নিউজ ডেস্ক:
প্রাণচঞ্চল বছর দশেকের খুদে তখন হাসপাতালের অপারেশন টেবিলে। কখনও হাসছে, কখনও গল্প করছে হাত-পা নেড়ে।
আর বেশির ভাগ সময়েই চোখ সেঁটে থাকছে মোবাইলের পর্দায়। সেখানে অভিজ্ঞ হাতের স্ক্রোলিংয়ে চলছে তার প্রিয় গেম ‘ক্যান্ডি ক্রাশ’।
অন্য দিকে তাকে ঘিরেই চলছে বিশাল কর্মকাণ্ড। এখনও অতটা বোঝার মতো ‘জ্ঞান’ হয়নি ছোট্ট নন্দিনীর। অপারেশ টেবলে যখন সে প্রিয় মোবাইল গেমে মগ্ন, তখনই তার মাথার গুরুত্বপূর্ণ অংশে চলছে জটিল অস্ত্রোপচার।
মাথার যে অংশ দেহের প্রায় অর্ধেক অংশের চলনক্ষমতা নিয়ন্ত্রণ করে, নন্দিনীর সেই অংশ জুড়েই ছিল একটি টিউমর। সেটিকে কেটে বাদ দেওয়ার কাজটা মোটেই সহজ ছিল না। ঝুঁকিও ছিল যথেষ্ট। কিন্তু চেন্নাইয়ের এসআইএমএস-এর চিকিৎসকরা জানালেন, কিছু না বুঝেও নন্দিনী তাদের সাহায্য করে গেছে প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত। অবশেষে সফলও হয়েছে অস্ত্রোপচার।
ক্লাস ফাইভের নন্দিনী ক্লাসিকাল ডান্সারও। ভরতনাট্যমে রীতিমতো পারদর্শী সে। হঠাৎই নাচতে গিয়ে এক দিন জ্ঞান হারায় নন্দিনী। তখনই চেন্নাইয়ের ওই হাসপাতালে নিয়ে আসা হয় তাঁকে। সিটি স্ক্যান করে দেখা যায়, নন্দিনীর মস্তিষ্কের একটি গুরুত্বপূ্র্ণ স্থানে টিউমর রয়েছে। সাধারণত শিশুদের মধ্যে এ ধরণের ব্রেন টিউমর দেখা যায় না। নন্দিনীর ক্ষেত্রে ঘটনাটি ছিল কিছুটা ব্যতিক্রম।
চিকিৎসকরা জানান, প্রথাগত পদ্ধতিতে অস্ত্রোপচার হলে ঝুঁকি আরও বাড়ত। তাই ক্রানিওটমি পদ্ধতিতে অপারেশনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। শুধু তাই নয়, গোটা পদ্ধতিই নন্দিনীকে জাগিয়ে রেখে করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কারণ রোগীর হাত-পা নাড়ানোর মাধ্যমে বোঝা যায় মস্তিষ্কের সঠিক কোন জায়গাগুলি আক্রান্ত হয়েছে। সে কারণেই অজ্ঞান করা হয়নি নন্দিনীকে।
চিকিৎসকরা আরও জানান, অজ্ঞান না করলেও এই অপারেশনে কোনও যন্ত্রণা অনুভব হয় না। কারণ ব্রেনের নিউরোনে কোনও যন্ত্রণা গ্রহণের অনুভূতি থাকে না। তবে সুরেশের মতে, আসলে গোটা বিষয়টিই সম্ভব হয়েছে নন্দিনীর জন্যই। অনেককেই অস্ত্রোপচারের পরবর্তী ধাক্কাটা কাটিয়ে উঠতে বেশ বেগ পেতে হয়। নন্দিনী খুবই সাহসী মেয়ে। ও সব কিছু খুব সহজ ভাবেই নিয়েছিল।