শুক্রবার | ১২ ডিসেম্বর ২০২৫ | হেমন্তকাল
শিরোনাম :
Logo চাঁদপুর সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়কের পিতার মৃত্যুতে দোয়া Logo জাতীয় ছাত্রশক্তি জাবি শাখার নতুন কমিটি ঘোষণা Logo জাবিতে ইলিয়াস ও পিনাকীর কুশপুত্তলিকা দাহন Logo পদত্যাগ করলেন উপদেষ্টা মাহফুজ আলম ও আসিফ মাহমুদ Logo সাতক্ষীরা-কলারোয়া সীমান্তে বিজিবির বিশেষ অভিযানে ভারতীয় মদ ও ঔষধসহ আড়াই লক্ষাধিক টাকার চোরাচালানী মালামাল জব্দ Logo কয়রায় আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস পালন উপলক্ষে র‍্যালি ও আলোচনা সভা Logo চাঁদপুর ভূঁইয়ার ঘাট ডিঙ্গি মাঝি সমবায় সমিতির ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠন Logo টেকনাফে বিজিবির অভিযানে সাগর পথে মানব পাচারকালে দুই দালালসহ ৭ জন ভিকটিম উদ্ধার Logo দেশকে এগিয়ে নেয়ার ‘ডিটেইল প্ল্যানিং’ শুধু বিএনপির আছে: তারেক রহমান Logo রাশিয়াকে ভূখণ্ড ছেড়ে দেওয়ার কোনো অধিকার নেই কিয়েভের : জেলেনস্কি

যুগ জিজ্ঞাসার জবাবে ইসলামে ব্যঙ্গাত্মক ভিডিও বানানো

  • নীলকন্ঠ ডেস্ক: নীলকন্ঠ ডেস্ক:
  • আপডেট সময় : ১২:৫০:২৭ অপরাহ্ণ, বুধবার, ৪ ডিসেম্বর ২০২৪
  • ৭৫০ বার পড়া হয়েছে

ইদানিং মানুষের মধ্যে একটা এমন ধারনা জন্মেছে যে শর্টকার্টে মোটা অংকের অর্থ উপার্জনের একটা সহজ মাধ্যম হলো, ভিডিও কন্টেন্ট তৈরি। তাই কিছু কিছু এই অঙ্গনে জনপ্রিয় হওয়ার জন্য হুমড়ি খেয়ে পড়েছে। এই অঙ্গনে প্রচুর অর্থ উপার্জন করতে হলে খ্যাতি লাগবে, সেটা কুখ্যাতি হোক আর সুখ্যাতি। একবার কিছু একটা করে মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করা গেলে, একবার পরিচিতি পেয়ে গেলে পরে পেছনে ফিরে তাকাতে হবে না। এরপর বিভিন্ন কৃত্রিম ঘটনা, দুর্ঘটনা ঘটিয়ে ভিডিও ফ্ল্যাটফর্মগুলোতে নিজের ভিডিও ব্যাপক হারে প্রচার করা যাবে। আর অ্যাকাউন্টে ঢুকতে থাকবে অজস্র ডলার।

এই আকাশকুসুম কল্পনা ও আকাঙ্খা থেকেই বহু মানুষ নীতি-নৈতিকতা এমনকি ধর্মীয় অনুশাসনের বাইরে গিয়েই ভিডিও তৈরিতে হুমড়ি খেয়ে পড়েছে। প্রতিযোগিতায় এগিয়ে থাকতে অনেকে বেছে নিয়ে ব্যঙ্গাত্মক ভিডিও তৈরির পথ। যেখানে তারা বিভিন্ন পরিচিত ব্যক্তিদের বক্তব্য, অঙ্গ-ভঙ্গি ইত্যাদিকে ব্যঙ্গ করে মানুষকে আনন্দ দেওয়ার চেষ্টা করে। অথচ পবিত্র কোরআনে এ ধরনের অনর্থক কাজ থেকে বিরত থাকার আদেশ করা হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘মানুষের মধ্যে কেউ কেউ অজ্ঞতাবশত আল্লাহর পথ থেকে বিচ্যুত করার জন্য অসার বাক্য ক্রয় করে এবং আল্লাহর প্রদর্শিত পথ নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রুপ করে, তাদের জন্য আছে অবমাননাকর শাস্তি।’ (সুরা : লুকমান, আয়াত : ৬)

অনেকে আবার না বুঝে দুষ্টুমির ছলে বিভিন্ন ওয়াজ-মাহফিল কিংবা কোরআন-হাদিসের কথাকেও বিদ্রুপ করে বসে। যা জঘন্য পাপ। নবীজি (সা.)-এর যুগে এ ধরনের কাজ কাফের, মুশরিক বা মুনাফিকরা করত।

