নিউজ ডেস্ক:করোনা ভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলায় চুয়াডাঙ্গায় আবার কঠোর অবস্থানে যাচ্ছে প্রশাসন। গতকাল স্বাস্থ্যবিধি না মানায় জেলায় ১১ জনকে ৭ হাজার ১শ ৫০ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। প্রশাসনের বিশ্বস্তসূত্রে জানা গেছে, মন্ত্রণালয় এবং সংশ্লিষ্ট্য দপ্তর থেকে স্বাস্থ্যবিধি মানার জন্য ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করাসহ কঠোর অবস্থানে যাওয়ার নির্দেশনাও আছে। এদিকে, শীতের মধ্যে করোনার দ্বিতীয় প্রকোপ আশার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ইতিমধ্যে চুয়াডাঙ্গায় বেড়েছে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের হার। মাঝখানে বেশকিছুদিন আক্রান্তের হার খুবই কম ছিলো। এমনকি কয়েকদিন জেলায় কেউ আক্রান্তই ছিলোনা। তবে আবার ধীরে ধীরে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে।
চুয়াডাঙ্গা জেলার স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গায় নতুন একজনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে। এনিয়ে জেলায় মোট করোনা শনাক্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৫৩০ জনে। গতকাল সোমবার রাত ৮টায় জেলা সিভিল সার্জন অফিস এ তথ্য নিশ্চিত করেন। আক্রান্ত ব্যক্তি জীবননগর উপজেলার বাসিন্দা। গতকাল জেলায় নতুন সুস্থ হয়েছে ১২ জন। এরমধ্যে সদর উপজেলার ১০জন ও দামুড়হুদা উপজেলার ২জন রয়েছে। এনিয়ে মোট সুস্থ হয়েছেন ১ হাজার ৪২২জন।
জানা যায়, গত রোববার জেলা স্বাস্থ্যবিভাগ করা আক্রান্ত সন্দেহে ২৬টি নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পিসিআর ল্যাবে প্রেরণ করে। গতকাল এরমধ্যে ৫টি নমুনার ফলাফল সিভিল সার্জন অফিসে এসে পৌঁছায়। ৫টি নমুনার মধ্যে ১টি নমুনার ফলাফল পজিটিভ ও বাকী ৪টি নমুনার ফলাফল নেগেটিভ আসে।
গতকাল জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ করোনা আক্রান্ত সন্দেহে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা থেকে ১৪টি নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য কুষ্টিয়া মেডিকেল হাসপাতালে প্রেরণ করেছে। জেলা থেকে এ পর্যন্ত মোট নমুনা সংগ্রহের সংখ্যা ৬ হাজার ৪৫০টি।
চুয়াডাঙ্গা সিভিল সার্জন অফিসের সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী জেলা থেকে এ পর্যন্ত মোট নমুনা সংগ্রহ ৬ হাজার ৪৫০টি, প্রাপ্ত ফলাফল ৬ হাজার ২০৬টি, পজিটিভ ১ হাজার ৫৩০টি, নেগেটিভ ৪ হাজার ৭১১টি। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত জেলায় গতকাল হোম আইসোলেশনে ছিল ৩৮জন ও প্রাতিষ্ঠানিক আইসোলেশনে ছিল ১৭জন। চুয়াডাঙ্গা জেলায় করোনা আক্রান্ত হয়ে মোট মৃত্যুর সংখ্যা ৪১ জন, এর মধ্যে ৪ জনের মৃত্যু হয়েছে জেলার বাইরে। এই মাসে ৫ নভেম্বর আক্রান্তের সংখ্যা ছিলো সবথেকে বেশি। এদিন নতুন করে জেলায় ৬জন আক্রান্ত হয়।
এদিকে, করোনার প্রথম ও ভয়াল ধাক্কার রেশ এখনো পুরোপুরি কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হয়নি। চিকিৎসক ও বিজ্ঞানীদের নিরন্তর প্রচেষ্টার পরও এখনো অফিসিয়ালি কোনো ভ্যাকসিন বাজারে আসেনি, অথচ এরমধ্যেই নতুন করে আলোচিত হচ্ছে করোনার আসন্ন দ্বিতীয় ঢেউ (সেকেন্ড ওয়েভ)। যা শীতকালীন সময়ে আরো দুনির্বার হয়ে হানা দেবে পৃথিবীর প্রায দেশেই। যদিও প্রথম ধাক্কা শেষে পৃথিবী এখন স্বাভাবিক হওয়া চেষ্টায়। যে তাপমাত্রায় করোনা ভাইরাসটি বাড়ে, সহজে সংক্রমিত করতে পারে বা দ্রুত বিস্তার ঘটাতে পারে, শীতকাল সেটার জন্য আদর্শ। এ কারণেই ধারণা করা হচ্ছে শীতকালে এ ভাইরাসের বিস্তার বেশি হতে পারে। এই সময়ে বাতাসে আদ্রতা কম থাকায় হাঁচি, কাশি দেয়া হলে বাতাসে জীবাণুর ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কণাগুলো অনেকক্ষণ ধরে ভেসে থাকে। গরমের সময় সেটা যখন দ্রত ধ্বংস হয়ে যায় কিন্তু শীতের সময় অনেকক্ষণ ধরে বাতাসে থাকে। ফলে মানুষের সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকিও বেশি থাকে।
করোনা ভাইরাসের জন্য বিশেষ করে চার ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা বিশেষ অনুকূল বলে দেখা গেছে। সূর্যের আলোয় যে অতিবেগুনি রশ্মি থাকে তা ভাইরাসকে নিষ্ক্রিয় করে ফেলে। কিন্তু শীতের সময় অতিবেগুনি রশ্মির পরিমাণও কম থাকে। কিন্তু শীতকালে করোনা ভাইরাসের বিস্তার বেশি হয়, এমন কোনো বৈজ্ঞানিক তথ্যপ্রমাণ এখনো পাওয়া যায়নি। অনেক সময় দেখা যায়, সাধারণ সর্দি-কাশির মতো অনেক রোগ শীতকালে বেয়ে যায়।
যেহেতু এখনো এই ভাইরাসের বিরুদ্ধে প্রতিরোধী টিকা বাজারে আসেনি, তাই সামাজিক দূরত্ব রক্ষা করা এবং স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলাই একে প্রতিরোধের একমাত্র উপায়। নিজেদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সবাইকে স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলার ওপর জোর দিতে হবে। হাত ধোয়া, হাঁচি কাশির সময় শিষ্টাচার রক্ষা করা ইত্যাদি যে বিষয়গুলো এতোদিন ধরে বলা হচ্ছে, সেটাই আরো কড়াকড়িভাবে পালন করতে হবে। সেইসঙ্গে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার বিষয়গুলোও অব্যাহত রাখতে হবে।