শিরোনাম :
Logo বেরোবিতে বহিরাগত প্রবেশ নিষিদ্ধ Logo দেশব্যাপী হত্যাকাণ্ড এবং চলমান চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে চুয়াডাঙ্গায় তীব্র প্রতিবাদ Logo উত্তর কচুয়া জাতীয়তাবাদী প্রবাসী কল্যাণ সংগঠনের উদ্যোগে মহিলা দলের বিশাল গনমিছিল Logo কচুয়ায় বিএনপির উদ্যোগে লিফলেট বিতরন ও মিছিল Logo চাঁদপুরে খতিবের উপর হামলার প্রতিবাদে শহর জামায়াতের বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ Logo ইসলামী শ্রমিক আন্দোলন চাঁদপুর জেলা শাখার উদ্যোগে দায়িত্বশীল তারবিয়াত অনুষ্ঠিত Logo চাঁদপুর জেলা বিজেপি’র জেলা কমিটি গঠনকল্পে সমন্বয় সভা আন্দালিভ রহমান পার্থ বাংলাদেশে সুস্থধারার রাজনীতির দিকপাল ………উপাধ্যক্ষ নুরুজ্জামান হীরা Logo আমরা সংস্কার চেয়েছি,জুলাই গণহত্যার বিচার চেয়েছি এবং নতুন সংবিধান চেয়েছি: নাহিদ ইসলাম Logo মিটফোর্ডে হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে হাবিপ্রবিতে বিক্ষোভ Logo ইবিতে শাখা ছাত্রদলের সক্রিয় কর্মীর পদত্যাগ

অপরিচিতদের সালাম না দেওয়া কেয়ামতের আলামত

  • নীলকন্ঠ ডেস্ক: নীলকন্ঠ ডেস্ক:
  • আপডেট সময় : ১১:৪৬:২২ পূর্বাহ্ণ, সোমবার, ২০ জানুয়ারি ২০২৫
  • ৭৪০ বার পড়া হয়েছে

সালাম শান্তির প্রতীক। মুমিনের পাপমোচন ও সওয়াব লাভের মাধ্যম। মিরাজের রজনীতে মহান আল্লাহ রাসুল (সা.)-কে যেসব বস্তু বা বিষয় উপহার দিয়েছেন, এর মধ্যে সালাম অন্যতম। তিনি বলেছেন, ‘আসসালামু আলাইকা আইয়্যুহান্নাবিয়্যু ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু’।

সালামের মাধ্যমে শান্তির বার্তা দিয়ে অপর ভাইকে অভিবাদন জানানো জান্নাতিদের কাজ। ইসলাম ধর্মে এর গুরুত্ব অপরিসীম। প্রিয় নবী (সা.) এই কাজটিকে ইসলামের শ্রেষ্ঠ কাজ বলে আখ্যায়িত করেছেন। মুমিনরা জান্নাতে যাওয়ার সময় ফেরেশতারা তাদের সালামের মাধ্যমে অভিবাদন জানাবে। বলবে, ‘তোমাদের প্রতি ‘সালাম’, তোমরা সুখী হও।’ (সুরা : জুমার : ৭৩) এরপর জান্নাতেও সালামের প্রচলন থাকবে। ‘সেখানে তাদের অভিবাদন হবে ‘সালাম’।” (সুরা : ইউনুস : ১০) এরপর জান্নাতে স্বয়ং রাব্বুল আলামিন জান্নাতিদের সালাম দেবেন। ‘সালাম, পরম দয়ালু প্রতিপালকের পক্ষ থেকে সম্ভাষণ।’ (সুরা : ইয়াসিন, আয়াত : ৫৮)

সালাম এক মুসলমানের সঙ্গে অপর মুসলমানের সদ্ব্যবহারের অন্যতম মাধ্যম। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, এক মুসলমানের সঙ্গে অপর মুসলমানের ছয়টি সদ্ব্যবহারের বিষয় রয়েছে : তার মধ্যে অন্যতম হলো, কারো সঙ্গে দেখা হলে তাকে সালাম করবে। (তিরমিজি, হাদিস : ২৭৩৬)