যেমন মদিনায় বসবাসকারী ইহুদিদের একটি দল ছিল অতিশয় দুষ্ট। তারা যখন নবী (সা.)-এর সঙ্গে সাক্ষাত্ করত, তখন তাকে লক্ষ্য করে বলত ‘রাইনা’। আরবিতে এর অর্থ ‘আমাদের প্রতি লক্ষ্য রাখুন’। এ হিসেবে শব্দটিতে কোনো দোষ নেই এবং এর মধ্যে বেআদবীরও কিছু নেই। কিন্তু ইহুদিদের ধর্মীয় ভাষা হিব্রুতে এরই কাছাকাছি একটি শব্দ অভিশাপ ও গালি অর্থে ব্যবহূত হতো। তাছাড়া এ শব্দটিকেই যদি আরবি অক্ষর ‘আইন’ এর দীর্ঘ উচ্চারণে পড়া হয়, তবে ‘রাঈনা’ হয়ে যায়, যার অর্থ ‘আমাদের রাখাল’। মোটকথা ইহুদিদের আসল উদ্দেশ্য ছিল শব্দটিকে মন্দ অর্থে ব্যবহার করা। কিন্তু আরবিতে যেহেতু বাহ্যিকভাবে শব্দটিতে কোনো দোষ ছিল না, তাই কতিপয় সরলপ্রাণ মুসলিমও শব্দটি ব্যবহার করতে শুরু করে দেয়। এতে ইহুদিরা বড় খুশী হত এবং ভেতরে ভেতরে মুসলিমদের নিয়ে মজা করত। যার প্রতিবাদে মহান আল্লাহ আয়াত নাজিল করেন, —‘হে ঈমানদারা! (রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে লক্ষ্য করে) ‘রা‘ইনা’ বলো না; বরং ‘উনজুরনা’ বলো এবং শ্রবণ করো। আর কাফিরদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাময় শাস্তি। (সুরা বাকারা, আয়াত : ১০৪)

অনেকে আবার ইসলামিক কোনো বিষয় নিয়ে বিদ্রুপ না করলেও অন্য মানুষদের নিয়ে বিদ্রুপ করে, নবীজি (সা.) এই কাজটিরও কঠোর বিরোধীতা করেছেন। আয়েশা (রা.) বলেন, কোনো এক সময় মহানবী (সা.)-কে আমি জনৈক ব্যক্তির চালচলন নকল করে দেখালাম। তিনি বলেন, আমাকে এই পরিমাণ সম্পদ প্রদান করা হলেও কারো চালচলন নকল করা আমাকে আনন্দ দেয় না। আয়েশা (রা.) বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল (সা.)! সাফিয়্যা তো বামন নারী লোক, এই বলে তিনি তা হাতের ইশারায় দেখালেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, তুমি এমন একটি কথার দ্বারা বিদ্রুপ করেছ, তা সাগরের পানির সঙ্গে মেশালেও ওই পানিকে দূষিত করে ফেলত। (তিরমিজি, হাদিস : ২৫০২)

তাই প্রত্যেকের উচিত, এ ধরনের নিকৃষ্ট কাজ থেকে বিরত থাকা।

ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ

চাঁদপুর সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়কের পিতার মৃত্যুতে দোয়া

যুগ জিজ্ঞাসার জবাবে ইসলামে ব্যঙ্গাত্মক ভিডিও বানানো

আপডেট সময় : ১২:৫০:২৭ অপরাহ্ণ, বুধবার, ৪ ডিসেম্বর ২০২৪

ইদানিং মানুষের মধ্যে একটা এমন ধারনা জন্মেছে যে শর্টকার্টে মোটা অংকের অর্থ উপার্জনের একটা সহজ মাধ্যম হলো, ভিডিও কন্টেন্ট তৈরি। তাই কিছু কিছু এই অঙ্গনে জনপ্রিয় হওয়ার জন্য হুমড়ি খেয়ে পড়েছে। এই অঙ্গনে প্রচুর অর্থ উপার্জন করতে হলে খ্যাতি লাগবে, সেটা কুখ্যাতি হোক আর সুখ্যাতি। একবার কিছু একটা করে মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করা গেলে, একবার পরিচিতি পেয়ে গেলে পরে পেছনে ফিরে তাকাতে হবে না। এরপর বিভিন্ন কৃত্রিম ঘটনা, দুর্ঘটনা ঘটিয়ে ভিডিও ফ্ল্যাটফর্মগুলোতে নিজের ভিডিও ব্যাপক হারে প্রচার করা যাবে। আর অ্যাকাউন্টে ঢুকতে থাকবে অজস্র ডলার।

