেস্ক: নীলকন্ঠ ডেস্ক:
  • আপডেট সময় : ১২:৫৮:৫৭ অপরাহ্ণ, বৃহস্পতিবার, ২৩ জানুয়ারি ২০২৫
  • ৭৬৬ বার পড়া হয়েছে

একান্ত অপারগ অবস্থা ছাড়া অন্যের কাছে হাত পাতা ইসলামের দৃষ্টিতে নাজায়েজ। আর একে অভ্যাস ও পেশা বানিয়ে নেওয়া মারাত্মক অন্যায় ও নিন্দনীয়। ভিক্ষাবৃত্তি ইসলামে ‘নিকৃষ্টতম বৈধ’ কাজ। হাদিস শরিফে এ ব্যাপারে কঠিন ধমকি এসেছে। কোনো ভিক্ষুকের ব্যাপারে যদি ধারণা হয়, সে মাজবুর-অপারগ নয়; বরং ভিক্ষাবৃত্তি তার পেশা, তাহলে তাকে ভিক্ষা দেওয়া থেকে বিরত থাকা উচিত।

আর মসজিদের ভেতর দাঁড়িয়ে এভাবে ভিক্ষা চাওয়া অবশ্যই সঠিক কাজ নয়। এ থেকে বিরত থাকা উচিত। হাদিস শরিফে এসেছে, ‘একজন ব্যক্তি তার হারানো জন্ত পওয়ার জন্য মসজিদে ঘোষণা করছিল। রাসুলুল্লাহ (সা.) তা শুনে বলেন, ‘তুমি যেন তা না পাও। মসজিদ এ কাজের জন্য বানানো হয়নি। মসজিদ কেবল সে কাজেরই জন্য, যার জন্য (তথা নামায, ইবাদত-বন্দেগির) তা বানানো হয়েছে।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৫৬৯)

হাদিস এর ব্যাখ্যায় ইমাম খাত্তাবি (রহ.) বলেন, ‘অর্থাৎ এই নিষেধাজ্ঞার মধ্যে এমন সব কাজ অন্তর্ভুক্ত, যার জন্য মসজিদ বানানো হয়নি। যেমন ক্রয়-বিক্রয়, পারস্পরিক লেনদেন ও নিজেদের হক ও অধিকার আদায় সংক্রান্ত বিষয়াদি। পূর্ববর্তী আলেমদের অনেকেই মসজিদে সাহায্য চাওয়া অপছন্দ করতেন। এবং তাদের কেউ কেউ মসজিদে সাহায্যপ্রার্থী লোকদের দান করাও পছন্দ করতেন না।’ (মাআলিমুস সুনান ১/১৪৩)

আল্লামা আইনি (রহ.)সহ অনেক মুহাদ্দিস হাদিসটির ব্যাখ্যায় এসব কথা বলেছেন। (শরহু সুনানে আবি দাউদ, আইনি ২/৮৭)

তাছাড়া ফরজ নামাজের সালামের পর এভাবে সাহায্য চাওয়াতে মাসবুক (যারা জামাতে পরে এসেছেন) ও তাৎক্ষণিক সুন্নতে দাঁড়িয়ে যাওয়া ব্যক্তিদের নামাজে বিঘ্ন সৃষ্টির আশঙ্কা থাকে। মুসল্লিদের দোয়া ও জিকির- আজকারের মধ্যেও বিঘ্ন সৃষ্টির আশঙ্কা থাকে। মসজিদে আওয়াজ-শোরগোল ও কখনো বিশৃঙ্খল পরিবেশ তৈরি হয়—যা সম্পূর্ণভাবে মসজিদের আদব-শিষ্টাচার পরিপন্থী।

বিশেষত, কোনো কোনো সাহায্যপ্রার্থী যে ভাষায় ও পদ্ধতিতে সাহায্যের আবেদন করে, তাতে আরও নানান আপত্তিকর বিষয়াদি থাকে। সুতরাং মসজিদে এমনটি করা থেকে অবশ্যই বিরত থাকা উচিত।