আমাদের সমাজে সালামের প্রচলন থাকলেও আমরা অনেক সময় অপরিচিত ব্যক্তিদের সালাম দিই না। কিংবা পরিচিতদের মধ্যে নির্দিষ্ট কিছু লোকের বাইরে অন্যদের সালাম দিই না। অথচ সালামের বিধান এমনটা নয়। শুধুমাত্র কিছু বিশেষ লোককে নির্দিষ্ট করে সালাম দেওয়া বাকিদের না দেওয়া কিয়ামতের আলামত। হাদিস শরীফে ইরশাদ হয়েছে, তারিক ইবনে শিহাব (রহ.) বলেন, আমরা আবদুল্লাহ (রা.)-এর কাছে বসা ছিলাম। এমতাবস্থায় তার সংবাদ বাহক এসে বললো যে, নামাজের জামাত শুরু হয়ে গেছে। অতএব তিনিও উঠলেন এবং আমরাও তার সাথে উঠে মসজিদে প্রবেশ করলাম। তিনি লোকদেরকে মসজিদে সম্মুখভাগে রুকু অবস্থায় দেখলেন। তিনি তাকবির (তাহরিমা) বলে রুকু করলেন। আমরাও সামনে অগ্রসর হয়ে তার অনুরূপ করলাম। এক ব্যক্তি দ্রুতবেগে যেতে যেতে বললো, হে আবদুর রহমানের পিতা! আসসালামু আলাইকুম। তিনি বলেন, আল্লাহ তাআলা সত্য বলেছেন এবং তার রাসুল (সা.) পূর্ণরূপে পৌছে দিয়েছেন। আমরা নামাজ শেষ করলে তিনি ফিরে গিয়ে তার অন্দরমহলে চলে গেলেন এবং আমরা তার (ফিরে আসার) অপেক্ষায় স্বস্থানে বসে থাকলাম। শেষে তিনি বের হয়ে এলেন। আমাদের কতক কতককে বললো, তোমাদের কে তাঁকে জিজ্ঞেস করবে? তারিক (রহ.) বলেন, আমি তাঁকে জিজ্ঞেস করবো। অতএব তিনি জিজ্ঞেস করলে আবদুল্লাহ (রা.) বলেন, মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘কিয়ামতের নিকটবর্তী কালে লোক বিশেষকে নির্দিষ্ট করে সালাম দেওয়ার প্রচলন হবে এবং ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটবে, ফলে স্বামীর ব্যবসায়ে স্ত্রীও সহযোগিতা করবে। রক্ত সম্পর্কীয় আত্মীয়তা ছিন্ন করা হবে। জ্ঞান-বিজ্ঞানের প্রসার ঘটবে, মিথ্যা সাক্ষ্যদানের প্রচলন হবে এবং সত্য সাক্ষ্য গোপন করা হবে।’ (আদাবুল মুফরাদ, হাদিস : ১০৫৯)

অথচ নবীজি (সা.) তাঁর উম্মতদের পরিচিত অপরিচিত সবাইকে সালাম দিতে উদ্বুদ্ধ করেছেন। হাদিস শরীফে ইরশাদ হয়েছে, আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) থেকে বর্ণিত, এক ব্যক্তি রাসুল (সা.)-কে প্রশ্ন করল যে, কোন ইসলাম উত্তম? রাসুল (সা.) বলেন, তুমি লোকদের পানাহার করাবে এবং পরিচিত এবং অপরিচিত সবাইকে সালাম করবে।  (মুসলিম, হাদিস : ৬৫)

এমনকি কারো সঙ্গে দেখা হলে তার সালাম পাওয়ার অপেক্ষা না করে আগে সালাম দেওয়ার মধ্যে বিশেষ ফজিলত রয়েছে।

হজরত আবু উমামাহ (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, মানুষের মধ্যে আল্লাহর কাছে সর্বাধিক উত্তম ওই ব্যক্তি, যে আগে সালাম দেয়। (আবু দাউদ, হাদিস : ৫১৯৭)

অর্থাত্ যে আগে সালাম দেবে সে আল্লাহর কাছে বেশি প্রিয় হবে। সে হিসেবে আমাদের সবারই উচিত কারো সঙ্গে দেখা হলে আগে সালাম দেওয়ার চেষ্টা করা। তদুপরি আমাদের মনে প্রশ্ন জাগতে পারে যে কার আগে সালাম দেওয়া উচিত। সে ব্যাপারে দিকনির্দেশনা দিয়ে গেছেন প্রিয় নবী (সা.)। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, বয়ঃকনিষ্ঠ বয়োজ্যেষ্ঠকে, পদচারী উপবিষ্টকে এবং অল্পসংখ্যক অধিকসংখ্যককে সালাম দেবে। (বুখারি, হাদিস : ৬২৩১)