এই আকাশকুসুম কল্পনা ও আকাঙ্খা থেকেই বহু মানুষ নীতি-নৈতিকতা এমনকি ধর্মীয় অনুশাসনের বাইরে গিয়েই ভিডিও তৈরিতে হুমড়ি খেয়ে পড়েছে। প্রতিযোগিতায় এগিয়ে থাকতে অনেকে বেছে নিয়ে ব্যঙ্গাত্মক ভিডিও তৈরির পথ। যেখানে তারা বিভিন্ন পরিচিত ব্যক্তিদের বক্তব্য, অঙ্গ-ভঙ্গি ইত্যাদিকে ব্যঙ্গ করে মানুষকে আনন্দ দেওয়ার চেষ্টা করে। অথচ পবিত্র কোরআনে এ ধরনের অনর্থক কাজ থেকে বিরত থাকার আদেশ করা হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘মানুষের মধ্যে কেউ কেউ অজ্ঞতাবশত আল্লাহর পথ থেকে বিচ্যুত করার জন্য অসার বাক্য ক্রয় করে এবং আল্লাহর প্রদর্শিত পথ নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রুপ করে, তাদের জন্য আছে অবমাননাকর শাস্তি।’ (সুরা : লুকমান, আয়াত : ৬)

অনেকে আবার না বুঝে দুষ্টুমির ছলে বিভিন্ন ওয়াজ-মাহফিল কিংবা কোরআন-হাদিসের কথাকেও বিদ্রুপ করে বসে। যা জঘন্য পাপ। নবীজি (সা.)-এর যুগে এ ধরনের কাজ কাফের, মুশরিক বা মুনাফিকরা করত।

যেমন মদিনায় বসবাসকারী ইহুদিদের একটি দল ছিল অতিশয় দুষ্ট। তারা যখন নবী (সা.)-এর সঙ্গে সাক্ষাত্ করত, তখন তাকে লক্ষ্য করে বলত ‘রাইনা’। আরবিতে এর অর্থ ‘আমাদের প্রতি লক্ষ্য রাখুন’। এ হিসেবে শব্দটিতে কোনো দোষ নেই এবং এর মধ্যে বেআদবীরও কিছু নেই। কিন্তু ইহুদিদের ধর্মীয় ভাষা হিব্রুতে এরই কাছাকাছি একটি শব্দ অভিশাপ ও গালি অর্থে ব্যবহূত হতো। তাছাড়া এ শব্দটিকেই যদি আরবি অক্ষর ‘আইন’ এর দীর্ঘ উচ্চারণে পড়া হয়, তবে ‘রাঈনা’ হয়ে যায়, যার অর্থ ‘আমাদের রাখাল’। মোটকথা ইহুদিদের আসল উদ্দেশ্য ছিল শব্দটিকে মন্দ অর্থে ব্যবহার করা। কিন্তু আরবিতে যেহেতু বাহ্যিকভাবে শব্দটিতে কোনো দোষ ছিল না, তাই কতিপয় সরলপ্রাণ মুসলিমও শব্দটি ব্যবহার করতে শুরু করে দেয়। এতে ইহুদিরা বড় খুশী হত এবং ভেতরে ভেতরে মুসলিমদের নিয়ে মজা করত। যার প্রতিবাদে মহান আল্লাহ আয়াত নাজিল করেন, —‘হে ঈমানদারা! (রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে লক্ষ্য করে) ‘রা‘ইনা’ বলো না; বরং ‘উনজুরনা’ বলো এবং শ্রবণ করো। আর কাফিরদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাময় শাস্তি। (সুরা বাকারা, আয়াত : ১০৪)

অনেকে আবার ইসলামিক কোনো বিষয় নিয়ে বিদ্রুপ না করলেও অন্য মানুষদের নিয়ে বিদ্রুপ করে, নবীজি (সা.) এই কাজটিরও কঠোর বিরোধীতা করেছেন। আয়েশা (রা.) বলেন, কোনো এক সময় মহানবী (সা.)-কে আমি জনৈক ব্যক্তির চালচলন নকল করে দেখালাম। তিনি বলেন, আমাকে এই পরিমাণ সম্পদ প্রদান করা হলেও কারো চালচলন নকল করা আমাকে আনন্দ দেয় না। আয়েশা (রা.) বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল (সা.)! সাফিয়্যা তো বামন নারী লোক, এই বলে তিনি তা হাতের ইশারায় দেখালেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, তুমি এমন একটি কথার দ্বারা বিদ্রুপ করেছ, তা সাগরের পানির সঙ্গে মেশালেও ওই পানিকে দূষিত করে ফেলত। (তিরমিজি, হাদিস : ২৫০২)

তাই প্রত্যেকের উচিত, এ ধরনের নিকৃষ্ট কাজ থেকে বিরত থাকা।