এক্ষেত্রে ইমাম ও মসজিদ কর্তৃপক্ষের করণীয় হচ্ছে, যারা এভাবে মসজিদের ভেতর দাঁড়িয়ে সাহায্য চায়, তা থেকে তাদের বারণ করা। সম্ভব হলে মসজিদের ইমামরা জুমাসহ বিভিন্ন বয়ানে এ বিষয়গুলো আলোচনা করতে পারেন। যাতে এ ধরনের লোকদের কাছে এ বার্তাগুলো পৌঁছে যায়। ব্যক্তিগতভাবেও এমন লোকদের বিষয়গুলো বুঝিয়ে বলা উচিত। কোনো নামাজের পর কাউকে এভাবে সাহায্যের জন্য দাঁড়াতে দেখলে মসজিদের দায়িত্বশীলরা শান্ত ও নরম ভাষায় বুঝিয়ে তাকে বসিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করবে। তবে যদি মনে হয়, বারণ করলেও সে মানবে না বা আরও বিশৃঙ্খলা দেখা দেবে, তাহলে তৎক্ষণাৎ কিছু না বলে নামাজের পর বিষয়টি তাকে বুঝিয়ে বলবে। এবং সামনে থেকে মসজিদে এমনটি করতে নিষেধ করবে।

তাছাড়া রাষ্ট্র ও সমাজের দায়িত্বশীল ও বিত্তবান লোকদের দায়িত্ব হচ্ছে, গরিব ও অসহায় লোকদের নিজ থেকে সহযোগিতা করা। তাদের প্রয়োজনগুলো পূর্ণ করা। সমাজের কর্মহীন ব্যক্তিদের কর্মসংস্থান ও বৃদ্ধ, অসুস্থ, প্রতিবন্ধী লোকদের ভরণ-পোষণের ভার বহন করা। যেন বাস্তব ওজরেও কেউ হাত পাততে বাধ্য না হয়। অনুরূপ রাষ্ট্র ভিক্ষুকদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করবে। রাষ্ট্র ও সমাজের বিত্তবানরা এ বিষয়ে মনোযোগী হলে ব্যাপকহারে বৃদ্ধি পাওয়া ভিক্ষাবৃত্তি কমে আসবে, ইনশাআল্লাহ।

সূত্র : সহিহ বুখারি, হাদিস: ১৪৭৪; আত তামহিদ ২৩/৩১৯; মিরকাতুল মাফাতিহ ৪/১৩০৯, বাজলুল মাজহুদ ৬/৫৩১; আল মাদখাল, ইবনুল হাজ ১/১০৬; আল বিনায়া ৩/৯৪; শরহুল মুনইয়াহ ৬১২

ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ

চাঁদপুর সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়কের পিতার মৃত্যুতে দোয়া

মসজিদে দাঁড়িয়ে উচ্চস্বরে সাহায্যের আবেদন, ইসলাম কি বলে

আপডেট সময় : ১২:৫৮:৫৭ অপরাহ্ণ, বৃহস্পতিবার, ২৩ জানুয়ারি ২০২৫

একান্ত অপারগ অবস্থা ছাড়া অন্যের কাছে হাত পাতা ইসলামের দৃষ্টিতে নাজায়েজ। আর একে অভ্যাস ও পেশা বানিয়ে নেওয়া মারাত্মক অন্যায় ও নিন্দনীয়। ভিক্ষাবৃত্তি ইসলামে ‘নিকৃষ্টতম বৈধ’ কাজ। হাদিস শরিফে এ ব্যাপারে কঠিন ধমকি এসেছে। কোনো ভিক্ষুকের ব্যাপারে যদি ধারণা হয়, সে মাজবুর-অপারগ নয়; বরং ভিক্ষাবৃত্তি তার পেশা, তাহলে তাকে ভিক্ষা দেওয়া থেকে বিরত থাকা উচিত।

আর মসজিদের ভেতর দাঁড়িয়ে এভাবে ভিক্ষা চাওয়া অবশ্যই সঠিক কাজ নয়। এ থেকে বিরত থাকা উচিত। হাদিস শরিফে এসেছে, ‘একজন ব্যক্তি তার হারানো জন্ত পওয়ার জন্য মসজিদে ঘোষণা করছিল। রাসুলুল্লাহ (সা.) তা শুনে বলেন, ‘তুমি যেন তা না পাও। মসজিদ এ কাজের জন্য বানানো হয়নি। মসজিদ কেবল সে কাজেরই জন্য, যার জন্য (তথা নামায, ইবাদত-বন্দেগির) তা বানানো হয়েছে।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৫৬৯)