উপরোক্ত হাদিসে প্রিয় নবী (সা.) তিন শ্রেণির মানুষের সালামের আদব শিক্ষা দিয়েছেন। বয়ঃকনিষ্ঠরা বয়োজ্যেষ্ঠদের, অর্থাত্ ছোটরা বড়দের। হাদিসের ভাষ্য অনুযায়ী বোঝা যায়, বয়সে ছোটদের উচিত বয়সে বড়দের আগে সালাম দেওয়া। কিন্তু বড়রাও চাইলে ছোটদের আগে সালাম করতে পারেন। কেননা সালাম আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের মাধ্যম। সুতরাং যে আগে সালাম দেবে, সে-ই আল্লাহর বেশি নিকটবর্তী হবে।

ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ

বেরোবিতে বহিরাগত প্রবেশ নিষিদ্ধ

অপরিচিতদের সালাম না দেওয়া কেয়ামতের আলামত

আপডেট সময় : ১১:৪৬:২২ পূর্বাহ্ণ, সোমবার, ২০ জানুয়ারি ২০২৫

সালাম শান্তির প্রতীক। মুমিনের পাপমোচন ও সওয়াব লাভের মাধ্যম। মিরাজের রজনীতে মহান আল্লাহ রাসুল (সা.)-কে যেসব বস্তু বা বিষয় উপহার দিয়েছেন, এর মধ্যে সালাম অন্যতম। তিনি বলেছেন, ‘আসসালামু আলাইকা আইয়্যুহান্নাবিয়্যু ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু’।

সালামের মাধ্যমে শান্তির বার্তা দিয়ে অপর ভাইকে অভিবাদন জানানো জান্নাতিদের কাজ। ইসলাম ধর্মে এর গুরুত্ব অপরিসীম। প্রিয় নবী (সা.) এই কাজটিকে ইসলামের শ্রেষ্ঠ কাজ বলে আখ্যায়িত করেছেন। মুমিনরা জান্নাতে যাওয়ার সময় ফেরেশতারা তাদের সালামের মাধ্যমে অভিবাদন জানাবে। বলবে, ‘তোমাদের প্রতি ‘সালাম’, তোমরা সুখী হও।’ (সুরা : জুমার : ৭৩) এরপর জান্নাতেও সালামের প্রচলন থাকবে। ‘সেখানে তাদের অভিবাদন হবে ‘সালাম’।” (সুরা : ইউনুস : ১০) এরপর জান্নাতে স্বয়ং রাব্বুল আলামিন জান্নাতিদের সালাম দেবেন। ‘সালাম, পরম দয়ালু প্রতিপালকের পক্ষ থেকে সম্ভাষণ।’ (সুরা : ইয়াসিন, আয়াত : ৫৮)

সালাম এক মুসলমানের সঙ্গে অপর মুসলমানের সদ্ব্যবহারের অন্যতম মাধ্যম। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, এক মুসলমানের সঙ্গে অপর মুসলমানের ছয়টি সদ্ব্যবহারের বিষয় রয়েছে : তার মধ্যে অন্যতম হলো, কারো সঙ্গে দেখা হলে তাকে সালাম করবে। (তিরমিজি, হাদিস : ২৭৩৬)

