নিউজ ডেস্ক:
ঠিক এই সময়টায় চীনের কমিউনিস্ট পার্টি বুঝতে পারছে না তাদের হাসা উচিত, নাকি কাঁদা উচিত। আমেরিকার চীন বিশেষজ্ঞরা আড়ালে-আবডালে এখন এমনই বলছেন। চীনের সরকারি সংবাদমাধ্যম বা কমিউনিস্ট পার্টির ট্যাবলয়েডে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমালোচনা সমৃদ্ধ প্রতিবেদন ছাপা হচ্ছে না, এমন দিন আজকাল কমই আসে। ট্রাম্প জমানায় কী ভাবে আমেরিকায় ‘গণতন্ত্রের হত্যা’ শুরু হয়েছে, প্রায় রোজই নিজেদের সংবাদপত্রের কোন না কোন প্রতিবেদনে এ কথা প্রমাণ করার আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছে চীন।
প্রবীণতম তথা সবচেয়ে অভিজ্ঞ চীনা কূটনীতিক ইয়াং জিয়েচির সাম্প্রতিকতম আমেরিকা সফরের বিবরণ সামনে এলে মনে হচ্ছে, ওয়াশিংটনের সঙ্গে মিত্রতা ছাড়া অন্য কোন রকমের সম্পর্কের কথা ভাবতেই পারে না বেজিং। সোমবার আমেরিকা গিয়েছিলেন ইয়াং জিয়েচি। দু’দিনের সফর। একগুচ্ছ কর্মসূচি ছিল। চিন-আমেরিকা কূটনৈতিক সম্পর্কের উন্নতি এবং বাণিজ্যিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক আরও বাড়ানোর লক্ষ্যে ট্রাম্প প্রশাসনের পদস্থ কর্তাদের সঙ্গে জিয়েচির একাধিক বৈঠক হয়েছে বলে খবর। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গেও দেখা করেছেন জিয়েচি। চিনা কূটনীতিকের সঙ্গে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দীর্ঘ বৈঠক করেননি। কিন্তু বৈঠকের জন্য যে সংক্ষিপ্ত সময় বরাদ্দ হয়েছিল, তার মধ্যেই বেজিং-এর তরফ থেকে সুসম্পর্কের বার্তা দিয়ে এসেছেন ইয়াং জিয়েচি।
আমেরিকার স্বার্থে আঘাত লাগতে পারে এমন কোন ইস্যুতে বিন্দুমাত্র সমঝোতার রাস্তায় হাঁটতে চান না ট্রাম্প। মার্কিন প্রেসিডেন্টের এই একরোখা নীতিই চিনের উদ্বেগ বাড়াচ্ছে। প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা বলতেন, একবিংশ শতকের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক হল আমেরিকা-চীন সম্পর্ক। মার্কিন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অপেক্ষাকৃত উদারবাদী ওবামার সেই মন্তব্যের তাৎপর্য চীন বোঝেনি। কট্টরবাদী ট্রাম্প এবং তাঁর সমপরিমাণ কট্টরবাদী ক্যাবিনেট ওয়াশিংটন ডিসির দখল নেওয়ার পর আঁচটা টের পাচ্ছে বেজিং। নির্বাচনী প্রচারেই চীন সম্পর্কে নিজের কড়া অবস্থানের কথা বুঝিয়ে দিয়েছেন ট্রাম্প। জয়ের পর তাইওয়ানের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে ফোনে কথা বলে চীনের উদ্বেগ আর বাড়িয়ে দেন তিনি। ট্রাম্পের বিদেশ সচিব রেক্স টিলারসন আর এক ধাপ এগিয়ে ইঙ্গিত দেন, দক্ষিণ চীন সাগরের পানিসীমা নিয়ে যে বিতর্ক রয়েছে, প্রয়োজন হলে আমেরিকা তার সামরিক সমাধানও খুঁজতে পারে। এমন নয় যে ট্রাম্প এবং তাঁর ক্যাবিনেটের অন্য সদস্যদের গরম গরম মন্তব্য চুপচাপ হজম করে গিয়েছে চীন। ওয়াশিংটনের প্রতিটি আস্ফালনে পাল্টা আস্ফালন করেছে বেজিং। তাইওয়ানের পাশে দাঁড়িয়ে আমেরিকা ‘এক চীন’ নীতিকে অগ্রাহ্য করলে ফল ভাল হবে না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছে। দক্ষিণ চীন সাগরে বেজিং-এর ‘সার্বভৌমত্ব’কে অস্বীকার করার চেষ্টা আগুন নিয়ে খেলার সামিল হবে, এমন মন্তব্যও করা হয়েছে বেজিং-এর তরফে। কিন্তু কড়া কড়া মন্তব্যে স্নায়ুর লড়াই চালানোর পাশাপাশি অন্য পথে আমেরিকার সঙ্গে স্থিতিশীল সম্পর্ক ধরে রাখার আপ্রাণ চেষ্টাও যে চীন চালিয়ে যাচ্ছে, ইয়াং জিয়েচির সাম্প্রতিক আমেরিকা সফর তারই প্রমাণ।
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশারদেরা বলছেন, চীন বড় শক্তি হয়ে উঠলেও, আমেরিকা হয়ে উঠতে এখনও অনেকটা দেরি আছে। এতদিন আমেরিকায় যে সব সরকার এসেছে, চীনের সঙ্গে সম্পর্কের প্রশ্নে কূটনৈতিক রীতিনীতিকে তারা অনেক বেশি সম্মান দেখিয়েছে। আমেরিকার স্বার্থে আঘাত লাগতে পারে এমন প্রশ্নে পৃথিবীর কোন শক্তির সঙ্গে আপসে যেতে প্রস্তুত নন ট্রাম্প। তার জন্য যে কোন পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে প্রস্তুত তিনি। প্রেসিডেন্ট এবং তাঁর ক্যাবিনেট বার বার সেই বার্তাই দিচ্ছে। এ কথা বুঝতে পেরেই এখন ভারসাম্য খোঁজার চেষ্টায় চীন।