মূলহত্যাকারী সুজনসহ আটক ২ : ইউপি সদস্যসহ ৭ জনের নামে মামলা
নিউজ ডেস্ক: জীবননগর উথলীর শিংনগর গ্রামের মসজিদপাড়ায় পূর্ব শক্রতার জের ধরে সবদুল (৩৫) নামের এক ব্যক্তিকে কুপিয়ে খুন করা হয়েছে। গত শুক্রবার (১৫’জুন) ঈদুল ফিতরের আগের দিনগত রাতে এ ঘটনার খবর পাওয়া যায়। তড়িৎ পদক্ষেপে ওই দিন রাতেই মূলহত্যাকারী সুজন (২২) ও পরিকল্পনাকারী সন্দেহে স্থানীয় ইউপি সদস্য আমিনুল ইসলামকে আটক করে জীবননগর থানা পুলিশ। এ ঘটনায় বাদী হয়ে মূলহত্যাকারী সুজন ও পরিকল্পনাকারী সন্দেহে ইউপি সদস্যসহ ৭ জনের নামে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন নিহতের বড় ভাই শহিদুল ইসলাম। স্থানীয়রা জানান, শুক্রবার সন্ধ্যায় মদ খাওয়া নিয়ে সবদুলের সাথে একই গ্রামের সুজন হোসেন (২২), সোহাগ (২৪) ও মহিবুল হকের (২৮) মধ্যে প্রথম দফায় কথা কাটাকাটি এবং মারামারি হয়। এ সময় গ্রামবাসী ও উভয় পরিবারের লোকজনের উপস্থিতিতে আপোষ মিমাংসা করে নিজ নিজ বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়া হয়। এরপর রাত ১২টার দিকে ক্ষতবিক্ষত রক্তাত্ব জখম অবস্থায় সবদুলকে শিংনগর গ্রামের মসজিদের সামনের রাস্তায় পড়ে থাকতে দেখা যায়। তাকে উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নেয়া হলে পথিমধ্যে তার মৃত্যু হয়েছে বলে জানায় কর্তব্যরত চিকিৎসক। আরো জানা যায়, হত্যাকারীরা এলাকার চিহ্নিত মাদককারবারী এবং নিহত সবদুল তাদের লাইনম্যান হিসেবে কাজ করতো। এ নিয়েও তাদের মধ্যে বিরোধ থাকতে পারে। নিহতের স্ত্রী রেশমা খাতুন বলেন, শুক্রবার ইফতারির পর (চাঁদরাত) সবদুলকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে যায় শিংনগর মসজিদপাড়ার সুরমান আলী ওরফে পয়মলের ছেলে সোহাগ। এর কিছুক্ষণ পর মারামারির খবর পায় আমরা। ওই সময় আমার স্বামীকে ডেকে নিয়ে গিয়ে পয়মল, তার ছেলে সোহাগ, সুজনসহ আরো বেশ কয়েকজন মিলে রড-শাবল দিয়ে পেটায়। সেখান থেকে ফিরিয়ে আনার পর আবার রাতে বের হয় আমার স্বামী। তখন তারাই একা পেয়ে কুপিয়ে হত্যা করে লাশ ফেলে রাখে রাস্তায়।
নিহতের মা মেহেরুন নেছা জানান, গত বছরের এই রোজার মাসে দোকান বাকির টাকা (হালখাতার টাকা) চাওয়া নিয়ে সবদুলের চাচা আবু মোল্লার ছেলে মোয়াজ্জেমের সাথে পয়মল ও তার ছেলেদের গোলযোগ হয়। তারা ওই সময় মোয়াজ্জেমকে মারধর করে এবং হত্যা চেষ্টাও চালায়। চাচাতো ভাইকে মারধরের প্রতিবাদ করায় পয়মল ও তার ছেলেদের সাথে সবদুলের বিরোধ সৃষ্টি হয়। এ শক্রতা চেপে রেখেই দীর্ঘ এক বছর ধরে সবদুলকে নিজেদের কাছে কাছে রাখে তারা। বিভিন্ন সময়ে সবদুলকে মাদক ব্যবসা ও সেবনে বাধ্য করা হতো। শুক্রবার রাতে পূর্ব পরিকল্পিত ভাবে সবদুলকে প্রথমে মদ খাইয়ে সংজ্ঞাহীন করে হত্যাকারীরা। এরপর একা পেয়ে কুপিয়ে নৃশংস ভাবে হত্যা করা হয় তাকে।
মেহেরুন নেছা অভিযোগ করেছেন, পয়মল ও তার ছেলেরা সকলে এই এলাকার চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী। তাদের সাথে এই গ্রামের প্রায় সবারই গন্ডগোল আছে। তুচ্ছ ঘটনা নিয়ে পয়মলরা যাকে তাকে মারধর করে। ইউপি সদস্যদের সাথে নিয়ে শনিবার সকালে ঈদের নামাযের পর ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন উথলী ইউপি চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ। এ সময় তিনি নিহতের পরিবারের সদস্যদের শান্ত হতে বলেন এবং দোষীদের ধরে আইনের আওতায় আনতে গ্রামবাসীকে সহায়তার আহ্বান জানান। জীবননগর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আকরাম হোসেন বলেন, পূর্বশক্রতার জের ধরে সবদুলকে হত্যা করা হয়েছে। তড়িৎ পদক্ষেপে এ হত্যাকান্ডের মূল আসামী সুজন ও পরিকল্পনাকারী হিসেবে উথলী ইউপি’র ৯ নং ওয়ার্ড সদস্য আমিনুল ইসলামকে আটক করা হয়েছে। আসামীদের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী- ঘটনার রাতে সবদুলকে সাথে নিয়ে এলাকার রেজাউলের ঘরে বসে মদ খায় সুজন। এ নিয়ে সবদুলের পরিবারের সদস্যদের সাথে বাকবিতন্ডাও হয়। এরপর কিছু সময় এলাকার পরিবেশ পরিস্থিতি শান্ত থাকার সুযোগে সুজন ও তার সহযোগীরা মিলে সবদুলকে মসজিদের সামনের রাস্তায় নিয়ে আসে। সেখানে সুজনের হাতে থাকা ভারতীয় কাঁচি (কাস্তে) দিয়ে সবদুলের পেটে আঘাত করা হয়। ধারালো কাঁচির আঘাতে মারাত্মক জখম হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে সে। এরপর আসামীরা তাকে ফেলে পালিয়ে যায়। পরে গ্রামবাসী ও পরিবারের সদস্যরা সবদুলকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেয়ার আগেই তার মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় বাদী হয়ে নিহতের বড় ভাই শহিদুল ইসলাম বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। এদিকে শনিবার (ঈদের দিন) সবদুলের লাশের ময়নাতদন্ত শেষে বিকেলের দিকে নিজ গ্রামের বাড়িতে নিয়ে আসা হয়। বাদ আছর নামাযে জানাযা শেষে স্থানীয় কবরস্থানে দাফনকার্য সম্পন্ন করা হয়। আটক হত্যাকারীর স্বীকারোক্তিতে হত্যা কাজে ব্যবহৃত ধারালো রক্তমাখা কাঁচি উদ্ধার করা হয়েছে। এদিকে সুজন ও আমিনুল ইসলামকে গতকাল সোমবার আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে। বাকী আসামীদের ধরতে পুলিশি অভিযান অব্যহত রয়েছে।