নিউজ ডেস্ক:দামুড়হুদার আলোচিত জোড়া খুনের প্রকৃত রহস্য উম্মোচিত হয়েছে। মাদক ব্যবসা এবং আর্থিক লেনদেনের কারণেই পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয় ইয়ার আলী (৫৫) ও তাঁর স্ত্রী রোজিনা খাতুনকে (৪৫)। এ ঘটনায় গ্রেপ্তার হওয়া মিথুন প্রথম দফায় আদালত ও পুলিশকে বিভ্রান্ত করে ১৬৪ দফায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিলেও দ্বিতীয় দফায় জিজ্ঞাসাবাদে হত্যার দায় স্বীকার ও কারণ উল্লেখ করে পুনরায় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী প্রদান করেছেন।
জানা গেছে, গত ৪ অক্টোবর দামুড়হুদা উপজেলার গোবিন্দপুর গ্রামের মৃত এবাত আলীর ছেলে ইয়ার আলীকে (৫৫) নিজ বসত-ঘরের খাটের উপর থেকে এবং তার ২য় স্ত্রী রোজিনা খাতুনকে (৪৫) ঘরের বারান্দায় থাকা অবস্থায় ধারালো অস্ত্র দিয়ে গলাকেটে হত্যা করা হয়। এঘটনায় জেলাজুড়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। পুলিশ তদন্তে নামে। প্রথম দফায় তিনজকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করাসহ তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়।
চুয়াডাঙ্গার পুলিশ সুপার জাহিদুল ইসলামের নেতৃত্বে দামুড়হুদা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল খালেক এই মামলার রহস্য বের করার জন্য তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যম ব্যবহার করে সন্ধান পাই, হত্যার দিন ইয়ার আলির সাথে একটি নাম্বারে দুবার কথা হয়।
জীবনগর থানার আকন্দবাড়ীয়ার মুকুলের নামে ওই সীমকার্ড। পুলিশ মুকুলকে জিজ্ঞাসাবাদের মাধ্যমে জানতে পারে, গোবিন্দপুর গ্রামের মিথুনের কাছে ওই সীমকার্ড আছে। পরে ১৩ই অক্টোবর রাতে গোবিন্দপুর গ্রামের ঈমান আলির ছেলে মিথুনকে আটক করা হয়। মিথুন পরের দিন বিজ্ঞ আদালতে ভুল তথ্য দিয়ে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।
সে জানায়, তাঁর গলায় দা ধরে ফৈরদোসির বড় ছেলে হাসান আর মুখোশ পরা দুজন ইয়ার আলির বাড়ি ভিতর যায়। এক ঘণ্টা পর বাড়ির ভিতর থেকে তারা বাড়ির বাইরে এসে আমাকে দশ হাজার টাকা দিয়ে চলে যায়। পুলিশ ওই রাতেই হাসানকে আটক করে। মিথুনের মুখোমুখি জিজ্ঞাসা করলে এসপি জাহিদুল ইসলামের বিষয়টি নিয়ে সন্দেহ হয়। তিনি একটির সাথে আরেকটি বর্ণনার মিল খুজে পান না।
পরে, পুলিশ মিথুনের উপর সন্দেহ হলে গত ২৮শে অক্টোবর সিনিয়ার জুড়িসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে দশদিনের রিমান্ড আবেদন করে। আদালত পাঁচদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে। ২৯ শে অক্টোবর দ্বিতীয় দফার জিজ্ঞাসাবাদে মিথুন হত্যার ঘটনা স্বীকার করে। পরে মিথুন পুনরায় চুয়াডাঙ্গার জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ফারিয়া নওশীন বন্নির সামনে হাজির হয়ে মিথুন হত্যার দায় স্বীকার ও কারণ উল্লেখ করে পুনরায় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দেয়।
যেভাবে জোড়া খুন করে মিথুন:
মিথুন তাঁর জবানবন্দীতে জানিয়েছে, ইয়ার আলি ও মিথুন ইয়াবা ট্যবলেটের ব্যবসা করতো। এরই মধ্যে মিথুন ধার-দেনায় জড়িয়ে পরে। মিথুন ইয়ার আলীর কাছ থেকে ইয়াবার চালান দেওয়ার নামে টাকা নিয়ে ইয়ার আলীকে হত্যা করার পরিকল্পনা করে। মিথুন দুটি স্পিরিটের মধ্যে ৬টি প্রেইস ০.৫ ট্যাবলেট ও ড্রিসোপেইন-১ গ্রাম লিকুইড ইনজেকশন মিশিয়ে ৩ই অক্টোবর শনিবার সন্ধ্যায় ইয়ার আলির বাড়িতে যায়। ইয়ার আলি ও তাঁর স্ত্রী রোজিনাকে খেতে দেই মিথুন। তারা স্বামী-স্ত্রী ঘরের দরজা বন্ধ করে ঘরের ভিতর ঘুমিয়ে পড়ে এবং একই ঘরের বারান্দায় মিঠুন ঘুমাতে যায়। একটু বেশি রাত হলে মিঠুন জালানা দিয়ে পানি ছিটিয়ে দেখে তারা ঘুমিয়েছে কিনা। মিথুন দরজা সরিয়ে ঘরের ভিতর ঢুকে ধারালো হাঁসুয়া দিয়ে রোজিনার পেটে কোপ মারে। পরে চুলের মুটি ধরে জবাই করে। পরে অচেতন অবস্থায় ইয়ার আলির গলায় কোপ মারলে সে হাত দিয়ে ঠেকাতে গেলে হাতে কোপ লাগে। পরে তাকে জবাই করে হত্যা করে মিথুন। ওই রাতে মিথুন পালিয়ে গিয়ে একটি পুকুরে গোসল করে।
এদিকে, হত্যার আলামত ইয়ার আলির সাদা মোবাইল, ১৯ হাজার টাকা, ট্যাবলেট ও ইনজেকশনের খোসা, একটি মোবাইলের অর্ধাংশ ও মোবাইলে পিছনের অংশ, মিথুনের রক্তমাখা জামা কাপড় উদ্ধার করেছে পুলিশ।
এবিষয়ে দামুড়হুদা মডেল থানার অফিসার্স ইনচার্জ আব্দুল খালেক বলেন, চুয়াডাঙ্গার পুলিশ সুপার জাহিদুল ইসলাম স্যার এ হত্যা মামলাটিকে গুরুত্বের সঙ্গে দেখেছেন। তিনি নিজে বার বার ঘটনাস্থলে এসে এবং সন্দেহভাজনদের জিজ্ঞাসাবাদ করেন। স্যারের নিজের তদন্তের কারণে এত দ্রুত এরকম একটি পেচানো হত্যা ঘটনার রহস্য দ্রুত উন্মোচন করা সম্ভব হয়েছে।
চুয়াডাঙ্গার পুলিশ সুপার জাহিদুল ইসলাম জানান, আমি নিজে বার বার দামুড়হুদায় গিয়ে এবং ঘটনাস্থলে গিয়ে তদন্ত করেছি। কিন্তু মিথুনের প্রথমবারের জবানবন্দীতে ঘটনার সঠিকতা মিল পাচ্ছিলাম না। তাই বিষয়টি উদ্বেজনক হওয়ায় আমি প্রত্যেকটি খুটিনাটি বিষয়কে গুরুত্ব দিয়েছি এবং শেষপর্যন্ত এ ঘটনার রহস্য উন্মেচিত হয়েছে।