হাদিস এর ব্যাখ্যায় ইমাম খাত্তাবি (রহ.) বলেন, ‘অর্থাৎ এই নিষেধাজ্ঞার মধ্যে এমন সব কাজ অন্তর্ভুক্ত, যার জন্য মসজিদ বানানো হয়নি। যেমন ক্রয়-বিক্রয়, পারস্পরিক লেনদেন ও নিজেদের হক ও অধিকার আদায় সংক্রান্ত বিষয়াদি। পূর্ববর্তী আলেমদের অনেকেই মসজিদে সাহায্য চাওয়া অপছন্দ করতেন। এবং তাদের কেউ কেউ মসজিদে সাহায্যপ্রার্থী লোকদের দান করাও পছন্দ করতেন না।’ (মাআলিমুস সুনান ১/১৪৩)

আল্লামা আইনি (রহ.)সহ অনেক মুহাদ্দিস হাদিসটির ব্যাখ্যায় এসব কথা বলেছেন। (শরহু সুনানে আবি দাউদ, আইনি ২/৮৭)

তাছাড়া ফরজ নামাজের সালামের পর এভাবে সাহায্য চাওয়াতে মাসবুক (যারা জামাতে পরে এসেছেন) ও তাৎক্ষণিক সুন্নতে দাঁড়িয়ে যাওয়া ব্যক্তিদের নামাজে বিঘ্ন সৃষ্টির আশঙ্কা থাকে। মুসল্লিদের দোয়া ও জিকির- আজকারের মধ্যেও বিঘ্ন সৃষ্টির আশঙ্কা থাকে। মসজিদে আওয়াজ-শোরগোল ও কখনো বিশৃঙ্খল পরিবেশ তৈরি হয়—যা সম্পূর্ণভাবে মসজিদের আদব-শিষ্টাচার পরিপন্থী।

বিশেষত, কোনো কোনো সাহায্যপ্রার্থী যে ভাষায় ও পদ্ধতিতে সাহায্যের আবেদন করে, তাতে আরও নানান আপত্তিকর বিষয়াদি থাকে। সুতরাং মসজিদে এমনটি করা থেকে অবশ্যই বিরত থাকা উচিত।

এক্ষেত্রে ইমাম ও মসজিদ কর্তৃপক্ষের করণীয় হচ্ছে, যারা এভাবে মসজিদের ভেতর দাঁড়িয়ে সাহায্য চায়, তা থেকে তাদের বারণ করা। সম্ভব হলে মসজিদের ইমামরা জুমাসহ বিভিন্ন বয়ানে এ বিষয়গুলো আলোচনা করতে পারেন। যাতে এ ধরনের লোকদের কাছে এ বার্তাগুলো পৌঁছে যায়। ব্যক্তিগতভাবেও এমন লোকদের বিষয়গুলো বুঝিয়ে বলা উচিত। কোনো নামাজের পর কাউকে এভাবে সাহায্যের জন্য দাঁড়াতে দেখলে মসজিদের দায়িত্বশীলরা শান্ত ও নরম ভাষায় বুঝিয়ে তাকে বসিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করবে। তবে যদি মনে হয়, বারণ করলেও সে মানবে না বা আরও বিশৃঙ্খলা দেখা দেবে, তাহলে তৎক্ষণাৎ কিছু না বলে নামাজের পর বিষয়টি তাকে বুঝিয়ে বলবে। এবং সামনে থেকে মসজিদে এমনটি করতে নিষেধ করবে।

তাছাড়া রাষ্ট্র ও সমাজের দায়িত্বশীল ও বিত্তবান লোকদের দায়িত্ব হচ্ছে, গরিব ও অসহায় লোকদের নিজ থেকে সহযোগিতা করা। তাদের প্রয়োজনগুলো পূর্ণ করা। সমাজের কর্মহীন ব্যক্তিদের কর্মসংস্থান ও বৃদ্ধ, অসুস্থ, প্রতিবন্ধী লোকদের ভরণ-পোষণের ভার বহন করা। যেন বাস্তব ওজরেও কেউ হাত পাততে বাধ্য না হয়। অনুরূপ রাষ্ট্র ভিক্ষুকদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করবে। রাষ্ট্র ও সমাজের বিত্তবানরা এ বিষয়ে মনোযোগী হলে ব্যাপকহারে বৃদ্ধি পাওয়া ভিক্ষাবৃত্তি কমে আসবে, ইনশাআল্লাহ।

সূত্র : সহিহ বুখারি, হাদিস: ১৪৭৪; আত তামহিদ ২৩/৩১৯; মিরকাতুল মাফাতিহ ৪/১৩০৯, বাজলুল মাজহুদ ৬/৫৩১; আল মাদখাল, ইবনুল হাজ ১/১০৬; আল বিনায়া ৩/৯৪; শরহুল মুনইয়াহ ৬১২