নিউজ ডেস্ক:মেহেরপুর জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপপরিচালকের বিরুদ্ধে গতকাল রোববার দুজন সাংবাদিককে মারধর করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় সদর থানায় মামলা হয়েছে। এতে তিনজনের নামোল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা কয়েকজনকে আসামি করা হয়েছে। মারধরের শিকার দুজন হলেন ডিবিসি টেলিভিশনের জেলা প্রতিনিধি আবু আক্তার ও বাংলাদেশ রয়টার্স নামের একটি অনলাইন পোর্টালের জেলা প্রতিনিধি জাকির হোসেন। এসময় সাংবাদিকদের ক্যামেরাও ভাঙ্চুর করেছেন জেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা আব্দুল কাদেরসহ কয়েকজন। গতকাল রোববার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপপরিচালকের (ডিডি) কার্যালয়ে এই হামলার ঘটনা ঘটে। পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে তাদের মারধর করা হয়। এঘটনায় গতকাল সন্ধ্যায়ই মেহেরপুরের সকল সাংবাদিকদের নিয়ে বিশেষ সভা করেছেন মেহেরপুর জেলা প্রশাসক ড. মোহাম্মদ মুনসুর আলম খান। তিনি এ ঘটনার প্রকৃত রহস্য উৎঘাটনে তদন্ত কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নেন।
ঘটনার মারধরের শিকার সাংবাদিক আবু আক্তার করণ ও জাকির হোসেন জানান, সংবাদ সংগ্রহের জন্য ক্যামেরা হাতে জেলা সমাজসেবা অফিসে যান তারা। এসময় আকস্মিকভাবে উপপরিচালক আব্দুল কাদেরের নেতেৃত্বে হামলা চালিয়ে তাঁদেরকে গোপনকক্ষে নিয়ে আটকে রাখা হয়। এরপর আব্দুল কাদের একই অফিসের শিক্ষানবীশ অফিসার সাজ্জাদ হোসেন ও আব্দুল কাদেরের ব্যক্তিগত ড্রাইভার মিলনসহ বেশ কয়েকজন তাদের মারধর করেন। পরে তাদের ক্যামেরা ভেঙে ফেলেন তারা।
মেহেরপুর জেলা সমাজসেবা অধিদফতরের উপপরিচালক মো. আব্দুল কাদেরের বিরুদ্ধে সরকারি গাড়ি ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার, হিজড়া প্রশিক্ষণের ভাতা আত্মসাৎ এবং অফিসে বেডরুম ব্যবহারের অভিযোগ রয়েছে। এসব বিষয়ে জানতে রোববার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সমাজসেবা অধিদফতরের উপপরিচালকের কার্যালয়ে গেলে আব্দুল কাদের সাংবাদিকদের দেখে ক্ষেপে যান। পরে কয়েকজন স্টাফ ও গাড়িচালককে দিয়ে দুই সাংবাদিককে অফিসের একটি কক্ষে ডেকে নিয়ে আটকে রেখে মারধর করেন। মারধর করার পর ক্যামেরা ও কডলেস মাইক্রোফোন ভেঙে দেয়। এরপর দুটি মেমোরি কার্ড ও নগদ ৭ হাজার টাকা ছিনিয়ে নিয়ে অফিসকক্ষে আটকে রাখে তাদের।
ডিবিসির সাংবাদিক আবু আক্তার করণ আরও জানান, সরকারি গাড়ি ব্যবহার করে নিজের বাড়ি পাবনা ও শ্বশুড় বাড়িতে যান প্রতি সপ্তাহে। এছাড়া তিনি নিজ চেয়ারে বসে সকলের সামনে ধূমপান করেন এবং অফিস চলাকালীন সময়ে তিনি কার্যালয়ে ঘুমিয়ে থাকেন। এ ধরণের নানা অভিযোগের প্রেক্ষিতে আমার সহকর্মী জাকির হোসেনকে নিয়ে উপপরিচালকের কার্যালয়ে তথ্য সংগ্রহ ও তাঁর বক্তব্য নিতে যাই। এসময় তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে তাঁর গোপনকক্ষে নিয়ে আমাদের আটকিয়ে রাখেন। পরে ডিডি আব্দুল কাদের, শিক্ষানবীশ কর্মকর্তা সাজ্জাদ হোসেন ও আব্দুল কাদেরের ব্যক্তিগত গাড়িচালক মিলনসহ বেশ কয়েকজন আমাদের মারধর করে এবং ক্যামেরা ভাঙচুর করে। পরে খবর পেয়ে মেহেরপুর সদর থানা পুলিশের একটি দল ও মেহেরপুর প্রেসক্লাবের সাংবাদিকরা গিয়ে আমাদের উদ্ধার করেন।
এঘটনায় ডিবিসি’র মেহেরপুর জেলা প্রতিনিধি আবু আক্তার করণ বাদী হয়ে মেহেরপুর সদর থানায় উপপরিচালকসহ কয়েকজনকে আসামি করে এদিন দুপুরে মামলা করেছেন। যার মামলা নং-৩৩৯।
সদর থানা পুলিশের অফিসের ইনচার্জ (ওসি) শাহ দারা খান মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। মেহেরপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) ড. মোহাম্মদ মুনসুর আলম খান বলেন, আমি বিষয়টি শুনেছি। বিস্তারিত জেনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এদিকে, এঘটনায় মেহেরপুর জেলা প্রশাসক ড. মোহাম্মদ মুনসুর আলম খান তাঁর সম্মেলনকক্ষে গতকাল সন্ধ্যায়ই জেলার সকল সাংবাদিকবৃন্দের সঙ্গে বিশেষ সভা করেছেন। সভায় ডিবিসির সাংবাদিক আবু আক্তার করণ ও জাকির হোসেনের কাছ থেকে পুরো ঘটনাটি শোনেন তিনি এ ছাড়া অন্য সাংবাদিকদের কাছ থেকেও ঘটনা বিষয়ে মতামত গ্রহণ করেন। সভায় তিনি বলেন, আপনাদের সাথে এই আলোচনা এবং ঘটনার বিবরণ জেনে আমি যথাযথ কর্তৃপক্ষকে অবহিত করব। সেই সঙ্গে তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে, তিন দিনের মধ্যে কমিটি রিপোর্ট জেলা প্রশাসকের নিকট দাখিল করবেন। বিধি মোতাবেক রিপোর্ট যথাযথ কর্তৃপক্ষকে প্রেরণ করা হবে। একই সঙ্গে তিনি অনাকাঙ্খিত এই ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করেন।