আমাদের সমাজে সালামের প্রচলন থাকলেও আমরা অনেক সময় অপরিচিত ব্যক্তিদের সালাম দিই না। কিংবা পরিচিতদের মধ্যে নির্দিষ্ট কিছু লোকের বাইরে অন্যদের সালাম দিই না। অথচ সালামের বিধান এমনটা নয়। শুধুমাত্র কিছু বিশেষ লোককে নির্দিষ্ট করে সালাম দেওয়া বাকিদের না দেওয়া কিয়ামতের আলামত। হাদিস শরীফে ইরশাদ হয়েছে, তারিক ইবনে শিহাব (রহ.) বলেন, আমরা আবদুল্লাহ (রা.)-এর কাছে বসা ছিলাম। এমতাবস্থায় তার সংবাদ বাহক এসে বললো যে, নামাজের জামাত শুরু হয়ে গেছে। অতএব তিনিও উঠলেন এবং আমরাও তার সাথে উঠে মসজিদে প্রবেশ করলাম। তিনি লোকদেরকে মসজিদে সম্মুখভাগে রুকু অবস্থায় দেখলেন। তিনি তাকবির (তাহরিমা) বলে রুকু করলেন। আমরাও সামনে অগ্রসর হয়ে তার অনুরূপ করলাম। এক ব্যক্তি দ্রুতবেগে যেতে যেতে বললো, হে আবদুর রহমানের পিতা! আসসালামু আলাইকুম। তিনি বলেন, আল্লাহ তাআলা সত্য বলেছেন এবং তার রাসুল (সা.) পূর্ণরূপে পৌছে দিয়েছেন। আমরা নামাজ শেষ করলে তিনি ফিরে গিয়ে তার অন্দরমহলে চলে গেলেন এবং আমরা তার (ফিরে আসার) অপেক্ষায় স্বস্থানে বসে থাকলাম। শেষে তিনি বের হয়ে এলেন। আমাদের কতক কতককে বললো, তোমাদের কে তাঁকে জিজ্ঞেস করবে? তারিক (রহ.) বলেন, আমি তাঁকে জিজ্ঞেস করবো। অতএব তিনি জিজ্ঞেস করলে আবদুল্লাহ (রা.) বলেন, মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘কিয়ামতের নিকটবর্তী কালে লোক বিশেষকে নির্দিষ্ট করে সালাম দেওয়ার প্রচলন হবে এবং ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটবে, ফলে স্বামীর ব্যবসায়ে স্ত্রীও সহযোগিতা করবে। রক্ত সম্পর্কীয় আত্মীয়তা ছিন্ন করা হবে। জ্ঞান-বিজ্ঞানের প্রসার ঘটবে, মিথ্যা সাক্ষ্যদানের প্রচলন হবে এবং সত্য সাক্ষ্য গোপন করা হবে।’ (আদাবুল মুফরাদ, হাদিস : ১০৫৯)

অথচ নবীজি (সা.) তাঁর উম্মতদের পরিচিত অপরিচিত সবাইকে সালাম দিতে উদ্বুদ্ধ করেছেন। হাদিস শরীফে ইরশাদ হয়েছে, আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) থেকে বর্ণিত, এক ব্যক্তি রাসুল (সা.)-কে প্রশ্ন করল যে, কোন ইসলাম উত্তম? রাসুল (সা.) বলেন, তুমি লোকদের পানাহার করাবে এবং পরিচিত এবং অপরিচিত সবাইকে সালাম করবে।  (মুসলিম, হাদিস : ৬৫)

এমনকি কারো সঙ্গে দেখা হলে তার সালাম পাওয়ার অপেক্ষা না করে আগে সালাম দেওয়ার মধ্যে বিশেষ ফজিলত রয়েছে।

হজরত আবু উমামাহ (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, মানুষের মধ্যে আল্লাহর কাছে সর্বাধিক উত্তম ওই ব্যক্তি, যে আগে সালাম দেয়। (আবু দাউদ, হাদিস : ৫১৯৭)

অর্থাত্ যে আগে সালাম দেবে সে আল্লাহর কাছে বেশি প্রিয় হবে। সে হিসেবে আমাদের সবারই উচিত কারো সঙ্গে দেখা হলে আগে সালাম দেওয়ার চেষ্টা করা। তদুপরি আমাদের মনে প্রশ্ন জাগতে পারে যে কার আগে সালাম দেওয়া উচিত। সে ব্যাপারে দিকনির্দেশনা দিয়ে গেছেন প্রিয় নবী (সা.)। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, বয়ঃকনিষ্ঠ বয়োজ্যেষ্ঠকে, পদচারী উপবিষ্টকে এবং অল্পসংখ্যক অধিকসংখ্যককে সালাম দেবে। (বুখারি, হাদিস : ৬২৩১)

উপরোক্ত হাদিসে প্রিয় নবী (সা.) তিন শ্রেণির মানুষের সালামের আদব শিক্ষা দিয়েছেন। বয়ঃকনিষ্ঠরা বয়োজ্যেষ্ঠদের, অর্থাত্ ছোটরা বড়দের। হাদিসের ভাষ্য অনুযায়ী বোঝা যায়, বয়সে ছোটদের উচিত বয়সে বড়দের আগে সালাম দেওয়া। কিন্তু বড়রাও চাইলে ছোটদের আগে সালাম করতে পারেন। কেননা সালাম আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের মাধ্যম। সুতরাং যে আগে সালাম দেবে, সে-ই আল্লাহর বেশি নিকটবর্তী হবে।